আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পলিফোনিক রিংটোন!১

আত্মবিশ্বাসহীনতায় প্রকট হচ্ছে আত্মার দেউলিয়াত্ব, তবুও বিশ্বাস আগের মতই নিশ্চল..

[ জিনিয়াসমাত্রই প্রতিভাবান, কিন্তু প্রতিভা থাকলেই কি জিনিয়াস হওয়া যায় ?বস্তুত, জিনিয়াস হচ্ছে প্রতিভার সেই স্তর যেখানে পেীছনো প্রতিভাবানদেরও কল্পনাতীত। এইসব “hypothetical postulate” আউড়ানোর অভিলক্ষ সেই বিষম প্রতিভাধরের বৃত্তান্তবয়ান পৃথিবীর জ্ঞান-বিজ্ঞান যার নিজস্ব সংগ্রহশালা: স্যার আইজাক নিউটন। পশ্চাৎপদ পৃথিবী তার মাধ্যমেই সহস্রাব্দের পথে অগ্রসর হয়েছে, হচ্ছে এখনও। কিন্তু নিউটনের যুগের বিবর্ণ পৃথিবী আজ প্রবেশ করেছে nano technology' র অভিজাত ভুবনে; তাই হয়ত নিউটনও সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে গবেষণার বদলে ইদানীং মুঠোফোনকেই করেছে নিত্যসঙ্গী! আশ্চর্যান্বিত হওয়ার কিছু নেই:কালনিরপেক্ষ প্রতিভাশিল্পী (অকল্পনীয় প্রতিভাও একধরনের শিল্প!) নিউটন মাত্র একবার জন্ম নিলেও, পৃথিবীর প্রয়োজনে যুগে যুগে আবির্ভূত হয় অসংখ্য “ছায়া নিউটন” যাদের বিচরণ আমাদের চেনা পরিমণ্ডলেই। প্রকৃত নিউটনের মত এরাও সময়োদাসীন, ক্ষেত্রবিশেষে নিউটনের চেয়েও বেশি; কিন্তু নিউটনের ভাবনাজুড়ে যেখানে থাকত differential equation,“ছায়া নিউটনদের” সেখানে দিনমান প্রহর কাটে কাঙ্ক্ষিত মানুষের(!) ফোনের রিংটোন শোনার প্রতীক্ষায়!!তাই ক্যালকুলাস-গতিসূত্রের “upgraded version” গুলো ডুমুরের ফুল হয়ে সুবাস ছড়ায় প্রেয়সীর খোলা চুলে ! তাহলে পাঠক.....চলুন “ছায়া নিউটনদের” গল্প শুনি : (গভীর মনোযোগ দিয়ে গল্প শুনতে হবে ; তাই অনাহূত বিড়ম্বনা এড়াতে পাঠকদের প্রতি তাদের মুঠোফোনটি কিছুক্ষণ বন্ধ রাখতে সনির্বন্ধ অনুরোধ রইল!!)] () আপনি যদি হন বর্তমান সময়ের সুস্থ(!) একজন, তবে নিম্নোক্ত বিজ্ঞাপন -বচন অবশ্যই আপনার কর্ণগোচর হয়েছে।

না হয়ে থাকলে সম্ভবত আপনিই সেই দুর্ভাগা যিনি চিন্তাচেতনায় প্রগতিশীল! ক্স “ডিজুস” বন্ধুরা , এখন রাত ১০ টার পরে যেকোন "ডিজুস” নাম্বারে কল পুরা ফ্রি! এইবার ফাও গ্যাজাও রাতভর। এক্কেবারে জ...টিল ভাব!! ক্স যেখানে আছে দিনবদলের চেষ্টা সেখানেই আছে “বাংলা লিংক” ; এখন যে কোন “হ্যাংলা জিঙ্ক” নাম্বারে কথা বলুন মাত্র ৭৯পয়সায়। মনের কথা চলতেই থাকুক, চলতেই থাকুক....! ক্স আর নয় মান-অভিমান; চলে এসেছে “একটেল জয়”! আপনার “জয়-পার্টনার” এর সঙ্গে সারাদিন কথা বলুন মাত্র ৭৫ পয়সায় , আর রাত ১২টা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত ১ম ৫মিনিটের পর কলচার্জ সম্পূর্ণ ফ্রি! তাই , সময়কে ভুলে প্রিয়জনের সান্নিধ্যে থাকুন প্রতিমুহূর্তে! মোবাইল কোম্পানীগুলোর এই “ফ্রি কালচার” প্রতিযোগিতার প্রধান লক্ষ্যবস্তু আধুনিক “ছায়া নিউটনেরা”, কারণ তাদের পকেটে থাকে বাবার দেয়া চকচকে টাকার নোট, হাতে অখণ্ড অবসর আর মনে অনুভূতির নীলনদ! ভুলবশত ২/১দিন তারা খাওয়া-ঘুম পরিত্যাগ করলেও ফোনালাপের ক্ষেত্রে “ নো ছাড়” । তাই গল্পের প্রারম্ভে কয়েকজন “ছায়া নিউটনের” নিভৃত কথোপকোথন শোনা যাক; বোধকরি এতে তাদের “privacy” ক্ষুণ হবেনা ! (অবশ্য হলেও sorry বলতে পারছি না) () (রাত ১২টা ৩মিনিট; অস্থিরচিত্তে হলের করিডোরে ক্রমাগত পায়চারি করে চলেছে নিউটন হঠাৎ মোবাইলে মিসকল আসতেই তার মুখাবয়বে তাজমহলের সেীন্দর্য খেলা করতে আরম্ভ করল ;আয়েশী ভঙ্গিতে তিনতলা হলের রেলিঙে বসে রাতের আকাশ দেখতে দেখতে “কলব্যাক” করে নিউটন । এরপর.....?) হ্যালো.... আমি কি এতটাই তুচ্ছ হয়ে গেলাম যে আমাকে মিসকল দিতেও তোমার রুচিতে বাঁধে! তুমি জাননা বারটা বাজার ১ঘণ্টা আগে থেকে আমি সব কাজ বন্ধ করে বারান্দায় পায়চারি করতে থাকি; সেজন্য হলের ছেলেরা কত কথা শোনায়, আর সেই তুমি কিনা ৩মিনিট দেরি কর মিসকল দিতে! আর একটু দেরি হলে হয়ত মারাই যেতা টেনশন এ! তোমার এই বালকসুলভ অভিমানের কথা শুনলে সত্যিই খুব হাসি পায়: বোঝইতো ১২টার পরে লাইন পাওয়া কত কঠিন_ নেটওয়ার্ক এ বিশাল জ্যাম বেধে যায়।

তাছাড়া তোমাকে তো বলেছি- কানন রাতে আমার সাথে ঘুমায়, ও জেগে থাকতে কি ফোন করা যায়, একেবারে সোজা মা’র কাছে বলে দেবে! আহ! যদি কাননের মত হতে পারতাম...! তুমি নিশ্চয়ই ওকে খুব আদর কর, রাতে জড়িয়ে ধরে ঘুমাও...! rubbish! ছোটভাই হওয়ার এত ইচ্ছা থাকলে আর কাননের দুলাভাই হওয়া লাগবেনা! রাতে তখন বউয়ের পরিবর্তে বালিশ জড়িয়ে ঘুমুতে হবে...! আগেতো বউ হও... বলা যায়না ; সারারাত না ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিতে পারি! ...... আজ কী হয়েছে জানো!- বিকেলে হলের সামনের আম গাছটার নিচে বসে তোমার কথা ভাবছি_ আমরা হানিমুন করতে ডিজনিল্যাণ্ড গিয়েছি, হাত ধরাধরি করে সমুদ্রস্নান করছি.....আমাদের একটা কুট্টুস হয়েছে.... অর্থাৎ তোমাতে পুরোপুরি আমার সত্ত্বার লীন ঘটেছে; হঠাৎ ধড়াম করে গাছ থেকে আম পড়ল মাথার উপর আর ভাবনাও অসমাপ্ত রয়ে গেল, আমটাই যত অনিষ্টের মূল। আচ্ছা, আমটাতো ডানে-বায়ে কোথাও পড়তে পারত কিংবা গাছেই ঝুলে থাকত; পড়ার জন্য আমার মাথাটিই বেছে নিল কেন! তোমার কি মনে হয় প্রকৃতিই আসলে আমাদের বিচ্ছেদ চায়? সন্ধ্যাময় এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে একসময় ৩টি সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম: * আমের বৃন্ত খুব আলগা, সামান্য ঝড়োবাতাসেই তাই আম পড়ে। * বিকেলে বাতাস না থাকা সত্ত্বেও যেহেতু আম পড়েছে, সুতরাং ধরে নেয়া যায় আমটি অকালপক্ক । *তোমাকে নিয়ে নানা রসালো ভাবনায় আজকাল বেশি লোভী হয়ে উঠছি; তাই ঈশ্বর মাথায় আম ফেলে আমাকে মধুর শাস্তি দিয়েছেন। জানতো ,প্রমিত বাংলায় আমকে বলে “রসাল”! পরের পর্ব এখানে পাবেন


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.