আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হৈমন্তীর সিঁদুরে সংক্রান্তির বিন্দু বিন্দু মেঘ-১

আত্মবিশ্বাসহীনতায় প্রকট হচ্ছে আত্মার দেউলিয়াত্ব, তবুও বিশ্বাস আগের মতই নিশ্চল..

[“সে হয়ত অন্য রমণীদের মতই , কিন্তু তার দিকে দৃষ্টি পড়লে আপন অলক্ষ্যেই একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে ফেলি । সে এমনই এক নারী যার শুভ্রতার সঙ্গে কেবল নীলিমারই উপমা দেয়া চলে”- কথাগুলো জনৈক শৌখিন শেখরের যিনি সম্প্রতি রবিঠাকুরের “হৈমন্তী” গ ল্প “রিমেক” করার অপরাধে দেশের বুদ্ধিজীবিমহলে ব্যাপক নিন্দিত হয়েছেন । মৌলিক লেখাকে পাশ কাটিয়ে এধরনের কালজয়ী গল্পকে নিজের মত করে লেখার সপক্ষে তার সবচেয়ে জোরালো যুক্তি হল : “পুরাকীর্তি টিকিয়ে রাখতে যেমন সংস্কারের প্রয়োজন , ক্লাসিক গল্পগুলোকেও তেমনি সময়-সমাজের নিরিখে পুনর্বিন্যাস করতে হয় সেগুলোকে অনন্তকাল স্থায়িত্ব প্রদানের স্বার্থেই । আর ,হৈমন্তীর মত নারীকে নিয়ে লেখার জন্য রবীন্দ্রনাথের একার প্রয়াস যথেষ্ট নয় ; “শুচিস্মিতা” হৈমন্তীর মাত্র একটি নৈসর্গিক হাসির মাঝেই একত্রে মিলিয়ে যেতে পারে পৃথিবীর সকল লেখকের ভাবুক সত্ত্বা ”- এ ধরনের অদ্ভুত যুক্তি শোনার পর বিতর্কিত শেীখিন শেখরের সঙ্গে দেখা করে তার লেখা “হৈমন্তী” গল্প পড়ার লোভ সংবরণ করাটা আমার জন্য দুরূহই ছিল ! পড়ার পর এখন হৈমন্তীর কাল্পনিক অস্তিত্ব সততই আমায় মোহাবিষ্ট রাখে ; তাই শেখর সাহেবের গল্পটি তুলে ধরছি : পাঠক, অনুভবের দরজা খোলা রাখুন ; একটু পরই হৈমন্তী উঠে আসবে আপনার সত্ত্বার গহীনতম প্রদেশ থেকে...! ] (%) তাহাকে কবে প্রথম দর্শন করিয়াছিলাম তাহা ইয়াদে আসিতেছে না । বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কয়েক পক্ষকাল অতিক্রমণের পর সহসাই একদিন মালুম হইল নিজের ভিতর এমন কিছুর রিক্ততা রহিয়াছে যাহা এতকাল উপেক্ষা করিয়া আসিয়াছি, কাহার সিথির সিঁদুড় যেন বলিয়া ফিরিতেছিল “ হে সণ্নসী, ধ্যান ভাঙিয়া আঁখি মেলো ; এ সিঁদুর-শাঁখা-শাড়ির সঙ্কাশ তোমাতে-আমাতে যুগলবন্দী হইতে চায়।

” সেই আহ্বানের প্রত্যুত্তরেই কিনা অকস্মাৎ নিজ শ্রেণীতে এমন একখানি মুখ আবিষ্কার করিলাম যাহা আমার সণ্নাসী চিত্তকে সুবিশাল আলোড়িত করিল : তাহার মুখশ্রী হেলেন-ক্লিওপেট্রা কিংবা নুরজাহানের সহিত কোনক্রমেই তুলনীয় নহে , বরং সিস্টার নিবেদিতা - ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের প্রশান্ত সৌম্য যেন তাহার অবয়বে বিস্তীর্ণ। তুলনা করিবার আদিখ্যেতা সম্পূর্ণ অনাবশ্যক; সে মুখশ্রী স্বমিহমায় স্বতন্ত্র, আমার ২১তম বৎসরে পৌরুষের প্রথম মহাজাগরণের উপলক্ষ_ নাম তাহার হৈমন্তী ; হেমন্তের ন্যায়ই নাতিশীতোষ্ণ যাহার প্রকৃতি , অম্বরে যাহার অভিমানের ক্বচিৎ মেঘ জমিবামাত্র অনুরাগের রোদ আসিয়া তাহা বিদূরিত করে, আর আমার সণ্নাসী হৃদয় সাক্ষী গোপাল হইয়া একদৃষ্টে হেমন্তের স্নিগ্ধতাকে প্রত্যক্ষ করে , হয়তবা হৈমন্তীকে নিবিড় অনুভবের গুপ্ত আকাক্সক্ষাই তাহাতে নিহিত! “হৈম” আমার সম্পদ নহে ,আমার“বিশ্বাস”। সম্পদ থাকে অধিকারে, আর বিশ্বাসের ব্যাপ্তি চেতনার সমগ্র সত্ত্বাজুড়িয়া। আমার অধিকার আমার বিশ্বাসের আজ্ঞাবহ মাত্র ; “হৈম”কে আজ্ঞা করিয়া নিজের বোধকে অবজ্ঞা করিবার মত নরাধম এই “ভাবসণ্নাসী” কিরূপে হইতে পারে? বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের কিয়ৎকালের মাঝেই সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সহিত আমার ঘনিষ্ঠতা চরম পর্যায়ে উন্নীত হইয়াছে । প্রেক্ষাপট এরূপ হইয়াছে যে আমি ব্যতীত স্বীয় অনুষদে কোন সহশিক্ষামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করিবার মত যোগ্যব্যক্তি দুষ্প্রাপ্য।

ইহাতে ফলাফল আসিয়াছে দু’ রকম : যৎসামান্য যশ জুটিয়াছে , যশের অপযশে পড়াশোনার শিকের ঘটিয়াছে ব্যবচ্ছেদ। তাই একদার স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত কৃতিছাত্র অদ্যকালে পরীক্ষা পাশের শঙ্কায় ত্রাহি ত্রাহি করিতেছে! পড়াশোনার প্রসঙ্গ পাড়িতেছি ,কারণ হৈম আর আমি “পড়াশোনা লেখচিত্রের”সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন বিন্দু। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পয়লা বৎসর আমাদের এক দিনের তরেও বাক্যবিনিময় হয়নি ; অধিকন্তু প্রথম বর্ষে পড়াকালীন দশায় একখানি দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ করিয়াছিলাম যাহাতে শ্রেণীর সকল ছাত্র-ছাত্রীর চরিত্র লইয়া পৃথকভাবে হাস্যরস বরাদ্দ ছিল ; পক্ষান্তরে হৈমকে লইয়া কৌতুক করিব কী ,তাহার নামখানিই তখনও অজানা আমার; অবশেষে তাহার ব্যাপারে মন্তব্য লিখিলাম _ “নির্বাকতাও একপ্রকারের শিল্প, দেরিতে হইলেও বুঝিলাম”, কারণ সহপাঠীদের সহিত সে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন , সর্বদা অদ্ভুত এক আড়ষ্টতায় নিজেকে সকলের হইতে কেমন যেন লুকাইয়া রাখিবার প্রবণতা তাহার মধ্যে লক্ষণীয়! পরে অবশ্য ভুল আমার ভাঙিয়াছেÑ প্রকৃতপক্ষে তাহার উচ্চ মানসিকতার সাপেক্ষে সহপাঠীদের বুদ্ধিমত্তার স্তর তুলনামূলক নিম্নগামী হওয়ায় সে ভারসাম্য বজায় রাখিেেত হিমশিম খাইতেছিল ; ইহাকে দুর্বলতা না বলিয়া আমি আমাদিগকে অভিযুক্ত করিব বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহারের দায়ে! তাহাকে ঘিরিয়া বিড়ম্বনার সংখ্যাও অগণিত _ আমাদের সকলপ্রকার অনুষ্ঠানে সে যথারীতি অনুপস্থিত , এমনকি ধর্মঘটে বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলবস্থা সৃষ্টি হইলেও সে ক্লাসে আসিত; যদিও “আসিতে বাধ্য হইত” বলাই বোধকরি যৌক্তিক, কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের কন্যা ইচ্ছের বিরুদ্ধে হইলেও নিয়ম মানিতে বাধ্য । তাছাড়া তাহার পিতা হইল সেই শিক্ষক যাহাকে ছাত্রদের অপছন্দ করিবার মত কারণের অভাব নাই, কিন্তু পছন্দ করিবার জন্য একটিমাত্র কারণ খুঁজিতে গেলেও শার্লক হোমসকে তলব করিতে হইবে নিশ্চিত! গোবরে পদ্মফুলের পরিপুষ্টি এত ভালো সাধিত হয় যে গোবরে পদ্মফুল জন্মিবে ইহাই স্বাভাবিক, কিন্তু বুড়িগঙ্গার দূষিত বর্জ্যে পদ্মফুলের ফলন দেখিলে অবাক লাগে বৈকি ! সেই বর্জ্যরে পদ্মকে তুলিয়া আনিয়া হিমালয়ের পাদদেশে প্রস্ফ’টিত করিবার অসম্ভব আকাক্সক্ষা যাহারা পোষণ করে, সম্ভবত আমি সে আজাদী ফৌজের সর্বাধিনায়ক! দীর্ঘ ১বৎসর পাঠ্যক্রম সম্পণ্ন করিবার পর হৈম-আমার মধ্যেকার স্বল্পতম প্রারম্ভিক আলাপন অনুষ্ঠিত হইল কোনরূপ পূর্বপ্র¯ত্ততি ব্যতিরেকেই : অনূষদের জয়ন্তী উৎসব উপলক্ষে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মঞ্চায়নের সার্বিক দায়িত্ব পাইয়া আমি আক্ষরিক অর্থেই ব্যস্ততার “সচল সব্যসাচীতে”পরিণত হইয়াছি , তেমনি এক ব্যস্ততম মুহূর্তে হৈম আসিয়া জানাইল সে অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশনে ইচ্ছুক; উহাই আমাদের প্রথম কথোপকোথন। তাহার সঙ্গীত পটুৃতার ব্যাপারে অবগত ছিলাম , কিন্তু ইহার মাহাতœ্য উপলব্ধি করিলাম মহড়া কক্ষে তাহার সঙ্গীত পরিবেশিত হইবার পরক্ষণেÑ রাগ-রাগিনীরা যেন সুরের মিছিলে সমগ্র কক্ষটিকে অবরুদ্ধ রাখিয়াছে জাগতিক সকল বন্ধন হইতে! সঙ্গীতের সেই ইন্দ্রজাল নিমিষের মাঝে শিক্ষার্থীমহলে তাহার পক্ষ হইতে এক ঐশ্বরিক বার্তা প্রেরণ করিল ; আশ্বার্যাণ্বিত হইয়া অবলোকন করিলাম ছাত্রদের অনেকেই তাহার প্রতি কিঞ্চিৎ প্রণয়িক আকর্ষণ অনুভব করিতে আরম্ভ করিয়াছে, যাহাদের অন্যতম পুরোধা আমার ঘনিষ্ঠ সহচর- তুখোড় ছাত্র অনিরুদ্ধ।

অনিরুদ্ধের প্রাগ্রসরতায় এই ভাবিয়া স্বস্তিবোধ করিলাম যে অচিরেই হয়তবা সণ্নাসীরূপে প্রত্যাবর্তনের অবকাশ মিলিবে , কারণ আমার লোহিত কণিকা- অনুচক্রিকায় সণ্নাস প্রবাহিত ; হৈম’র আকর্ষণে সেই “সণ্নাসের অধিকার” খর্বিত হইলে উহা যে আমায় অভিশম্পাত করিবে; অধিকারের লংঘন ঘটিলে তাহা চটিয়া যায় ,আর খর্বিত হইলে গোস্বা করে! ক্রোধ যদিওবা প্রশমিত হয় , গোস্বা আঠার ন্যায় লাগিয়া থাকে মনের কুঠুরীতে! যাহা হউক, অনিরুদ্ধ-হৈমন্তীর ভাব জমিতে বিলম্ব ঘটিল না : উভয়েই উচ্চ মেধাবী, প্রত্যহ পাঠাগারে একত্র পাঠ্য আলোচনা,পারস্পরিক নোট আদান-প্রদানের যুগ্ম প্রয়াসে তাহাদের পরীক্ষার ফল পূর্বের চাইতেও প্রকৃষ্ট হইতে থাকিল, সুতরাং আমি মহানন্দে ব্রহ্মচার্যে ফিরিয়া আসিলাম , লেখালেখি-গবেষণা-গৃহশিক্ষতার ব্যস্ততায় হৈমন্তী অবিশ্বাস্য দ্রুততায় বিস্মৃত হইয়া গেল ; আমার বিষাদ আমার হর্ষের প্রতিবিম্ব; তাই আমার নিকট মিলন আর বিরহের আবেদন অভিন্ন!তবে নিদারুণ ব্যথিত হইলাম যেদিন অনিরুদ্ধ হৈমর হৃদয় প্রার্থনা করিয়া প্রত্যাখ্যাত হইল , যুগপৎ মুগ্ধতা ছড়াইল অনিরুদ্ধ মারফত হৈম’র জবাব শ্রবণ করিয়া : “ অনিরুদ্ধ, তোমায় আমি প্রার্থনা করি- প্রত্যাশা করি ,এমনকি তুমি আমায় যত নিবিড়ভাবে কামনা কর আমার তোমায় অধিগ্রহণের অভিলাষ তাহা অপেক্ষাও প্রবলতর , কিন্তু কোন এক অদৃশ্য দুষ্টগ্রহ আমায় পিছু টানিতেছে যাহা ছিন্ন করিয়া তোমার কাছাকাছি হওয়া অসম্ভব ” - এই ভাষাকে প্রত্যাখ্যান নাকি প্রত্যুদগমন বলে তাহা আমার অজানা ;কিন্তু ইহার মাধ্যমেই সিদ্ধান্তে আসিলাম - হৈমর সংস্পর্শে প্রতিহিংসার দেবীও মহোৎসাহে অহিংসার বাণী প্রচারে প্রবৃত্ত হইবে! অবশেষে আমার বয়স আমার সণ্নাসকে নির্মম ব্যঙ্গ করিয়া আমার ভেতরের নবপুরুষটিকে জাগ্রত করিল ; হৈম ব্যতীত ধরণীর সকল নারীই যাহার অচেনা! তৃতীয় বর্ষে আসিয়া জীবনের বিচিত্রতর অভিজ্ঞতাটির সম্মুখীন হইলাম : বসন্তবরণ অনুষ্ঠানে যথারীতি আমিই সর্বেসর্বা; অতএব ইহা সহজেই অনুমেয় যে হৈমর সঙ্গীত তাহার শ্রীবৃদ্ধি করিবে, কিন্তু সে সঙ্গীত পরিবেশনকালে আমাদের শ্রেণীরই কতিপয় তস্কর ছাত্র দর্শকসারি হইতে এমন সব অশ্লীল বাক্যবর্ষণ করিল যে সঙ্গীত সমাপ্ত হইবামাত্র তড়িৎ গতিতে সে অনুষ্ঠানস্থল পরিত্যাগ করিল ; অনুষ্ঠানের পরিকল্পনায় নিমগ্ন থাকিলেও তাহার এহেন প্রস্থান আমার দৃষ্টিগোচর হয়, তাই জনৈক স্বেচ্ছাচারী দেবদূত যেন তৎক্ষণাৎ আমায় বাধ্য করিল তাহাকে অনুসরণ করিতে । পথিমধ্যে সাক্ষাৎ ঘটিলে করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করিলাম, যদিও তাহার সহিত কৃত দুর্ব্যবহারের জন্য আমি কোনক্রমেই দায়ী নই ; কিন্তু আমার প্রতি কোনরূপ ভ্রুক্ষেপ না করিয়াই সে আপন গন্তব্যে চলিয়া গেল ; আমি পিছন হইতে কেবল নিস্ফল আহ্বান করিয়া গেলাম....... এ ক্ষুদ্রজীবনে নারী এবং ক্রিকেট বল ,এ দুটি বস্তু না চাহিতেই হরহামেশা মিলিয়া গিয়াছে , কিন্তু হৈমর নির্মম চপেটাঘাতে আমার সেই দীর্ঘদিনের দর্পচূর্ণ হওয়ায় স্বয়ং আমিই পুলকিত, কেননা বিনে পয়সার পুষ্পমাল্য দিয়া শোবার ঘর শোভিত করবার অভিরুচি আমার কোনকালেই ছিল না ; পক্ষান্তরে এভারেস্টের চূড়ায় “হৈমন্তী” নামক এক বিরল প্রজাতির পুষ্পের সন্ধান মিলিয়াছে । অতএব তাহাকে জয় করা চাই-ই চাই ! ......পূর্বানুমানের মতই সেইদিনের পর আমার সকলপ্রকার কর্মকাণ্ড হইতে হৈম নিজেকে সড়াইয়া লইল , আর ইহাতে আমার মধ্যে ব্যতিক্রম কিছু করবার তাড়না সুতীব্রতর হইল : ক্রমাগত সব অত্যাশ্চর্য কর্মকাণ্ডের মাঝে একীভূত হইলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্র এমনকি নিজ শ্রেণীতেও অসংখ্য গুণগ্রাহী জুটিল , কিন্তু মূল পরীক্ষার রঙ্গমঞ্চে হৈমর ঊর্ধ্বমুখীতার সঙ্গে আমার নিম্নগামীতার উপাখ্যান পাল্লা দিযা অভিনীত হইতে থাকিল; শেষবর্ষে আসিয়া পরিস্থিতি এরূপ দাঁড়াইল যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে হৈমর নিয়োগ পাওয়াটা নিশ্চিত, আর আমি যে কোন প্রকারে পাশ করিলেই বর্তে যাই, কেননা বেশ কয়েকটি নামকরা দৈনিকে আমার চাকুরির কথা-বার্তা চলিতেছিল : গত চার বৎসর যাবৎ ভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে আমরা যে পথে হাটিতেছি কিছুদিন পরই সেটি বাঁক লইবে ; সুতরাং এখন সেই মাহেন্দ্রক্ষণ উপস্থিত যখন সিদ্ধান্ত লইতে হইবে আমরা নতুন বাঁকে সহযাত্রী হইব, নাকি পরস্পরকে বিদায় জানাইয়া নিজ নিজ পথ দেখিব! আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ ক্লাসটির ইতি ঘটিলে ক্যাম্পাস প্রাঙ্গনে উৎসবের হোলী খেলা চলিল; দিনশেষে ভগ্নমনে-অবসন্ন দেহে ফিরিবার কালে হৈমকে ডাকিলাম এবং সে সাড়া দিল ; দুরত্ব ঘুচাইয়া কাছাকাছি হইবামাত্র বলিলাম“আমিই সে দুষ্টগ্রহ যে তোমায় এতকাল পিছু টানিয়াছে ;চল আজ তবে রাহুমুক্তির জিগীষায় শুক্লপক্ষের শুভাশিসে তোমার-আমার পুনঃপরিচয় হউক। ”- প্রত্তুত্তরের পরিবর্তে হৈম ক্ষণকাল রাহুগ্রস্থের ন্যায় আমার দিকে তাকাইয়া রহিল যে দৃষ্টিতে যদ্যপি বিস্ময়- অবিশ্বাস -ক্ষোভের সম্মিলন থাকিলেও বিরাগ কিংবা সম্মতির চিহ্নমাত্র নাই ; বুঝিলাম সে এবার গমনেচ্ছুক, কিন্তু অক্ষমতার দৈব প্রলোভনে সে নিথর দাঁড়াইয়া রহিছে! একইসঙ্গে আমার মাঝেও অকস্মাৎ নির্বাকতার ভিসুভিয়াস উত্থিত হইল ; তাই তাহাকে স্পর্শ করিবার অরাধ্য সাধকে আমার আজীবনের খেদে রূপ দিয়া হৈম ধীরেধীরে চলিয়া গেল। অভ্যন্তরীণ ভিসুভয়াস কেবল অনর্থক ফুঁসিয়াই ক্ষান্ত দিল; অনুভূতির উদগিরণে সে পুরোপুরি ব্যর্থ! “আমি তাহাকে হারাইলাম ,তদাপেক্ষা তাহাকে চাইয়া পরিহাসের পাত্র হইলাম ”¬¬- এই ধ্র“ব মনস্তাপের পিঞ্জরাবদ্ধ দশায় আমার বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটিল।

..... শিক্ষক হিসেবে যোগদান করিয়া আগামী মাসে উচ্চতর শিক্ষার নিমিত্তে হৈমর জর্মন গমনের সব বন্দোবস্ত যখন সম্পণ্ন আমি তক্ষণে “The Early Voice ” দৈনিকের “promising reporter” হইয়া আপন লক্ষ্যের নবচিত্রায়ণে ব্যস্ত ; সণ্নাসকে পুনরায় দত্তক লইয়াছি, তবে একদা যাহা ছিল সংকল্প আজ তা কেবলই ছদ্মবেশ; হইতে পারে নিজেকে স্বীয় ভ্র“কুটি হইতে আড়াল করিবার অপচেষ্টাই তাহাতে নিহিত! (চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।