তবুও জীবন যাচ্ছে কেটে জীবনের নিয়মে।
জাতি হিসেবে অন্যের পন্যকে নিজের থেকে বেশি কদর করি বলেই হয়ত অনেক আগে থেকেই মেইড ইন চায়না, থাইওয়ান, কোরিয়া, জার্মানি শুনে আসছি। দেশে চায়না, থাইওয়ান, মালেশিয়া, সিঙ্গাপুর, কোরিয়ার প্রোডাক্টের ভিড়ে মেইড ইন জার্মানি হয়তো চান্সই পায়নি তাই দেখা বা ব্যবহারের সুযোগ হয়নি।
ইলেকট্রনিক্স পোডাক্টের কথা বাদই দিলাম। শুধু একটা উদাহরন: আমাদের সেলারে একটা কেহেরমান সাইজের ডিপ ফ্রিজ আছে ১৯৮০ সালের।
যদিও ইলেকট্রিসিটি প্রচুর টানে তারপরও এতো রিলায়েবল যে ফেলে দিতে মন চায় না। বর্তমানের সবগুলো ইলেকট্রনিক্স পোডাক্ট দুই বছর পর অটোমেটিক বাতিলের খাতায়। অবশ্য প্রতিটা ইলেকট্রনিক্স জিনিসের গ্যারান্টি এখানে দুই বছর। সেটা সাধারন বাল্ব থেকে লাখ ইউরো দামের কোন জিনিসই হোক না কেন। সব প্রোডাক্টই এখন মেইড ইন চায়না।
তাই দুই বছরের বেশি যাওয়ার কোন চান্স নেই।
বর্তমান দুনিয়ায় পোষ্ট অফিস যে বিলিয়ন ইউরোর ব্যবসা করতে পারে এর দৃষ্টান্ত ডয়েচে পোষ্ট। যেরকম খরচ সেই রকম সার্ভিস। কয়েকবছর আগে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কয়েক মিলিয়ন ফাইন করেছিলো অতিরিক্ত আয়ের জন্য। আজ পাশের শহরে একটি চিঠি পাঠানোর খরচ নিলো ২.৫০ ইউরো।
এতো দাম শুনে মনে একটু ব্যথা পাইছি তারপরও সহিসালামতে কাল গিয়ে পৌছাবে সেটা ভেবে মন ভালো হয়ে গেলো। সাধারন চিঠি থেকে শুরু করে দরকারি কাগজ, পাসপোর্ট সবই পোষ্টের মাধ্যমে আদান প্রদান হয়ে থাকে। গত দুই সপ্তাহ আগে দেশে একটি সিডি পাঠিয়েছিলাম। চার ইউরো খরচ করে। জানতাম ঐটা পাবার কোনই সম্ভাবনা নাই।
তারপরও কেনো যেনো পাঠাতে ইচ্ছে হলো। আজ পর্যন্ত হদিছ নেই। থাকার কথাও না। যখন পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে চাকুরী খুজতে হোস্টেল ছেড়ে মেসে আশ্রয় নিয়েছি। তখন এক পোষ্ট অফিসের কামলার সাথে পরিচয় হয়েছিলো।
সকাল ৯.৩০টায় গিয়ে খাতায় সাইন করে দুপুরে এসে খেয়ে ঘুম দিয়ে উঠে বিকেলের দিকে একটু ঢু মেরে কয়েকটি বিদেশি ম্যাগাজিন / সিডি নিয়ে হাজির। জিঞ্জেস করে জানলাম উনি বৈদেশিক শাখায় চাকুরী করেন তাই এই রকম জিনিস নাকি ওখান থেকে ফ্রি পাওয়া যায়। এই হলো আমাদের পোষ্ট অফিসের সার্ভিস। কয়েকদিন আগে দেখলাম দেনার দায়ে বিভিন্ন প্লেন বাংলাদেশের চিঠি নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
অফিসের ব্যবহারের জন্য সেক্রেটারির রুমে আলমিরা ভর্তি শতরকমের কলম, রাবার স্টাম্প, অফিস পেড, স্টেপলার, পাঞ্চ মেশিন, সিডি/ডিভিডি, কাঠপেন্সিল থেকে শুরু করে ১৫/২০ রকমের ইনভেলপ।
আলপিন থেকে শুরু করে লাখ ইউরো দামের প্রিন্টার সবই বর্তমান। বিভিন্ন কালারের অফিসের পেড। ৩০/৩৫বছর থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যতোগুলো প্রোডাক্ট ডেভোলপ হয়েছে সবগুলো একটা লাইব্রেরী করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কলমের লোভ আমার সেই ছোটবেলা থেকেই। কয়েকদিন পরপর বিভন্ন রকমের কলম এনে ড্রয়ার ভর্তি করে ফেলি।
যদিও লিখা বলতে শুধু সিগ্নেচার করা আর টুকিটাকি। রুমে বিরাট হোয়াইট বোর্ড। ওখানে বিভিন্ন সময় কলিগদের সাথে সাবষ্টেশন, কন্ট্রোল সেন্টার, কমিউনিকেশন প্রটোকল বুঝাতে বা বুঝতে ড্রয়িং করতে হয়ে। ঐদিন গুনে দেখলাম হোয়াইট বোর্ডে লিখার জন্য আমার কাছে বিভিন্ন কালারের ১৫টি মার্কার আছে। কয়েকমাস আগে নিজের জন্য একটি ক্যালকুলেটর নিতে গিয়ে দেখলাম ক্যালকুলেটরের সাইজ অনেক বড়।
আমার দরকার ছোট একটি ক্যালকুলেটর। যদিও কম্পিউটারের ক্যালকুলেটর দিয়ে কাজ সারা যায়। তারপরও ব্যস্ত সময়ের জন্য দরকার হয় (কারেন্ট, ভোল্টেজের হিসেবগুলো মিলিএম্পস, মিলি সেকেন্ডে বাহির করতে হয়)। সেক্রেটারি বল্লো তুমি এখন বড়টাই নিয়ে যাও আমি তোমার জন্য নতুন একটা অর্ডার করতেছি। তারপর মাইন নদীতে অনেক পানি গড়াইছে।
আমিও সেক্রেটারির রুমের দিকে যাইনি। আজ একটি কাজে যেতে হলো। সেক্রেটারি ডেকে বল্লো তোমার ক্যালকুলেটর সেই কবে এসে গেছে। আমি হাসি দিয়ে ডাংকে বলে নিয়ে আসলাম। অফিসের অবস্হা দেখে মনে হলো ওরা তোমাকে সবকিছুই দিবে এবং তোমার কাছ থেকে ১০০% আদায়ও করে ছাড়বে।
দশ ঘন্টার বেশি কাজ করা নিষেধ। কারন ১০ঘন্টা একটানা কাজ করার পর তোমার মাথায় অবশিষ্ট কিছুই থাকবে না অফিসকে দেওয়ার মতো। তাই এখানে বসে ঘন্টা না বাড়িয়ে বাসায় গিয়ে ঘুমাও।
প্রোডাক্ট যেরকম ভালো সেরকম সার্ভিস চার্জও বেশি। কাষ্টমারের হাজার প্রশ্নের উত্তরের পর কোন একটা ফাংশন ডিভাইসে এ্যাড করতে হয়।
দেশে গিয়ে ইলেকট্রিসিটির বেহাল অবস্হা দেশে মনে হলো আমরা যেসব প্রোডাক্ট এখানে তৈরী / ব্যবহার করি এইরকম ডিভাইস দেশে ব্যবহার করলে অনেক টাকা প্লাস ইলেকট্রিসিটি সাশ্রয় হতো। তবে এগুলো অপারেটের জন্য যে স্ট্রাকচার দরকার সেগুলো কি দেশে আছে। আমার কলিগ একদিন বলতেছিলো লোডশেডিং কি জানো নাকি? শুনে হাসবো নাকি কাদবো কিছুই বুঝলাম না। বল্লাম জানি না। সে অনেক যত্ন করে আমাকে বুঝালো।
আমি ও নতুন করে লোডশেডিং কি জিনিস শিখলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।