আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জন্মদিন ( উৎসর্গঃ রাত মজুর)

পরিবর্তনের জন্য লেখালেখি

মেয়েরা কেন যে লাল শাড়ি পরে ! ধুত্তারি! এই যে মানুষ মহিষ তাড়ানোর জন্য লাল রঙ দিয়ে রাগায় সেইটা থেকেও তো কিছু শেখার আছে, আছে না? মানে, পুরুষ আর মহিষ খুব একটা পার্থক্য কি? নাই বলেই তো বৃষ রাশি বলে একটা রাশি আছে । গজ গজ করতে করতে ছেলেটা অসহায় চোখে আড়াল খোঁজে । মেয়েটা লাল শাড়ি পরবে, সেইটা কারো দোষ না । লাল শাড়ি পরলে ছেলেরা তাকাবে , সেইটাও কারো দোষ না। কিন্তু ছেলেটা কেন রাস্তার হাজার হাজার চোখ গুলোতে ঘুষি মেরে আলু বানাচ্ছে না, সেইটা তার দোষ ।

শুধুমাত্র এই যন্ত্রনার কারনেই ওকে বলেছিলো , বাইরে গিয়ে কাজ নেই চলো ফাস্ট ফুডে বসি । ঝাড়ি খেতে হলো । এটা নাকি মেয়েটাকে বিয়ের আগেই মোটা বানিয়ে শাশুড়ির চক্ষুশূল বানানোর চিন্তা । রীতিমত দেশদ্রোহীতার কাছাকাছি । এই সব ভ্যান তারা কাঁহাতক সহ্য হয়? বন্ধুর বাসার কথা বলে শেষ করতে পারে নাই , এ টি এম শামসুজ্জামানের মতন নারীলোলুপ ভিলেন জাতীয় উপাধি , তারপর কান্না এবং যথারীতি কথা বন্ধ ।

“আমি তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম। “ আরে মর জ্বালা রে ! কিয়ের মধ্যে কি! আর পারি নাহ! এই শহরটার মাথায় ঝাটার বাড়ি । একটা জায়গা নাই যেখানে একটু শান্তিমত বসে কথা বলা যায় । ছেলেটা এবার সত্যি সত্যি অসহায় বোধ করে । ইফতারের পরে টিউশনিতে যেতে হবে ।

যদিও সে নিজে মহা রোযাদার না কিন্তু না চাইলেও থাকতে হয় কারন এ সময় মেসে রান্না বন্ধ থাকে । বুয়ার রান্নার খরচ সবাই মিলে দেওয়া হয় । কেউ না খেলে একার পক্ষে রান্নার টাকা দেওয়া ছেলেটার পক্ষে সাজে না। ও সব বিলাসিতায় না গিয়ে বরং একমাস ধার্মিক হওয়া ভালো । কিন্তু আজকে মানছে না গো।

মাথাটা কেমন ঘুরায় । রাত করে ঘুমিয়ে সেহরীতে ওঠাও হয়নি । পাশের ঘরের বড়ভাই দুই একবার ডেকে ক্ষান্ত দিয়েছেন হয়ত । মনেও নেই । লাশের মত ঘুম হয় আজকাল ।

পয়সা বাচাতে গিয়ে পান না , সিগারেট না, চা না – শখ করে কিছু করা বললে তো ঐ ঘুমই । ঐটুকু সে পুরোমাত্রায় আদায় করেই নিতে চায় । “তাহলে কি রিকশায় করে ঘুরবে? “ উত্তরের আশংকায় এই প্রখর রোদেও ছেলেটার ঘাম আসে । এক ঘন্টা মানে ৭০ থেকে ১০০ টাকা । মেয়েটার মাথা নাড়া দেখে হাপ ছেড়ে বাঁচে ছেলেটা ।

মনে মনে একটু আদর ও করে দেয় ওর ভেজা লালচে গাল দুটোয় । আহারে, রোদের ভিতর দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে হাপিয়ে উঠেছে । “তাহলে চলো রাস্তায় বসি। “ “ এমা! ছিঃ ! রাস্তায়?” পাট ভাঙ্গা সুতির শাড়িটার দিকে তাকিয়ে মেয়েটার মুখটা করুন হয়ে ওঠে । জ্বালালে দেখছি! “তাহলে কি ইফতার পর্যন্ত এরকম দাঁড়িয়ে থাকবো ?” গলার স্বর কি একটু উঠে গিয়েছিলো ! মেয়েটা কুকড়ে যায়।

নাহ , ঠিক হলো না । লক্ষ একটা রক্তরাঙ্গা চোখ এড়িয়ে , হাজারটা কাজের থেকে সময় বাঁচিয়ে এই যে একটা ঘন্টার জন্য শহরের এ প্রান্তে আসা- সে তো তারই জন্য। হয়ত হেঁটে এসেছে অনেকটা পথ । স্বীকার করবে না যদিও। মনটা খারাপ লাগে ।

আকাশের ও মন খারাপ। একটা ছাই রঙা পর্দা এগিয়ে আসছে উত্তর পূবে । পশ্চিম তখনও রোদে উজ্জ্বল, তাপ নেই অতটা । ঘড়ি বলছে একটু পরেই নামবে অন্ধকার। বেশ খানিকটা দর কষাকষি করে একটা রিকশাতে উঠেই পড়ে ।

ধানমন্ডি লেক। মেয়েটা ব্যাগ থেকে এক বোতল পানি বের করে। আর কাগজে মোড়ানো কিছু একটা । কালোমত বস্তুটা যে একটা খাদ্যদ্রব্য উহা না বলিলে বুঝা যাইতো না । মেয়েটার চিকন স্বর আরেকটু ফিস্ফিসে হয়ে উঠে ।

“না মানে , ওভেন তো নেই তাই সস্পেনে একটু চেষ্টা করেছিলাম। “ বস্তুটির নাম কি হইলেও হইতে পারে যেইটা ওভেনে বানাইতে হয় ভাবতে ভাবতে ছেলেটা আরেকটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে। ও আসলেই ভুলে যায় মেয়েটার মাথায় বেলী ফুলের কথা, লাল আঁচলের কথা, দেখা করার তাগিদের কথা আর কাগজে মোড়ানো বস্তুর তাৎপর্যের কথা। সূর্য ডোবে , তার সাথে ডোবে ছেলেটার নাম খুঁজে পাওয়ার আশা । মেয়েটা একটু ঘন হয়।

শুভ জন্মদিন ! নাও, কেক খাও। জন্মদিন ! আজ তার জন্মদিন নাকি! যে মানুষটার নাম, পরিচয়, শরীর, জীবন, অস্তিত্ব এই শহর উপেক্ষা করে , ভূমিষ্ঠ হইবার স্থানটি যাকে ভুলে যেতে পারে অবলীলায় – সেই তার জন্মদিন কারো স্মরণের যোগ্য হয় ! কেউ তাকেও উদযাপন করে ! বিস্ময় ! বিস্ময়! সারাদিনের ক্লান্তি, কষ্ট, ক্ষুধা, হতাশা ডিঙিয়ে শান্ত বাতাসে এইবার ছেলেটা সব দেখে। বেলী ফুল দেখে। লাল শাড়ি দেখে। কাঁচা হাতে টানা কাজল দেখে।

আর দেখে মানুষ কেন ভালোবাসে। এই কোটি কোটি মানুষের পৃথিবীতে কেউ একজন কি এমন গুরুত্ব বহন করে ? আমাদের কয়জনকে মানুষ মনে রাখে? কেনই বা রাখবে? অর্থহীন এই বেঁচে থাকায় একজন কেউ যদি বলে , আমি তোমায় মনে রাখি। তোমার ছোট ছোট একঘেয়ে দিন গুলোকে, দুঃস্বপ্নের রাত গুলোকে, তুচ্ছ আবেগ ভুল গুলোকে – আমি দেখি। আমি তোমাকে দেখি। সেই তো ভালোবাসা।

অতি সাধারন কেউ, কারো চোখে অসাধারন হয়ে ওঠা। ছেলেটা আর মেয়েটা হাতে হাত রাখে। ভীষন বিচ্ছিরি আর কালো তিতকুটে জিনিসটা খেতে খেতে ওরা হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে । ওদের কোন নাম নেই । আমরা ওদের নাম জানি না।

জানতে চাইও না । কারন আমাদের কাছে ওরা মনে রাখার মত কেউ নয়। যদিও , ওরা পরস্পরে মনে রাখে। ভালোবাসে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.