আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সোনাপুর খাদ্য গু দাম, কিছু জিনিস কখোনোই বদলায় না

যারা উত্তম কে উচ্চকন্ঠে উত্তম বলতে পারে না তারা প্রয়োজনীয় মুহূর্তে শুকরকেও শুকর বলতে পারে না। এবং প্রায়শই আর একটি শুকরে রুপান্তরিত হয়।

আমার শৈশবের বেশ গুরুত্বপূর্ণ সময় কেটেছে নোয়াখালীর নানুর বাড়ীতে। প্রতিদিন ২ মাইল হেঁটে হাটু পর্যন্ত কাদায় ডুবে ডুবে পদ্মকলী স্কুলে পড়তে যাওয়ার স্মৃতি ভুলবার নয়। যেমন ভুলবার নয় থাবার মত নেমে আসা অন্ধকার যেন জানালা দিয়ে মুখ বাড়ালেই কামড়ে দেবে।

বাড়ীর উঠানের বর্ষার কোমর পানি। পুকুর আর রাস্তা একাকার। খুব আদরের বলে খালা মামা আর নানীর সারাক্ষণের ভয়, পুকুরে পড়ল নাতো। না পড়া হয়নি। এর মধ্যেই সাঁতার শিখে ফেলেছি, লাটিমও।

আমেরিকান বেস বলের একেবারে স্পেশাল নোয়াখালী ভার্সন ব্যাটবলকে পাল্টে ক্রিকেট বানাবার জন্য আপ্রাণ যুদ্ধ করে চলেছি। ডগি ডোবা ঘুড়ি, স্কুল। কুপি জ্বালিয়ে পড়া। হারিকেনের কাঁচে আঙ্গুল দিয়ে চেপে ধরে থাকার প্রতিযোগীতা। অনেক দূরের মাইজদীর খালার বাসায় বেড়াতো যাওয়া।

শিক্ষিকা খালার অতি আদরের ফলাফল স্বরুপ বিনিময় বিতান থেকে টোষ্ট আর দুধ কেনা। আর ড্রাকুলা, খালাতো পাকনা বড় ভাইয়ের বিশেষ আতাতে দেয়া রক্তাক্ত চোখ পড়ে রাতের পর রাত ঘুমাতে না পারা। মামাকে দেখলেই মনে হওয়া যে রাত ১২টার পরই মামা ড্রাকুলা হয়ে যাবে। উফ! আর মামার সাথে বিরিয়ানী আর মোগলাই খাওয়ার হয়রানী। সেই সন্ধ্যায় নেতা মামার সাথে বেড়ুনো.....এর পর ৯-১০-১১ মামার আড্ডা আর আড্ডা আর খাবারের দোকানগুরোর বন্ধ হতে থাকা।

মামার কিছুতেই মনে না থাকা আর আমার প্রায় কান্না কান্না ধৈর্য্যের পরীক্ষা। সেদিন রাত ১টায় মামার মনে হওয়া যে সে আমাকে বিরিয়ানী খাওয়ানোর জন্য নিয়ে বেরিয়েছিল। আমি এজন্য তাকে আজো ক্ষমা করতে পারিনি। তবুও আনন্দ তবুও সুখ ছোট খালা দুধ খাওয়ানোর জন্য সারা বাড়ী দৌড়ে বেড়িয়েছে, ঝিনুকের আমকাটা ছুড়ি বানিয়ে দেবার লোভ দেখিয়েছে। সারারাত উঠানে ঘুমিয়েছি।

খড়ের গাদায় লাফালাফি করে শরীর ছিলে ফেলেছি। আর দিনভর পুকুরেই থেকেছি, নানু এসে বসে থেকেছে তবুও উঠিনি। ভোরে মক্তবে গেছি। হুজুর মাথায় হাত দিয়ে বলেছে জিয়ান ভাল সে বড় মাওলানা হবে, (হা হা এখন নাস্তিক নৃবিজ্ঞানী হয়েছি)। আবার অনেক দিনের পর নোয়াখালীতে।

সোনাপুর পার হচ্ছি আর দুই ফাঁক করে খোলা গেটে লেখা সোনাপুর খাদ্য গু আর অপর পাশে....দাম। গুদাম শব্দটা একবারেই লিখতে পারত, কিন্তু কি এক অদ্ভুত কারনে তা ঘটেনি। আমি আর আমার ছোট্ট মামাতো ভাই হেসে উঠছি। নোয়াখালীর কিছু কিছু জিনিস কখনোই পরিবর্তন হবে না। আমার শৈশবের মতই....শুধু ভুল করে তারিখগুলো মিলে যাবে।

আজকেও দেখি নবম সেপ্টেম্বর।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।