আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইফতার - প্রণব ভট্ট

হেথায় কিছু লিখব বলে চায় যে আমার মন, নাই বা লেখার থাকল প্রয়োজন!

ইফতার সম্পর্কিত প্রণব ভট্টের চমত্কার একটি অসাম্প্রদায়িক গল্প। গল্পটি পিডিএফ ফরম্যাটে ডাউনলোড করতে চাইলে ভিজিট করুন এই লিংক - Click This Link গত কয়েক বছর পূজার ছুটিতে বাড়ি যাওয়া হয়নি দয়াময়র। এর মধ্যে তো টানা দু বছর সে দেশেই ছিল না। সে আর হেমন্ত এমএস করতে দেশের বাইরে গিয়েছিল। ওই পর্ব অবশ্য শেষ, তারা দেশে ফিরেছে।

কিছুদিন তারা দেশে থাকবে। তারপর পিএইচডি করার জন্য আবার বাইরে চলে যাবে। সুতরাং এ বছর যদি পূজার সময় বাড়ি যাওয়া না হয়, তাহলে বেশ কয়েক বছর আর যাওয়া হবে না। হেমন্তকে সে আগেই বলে রেখেছে, হেমন্তরও কোনো আপত্তি নেই। আপত্তি না থাকার কারণও আছে।

দয়ামীয়কে সে ভালোবাসে প্রচণ্ড। এটা আপত্তি না করার পেছনে বড় একটা কারণ। দ্বিতীয় কারণটিও কম বড় নয়, এ দেশে হেমন্তর কেউ নেই। সুতরাং পূজার সময়টা সে যদি দয়াময়ীর সঙ্গে শ্বশুরবাড়িতে কাটায়, সেটা বউ নিয়ে নিজের বাড়িতে থাকার মতোই হবে। পূজার সময় বাড়ি যাচ্ছে, এটা দয়াময়ীর ভেতরে উত্‍সাহ সৃষ্টি করেছে খুব।

তার বাবা-মা দুজনই বেঁচে আছেন। খুব বড় না হলেও বড় দাদা ওই শহরেই ব্যবসা করছেন। ঠিকাদারি। দু দিদি অবশ্য দু জায়গায় ছড়িয়ে। দেশে ফিরে যাদের সঙ্গে কথা বলেছে দয়াময়ী, তারাও বলেছে এবারের পূজায় তারাও যাবে।

বহুদিন পর সবাই একসঙ্গে হলে কী যে মজা হবে, সে তো বোঝাই যাচ্ছে! তাদের দেশের বাড়ি সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায়। একসময় বেশ কয়েক ঘর হিন্দুর বসবাস ছিল সেখানে। এখন নানা কারণে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক কমতে শুরু করেছে। তবে এখনো যে কয়েক ঘর আছে, তারা খুব জাঁকজমক আর হইচইয়ের সঙ্গেই পূজা করে। হয়তো সেটা ঠিক দয়াময়ীদের ছোটবেলার মতো হয় না।

যেটুকু হয়, তাতেও আনন্দ অনেক। এই আনন্দের মধ্যে একটু খচখচানি শুধু থাকে - ছোটবেলার সব বন্ধুকে যদি একসঙ্গে পাওয়া যেত, সবার সঙ্গে যদি দেখা হতো! হেমন্ত তাকে বলে, ‘খামোখা একটা আশা করলেই হবে না, সব পুরনো বন্ধুকে তুমি কী করে পাবে!’ ‘পাব না। আমি জানি। ’ দয়াময়ী বলে, ‘কিন্তু ভাবতে ভালো লাগে। ’ হেমন্ত হাসে।

‘হেসো না। আমার কী মনে হয়, জানো?’ দয়াময়ী বলে, ‘আমার মনে হয় গেলাম বাড়িতে, শিমুলতলীতে, আর দেখলাম ছোটবেলার সব বন্ধু এসে হাজির। অঞ্জু, বীণা, জাহেদা, সালমা, আফরোজা, বেলী, নাগমা, শ্যামলী, সুমিত্রা … আরো কত কে!’ ‘ওদের অনেকের সঙ্গে তোমার হয়তো আর কোনো দিন দেখা হবে না!’ হেমন্ত বলে। ‘কীভাবে হবে?’ দয়াময়ী জানায়, ‘ওদের অনেকে এখন দেশেই নেই। কেউ কেউ বিয়ের পর কোথায় ছড়িয়ে পড়েছে কিছুই জানি না! তবে কেউ কেউ তো এখনো আছে, তাই না?’ ‘আর তাদের সঙ্গে দেখা হলে কী মজাটাই না হয়!’ হেমন্ত দয়াময়ীর মতো করে বলে।

দয়াময়ী সেটা বুঝতে পারে, ঠোঁট টিপে হাসে, ‘সেটা তুমি বুঝবে কী! শেষবার যখন গেলাম, পুরনো বন্ধু অনেকের সঙ্গে দেখা তো হলোই, লাইজু আপার সঙ্গেও দেখা হলো। স্কুলে আমাদের ইতিহাস পড়াতেন। আর কী ভালোই না বাসতেন আমাকে! পথে আমার সঙ্গে দেখা। আমাকে একদম জড়িয়ে ধরে বললেন - আরে ময়ী, তুই এত বড় হয়ে গেছিস! বলো, তখন কত ভালো লাগে!’ ‘সে নাহয় বুঝলাম। ’ হেমন্ত কৃত্রিম গম্ভীর গলায় বলে, ‘কিন্তু আমি ছাড়াও কেউ কেউ তোমাকে ময়ী বলে ডাকে, একি কথা, অ্যাঁ!’ ‘ডাকে, ডাকে।

’ দয়াময়ী হাসে, ‘কেউ কেউ কিন্তু শুধু দয়া বলেও ডাকে। আমার নামটা বড় আর পুরনো ধরনের। তাই ছোট করে দয়া বা ময়ী, বুঝেছ?’ ‘বুঝলাম। ভালো। তবে আমার জন্য আর কিছুই থাকল না।

দেখা গেল এবার শিমুলতলীতে গিয়ে তুমি আর ফিরলেই না। যারা তোমাকে দয়া বা ময়ী বলে ডাকত, তারা তোমাকে রেখে দিল!’ ‘তুমি ছাড়িয়ে আনবে। তুমি আছ কেন!’ ‘তাও বটে। ’ ‘শোনো, আগেভাগেই একটা কথা বলে রাখি। এবার কিন্তু শিমুলতলীতে গিয়ে খুব ঘুরব আমি।

বন্ধুদের বাসায় যাব। আপাদের বাসায় যাব। লাইজু আপা, রেখা আপা, ওহাব স্যার …’ ‘তোমার জাহানারা আপার বাসায় যাবে না?’ ‘কী বললে!’ দয়াময়ী তখনই কঠিন চোখে হেমন্তর দিকে তাকায়। দেখে, হেমন্তর মুখে ফিচকে হাসি। তাকে অমন চোখে তাকাতে দেখে হেমন্তর ফিচকে হাসিটা একটু একটু করে মিলিয়ে যায়।

সে গম্ভীর মুখে নিরীহ গলায় জিজ্ঞেস করে, ‘আমি বলছিলাম, তোমার জাহানারা আপার বাসায় যাবে না?’ ‘তোমাকে না বলেছি, ওই মহিলার কথা তুমি কখনো আমার সামনে তুলবে না!’ ‘কিন্তু তিনি তো তোমার হেডমিস্ট্রেস ছিলেন। ’ ‘থাকুক। ’ ‘শোনো। ’ হেমন্তকে সিরিয়াস দেখায়, ‘তোমাকে কথাটা আরেকবার বলি। ওই ভদ্রমহিলা সম্পর্কে তুমি আমাকে অনেক কিছুই বলেছ।

কিন্তু আমি আমার যুক্তি দিয়ে ওনাকে তোমার মতো করে দেখতে পারিনি। কোথাও তোমার একটা ভুল …’ ‘আমার ভুল নেই কোথাও। ওই মহিলা আমাকে স্কুলে পড়ার সময় অনেক জ্বালিয়েছেন। ’ দয়াময়ী গম্ভীর চোখে তাকায়, ‘আমি এখনো বিশ্বাস করি তিনি আমাকে শুধু ছাত্রী হিসেবে দেখতেন না, দেখতেন হিন্দুছাত্রী হিসেবে। ’ দুই. দয়াময়ীদের স্কুলের নাম ছিল শিমুলতলী মডার্ন হাইস্কুল।

সীমান্ত এলাকার কাছাকাছি শহরে মেয়েদের জন্য দূরে থাক, ছেলেদের জন্যই সাধারণত এ রকম হাইস্কুল থাকে না! শিমুলতলীতে সেটা সম্ভব হয়েছিল এলাকার কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তির কারণে। তারা নিজেরা উদ্যোগী হয়ে, নিজেরা পয়সা খরচ করে স্কুলটা করেছিলেন। শিক্ষক জোগাড় করার দায়িত্বও তারাই পালন করেছিলেন। তার পরের পর্ব ছিল স্কুলের জন্য সরকারি স্বীকৃতি আদায়। এর জন্যও অবশ্য কাঠখড় কম পোড়াতে হয়নি।

তাও সম্ভব হয়েছিল। এর পেছনে একটা বড় কারণ ছিল, পরপর কয়েক বছর ধরে শিমুলতলী মডার্ন হাইস্কুলের ভালো রেজাল্ট। দয়াময়ী ক্লাস ওয়ান থেকে ওই স্কুলের ছাত্রী। সে যখন ক্লাস সেভেনে, তখনই স্কুলের হেডমিস্ট্রেস হয়ে আসেন জাহানারা বেগম। পুরনো হেডমাস্টার চলে গেলে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি দেখেশুনে তাকে নিয়োগ দেন।

এই হেডমিস্ট্রেস ছিলেন কড়াপ্রকৃতির মানুষ। বড় কড়াপ্রকৃতির। আগের প্রধান শিক্ষক রাজীব হোসেনের সঙ্গে তার কোনো তুলনাই চলে না। প্রথম দিনই অ্যাসেম্বলির সময় ছাত্রীদের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বললেন, ‘মেয়েরা শোনো, তোমাদের প্রথমেই একটা কথা জেনে রাখা দরকার। আমি নিয়মকানুনের সামান্য অবনতিও বরদাশত করব না।

পান থেকে চুন খসে পড়ুক, এটা আমি পছন্দ করি না, বুঝতে পারছ?’ বুঝতে সময় লাগেনি দয়াময়ীদের। হেডমিস্ট্রেস নিজে ক্লাস নিতেন খুব কমই। দু-একটা যা নিতেন তাও ক্লাস নাইনের। তবু পুরো স্কুলে তার উপস্থিতি সব সময় টের পাওয়া যেত। তিনি আপাদমস্তক কালো বোরকা পরতেন।

শুধু ক্লাসে এসেই বোরকা খুলতেন। বোরকা ছাড়া তাকে ক্লাসের বাইরে কেউ কখনো দেখেছে বলতে পারবে না, স্কুলের বাইরে দেখার তো প্রশ্নই ওঠে না। যদি এমন হতো, তিনি ক্লাস নেওয়ার সময়ও বোরকা পরে থাকতেন, তবে তার চেহারাটা কেমন, সেটা স্কুলের কারোরই জানা হতো না। চেহারাটা ছিল অত্যন্ত গম্ভীর। তাকে কেউ কখনো হাসতে দেখেছে, এমন দাবি করতে পারবে না।

স্কুল-বিল্ডিংয়ের এমাথা-ওমাথা ঘুরতেন তিনি। কড়া নজর রাখতেন চারদিকে। দেখতেন সবকিছু ঠিকঠাকমতো চলছে কি না, হচ্ছে কি না। একবার হেদায়েত স্যার ক্লাস এইটে ভাব-সম্প্রসারণ করতে দিয়ে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিলেন। তাকে প্রচণ্ড নাকাল হতে হয়েছিল হেডমিস্ট্রেসের হাতে, ‘আপনি কি বাসায় ঘুমানোর সময় পান না?’ হেদায়েত স্যারের তখন তোতলামি আরম্ভ হয়ে গেছে, ‘জ্বি ম্যাডাম, জ্বি …’ ‘তাও ভালো যে বাড়ি থেকে বালিশ নিয়ে আসেননি!’ হেদায়েত স্যার যেন পাথর হয়ে যান।

‘আপনার লজ্জা হওয়া উচিত, আপনার ছাত্রীরা লেখাপড়া করছে আর আপনি ঘুমাচ্ছেন। ’ আরেকবার ক্লাস টেনের এক মেয়ে ক্লাসে লুকিয়ে গল্পের বই পড়ছিল। জানালা দিয়ে সেটা লক্ষ করে ভেতরে এসে মেয়েটাকে হাতেনাতে ধরে ফেললেন জাহানারা বেগম। ‘এটা দেখছি প্রেমের উপন্যাস! তোমাদের কি এখন প্রেমের উপন্যাসের ক্লাস চলছে?’ কেউ কিছু বোঝার আগেই মেয়েটি ভেউ ভেউ করে কাঁদতে আরম্ভ করেছে। ‘না, কাঁদলে চলবে না।

আমাকে তোমার বোঝাতে হবে, তুমি ক্লাসে বসে এই বই কেন পড়ছিলে!’ মেয়েটার কান্না থামে না। পরের সিদ্ধান্ত ছিল আরো কঠিন। গার্জিয়ানকে ডেকে পাঠিয়ে মেয়েটাকে স্কুল থেকে টিসি দিয়ে বহিষ্কার করেন তিনি। বিয়ের পর দয়াময়ী এসব গল্প করেছিল হেমন্তর কাছে। ছোটবেলার গল্প করতে স্বামী-স্ত্রী দুজনই ভালোবাসে।

হেমন্ত যদিও তেমন কিছু বলত না, সে বলত, ‘আমার কোনো ছোটবেলা নেই, আমার কোনো গল্পও নেই। আমি প্রচণ্ড কষ্টের মধ্যে বড় হয়েছি। ’ দয়াময়ী তার ছোটবেলার গল্প করত। তার বড়দা আর দু দিদির কথা, তার এলাকা আর স্কুলের বান্ধবীদের কথা, তার স্কুল আর স্কুলের শিক্ষকদের কথা। আরো নানা গল্প।

জাহানারা বেগমের গল্প হেমন্তকে বিশেষভাবে শোনায় দয়াময়ী, ‘বুঝেছ, ওই মহিলাকে দেখলে আমাদের সারা শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যেত!’ ‘এটা তো ভালো, খুব ভালো। শিক্ষকদের ভয় করবে না ছাত্রছাত্রীরা?’ ‘ভয় না শ্রদ্ধা, কোনটা করবে?’ ‘দুটোই। ’ ‘কেউ শ্রদ্ধা করত না, বুঝেছ? কেউ তাকে শ্রদ্ধা করত না। সবাই ভয় পেত। ’ ‘একটু বোধহয় মেজাজি ছিলেন, না?’ ‘একটু মানে! তিনি ছিলেন চলমান বিভীষিকা।

ছাত্রছাত্রীরা এক-আধটু দুষ্টুমি করবে না, অল্প-স্বল্প ফাঁকি দেবে না, বলো?’ ‘আচ্ছা, একটু নাহয় বেশিই মেজাজি ছিলেন তিনি। কিন্তু তাই বলে স্যার ক্লাসে এসে ঘুমাবেন, ক্লাস টেনের ছাত্রী ক্লাসে বসে উপন্যাস পড়বে, এসব তাকে কেন মেনে নিতে হবে? বিশেষ করে তুমিই যখন বলছ মেজাজি ছিলেন তিনি! যদিও এসব সব স্কুলে সব সময়ই হয়। ’ ‘শুধু এটুকু! তোমাকে তো তার আসল কথা বলাই হয়নি!’ দয়াময়ীর আজও মনে আছে সব। কিছুই ভোলেনি। সে যখন ক্লাস সেভেনের শেষ দিকে, জাহানারা বেগম হঠাত্‍ একদিন তাদের ক্লাস নিতে এলেন।

সেটা ছিল ইসিএ বা এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটিজ ক্লাস। ওই ক্লাসে তারা গান গাইত, আবৃত্তি করত, নাটক করত, আরো কত মজা করত! জাহানারা বেগম ওসবের ধার দিয়েও গেলেন না, এক-এক করে সবার নাম জিজ্ঞেস করলেন, কার রোল নম্বর কত, সেটাও জেনে নিলেন। তারপর দয়াময়ীকে বললেন, ‘এই স্কুলে আরো অনেক হিন্দুধর্মের মেয়ে পড়ে, তুমি জানো?’ ‘জ্বি ম্যাডাম। ’ দয়াময়ী ভয়ে ভয়ে বলে। ‘কিন্তু আর কোনো ক্লাসে কোনো হিন্দু মেয়ে ফার্স্ট গার্ল না, একমাত্র তুমিই ফার্স্ট গার্ল, এটা জানো?’ এটা জানা ছিল না দয়াময়ীর, সে তাই না-সূচক মাথা নাড়ে।

‘এটা মনে রেখো। ’ হেডমিস্ট্রেস বলেন, বলে দয়াময়ীর দিকে তাকিয়ে হাসেন। তারপর ক্লাসের অন্য ছাত্রীদের দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘তোমরাও মনে রেখো। ’ দয়াময়ীর বক্তব্য, তার প্রতি হেডমিস্ট্রেসের হাসিটা ছিল তাচ্ছিল্যের। ‘তাচ্ছিল্যের কেন হবে?’ হেমন্ত এটা অনেকবার জানতে চেয়েছে।

দয়াময়ী বলেছে, ‘হাসিটা তো তুমি দেখনি, আমিই দেখেছি, আমিই জানি। ’ ‘আর তোমাকে যে বললেন, তুমিই একমাত্র ফার্স্ট গার্ল, হিন্দু মেয়ে হিসেবে এটা যে তোমাকে মনে রাখতে বললেন, এটাকে তুমি কী বলবে?’ ‘এটাকে কি উত্‍সাহ দেওয়া বলতে চাও? আমার কাছে ওটাও তাচ্ছিল্য, বিদ্বেষের। ’ ‘কেন? আমার তো মনে হয় উনি তোমাকে তোমার পজিশন ধরে রাখার ব্যাপারে উত্‍সাহী করতে চেয়েছেন। ’ ‘আরে না, ওনার ভঙ্গিতেই তাচ্ছিল্য ছিল। তা ছাড়া ক্লাসের অন্য মেয়েদেরও বললেন আমার ব্যাপারটা মনে রাখতে।

এর মানে কী? এটা কি আমার বিরুদ্ধে তাদের উসকে দেওয়ার চেষ্টা না?’ ‘উসকে যদি তিনি দিতে চান, দিতে পারেনই। তা হলেই তো তোমাদের মধ্যে লেখাপড়ার লড়াইটা জমবে। আর একজন শিক্ষকের সেটাই তো কাজ। সবাইকে সবার বিরুদ্ধে উসকে দেওয়া, যেন তাদের ভেতর একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতাটা শুরু হয়। ’ দয়াময়ী হাসে।

‘হাসছ কেন?’ ‘তুমি যা বলছ তার সবই ঠিক আছে। আমি মেনেও নিচ্ছ। কিন্তু আমার একটা কথা তোমাকে শুনতে হবে। একজন শিক্ষক পড়াশোনায় ভালো করার জন্য একজন ছাত্রীকে আরেকজনের বিরুদ্ধে উসকে দিতে পারেন। কিন্তু সেই উসকানিটা তিনি কি ধর্মীয় আইডেনটিটির নামে দেবেন?’ হেমন্ত চুপ হয়ে যায়।

‘উনি তো আরো নানাভাবে বলতে পারতেন। ওদের বলতে পারতেন-তোমাদের কি বুদ্ধি নেই, তোমাদের কি ভালো রেজাল্ট করার ক্ষমতা নেই, তোমরা কি দয়াময়ীকে ছাড়িয়ে যেতে পার না? কিন্তু তা তিনি করলেন না। এটা কি একজন শিক্ষকের কাজ?’ হেমন্ত মৃদু গলায় বলে, ‘আসলে একেক জনের ভঙ্গি একেক রকম …’ ‘তার ভঙ্গিটা সাম্প্রদায়িক। ’ দয়াময়ী জোর গলায় বলে, ‘তিনি হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে একটা স্পষ্ট বিভাজন করতে চাইতেন। তুমি এটা বুঝতে পারছ না!’ তিন. দয়াময়ীর প্রথম অভিজ্ঞতাটা অবশ্য শিমুলতলী মডার্ন হাইস্কুলে নয়, বড়দি অঞ্জলির বিয়ের সময়।

তাদের আর্থিক অবস্থা কোনো সময় তেমন ভালো ছিল না। অভাব ছিল না ঠিকই, তবে হাতে বাড়তি টাকাও থাকত না। কিছু জমি ছিল, বড়দির বিয়ের সময় সেই জমিতে টান পড়ল। তাদের জমি আর সোবহান চাচার জমি একেবারে পাশাপাশি। গায়ে গা লাগানো।

কিছুদিন আগে সোবহান চাচা জমি বিক্রি করেছেন। তিনি যে দাম পেয়েছেন, দয়াময়ীর বাবা বহু চেষ্টার পরও সে দাম পেলেন না। জমি বিক্রি করে তিনি হাসতে হাসতে বাসায় ফিরলেন, বললেন, ‘এরকমই হবে। কারণ সোবহান ভাইয়েরটা মুসলমানের জমি আর আমারটা হিন্দুর জমি। ’ জমির এই রঙ নিয়ে ভাবনা যখন দয়াময়ীর মাথায়, ওই সময়ই শিমুলতলী হাইস্কুলে জাহানারা বেগমের আগমন।

একবার জাহানারা বেগম ক্লাসে এক-এক করে মুসলমান মেয়েদের জিজ্ঞেস করেন - কে কে নামাজ পড়ে আর কে কে পড়ে না। দেখা গেল, অনেকেই পড়ে না। যারা পড়ে না তাদের কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে বললেন। একবার রোজার সময় কড়া শাস্তি পেয়েছিল দয়াময়ী। রোজার সময় সাধারণত স্কুল বন্ধ থাকে।

কিন্তু সেবার স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার সময় রমজান মাস। সকাল-বিকেল দুটো পরীক্ষা। একটা পরীক্ষা শেষে দয়াময়ী বন্ধুদের সঙ্গে ক্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে গল্প করছিল আর আমলকী খাচ্ছিল। সে একা খাচ্ছিল না, আরো তিন-চারজন খাচ্ছিল। হেডমিস্ট্রেস সেটা দেখতে পেয়ে এগিয়ে এলেন, বললেন, ‘কে কে রোজা?’ দেখা গেল বেশ কয়েকজনই রোজা।

কেউ কেউ রোজা না। তাদের সামান্য ধমক দিয়ে তিনি ছেড়ে দিলেন। কিন্তু যারা আমলকী খাচ্ছিল তাদের ক্লাসের ভেতর ১৫ মিনিট নিল-ডাউন করিয়ে রাখলেন। দয়াময়ীও বাদ গেল না। দয়াময়ী খুবই অবাক হয়েছিল।

সে তখন ক্লাস এইটে। তার কী অপরাধ সে কিছুতেই বুঝতে পারছিল না। ইচ্ছে করেছিল হেডমিস্ট্রেসকে জিজ্ঞেস করতে। শেষ পর্যন্ত সাহস হয়নি। তার মনে হয়েছিল, জিজ্ঞেস করতে গেলে নিশ্চয়ই নতুন কোনো শাস্তি পেতে হবে।

আরো একটা বড় ব্যাপার ঘটেছিল দয়াময়ী ক্লাস এইটে বৃত্তি পাওয়ার পর। তারা অনেকেই বৃত্তি পরীক্ষা দিয়েছিল, ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল শুধু দয়াময়ী। সে নিয়ে তাদের স্কুলে হইচই। সবাই প্রচণ্ড খুশি। দয়াময়ীর নিজেরও খুশির সীমা নেই।

সেদিনই ঘটনাটা ঘটে। সে বন্ধুদের সঙ্গে মিলে হইচই করে তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েছিল। স্কুলে ছিল টিউবওয়েল। একজন টিউবওয়েলে চাপ দিত, আরেকজন আঁজলায় করে জল খেত। কিন্তু সেদিন তার কী যে হয়, ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়ার আনন্দেই বোধহয়, তার আঁজলায় ভরে জল খেতে আর ইচ্ছে করে না।

সে একছুটে চলে যায় স্কুলের টিফিনরুমে। সেখান থেকে গ্লাস নিয়ে এসে টিউবওয়েল থেকে জল খায়, তারপর আর গ্লাসটা যথাস্থানে রেখে আসেনি। সে খেয়াল করেনি কিংবা তার জানা ছিল না - গ্লাসটা ছিল হেডমিস্ট্রেসের। খবরটা পৌঁছে যায় হেডমিস্ট্রেসের কানে। হেডমিস্ট্রেস জাহানারা বেগম তাকে ডেকে পাঠান, ‘দয়াময়ী, তুমি পানি খেয়েছ আমার গ্লাসে!’ সে নিয়ে তুমুল কাণ্ড।

জাহানারা বেগমের ধমকে দয়াময়ীর নাজেহাল অবস্থা। হেডমিস্ট্রেসের ধমক বন্ধ হয়েছিল, কিন্তু দয়াময়ীর কান্না যেন বন্ধ হওয়ার নয়। তার বন্ধবীরা বলছিল, ‘দয়াময়ী, তুই কান্না থামা। ’ দয়াময়ীর কান্না আরো বেড়ে গিয়েছিল, ‘উনি আমাকে এভাবে বলবেন, এভাবে বকবেন!’ বাড়িতে ফিরেও একই কথা বলেছিল, ‘আমাকে এভাবে বকবেন কেন!’ ‘তার আগে তুই বল, তুই কেন তার গ্লাস ধরলি? জল খেলি?’ বাবা বলেছিলেন। ‘কোনো মুসলমান মেয়ে খেলে কিন্তু কিছু হতো না।

’ ‘কেন হবে না, তারাও ছাত্রী। ’ ‘কিন্তু তারা মুসলমান। ম্যাডাম হিন্দুদের দেখতে পারেন না। তার গ্লাসে আমি খেয়েছি, গ্লাস তাই অশুচি হয়ে গেছে। জাত গেছে তার।

’ ‘কী যে বলিস না তুই! ওসব জাত যাওয়ার ব্যাপার মুসলমানদের মধ্যে আছে নাকি! ওসব আছে আমাদের মধ্যে। তুই ছাত্রী হয়ে শিক্ষকের গ্লাস ব্যবহার করেছিস, এটাই হলো কথা। ’ এ কথাটা আরো অনেকেই বলেছিল। তাদের কারোর কথাই বিশ্বাস হয়নি দয়াময়ীর। সে নিজে যেটা বুঝেছে, যেটুকু বুঝেছে, সেটাই ঠিক - এভাবেই ব্যাপারটাকে সে নিয়েছিল।

শুধু ওই ব্যাপারটা কেন, হেডমিস্ট্রেসের আরো যা যা ঘটনা, তার সবগুলোই যে ধর্মীয় গোঁড়ামি আর সাম্প্রদায়িকতার মধ্যে পড়ে, এ নিয়ে সেই তখন থেকেই কোনো সন্দেহ ছিল না দয়াময়ীর। সন্দেহ তার এখনো নেই। এখনো কালো বোরকা পরা হেডমিস্ট্রেস জাহানারা বেগমকে সে চোখের সামনে দেখতে পায়। হিন্দুদের যিনি তাচ্ছিল্যের চোখে দেখেন, হিন্দুদের সংস্পর্শে পবিত্রতা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করেন, তিনি কিসের শিক্ষক? চার. এতটা মজা হবে দয়াময়ী নিজেও তা বুঝতে পারেনি। হেমন্তকে নিয়ে শিমুলতলীতে পৌঁছেই সে খবর পায়, এদিক-ওদিক ছড়িয়ে থাকা তার বেশ কিছু বন্ধু এখন শিমুলতলীতে।

এবার পূজার কিছুদিন পরই ঈদ। অনেকে আগেভাগেই চলে এসেছে ঈদের ছুটিতে, অনেকে এসেছে পূজায়। হেমন্ত শুনে বলে, ‘ব্যস, তোমার আর চিন্তার কিছু নেই। আমারও চিন্তা গেল। তুমি বন্ধুদের নিয়ে ব্যস্ত থেকো, আমি থাকি আমাকে নিয়ে।

’ ‘কী করবে তুমি?’ ‘ঘুমাব ভোঁস ভোঁস করে। সবাই এ যুগের কুম্ভকর্ণের ঘুম দেখবে। ’ ‘বেশ। ’ দয়াময়ী বলে। বলে সে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

তার দু দিদি এখনো এসে পৌঁছাননি। তাতে অসুবিধা নেই। বরং সুবিধাই। দিদিরা এলে বাসায় একটু বেশি সময় দিতে হবে। এখন সে পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে অকাতরে সময় ব্যয় করতে পারবে।

তা করেও সে। সকালে এক বন্ধুর তো দুপুরে আরেকজনের বাসায়, রাতে আরেক জনের। শিমুলতলী অবশ্য বদলে গেছে অনেক। পুরনো অনেক কিছুই আর নেই। দয়াময়ীরা সবাই মিলে বসে সে গল্প করেও।

তাদের সময়ে কেমন ছিল এ গ্রাম আর এখন কেমন। একটু একটু করে কখন কতটাই যে বদলে গেল সবকিছু, তারা টেরও পেল না! তারা অবশ্য এ কথাও বলে, তারা নিজেরাও অনেক বদলেছে। আফরোজা অবশ্য বলে, দয়াময়ী নাকি একটুও বদলায়নি। সেই আগের মতোই আছে। ‘চেহারা?’ দয়াময়ী জানতে চায়।

‘সবকিছু। তোকে দেখে এখনো আমার মনে হয় তুই স্কুলে পড়িস। ’ ‘হা ভগবান, একি বলিস! আমি সামনের বছর পিএইচডি করতে যাব। ’ সালমা হেসে বলে, ‘তুই কি জানিস, সেটা আমাদের জন্য কত আনন্দ আর গর্বের?’ অঞ্জু শিমুলতলীতেই থাকে। সে বলে, ‘স্কুলের টিচাররা, যারা শিমুলতলীতে থাকেন, দেখা হলেই তারা তোর কথা জিজ্ঞেস করেন।

জিজ্ঞেস করেন - তুই ওনাদের কথা মনে রেখেছিস কি না। ’ ‘কারো কথা আমি ভুলিনি রে। লাইজু আপা, ওহাব স্যার …। শিমুলতলীতে কে কে আছে, বল তো?’ অঞ্জু এক-এক করে সবার কথা বলে, জাহানারা বেগমের নামও বলে। শুনে দয়াময়ীর ভ্রু কুঁচকে যায়, ‘ওই মহিলা এখানে থাকেন! উনি তো এখানকার নন।

’ ‘কিন্তু এখানেই সেটেল করেছেন। বাড়ি করেছেন জমি কিনে। একটু ভেতরের দিকে অবশ্য …’ ‘ও। পূজার দাওয়াত দিতে হয় তাহলে!’ দয়াময়ী হাসে। ‘যাবি? খুব খুশি হবেন কিন্তু।

তোর কথা দেখা হলেই জিজ্ঞেস করেন। ’ ‘তাই নাকি!’ দয়াময়ীর গলায় কৌতুক। পরমুহূর্তে তাকে গম্ভীর দেখায়, ‘কিন্তু তার সঙ্গে দেখা করতে আমি কখনোই যাব না। ’ ‘দয়া!’ মৃদু গলায় জাহেদা বলে, ‘তুই এখনো ওসব মনে রেখেছিস!’ ‘কোনো দিনই ভুলব না। ’ ‘তোকে বলেছি আগে, আবারও একবার বলি - বোরকা পরতেন, আমাদের নামাজ পড়ার জন্য চাপ দিতেন, সব ঠিকই আছে তবু যতটা গোঁড়া তুই ম্যাডামকে মনে করিস, ততটা গোঁড়া আসলে উনি নন।

’ ‘এটা তোর ধারণা, তাই না? শোন, তোর ধারণা নিয়ে তুই থাক, আমার ধারণা নিয়ে আমাকে থাকতে দে। উনি শুধু গোঁড়া নন, সাম্প্রদায়িক, বুঝেছিস? এখন অন্য কথা বল। ’ ‘কী কথা?’ ‘যেকোনো কথা, কিন্তু ওই মহিলার কথা না। ঠিক আছে? আমার মেজাজটা খারাপ হয়ে গেছে। ’ পাঁচ. সালমাদের বাসা থেকে বের হতে হতে দয়াময়ীর দেরি হয়ে যায়।

আজ তার বিকেলের আগেই ফেরার কথা। দিদি আর জামাইবাবুরা ছেলেপুলে নিয়ে এসেছেন। আজ তারা একসঙ্গে বসে পূজার পরিকল্পনা করবে। দয়াময়ীকে অবশ্যই সেখানে থাকতে হবে। কিন্তু সালমাদের বাসায় আরো কয়েক বন্ধুর সঙ্গে গল্প করতে করতে দেরি হয়ে যায়।

সালমারা বারবার অবশ্য বলছিল ইফতার করে যেতে। কিন্তু তাহলে তো আরো দেরি হয়ে যাবে। সালমাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে দয়াময়ী রিকশা পায় না। ইফতারের সময় এ রকম হয়, রিকশা পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় দয়াময়ীকে।

শেষ পর্যন্ত একটা রিকশা জোটে। পথও কম নয়। রাস্তা ফাঁকা। দয়াময়ী ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে বাড়ির গেটের দিকে দ্রুত পা বাড়ায়। এ সময় পেছন থেকে এক মহিলা অসহায় গলায় বলেন, ‘একটু শুনবেন?’ সামান্য মাথা ঘোরায় দয়াময়ী।

দেখে, কালো বোরকা পরে একজন দাঁড়িয়ে আছেন। হাতে বেশ কয়েকটা প্যাকেট। বোরকা-পরা মহিলা বলেন, ‘আমি আসলে দয়াময়ী, মানে গৌতমবাবুদের বাসা খুঁজছিলাম। এদিকেই কোথাও, কিন্তু ঠিক চিনতে পারছি না। আপনি বলতে পারবেন?’ দয়াময়ী কিছুক্ষণ বোরকা-পরা মহিলার দিকে তাকিয়ে থাকে, তারপর বলে, ‘আপনি কাকে চাইছেন? এটাই গৌতমবাবুদের বাড়ি।

’ ‘একজনকে পেলেই হলো। দয়াময়ী নিশ্চয় এখন নেই। গৌতমবাবু যদি থাকেন …’ ‘আমিই দয়াময়ী। ’ ‘তুমি দয়াময়ী! তুমি! কী আশ্চর্য!’ মহিলা বোরকার নেকাব তুলে ধরেন, ‘তুমি দয়াময়ী, আর আমি কিনা তোমাকে চিনতে পারছি না! তুমি আমাকে চিনতে পারছ তো মা?’ ‘পারছি। ’ দয়াময়ী গম্ভীর গলায় বলে।

‘যাক। পেরেছ। তুমি কিন্তু একদম আগের মতোই আছ মা, প্রথমে খেয়াল করিনি। ’ দয়াময়ী আরো গম্ভীর গলায় বলে, ‘হুঁ। ’ দয়াময়ীর এই গাম্ভীর্য তাদেরই স্কুলের বোরকা-পরা হেডমিস্ট্রেস জাহানারা বেগম একদম খেয়াল করেন না।

তিনি বলেন, ‘হয়েছে কি, ঈদের মার্কেটিং করতে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু পথে এত দেরি হয়ে গেল, আমার বাড়িটা আবার একটু ভেতরের দিকে। যেতে গেলে ইফতারের সময় পার হয়ে যাবে। হঠাত্‍ মনে হলো তোমাদের বাড়িটা এদিকে। তাই রিকশা ছেড়ে তোমাদের বাড়ি খুঁজতে আরম্ভ করলাম।

’ ‘কেন?’ দয়াময়ী অবাক গলায় জিজ্ঞেস করে, সে অবশ্য এখনো পুরোপুরি সহজ হতে পারেনি। ‘কেন আবার, ইফতার করব! যেকোনো বাসায়ই অবশ্য ইফতারের জন্য যাওয়া যায়। কিন্তু ছাত্রীর বাসা থাকতে অন্য বাসায় কেন যাব, বলো?’ দয়াময়ী অপলক তাকিয়ে থাকে। এ রকম একটা অবস্থার মুখোমুখি হতে হবে, এটা তার কল্পনারও বাইরে ছিল। ‘শোনো।

’ জাহানারা বেগম বলেন, ‘এখন তো পূজার সময় তোমাদের। নাড়ু, মোয়া - এসব নিশ্চয়ই আছে। দাও না, বেশ অন্য রকম একটা ইফতার হবে!’ বিশ্বাস করতে পারে না দয়াময়ী, ভাবতেও পারে না। ভাবে, বুঝি ভুলই শুনছে সে, ‘আপনি আমাদের বাসায় বসে নাড়ু-মোয়া দিয়ে ইফতার করবেন! আমাদের বাসায়!’ ‘অসুবিধা হবে তোমাদের?’ জাহানারা বেগমকে সংকুচিত দেখায়, ‘আচ্ছা, আসল কথাই তো জিজ্ঞেস করা হয়নি। স্কুলে তোমাদের কী কড়া শাসনই না করতাম! সেই তুমি, তোমরা কত বড় হয়ে গেছ! দয়াময়ী, তুমি কেমন আছ, বলো তো?’ কেমন আছে সে-এই প্রশ্নের উত্তরে যে কী বলবে দয়াময়ী বুঝতে পারে না।

ডাউনলোড - Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।