আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

Stolen Dreams থেকে Heroes Never Die এর গল্প!

ইমরোজ

এটা কোন গল্প নয়। বরং নিরেট কিছু সত্য কথা। আপনাদের সামনে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই এমন একজন ফটো-সাংবাদিককে যিনি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক থেকে পুরষ্কার প্রাপ্ত। ওনার নাম শহীদুল হক অমি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর ছবি প্রদর্শনী হলো গতকাল।

ছবিগুলো একেকটা একটি সিনেমার থেকেও বড় অর্থ বহন করে। তিনি তাঁর ছবির প্রত্যেকটি চরিত্রের সাথে দুই তিন মাস থেকে তাদের ব্যাথা বেদনা ও বেঁচে থাকার অদম্য সাহস নিয়ে কথা বলেছেন। প্রথমে এই চিত্র প্রদর্শনীর নাম তিনি দিয়েছিলেন, Stolen Dreams, পরবর্তিতে আক্রান্ত মানুষের বেঁচে থাকার সাহস এবং তাদের চোখে অনাগত আগামীর সপ্ন দেখতে পেয়ে তিনি এর নাম দেন Heroes Never Die. হুমায়ুন কবিরকে জেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কেন? তিনি এদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার নির্যাতন নিয়ে ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন। কিন্তু সে সময় সরকার সেটাকে মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবী করে। সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবী করেন।

হুমায়ুন কবির যা বলেছেন, তার থেকেও ভয়ংকর সংখ্যালঘু অত্যাচার ও নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেছেন অমি ভাই। যেটা অত্যন্ত সত্য এবং আমাদের সমস্ত ভিতকে নাড়িয়ে কথা বলে। আজকে পাকিস্তানীদেরকে আমরা অনেক গালাগালি করি। কিন্তু তারা যা করেছিল আমরা তার থেকেও ভয়ংকর ভাবে এই দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন করেছি। তার খবর এই প্রতন্ত শহরে বসে অনেকেই জানেন না।

এইসবের পিছনে আমাদের বিগত সরকারগুলোর প্রত্যক্ষ মদদ ছিল। শুধু বিএনপি জামাতই নয় আওয়ামীলীগও এগুলোর সাথে জড়িত। দুঃখ লাগে আমাদের সেকুলার বাংলাদেশ আর আমরা কখনও পাবো নাকি। অমি ভাইয়ের কাজে যে জিনিসটি বিষয় বস্তু হিসেবে প্রেক্ষাপট পেয়েছে তা হলো, The Political Violence Of Bangladesh 1989-2005. জঙ্গীদের অপকর্ম, নানা রাজনৈতিক দলের হিন্দু ও সংখ্যালঘু আদিবাসীদের ভূমি গ্রহণ অত্যাচার অনাচারের চিত্র এইসব ছবিতে স্পষ্ট ও বিমূর্ত। আজকে জাতি হিসেবে আমাদের মাথা নত করার সময় এসেছে।

এখানে প্রথম যে ছবিটা দেখতে পাচ্ছেন তা হলো, ময়মনসিংহ জেলায় অজন্তা সিনেমা হলের বোমা বিস্ফরণের সাথে সম্পৃক্ত। এই ছেলেটির নাম শাহীন। তিনি প্রজেকশনিস্ট ছিলেন সিনেমা হলের। বোমায় তার দুইটি পাই উড়ে যায়। এরপর থেকে তিনি বেকার।

আয় রোজগার নেই। যারা বোমা হামলা করেছিলেন, যারা ইসলামের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন তারা কী আজ এই বিষয়ে ওয়াকিবহাল? তারা কী আজ দেখতে পাচ্ছেন না শাহীনের সংসার? একটা মানুষের অঙ্গহানি করে দিয়ে তাকে পঙ্গু করে দেওয়া কী কোন ধর্মের মতবাদের পক্ষে কথা বলতে পারে? যারা সুইসাইড বোমার তারা কী এই পাপ নিয়ে স্বর্গবাসী হবেন? কী করে? আমার অনেক জানতে ইচ্ছে করে। দ্বিতিয় ছবিটা রাজিব নামের একটি ছেলের। তিনিও সিনেমা হলে সেদিন সিনেমা দেখতে গিয়েছিলেন। আজ তার পা নেই একটি।

সেটা হাটুর খানিক উপর থেকে উড়ে গেছে। আজ তাই সে বেকার। দ্বিতীয় ছবিটিতে লক্ষ্য করুন। প্রিয় ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে কাশফুলের ভেতর দিয়ে নদীর কাছে হেটে যাচ্ছেন এক পা নিয়ে রাজীব। ভর দিয়ে আছেন স্ক্র্যাচে।

তিনি সাতার কাটতেন তার প্রিয় এই নদীতে। আজ তাই নদীর কাছে তার অনেক প্রশ্ন। যার উত্তর জাতি হিসেবে আমাদের দেওয়ার যোগ্যতা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। রাজীবের মায়ের একটা ইন্টারভিউ দেখে কনফারেন্স হলে আমরা সবার চোখের পানি ফেলেছিলাম। কথাটা এরকম, "আমার একটাই আশা, আমার ছেলে আমাদের আগে যেন মরে যায়, তাকে কবর দিয়েই আমরা যেতে চাই, এভাবে কেমন করে বেঁচে থাকবে সে? কে তার যত্ন নিবে"? প্রশ্ন খুব সাধারণ নয়।

ভেবে দেখুন আমরা আজকে সেই পর্যায়ে চলে গেছি যাখন একজন মা তার ছেলের মৃত্যু চাইছে। (চলবে...)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।