সাগর সরওয়ার
আজ হঠ্যাত করে লুলু পাগলার কথা মনে পড়ে গেলো।
আমি পুরানো ঢাকার নবাবপুর স্কুলে পড়তাম। আমাদের স্কুলটা বাজারের মধ্যে। কাপ্তান বাজার। এর আরেক নাম ঠাটারি বাজার।
আচ্ছা ঠাটারি মানে কি? এ প্রশ্ন এখনো আমার মাথায় ঘোরে। মাথায় কত প্রশ্ন আসে? সব প্রশ্নের কী উত্তর পাওয়া যায়!
আজ আমার অফিস বন্ধ। সপ্তাহে দুই দিন ছুটি পাই। শনি আর ররিবার। আজ রবিরার।
এখানে এসে আমার প্রিয় সিগারেট ব্যান্ড বেনসন এন্ড হেজেস বাদ দিয়ে মালব্রো ধরেছি। কিছুক্ষন আগে সিগারেট আনতে গেলাম পাশের দোকানে। মেয়েটি আমাকে দেখেই সিগারেট বের করে রেখেছে। জানে আমি কেবল ওটাই আসতে যাই, ওখানে। মেয়েটির নাম জারাডা।
আমি সিগারেট নিয়ে বের হতেই সেখানে দেখলাম একটি লোককে। নির্ঘাত পাগল! না হলে এত সকালে কেউ বিয়ার খায়! বিয়ার খাচ্ছে আর বকবক করছে। একা একা কথা বলছে। মাথার চুলে জট। জট দেখেই লুলু পাগালার কথা মনে পড়ে গেলো।
লুলু পাগলাকে প্রায়ই দেখতাম স্কুলের পাশে কোন এক চায়ের দোকানে বসে থাকতে। মুখে কথা নেই। আমি লোকটিকে দেখতাম। গায়ে একটু মাত্র ছালা। লোকটির কাছে গরম ঠান্ডা নেই।
আমরা নানা কাহিনী বানিয়ে ছিলাম।
কোন এক বন্ধু এসে একদিন বললো, লুলু পাগলা আসলে গোয়েন্দা।
আর একজন বললো সে আগে পুলিশ ছিল।
আর একজনের মতে মুক্তিযুদ্ধের সময় নাকি লুলু পাগলা পাক সেনাদের দিকে ধুলো ছিটিয়ে দিলেই , বড় বড় গোফওয়ালা, হোতকা শরীরের সেনারা হয়ে যেত কুপোকাত।
এরকম আরও অনেক কাহিনী ।
একদিন ......
লুলু পাগলা তার এক সঙ্গি কে নিয়ে হেটে যাচ্ছে। ছুটি হবার পর আমি যাচ্ছি বাসায়। হঠ্যাত কি হলো বুঝতে পারলাম না। আমি হাটতে থাকলাম। লুলু পাগলা যে দিকে যায়, সেদিকে।
সে হাটছে আমিও তার পিছু পিছু। কিছু একটা আবিস্কার করার বাসনা। স্কুল থেকে হাটতে হাটতে আমি কখন যে হাইকোর্টের মাজারের সামনে এসে পৌছেছি আমি জানি না।
এক সময় আমার খেয়াল হলো অন্য অনেকের মত আমিও লুলু পাগলার সামনে।
লুলু পাগলা আমাকে দেখছেন।
আমি তাকে।
ফর্সা লোকটি রোদে পুড়ে তামাটে হয়ে গেছে। সারা গায়ে একটুও শুষ্কতা নেই। যেন তেল পড়ছে চুইয়ে। অদ্ভুত নীল রঙ্গের চোখ।
আমার মাথায় হাত দিয়ে বললেন
: যাও, বাড়ি যাও। মা চিন্তা করছে।
আমি লোকটিকে দেখলাম। সবাই তাকে পাগলা বলে কেন?
এত সুন্দর স্পষ্ট করে শুদ্ধ বাংলা বলেন তিনি। আমি বাড়ি ফিরে যাবো।
মা চিন্তা করছে। হঠাত তার কোমরের দিকে তাকালাম। মোটা লোহার শিকলের সাথে বাধা একটি গোল রূপার চাকতি। তাতে লেখা
লুলু পাগলা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।