তুমি হয়ত সবকিছুতে ভালো নও, কিন্তু তোমার উচিৎ সবকিছুতেই তোমার নিজের সেরাটা ঢেলে দেয়া! ইদানিং একটা জিনিশ খুব চোখে পড়ছে, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়, ফেইসবুকে, ব্লগে বা সবধরনের কমিউনিটিতেই খুব সচেতনভাবে একটা কাজ সবাই করে থাকেন। সেটা হল পাবলিক আর প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি এর ছাত্রের মধ্যে বিভাজন তৈরি করা। কোন পাবলিক ইউনিভার্সিটি এর ছাত্র কোন কিছু অর্জন করলে বড় বড় করে তাঁর ইউনিভার্সিটি এর নাম বলা হয়...যেমন “অমুক” ইউনিভার্সিটি এর “কৃতী ছাত্র” এই কাজ করেছেন, কিন্তু ছাত্রটি একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি এর ছাত্র হলেই বলা হয়- “একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র”! কেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কি নাম নাই নাকি? নাকি সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কেই আপনারা একই মানের মনে করেন, যাহাই বাহান্ন তাহাই পঁয়ষট্টি??
পাবলিক ভার্সিটি এর মধ্যে যেমন মানের পার্থক্য আছে তেমন আছে প্রাইভেট ভার্সিটিতেও। দেশের সবগুলি প্রাইভেট ভার্সিটি সমমান বজায় রাখতে পারেনি, পারার কথাও না। কিন্তু শীর্ষস্থানীয় প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি গুলোতে যথেষ্ট ভালো পড়াশুনা হয়, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি এর অনেক ছাত্রছাত্রী দেশে এবং বিদেশে সমান সুনামের সাথে কাজ করছেন।
যেই নামী অধ্যাপক পাবলিক ভার্সিটিতে পড়ান, তিনিই প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ান। উপরন্তু প্রাইভেট ভার্সিটি এর সিলেবাস সবসময়ই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে করা হয়, ভালো রেজাল্ট করতে গেলে ছাত্রছাত্রীদেরকে প্রচুর শ্রম দিতে হয়...এমনকি বড় ভাইদের কাছ থেকে পুরনো প্রশ্ন বা নোটও অনেক প্রাইভেট ভার্সিটিতেই পাওয়া যায় না। আমি নিজে প্রায় দুই বছর দুপুরের খাবার খেয়েছি সন্ধ্যায়, কারন সারাদিন ক্লাস এবং ল্যাব থাকায় খাওয়ার সময় পেতাম না। এত কষ্ট করে পড়াশুনা করার পরও একটা প্রাইভেট ভার্সিটি এর ছাত্রকে প্রতি মুহূর্তে খোঁচা দেওয়া হয় এই বলে যে- “প্রাইভেট ভার্সিটিতে তো সার্টিফিকেট কেনাবেচা হয়”। ভার্সিটি থেকে পাশ করার পরও জ্বালা, সবসময় তাঁকে মনে করিয়ে দেওয়া হয় তুমি প্রাইভেটের “মুরগি”, তোমার মাথায় ব্রেইনের বদলে আছে গোবর!
অনেক কোম্পানিতে আগে থেকেই প্রাইভেটের ছাত্রদেরকে অ্যাপ্লাই করতে অনুৎসাহিত করা হয়।
আরে বাবা চাকরীর পরীক্ষায় তো কোন কোটা রাখার দরকার নাই, সবাই একই প্রশ্নে পরীক্ষা দিবে; এরপর যে ভালো করবে তাকেই নেন! তবে সুখের কথা হচ্ছে এত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার পরও প্রাইভেট ভার্সিটি এর অনেক ছাত্রই তাঁদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে নিজের স্থান করে নিচ্ছেন। অনেকে কর্মক্ষেত্রে যথেষ্ট ভালো করছেন, তবে তারপরও আমাদের মনের সেই ধারণা বদলাচ্ছে না যে প্রাইভেট মানেই সার্টিফিকেট কেনাবেচা! পাবলিক ভার্সিটি এর ছাত্ররা ভালো, কারন তাঁরা ভর্তি পরীক্ষায় জয়লাভ করে ভার্সিটিতে সুযোগ পেয়েছিলেন। তার মানে কি এই যে প্রাইভেটের সব ছাত্রই খারাপ? একটা ইউনিভার্সিটি একজন ছাত্রের বিকাশে যতটুকু সাহায্য করে তারচেয়ে অনেক বেশী করে সেই ছাত্রের নিজের ডেডিকেশন, তার পরিশ্রম। প্রাইভেট ভার্সিটিতে একজন ছাত্রকে যে পরিমান চাপের মুখে পড়াশুনা করতে হয় সেরকম কিন্তু একটা পাবলিক ভার্সিটি এর ছাত্রকে থাকতে হয় না।
অনেক কোম্পানিতে প্রাইভেট আর পাবলিকের ছাত্রদের জন্য আলাদা স্যালারি স্কেল পর্যন্ত আছে! পছন্দ না হলে নিয়েন না, তবে নেওয়ার পর এই DISCRIMINATION কিন্তু ঠিক না।
প্রোমোশন বা অন্যান্য ক্ষেত্রেও এই বিভাজন বেশ স্পষ্ট। আসলে আমরা একজন মানুষকে তার Individual Quality দিয়ে judge না করে তার ব্যাকগ্রাউন্ড দিয়ে judge করি। অথচ আমরা অনেকেই জানিনা যে পৃথিবীর শীর্ষ অনেকগুলো ইউনিভার্সিটিই কিন্তু বেসরকারি। যেমন Massachusetts Institute of Technology (MIT), Stanford University, Harvard University, Yale University, Princeton University, Columbia University, the University of Chicago and Washington University in St. Louis ইত্যাদি। কেউ চাইলে পুরো লিস্ট দেখে নিতে পারেন।
Click This Link
বাংলাদেশের প্রাইভেট ভার্সিটিগুলো এখনও প্রায় শিশু, সবচেয়ে পুরনো প্রাইভেট ভার্সিটির বয়সই মাত্র ২০ বছর। উন্নতির অনেক সুযোগ রয়েছে, অনেক ভার্সিটি এখনও তাঁদের নিজেদের ক্যাম্পাস বানাতে পারেনি। তবে শত বাঁধা বিপত্তি সত্ত্বেও কিন্তু এই ভার্সিটিগুলো এগিয়ে চলেছে। অনেক কৃতী ছাত্রছাত্রী তৈরি করেছে, দেশের জন্য কাজ করছেন এমন অনেকেই আছেন। আমরা বাংলাদেশীরা সবসময়ই নিজেদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টিতে পারদর্শী, আর বিভাজন না বাড়ানোই বোধহয় ভালো! এই ধরনের পোস্ট লিখার কোন ইচ্ছা ছিল না, কিন্তু ফেইসবুকে অনেক বিখ্যাত, প্রায় সেলিব্রেটি একজন মানুষের একটা পোস্ট দেখার পর মনে হল আমরা কি নিজেদের অজান্তেই নিজেদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করছি না? তিনি বেশ কয়েকবার একজন ছাত্রের প্রশংসা করলেন, কিন্তু প্রত্যেকবারই উল্লেখ করলেন যে “প্রাইভেট ভার্সিটির” একজন ছাত্র এই কাজটি করেছে।
শুধুই একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে কি দেখা যেত না? এমনকি পত্রিকায় প্রকাশের সময়ও প্রায়ই দেখি যে আলাদা করে প্রাইভেট ভার্সিটি বলা হচ্ছে, সেই ইউনিভার্সিটি এর নামটা বলুন। এর ফলে ছাত্রটা আরেকটু উদ্যম পাবে, সেই ভার্সিটিও “প্রাইভেট” এর গণ্ডির বাইরে বেড়িয়ে শুধুমাত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পাবে। পাবলিকের সব ছাত্রই যেমন একই মানের না, তেমনি প্রাইভেটের সব ছাত্রও একই মানের না। শুধুমাত্র ইউনিভার্সিটি দিয়ে একজন ছাত্রকে বিচার না করে একজন Individual হিসেবে তাঁকে বিচার করুন! ধন্যবাদ। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।