বিষন্ন দিনের, বিষন্ন সময়ের রূপকথা
যদি পারতাম উঁচু গলায় আবৃত্তি করে শোনাতাম । "অর্থ নয়, কীর্তি নয়, সচ্ছলতা নয় - / আর এক বিপন্ন বিষ্ময় / আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে / খেলা করে / আমাদের ক্লান্ত করে" ।
বুকের ভিতর এত কান্না, এত অভিমান, এত ক্ষোভ, এত ধৈর্য্য জমানো আছে । তবুও নিজেকে পুড়িয়ে নিঃশেষ করেও এমন দুটি ছত্র লিখতে পারি না । নাহলে হয়ত মরে গিয়েও পৃথিবীর বুকে চিরঞ্জীব রেখে যেতে পারতাম ।
দুটি হৃদয় পোড়ানো ছত্র ।
শোনা গেল লাশকাটা ঘরে
নিয়ে গেছে তারে;
কাল রাতে - ফাল্গুনের রাতের আধাঁরে
যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ
মরিবার হল তার সাধ।
বধূ শুয়ে ছিল পাশে - শিশুটিও ছিল;
প্রেম ছিল, আশা ছিল - জোৎসনায়, - তবে সে দেখিল
কোন ভূত? ঘুম কেন ভেঙে গেলো তার?
অথবা হয়নি ঘুম বহুকাল - লাশকাটা ঘরে শুয়ে ঘুমায় এবার।
এই ঘুম চেয়েছিলো বুঝি!
রক্তফেনা-মাখা মুখে মড়কের ইদুঁরের মত ঘাড় গুজি
আধার ঘুজির বুকে ঘুমায় িবার;
কোনোদিন জাগিবেনা আর।
কোনোদিন জাগিবেনা আর।
জাগিবার গাঢ় বেদনার
অবিরাম - অবিরাম ভার
সহিবেনা আর -
জানি - তবু জানি
নারীর হৃদয় - প্রেম - শিশু - গৃহ - নয় সবখানি;
অর্থ নয়, কীর্তি নয়, সচ্ছলতা নয় -
আর এক বিপন্ন বিষ্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে
খেলা করে
আমাদের ক্লান্ত করে
ক্লান্ত - ক্লান্ত করে;
লাশকাটা ঘরে
সেই ক্লান্তি নাই;
তাই
লাশকাটা ঘরে
চিৎ হ'য়ে শুয়ে আছে টেবিলের পরে।
-আট বছর আগের এক দিন
জীবনানন্দ দাশ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।