ইচ্ছেমতো লেখার স্বাধীন খাতা....
কয়দিন আগে উইকেন্ডে কোনো কাজ না থাকায় কোথাও বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান করছিলাম। বন্ধুদের মুখে সাটন পার্কের নাম শুনেছিলাম। আমার বাসার কাছাকাছি এলাকার পার্কটিতে একদিন বেড়াতে যাওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল। তাই কয়েকজন বন্ধুকে রাজি করিয়ে আমরা রওনা দিলাম সাটন পার্কের উদ্দেশ্যে।
বহু পুরনো আর ঐতিহ্যবাহী এ পার্কটি ইউরোপের অন্যতম বড় শহুরে পার্ক।
বার্মিংহাম শহর থেকে মাত্র ৭ মাইল দূরে অবস্থিত এ পার্কটির আয়তন ৯০০ হেক্টরেরও বেশি জায়গা জুড়ে। এখানে সাতটা লেক, বিশাল ঘন বন, এবং প্রচুর মাঠ আছে। এছাড়াও এই পার্কের ভেতরে দুটো গলফ মাঠও আছে। পার্কের গাছপালাগুলোর বহু অংশে অক্ষত আছে।
পার্কটির ভেতরে প্রাচীনকালের তীর ও বহু প্রত্ন সম্পদও পাওয়া গেছে।
রোমান আমলের একটা রাস্তাও পার্কটিতে সংরক্ষিত আছে। ১৯০৯ সালে এখান থেকে দুটো রোমান আমলের কয়েনও উদ্ধার করা হয়েছিল।
জানা যায় উইন্ডলি পুল হচ্ছে পার্কের সবচেয়ে পুরনো এলাকার একটি। এটি ১২ শতকে বা এরও আগে তৈরি। বহু বছর ধরে এদেশের সরকার এ পার্কের গাছগুলোকে সংরক্ষণ করে আসছে।
অবশ্য ১৮৭৯ সালে এ পার্কের উপর দিয়ে একটা রেল লাইন তৈরি করা হয়েছে। আগে পার্কটির একটি নিজস্ব রেল স্টেশন ছিল যা ১৯৬৪ সালে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
বিভিন্ন স্কুল থেকে বাচ্চাদের এখানে নিয়মিত নিয়ে আসা হয়। বাচ্চাদের ঘোরাধুরি ও বিভিন্ন খেলাধূলার ব্যবস্থা ছাড়াও এতে একটা এডুকেশন সেন্টার আছে। শিক্ষা সফরে আসা বাচ্চাদের সেখানে কিছু শেখানোর চেষ্টা করা হয়।
প্রথম ও দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় পার্কটিকে সামরিক কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় এ পার্কের ভেতরে জার্মান ও ইতালিয়ান যুদ্ধবন্দীদের রাখার জন্য ক্যাম্প বানানো হয়েছিল।
আমরা পাঁচ বন্ধু পার্কটা দেখার জন্য গেলাম। সেখানে গিয়ে দেখি প্রচুর স্কুলের বাচ্চা বেড়াতে এসেছে। বাচ্চাদের কলকাকলিতে পার্কের প্রবেশপথ মুখরিত হয়ে আছে।
এখানকার স্কুলগুলো থেকে সামারে এ ধরনের বহু জায়গায় বাচ্চাদের নিয়ে যায়। বাচ্চারা কেউ কেউ পানিতে নেমেছে। অনেকে মাঠে খেলা করছে। একটু বড় কয়েকটা আবার নৌকাও চালাচ্ছে।
আমরা এ জায়গা পার হয়ে পার্কের ভেতরের দিকে চলে গেলাম।
জায়গাটা পার হওয়ার পর একটা সবুজ মাঠ পরলো। মাঠটা পার হতেই ঘন গাছপালায় রাস্তাটা প্রায় অন্ধকার হয়ে আছে। অনেকদিন পর আমরা বাসা থেকে বের হয়েছিলাম। সবুজ মাঠ আর গাছপালা দেখে খুব ভালো লাগছিলো।
বেশ কিছু নাম না জানা ফুল আর গাছপালা দেখলাম।
সেগুলোর কয়েকটার ছবি তুলে ফেললাম।
কিছুদূর যাওয়ার পর দেখি, একটা লেকে অনেক হাঁস সাতার কাটছে। একটা বেশ কাছেই ছিল। দেখতে আমাদের দেশী হাসের মতোই কিউট। হাঁসটা মানুষকে তেমন একটা ভয় পাচ্ছিলো না।
তার একটা ক্লোজআপ ছবি নিলাম।
আরেকটু কাছে যেতেই অবশ্য একটা উড়াল দিয়ে দূরে এক গাছে গিয়ে বসলো। বুঝতে পারলাম, দেখতে দেশী হাসের মতো হলেও এটা সে হাস নয়। উড়তে পারে। অনুমান করলাম শীতকালে এ হাসগুলোই হয়তো অতিথি পাখি হিসেবে হাজার মাইল দক্ষিণে উড়ে যায়।
বহু মানুষ পার্কে কুকুর নিয়ে বেড়াতে এসেছে। কয়েকজনকে ঘোড়ার পিঠে চড়েও পার্কে ঘুরতে দেখলাম। আমার বন্ধু তাদের ছবি তোলার কথা বলতেই তারা হাসিমুখে রাজি হয়ে গেল। সে বন্ধুর স্ত্রী অবশ্য এ ব্যাপারটা পছন্দ করলো না। সে জানালো যে, ঘোড়ার চেয়ে মেয়েগুলোর ছবি তুলতেই সে বেশী আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে।
আমিও অবশ্য সে সুযোগে একটা ছবি তুলে ফেললাম।
অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করে আমাদের বেশ ক্ষিদা লেগে গিয়েছিলো। তো আমরা পার্কের বেশ পুরনো ঐতিহ্যবাহী এক রেস্টুরেন্ট ও পাবে খাবার জন্য ঢুকলাম।
আগে থেকেই জানতাম খাবারের দাম বেশী হবে। মেনু দেখে আমরা সবচেয়ে কম দামের খাবারটাই পছন্দ করলাম।
সেটা ছিল স্মোকড স্যামন স্যান্ডউইচ আর চিপস। স্মোকড স্যামন মাছের স্যান্ডউইচ মানে আমাদের ধারণা হয়েছিল যে, রান্না করা স্যামন এতো গরম থাকবে যে তা থেকে ধোঁয়া উঠতে থাকবে। কিন্তু খাবার আসার পর আমরা দেখলাম যে, স্মোকড স্যামন মানে কাঁচা স্যামন মাছ (সামান্য ধোঁয়া দিয়ে গরম করা হয়েছে কিন্তু তা কাঁচাই রয়ে গেছে)। সেই স্যামন থেকে যে গন্ধ বের হচ্ছিলো তা দেখেই অনেকের ওইটা খাওয়ার ইচ্ছা চলে যাবে। কাওরান বাজারের মাছের আড়তের বাইরে দিয়ে হাঁটার সময় তাজা মাছের যেমন গন্ধ পাওয়া যায় তেমন গন্ধ বের হচ্ছিলো।
এই স্যান্ডউইচ দেখেই আমার আতঙ্ক পেয়ে বসলো। আমার বন্ধুদেরও এই অবস্থা। তারপরও হাজারখানেক টাকার স্যান্ডউইচ তো আর ফেলে দিতে পারি না। তাই বহু কষ্টে খেতে লাগলাম।
আমরা তিনজন বন্ধু এই জিনিস খেয়েছিলাম।
পরদিন তার মধ্যে দুইজনেরই বাথরুমে যেতে যেতে অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল ।
পার্কের তথ্য সমৃদ্ধ বেশ কিছু ওয়েবসাইট আছে। সেগুলো থেকে পার্কের অনেক কিছু জানা যায়।
http://www.sp.scnhs.org.uk/education.html
http://en.wikipedia.org/wiki/Sutton_Park
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।