কিছু দেশ দেখার সুযোগ হয়েছে এই জীবনে। ভ্রমণ আমার ভাল লাগে্ তাই সবার মাঝে তা জানাতে চাই। সবার উপরে ভালোবাসি বাংলাদেশ । ধন্যবাদ
আমার গন্তব্য আইভরিকোস্টের উত্তর পূর্বের এলাকা বন্দুকু । এই শহরটা ঘানার সীমান্তে ।
আবিদজান থেকে আবিনগুরু হয়ে সোজা রাস্তা চলে গেছে বন্দুকুর পথে। হেলিকপ্টারে যাওয়ার সুযোগ থাকাতে সেখানে বাই এয়ার যাব সিদ্ধান্ত নিলাম। আমাকে বন্দুকুতে দুইদিন থাকতে হবে । আমার সাথে কেনিয়ার মোহাম্মদ সোমেতে যাবে। সকালে নাস্তা সারলাম চা,বাগেট ও চিকেন কারী দিয়ে।
আবিদজান এয়ারপোর্টে পৌছে গেলাম ৭-৩০ এ। কি যেন এক সমস্যার কারণে ফ্লাইট এর সিডিউল নতুন ভাবে করা হচ্ছে ।
১০ টায় সিকোরসকি হেলিকপ্টারে ইয়ামাসুকুরুর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। বেশ আরাম লাগল জার্নি, ঘুমালাম ৩০ মিনিটের মত। ২৫০ কিলোমিটার রাস্তা, ফ্লাইট টাইম ১ ঘণ্টা ত্রিশ মিনিট।
১১-৩০ এ রাজধানী ইয়ামাসুকুরুতে পৌঁছে গেলাম । আজ ইয়ামাসুকুরু এয়ার পোর্টের কিছু ছবি তুললাম ।
১২ টায় এমআই-৮ এ উঠলাম । আমরা তিন জন। দুজন বাংলাদেশী এবং একজন টোগোর অধিবাসী ।
একজন যাবে ঘানার সাথে লাগোয়া আরেক সীমান্ত শহর বুনাতে, আমাদের গন্তব্য বন্দুকু। ১-৩০ মিনিট লাগল, পথে মেঘের ভেতর দিয়ে যেতে হলো। বৃষ্টিও হলো কয়েকবার। কুদদিভোয়ার প্রকৃতি, বন, নদী নালা দেখতে দেখতে গেলাম। জনবসতি কম ।
যেদিকে দুচোখ যায় শুধু বিরান বনভূমি, মাঝে মাঝে গাছ কাটা হয়েছে। মূল রাস্তা থেকে ভেতরে সবই কাঁচা রাস্তা, জনবসতি প্রায় নেয় বললেই চলে। বন্দুকুতে ছোট একটা ল্যান্ডিং ষ্ট্রিপ আছে। যথাসময়ে আমদের হেলিকপ্টারে বন্দুকুতে ল্যান্ড করল ।
প্রাথমিক কাজকর্ম সেরে ৩ টার দিকে হোটেল মারহাবাতে এলাম।
বিশাল এলাকা নিয়ে হোটেল, ভিলার মত রুমগুলো এক ব্লকে ৩টা করে ৬টা রুম। এ রকম ৪টা ব্লক আছে। হোটেল ও আশেপাশের এলাকার কিছু ছবি তুললাম। এটা একটা রিসোর্টের মত। মালিক লেবানিজ কিংবা মরক্কান ।
আরব্য উপন্যাসের ধাঁচে পুরো এলাকাটাকে সাজিয়েছে। এখানে সুইমিং পুল, বাগান, পার্ক ও খেলাধুলার জায়গা আছে। সময়টা ২০০৫, গৃহযুদ্ধ চলছে দেশে , পর্যটক নেই , ব্যবসাতে দুরবস্থা ।
বিকেল বেলা শহর দেখতে বের হলাম। ছোট্ট শহর সাজানো তবে রক্ষণাবেক্ষণ নেই।
মেরামতের অভাবে পাশের নালাগুলোর ময়লা রাস্তায় এসে পড়ছে। মাঝে মাঝেই গর্ত । রাস্তার পাশে সেদ্ধ ভুট্টা বিক্রি করছে ফেরিওয়ালা । ভুট্টা সেদ্ধ কিনলাম পরিমান মত। এ জাতীয় সেদ্ধ ভুট্টা প্রথমবারের মত খেলাম, মজা লাগল।
কলা কিনলাম ১২/১৪ টা ১৫০ সিএফএ। ২০০ সিএফএ দেয়াতে কি খুশী। এক ডলারে ৫৫০ সিএফএ পাওয়া যায়। অনেক সরল মানুষ এরা। শহরে কিছু ছবি তুললাম।
খাবার জন্য ভাল পাউরুটি পেলাম না। সন্ধ্যায় বাগানে বসে স্প্রাইট খেলাম, কিছুক্ষণ সময় কাটালাম । রাতে ১০-৩০ পর্যন্ত অনেক পুরানো দিনের আলাপ করলাম কয়েকজন মিলে। ক্যামেরার ছবি গতকাল বেশ ভালই এসেছিল। এখানে রুমটা ভালই ডাবল বেড।
এসি/ফ্যান সবই আছে। ফ্রিজও আছে একটা । কেক খাওয়ালাম ২/৩ জনকে, হোটেল এর টিভিতে ২/১ টা চ্যানেল দেখা যায়। সব মিলিয়ে ভাল।
অফিসে ইকুয়েডর এর মিরান্ডা ফ্রান্সিস এর সাথে কথা বলে ভাল লাগল।
বেশ আন্তরিক,আমিই কথা শুরু করলাম। চা বিস্কিট খেলাম এখানে । তারপর গাড়ীতে করে হোটেলে আসলাম। ১১ টা পর্যন্ত গল্প করলাম রুমে। দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে শহরের আবিদজান রোডে কিছুক্ষণ ঘুরলাম ।
বেশ সুন্দর ও ফ্রি রোড। ৪-৩০ এ হোটেলে ফিরে এলাম। আজ এখানে গিনির ভাংগুরা পিচোর সাথে পরিচয় হল ।
পরদিন সকাল ৯ টার দিকে বন্দুকু বাজারে গেলাম, লোকাল পোশাক - বুবু কেনার জন্য । ৩০০০ সিএফএ দিয়ে সুতির পাঞ্জাবির মত পোশাক কিনলাম একটা।
এই বাজারে ও অন্যান্য জায়গার মত দোকানিরা নানা দেশ থেকে এসে এখানে ব্য বসা করছে। ছোট ছোট দোকান, ছাপরা ঘরের মত, ফরাসী ভাষার কিচির মিচির চলছে বাজারে। আফ্রিকান নানা ধরনের পোশাক বিক্রি হচ্ছে। দাম যাই হোক একটা বা দুটো কাপড়ই তাদের সম্বল কাজেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। ঘানার কাছে হওয়াতে সেদেশের অনেক মানুষ বর্ডার পার হয়ে এসে বাণিজ্য করে।
এখন কড়াকড়ি তেমন নেই। কে আসবে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে চেক করতে। ঘানার স্যুভেনির পেলাম, কয়েন ও পেলাম কয়েকটা ।
বিকেলে আসেপাশের এলাকা দেখতে বের হলাম। রাস্তা লাল মাটির।
বৃষ্টি কম তাই মোটামুটি কম ভাঙ্গে । মেঠো পথে হেঁটে একটু এগিয়ে গেলেই বড় একটা মসজিদ। বেশ সুন্দর ভাবে বানানো। এখানে অনেক মুসলমান আছে।
কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করে সন্ধ্যার সময় হোটেলে ফিরে এলাম।
পরদিন আবিদজানের পথে যাত্রা। সুন্দর ভাবে কেটে গেলো বন্দুকুর দুইটি দিন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।