কিছু দেশ দেখার সুযোগ হয়েছে এই জীবনে। ভ্রমণ আমার ভাল লাগে্ তাই সবার মাঝে তা জানাতে চাই। সবার উপরে ভালোবাসি বাংলাদেশ । ধন্যবাদ পশ্চিম আফ্রিকার আইভরি কোষ্ট বা কুত দি ভোয়া বছর খানেক বসবাসের সুবাদে প্রতিবেশী দেশ ঘানা দেখার ইচ্ছে হলো। আবিদজানের ঘানার এম্বেসীতে গিয়ে ভিসা চাইতেই ছয় মাসের মাল্টিপল ভিসা দিয়ে দিল।
ঘানার পশ্চিমে কুত দি ভোয়া, দক্ষিণে গালফ অব গিনি ও আটলান্টিক মহাসাগর উত্তরে বুরকিনা ফ্রাসো এবং পূর্বে টোগো। চারিদিকে ফ্রাংকোফোন অর্থাৎ ফরাসী ভাষাভাষী দেশের মাঝে ঘানা এংলোফোন অর্থাৎ ইংরেজী ভাষাভাষীর দেশ। কলোনিয়াল শাসনের পূর্বে ঘানা আকান সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। ১৯৫৭ সালে প্রথম সাব সাহারান আফ্রিকান দেশ হিসেবে ঘানা ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীন হয় । ঘানা শব্দের অর্থ যোদ্ধারাজা।
স্বাধীনতার সময় কলোনিয়াল গোল্ডকোষ্ট ও ব্রিটিশ টোগোল্যান্ড ঘানা নাম গ্রহন করে এবং রিপাবলিক অব ঘানা হিসেবে স্বাধীনতা লাভ করে।
জাতিসংঘের প্রাক্তন মহাসচিব কফি আনানের দেশ হিসেবে ঘানা বেশ বিখ্যাত ও পরিচিত হয়ে উঠে। আক্রাতে জাতিসংঘের একটা পিসকিপিং ইনসটিটিউশনও আছে। ঘানার প্রায় ৪৭ টা স্থানীয় ভাষা , ইংরেজী এদের অফিসিয়াল ভাষা, আইভরি কোষ্টের সংলগ্ন এলাকা গুলোর লোকজন ফরাসী ভাষাও বুঝে এবং বলতে পারে। আইভরি কোষ্টে থাকার সুবাদে ঘানার অনেক অধিবাসীর সাথে যোগাযোগ হতো তাদেরকে ভালই লাগত।
ইংরেজীতে কথা বলতে পারে এবং ব্যবহার ও ভাল। কফি আনানের পরিচিতির সুবাদে ঘানা পশ্চিম আফ্রিকারয় মোটামুটি তাদের অবস্থান দৃঢ় করে নিতে পেরেছিল। ২০০৪ সালের শেষ দিকে আইভরি কোষ্টে ফ্রান্সের সাথে সংঘর্ষের সময় জাতিসংঘে কর্মরত বেসামরিক সদস্যদের মধ্যে যারা যুদ্ধকালীন জরুরী কাজে নিয়োজিত ছিল না তাদেরকে ঘানা রাজধানী আক্রাতে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়। এখানে মাসাধিককাল তারা অবস্থান করে কুত দি ভোয়ার যুদ্ধ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এবং স্থিতবস্থা আসার পর পুনরায় তারা কুত দি ভোয়াতে ফেরত এসে নিজ কর্মস্থলে যোগদান করে।
সীমান্ত শহর শম্পা, ঘানা
আবিদজান থেকে উওর পূর্বে বন্দুকু শহর ।
ছোট্ট শহর শান্ত পরিবেশ। বন্দুকুর আরেক পরিচিতি হলো এটা ঘানার সাথে লাগোয়া । বন্দুকু থেকে ঘানায় যাওয়া যায় । ল্যান্ড কাষ্টম ও ইমিগ্রেশন অফিস আছে । ঘানার এদিকের শহরের নাম শম্পা ।
এটাকে শহর না বলে গ্রাম বললেই ভাল । বন্দুকু থেকে শম্পার রাস্তা অনেক দিন ধরে মেরামত ও উন্নয়নের অভাবে ভগ্নদশা । দুপুরে লাঞ্চ করে রওয়ানা হলাম । সাথে পথে খাবার জন্য কিছু ফলমুল বাদাম ও ড্রিঙ্কস নিলাম । সুন্দর দিন সূর্যের আলোতে সব ঝলমল করছে ।
আকাশ মেঘহীন । আইভরি কোষ্টের ভিতরকার রাস্তা সুরুতে পিচঢালা যদিও মেরামত নেই তারপর প্রশস্ত কাঁঁচা রাস্তা। সব মিলিয়ে বন্দুকু থেকে ঘানার শম্পা শহর বিশ কিঃমিঃ হবে। শহর ছাড়িয়ে বনের মধ্যে দিয়ে রাস্তা চলে গেলে। মাঝে মাঝে মানুষ দেখা যায় ।
বন থেকে কাঠ সংগ্রহ করছে । পথে পানির প্রবাহে রাস্তায় নালার সৃষ্টি হয়েছে তবে জীপ চলে । কাঁচা রাস্তা উচু নিচু এবড়ো থেবড়ো বলে গাড়ীর গতি বেশ কম । পথই যেন শেষ হতে চায়না । শেষমেষ আইভরি কোষ্টের ইমিগ্রেশন ও চেক পয়েন্ট এ এলাম ।
কয়েকটা জানালা দরজা ছাড়া ফাঁকা ঘরের কাঠামো দাড়িয়ে আছে । একজন দারোয়ানের মত পাহাড়া দিচ্ছে । বুঝাই যাচ্ছে এই পথ এখন তেমন ব্যবহার হয় না। আমাদের গাড়ীকে থামালোনা এবং কোন কিছু জিজ্ঞাসাও করল না । একটু এগিয়ে ঘানা চেক পয়েন্টে পৌছে গেলাম ।
এখানে ঘানার পতাকা উড়ছে ।
ঘানা বর্ডার ইমিগ্রেশন সাইন পোষ্ট
চেকপয়েন্টে বেশ অনেক কর্মকর্তা কর্মচারী । কাষ্টম, ইমিগ্রেশন এর অফিস খোলা । আমাদের পাসপোর্ট ও ভিসা ছিল শম্পা শহর দেখার অনুমতি চাইলাম । বলল ঘুরে আসতে ।
কতক্ষন থাকব জিজ্ঞাসা করায় বলল ঘন্টা খানেক । চেকপয়েন্ট থেকে বর্ডার শহর শম্পার রাস্তা নুড়ি বিছানো কাঁচা রাস্তা । ছোট্ট কিছু দোকানপাট, চার্চ, মটর মেরামতের কারখানা, কিছু বাড়ী ঘর এই নিয়ে গ্রামের মত ছোট এই বর্ডার শহর । মানুষগুলো নিম্নবিত্ত তবে আন্তরিক ও হাসিখুশী । আইভরি কোষ্টের মুদ্রায় এখানে কেনাবেচা চলে ।
ঘানার মূদ্রা তেমন দেখলাম না । লোকজনের ভাষা ইংরেজী হলেও এরা ফেঞ্চ ও বুঝে । গাড়ী দিয়ে শহরে একটু চক্কর দিলাম । লালমাটির দেশ । রাস্তাগুলোও লালমাটির ।
লাল ধূলা উড়ে গাড়ী চললে ।
সীমান্ত শহর শম্পা, ঘানা
শম্পা থেকে লোকাল মুড়ির টিন জাতীয় বাসে কিংবা কোষ্টার অনেক সময় ব্যয় করে কোমাছি শহরে যেতে হয়। এটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ শহর এবং এখান থেকে ভাল বাসে আক্রা যাওয়া যায়। আফ্রিকার জীবন যাপন একটু ধীরলয়ে চলে তাই বেশি তাড়া হুড়ো থাকলে টেক্সিক্যাব সংগ্রহ করে সরাসরি কোমাছি যাওয়া যেতে পারে। তবে সব সময় টেক্সিক্যাব পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
তাই অন্য কোন পতি না পেলে সেই মান্দতা আমলের মুড়ির টিনই ভরসা।
ছোট দোকান, শম্পা
এক বয়ষ্ক মহিলার দোকানে গেলাম । খুবই আন্তরিক । ঘানার তৈরী জিনিষ কিনতে চাইলাম । বাদাম দিল ।
রোষ্ট করে প্যাকেট ভরা । মেইড ইন ঘানা। সাথে সাথে খুলে খেলাম । সাজানোর জন্য বা স¥ৃতি চিহ্ন হিসেবে কিছু রাখা যায় কিনা খোঁজ করলাম, না এখানে কিছুই নেই তেমন । মানুষ জনের সাথে ছবি তুললাম কয়েকটা, দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ঘানার স¥œতি হিসেবে ছবি তুললাম কিছু ।
বাড়িঘর মানুষ জন কোন রকমে জীবন কাটাচ্ছে । মাটির উর্বরতাও মনে হয় তেমন ভাল না । পৃথিবীতে কত সরল জীবন যাপন করে এখানের মানুষগুলো । মাটিতে কুসকুস হয় এগুলো অনেকটা মেটে আলুর মত, এটাকে সিদ্ধ করে কিংবা শুকিয়ে পিষে খায় সাধারন মানুষ । ঘন্টা খানেক থাকার পর বন্দুকুর পথে রওয়ানা হলাম ।
চেক পয়েন্টে এসে ইমিগ্রেশন ও কাষ্টমস্ এর লোকজনের সাথে ছবি তুললাম । প্রথমে কলোনিয়াল নিয়ম অনুযায়ী কি হয় এই ভয়ে অনেকে রাজি হতে চায়নি পরে সবার সাথে গ্র“প ছবি তুললাম । ঘানা বর্ডার সাইন পোষ্টের সামনে দাড়িয়েও ছবি তুললাম । পৃথিবীর পথে ঘুরতে ঘুরতে সব দেশেই যে প্রাচুর্য থাকবে এমন কখনো আশা করিনি তাই এই ধরনের দরিদ্র অবস্থা দেখেও তেমন নিরাশ হইনি । অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্যই দেশ ভ্রমন, তাই অভিজ্ঞতার ঝুলিতে নতুন একটা দেশ যোগ হলো ।
যদিও ঘানার অভ্যন্তর আরো উন্নত । আমাদের দেশের ও বর্ডার বা সীমান্তবর্তী শহরগুলো তেমন উন্নত নয় তবে রাস্তা ঘাট হয়ত এখান থেকে ভাল, বিকেল বেলা ঘানা আইভরি কোষ্ট সীমান্তে কোক বাদাম ও ফলমুল দিয়ে নাস্তা করলাম তারপর আবারো সেই পুরানো পথে বন্দুতে ফিরে এলাম । বন্দুকুতে তখন সন্ধ্যা নেমেছে। ঘানার শম্পায় বিকালের সময়টুকু ভালই কাটল ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।