সকালবেলা হঠাৎ আমার সিটিসেল নম্বরে পরপর ৫টি এসএমএস এলো। মেসেজগুলো হ্যালোটিউনস সম্পর্কিত। প্রথম মেসেজটি পড়ে জানতে পারলাম আমি নাকি হ্যালোটিউনস সার্ভিসটির জন্য সিটিসেলের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ করেছি। সিটিসেলও আমার এই আকুল অনুরোধ ফেলতে পারেনি। তারা আমাকে আশ্বস্ত করলো যে, অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি এই সার্ভিসটি উপভোগ করতে পারবো।
কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা আমাকে জানালো সার্ভিসটি চালু হয়েছে এবং এই সার্ভিস বাবদ আমার পোস্টপেইড একাউন্ট থেকে ভ্যাটসহ মাত্র ৪৯.৪৫ টাকা (রেজিস্ট্রেশন ফি ৩৪.৫০/- ও গান ডাউনলোড ফি ১৪.৯৫/-) চার্জ করা হয়েছে। আমি সিটিসেলের এই দ্রত সার্ভিস দেয়ার ধরন দেখে পুলকিত হলাম এবং সেই সাথে ৩য় বারের মতো বিস্মিত না হয়েও পারলাম না। বিস্মিত হলাম এজন্য যে, আমি কখন এ সার্ভিসটির জন্য তাদের কাছে অনুরোধ করেছি তা আমি নিজেই জানি না। অবশ্য আমি অনুরোধ না করলেও সিটিসেল সেবা প্রদান করতে ভুল করেনি এবং একাউন্ট থেকে টাকা কাটতেও বিলম্ব করেনি। যেহেতু আমি এর আগেও ২ বার এ ধরনের সেবা পেয়ে বিস্মিত হয়েছি তাই বিস্মিত মনেই সিটিসেল কল সেন্টারে কল দিলাম।
তাদের ইচ্ছায় আমাকে এ সেবাটি প্রদান করায় তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে সার্ভিসটি বন্ধ করে আমার একাউন্টের টাকা ফেরত দেয়ার জন্য বললাম। কল সেন্টার থেকে রওশন নামের এক নারীকণ্ঠ আমাকে জানাল, আমার অভিযোগটি তিনি সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টে পাঠিয়ে দিয়েছেন। শিগগিরই সিটিসেল অফিস থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। আমি যেন তাদের ফোনের অপেক্ষায় থাকি। যেহেতু আমি আগে আরও ২ বার এ ধরনের পরিস্থিতির শিকার হয়েছি তাই রওশন নামের নারী কণ্ঠটির সঙ্গে আর কোনো উচ্চবাচ্য না করে ফোন রাখলাম।
এবার একটু পেছনে ফিরে তাকানো যাক। প্রায় ২ মাস আগে আমার সিটিসেল নম্বরে হ্যালোটিউনস সম্পর্কিত একই ধরনের এসএমএস এসেছিল এবং আমি প্রায় ১০-১২ বার কল সেন্টারে অভিযোগ জানানোর পর তারা সার্ভিসটি বন্ধ করেছিল। অবশ্য তারা বারবার দাবি করছিল যে, আমিই নাকি এ সার্ভিসের জন্য তাদের কাছে অনুরোধ করেছি। আমিও তাদের এ বক্তব্যের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ জানাচ্ছিলাম। তাদের শেষ বক্তব্য ছিল এটা যদি তাদের কারিগরি ত্রুটি হয় তাহলে অবশ্যই একাউন্ট থেকে কাটা টাকা ফেরত দেয়া হবে এবং সার্ভিসটিও বন্ধ করা হবে।
অবশেষে তারা প্রায় ১৫ দিন পর সার্ভিসটি বন্ধ করেছিল এবং মাস শেষে আমি আমার পোস্টপেইড বিলের কপি হাতে পেয়ে দেখেছিলাম আমার একাউন্ট থেকে ঠিকই ৪৯.৪৫ টাকা চার্জ করা হয়েছে। আমি সিটিসেলের এই দ্রুত (১৫ দিন) সেবা প্রদান দেখে যারপরনাই আরেকবার বিস্মিত হয়েছিলাম।
গত মাসের ২৪ তারিখে আমার এক বড় ভাইয়ের নম্বরেও ঠিক একই সমস্যা হয়েছে। তিনিও আমার মতো কল সেন্টারে ফোন করে অভিযোগ জানিয়েছেন। এখন পর্যন্ত ৯ দিনে তিনি ৪ বার কল সেন্টারে ফোন করেছেন এবং কল সেন্টার থেকে প্রতিবারই তাকে জানানো হয়েছে সিটিসেল অফিস থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।
তিনি আজ ৯ দিন ধরে ফোনের অপেক্ষায় আছেন। আমার এক চাচার নম্বরেও একই ঘটনা ঘটেছে। তিনি আমার কাছে জানতে চেয়েছেন কিভাবে তিনি এ সার্ভিসটি বন্ধ করতে পারবেন। আমার পরিচিত আরও কয়েকজন সিটিসেল ফোন ব্যবহারকারী না চাইতেই সিটিসেল থেকে এ সেবা পেয়েছেন।
সম্প্রতি সিটিসেল * বাটন প্রেস করে হ্যালোটিউনস সার্ভিস চালুর ব্যবস্থা করেছে।
কোনো সিটিসেল নম্বরে ফোন করলে সেই নম্বরটির হ্যালোটিউনটি যদি পছন্দ হয় তাহলে * বাটন প্রেস করে খুব সহজেই সেই টিউনটি নিজের সিটিসেল ফোনে সেট করার সুযোগ পাচ্ছেন সিটিসেল গ্রাহকরা। আমার পরিচিত যে কয়েকজন এই সার্ভিসটি না চাইতেই পেয়েছেন তাদেরকে কল সেন্টার থেকে জানানো হয়েছে তারা * বাটন প্রেস করায় সার্ভিসটি চালু হয়েছে। তারাও ভেবেছেন হয়তো কখন * বাটনে চাপ পড়ে গিয়েছে তারা বুঝতেই পারেননি। কল সেন্টার থেকে আমাকেও এমনটাই বলা হলো আজ সকালে। কিন্তু আমিও কল সেন্টারের নারী কণ্ঠটিকে জানিয়ে দিলাম মনের ভুলে কিংবা অজান্তে আমি * বাটন প্রেস করিনি।
এবার একটু হিসাব করা যাক। আমি বলতে চাই সিটিসেল বর্তমানে হ্যালোটিউনস সার্ভিসের নামে গ্রাহকদের সঙ্গে ভাওতাবাজি করছে। আমার জানা মতে সিটিসেলের বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা ১৫ লাখের ওপরে। এর মধ্যে ৫ লাখ গ্রাহককেও যদি সিটিসেল এই সার্ভিসটি না চাইতেই জোর করে দিয়ে দেয় তাহলে সিটিসেল সেসব গ্রাহকের কাছ থেকে নিচ্ছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। আর যেসব গ্রাহক এ ব্যাপারে জানার জন্য কিংবা অভিযোগ করার জন্য কল সেন্টার ফোন করছেন কল সেন্টার থেকে তাদের জানানো হচ্ছে যে, তারা নিশ্চয় * বাটন প্রেস করেছেন।
যারা কল সেন্টারে কল করছেন তারা কল করা বাবদ প্রতি মিনিটে সিটিসেলকে দিচ্ছেন ২.৩০ টাকা। এখান থেকেও সিটিসেল বাড়তি আয় করছে। অর্থাৎ সবদিক থেকেই সিটিসেল গ্রাহককে প্রতারিত করছে এবং গ্রাহকের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আয় করছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।