অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা
ব্যর্থ রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা সমার্থক নয়। শব্দ ওলোট পালোট করে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র স্বীকৃতি দিয়ে জাতিয়তাবাদী উন্মদদের বিরাগভাজন হওয়ার খোনো খায়েশ আমার নেই। জাতীয়তাবাদী উন্মাদনার মিছিলে শরিক হতে না পারি , তাদের আড়ালে টিটকারি দেওয়ার ধৃষ্টতা করাটাও চরম মুর্খতা। জাতীয়তাবাদী উন্মাদদের চরম ও অগাধ পান্ডিত্যে কোনো সংশয় নেই আমার।
শব্দজব্দ খেলবো না, ব্যর্থ রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতাকে এদিক ওদিক করে, তাদের অগাধ প্রজ্ঞায় তারা এই হীন চক্রান্ত এবং ফাঁকিবাজী ধরে ফেলতে পারেন, তারা প্রচুর বিদ্বান এবং বিদ্যাৎসাহী, তাই তাদের কাছে সবিনয়ে জানতে চাই রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার পরিমাণ মাত্রাগত ভাবে কত শতাংশের কোটা অতিক্রম করলে একটি ধারাবাহিক রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার প্রমাণ রাখা রাষ্ট্রকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বলা যায়?
জাতীয়তাবাদী উন্মাদদের এই ব্যর্থ রাষ্ট্র বিশেষণটা পছন্দনীয় নয়, বরং অধিকতর শোভন দুর্বল রাষ্ট্র বিশেষণে তাদের আপত্তি নেই।
স্বজাত্য অভিমান বশত কিংবা পার্শ্ববর্তী আগ্রাসী পূঁজিবাদী কাফির রাষ্ট্র ভারতের পত্রিকা বাংলাদেশের ব্যর্থ রাষ্ট্র বলায় তারা ভীষণ ক্ষিপ্ত এবং তারা অনেকটা জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়েই এর বিরোধী। তারা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতাকে অস্বীকার করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
কর্পোরেট প্রথম আলো- ডেইলি স্টার গং যখন ভারতের সুরে সুর মিলিয়ে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বলে তখন এই মতবাদও পরিত্যাজ্য। এমন স্থিরপ্রতিজ্ঞ মানস নিয়ে কিছু বলবার নেই।
বাণিজ্য নিয়ম মেনেই প্রতিটা সংবাদ পত্র নিজের ব্রান্ডিং করেছে।
অসংকোচ সত্য প্রকাশের সাহস, নির্ভীক সত্য উচ্চারণের সাহস, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষপাতিত্ব, নতুন আগামীর পথে জনগণের পাশে থাকা উন্নত সংবাদপত্র, যা কিছু ভালো তার সঙ্গে সঙ্গে ভেসে যাওয়া জাতীয় দৈনিকগুলোর এইসব শ্লোগান বিপননের বুলি
বাণিজ্যিক বিপননের মনোগ্রাম, মুখরোচক শ্লোগান। তবে এসব মুখরোচক শ্লোগান কার্যকরী। তাই যখন বিজ্ঞাপনে ধারাবাহিক ভাবে প্রচার করা হয় আপনি যদি স্মার্ট, এবং সচেতন পুরুষ হতে চান বিশেষ একটা কোম্পানীর কনডম ব্যবহার করুন, তখন সেটা মানুষের স্মার্ট হতে চাওয়া চেতনায় ঠিকই আঘাত করে, মানুষ কনডম এবং জন্মনিয়ন্ত্রন সামগ্রীর ব্যবহার বাড়িয়েছে, সচেতন নারী এবং আধুনিক নারীরা জন্মনিয়ন্ত্রন বড়ি ব্যবহার করছেন, সীমিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্মনিয়ন্ত্রন বড়িও সচেতনতার প্রতীক, অনেক রকম দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলতে সহায়তা করে।
মানুষ বিজ্ঞাপন পরিচালিত এবং বিজ্ঞাপনের বাইরে গিয়ে ভাবতে পারবার প্রাজ্ঞতা কম এখানে। পূঁজিবাদী ব্যবস্থায় মূলত প্রচারের বাইরে গিয়ে, প্রচলিত মতের বাইরে গিয়ে একটা জগাখিচুড়ী পরিবেশনাও একটা প্রচারণার অংশ, যেমন নোয়াম চামিস্কি।
রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ এবং অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ, বিশেষণ এবং বিশেষ্যের ব্যবহার, ভাষা ব্যবহারের ধাঁচ এবং ভাষার প্রয়োগে ধরা পরে উল্লেখিত ব্যক্তি বিশেষ কোন গোত্রের সংবাদসেবী এবং কোন গোত্রের সংবাদবিদ্বেষী তারা।
বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে ব্যর্থ? শোভন ভাষায় বাংলাদেশ দুর্বল রাষ্ট্র। যেখানে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ। যেখানে একটা ব্যবসা শুরুর উদ্যোগ নিয়ে সেটাকে শুরু করতে ন্যুনতম ৬০ দিন সময় লাগে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা, সহিংসতা একটা চাপা গৃহযুদ্ধাবস্থা তৈরি করেছে।
দেশের অধিকাংশ মানুষই দুটো শিবিরে ভাগ হয়ে যুযুধ্যমান।
সংখ্যালঘুর নিপীড়ণ, এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের হার আশংকাজনক। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের গ্রাফ উর্ধগামী।
জনগণ অসন্তুষ্ট। সরকার যেভাবে দেশ পরিচালনা করছে তাতে সন্তুষ্ট নয় জনগণ, সরকার দেশের জনগণের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ।
অধিকাংশ নির্বাচিত প্রতিনিধির প্রতিশ্রুতি পূরণের ব্যর্থতায় বিরক্ত জনগণ। আদালত এবং অন্যান্য সরকারী সংস্থার প্রতি জনগণের আস্থা নিম্নগামী।
অপুষ্টি এবং শিশুমৃত্যুর হার আশংকাজনক। দেশের ৬০ শতাংশ মানুষ অপুষ্টির শিকার এবং এই হার উর্ধমুখী।
তবে বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্র নয় বরং অধিকাংশ মানবিক অধিকার রক্ষা এবং পুরণে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা প্রকট।
জনগণের মর্জি এবং চাহিদা পুরণ না হলে সার্বভৌমত্বের ধারণা জনগণকে সীমান্তে কাঁটাতার ঘেরা বৃহৎ এক কারাগারে যাবজ্জীবন কারাবাসের অসস্তিকর অনুভুতি দেয়। এই অনুভুতির মানসীক পীড়নে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সব সময়ই দুর্বল। নৈতিকতাবোধ দুর্বল, তাদের আত্মমর্যাদা নেই, আত্মমর্যাদাবিহীন একদল দুর্বল পরমুখাপেক্ষী মানুষের কাফেলা রাস্তায় ।
বস্তুত আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সাফল্য মূলত সডার্বভৌমত্বের এবং ভারতীয় আগ্রাসন বিরোধীতার ধারাবাহিক রাজনৈতিক গলাবাজীর ধারণার সীমিত।
টিভির মনোলোভা বিজ্ঞাপণ , রাজনৈতিক শ্লোগান এবং ধারবাহিক প্রচারণায় কাফিরদের হাতে মুসলমানিত্বে বিলোপের অন্ধভীতি এবং এর প্রতিকারে ইসলামী বিপ্লব বাংলাদেশকে সফল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করতে পারে।
বাংলাদেশে অর্থনীতি ও খাদ্য পরিপুষ্টি নিয়ে বিভিন্ন উপাত্ত সংগ্রহে নিয়োজিত কতিপয় গবেষণা সংস্থা, তারা সংগৃহীত উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ঘোষণা দিচ্ছে গত ২ বছরে অনেক মানুষ দারিদ্র সীমার নীচে নেমে গেছে।
মানুষের দৈনন্দিন আয় বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফ্রীতির পাগলা ঘোড়ার লাগাম ধরতে পারছে না, মূল্যস্ফ্রীতির হারকে অতিক্রম করতে পারছে না তাদের আয়বৃদ্ধি বরং প্রতিদিন পিছিয়ে পড়ছে তারা। তাদের সঞ্চিতি কমেছে, তারা বিলাসদ্রব্য পরিত্যাগ করে এই অসহনীয় পরিস্থিতি মোকাবেলা করবার চেষ্টা করছে, এবং এরই ধারাবাহিকতায় তারা খাদ্যবাবদ বরাদ্দকে কমিয়ে এনেছে।
অনেকে সুষম খাদ্যের চাহিদা পুরণ করতে পারছে না। শহরগুলোতে সংস্কারের নামে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করা অনেকদের দৈনন্দিন আয়ের যোগান কমিয়ে দিয়েছে।
শহরের উপকণ্ঠে সরকারী জমিতে অবৈধ বসবাস করা মানুষের বসতি গুড়িয়ে দেওয়ায় অন্তত ৫ শতাংশ মানুষ অনিকেত কিংবা উদ্বাস্তু।
তবে গভীর সন্দেহ এইসব উপাত্ত বিশ্লেষণ ও প্রকাশের কাজটা করছে যেইসব গবেষণা সংস্থা, তারা প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার গংয়ের স্লিপীং পার্টনার। তারা যেনতেন উপায়ে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রের তকমা এঁটে দিতে চায়।
এইসব দেশদ্রোহীরা নিপাত যাক, ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ আজ উন্মোচিত। তাদের প্রতিহত করতে হবে।
মেহনতি জনতার জয় হোক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।