আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

Energy Saving- হতে পারে আমাদের দেশের জন্য অনুকরণীয়।

প্রতিটি সর্যাস্তে বুক বাঁধি একটি অন্যদিনের সূর্যোদেয়র প্রত্যাশায়.......

যদি প্রশ্ন করা হয়, পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী Energy ব্যবহারকারী দেশ কোনটি তাহলে নির্দিধায় উত্তর আসবে- "আমেরিকা"। উৎপাদন এবং ব্যবহার- দুটোতেই তারা প্রথম। আমার আজকের বিষয় আমেরিকানদের Energy নিয়ে নয়। কারণ, আমেরিকান এবং তাদের দেশকে স্বশরীরে প্রত্যক্ষ করার সময় আমার মাত্র কয়েকটা দিনের। গত বছরের মাঝামঝি (আগষ্ট-এ) মাত্র সপ্তাহখানেকের জন্য টেক্সাস গিয়েছিলাম।

পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তিটির (প্রেসিডেন্ট বুশ) বাগানবাড়ী যেখানে, সেই টেক্সাস যাওয়ার অনুভুতিটা অবশ্যই একটুখানি ভিন্ন ছিল। না, বুশের বাগানবাড়ী দেখার কথা মনেছিলনা। তবে যেখানে তৈরী হয় মহাকাশে যাওয়ার বিশাল বিশাল রকেট-স্পেসশিপ, NASA-এর সেই "জে. এফ. কেনেডি স্পেস সেন্টার"-টা দেখার সুযোগ মিস করিনি। মাত্র ৩০ ডলার এক্সট্রা খরচ হয়েছিল তাতে। সঙ্গে ছিলেন শাহ নেওয়াজ ভাই আর উনার উইনিতে Postdoctoral fellow এক কোরিয়ান সহ পৃথিবীর ভিবিন্ন দেশ থেকে আসা শ'খানেক বিজ্গানী।

সেই সপ্তাহ খানেকের দেখায় আমেরিকান এবং তাদের দেশ সম্পর্কে কিছু লেখার দুঃসাহস আমার নেই। তবে টেক্সাসের মাল্টিলেয়ার ফ্লাইওভার আর অন্তহীন সমতল ভুমি আমাকে যারপরনাই বিমোহিত করেছে। পাহাড়-সমুদ্রে ঘেরা এই জাপানের মানচিত্রের সাথে তার কোন তুলনা চলেনা। আসল কথায় আসি। আমাদের এখানে সবে গরম পড়তে শুরু করেছে।

জুলাই-আগষ্ট এখানে সবচেয়ে বেশী গরম পড়ে। তাপমাত্রা ২৫-৩৫ ডিগ্রী পর্যন্ত উঠানামা করে। বাতাতে প্রচুর জলীয়বাষ্প থাকাতে তাপমাত্রা আরো বেশী মনে হয়। আমি আমার প্রফেসরের এসিসষ্ট্যান্ট হিসাবে একটা ক্লাশনেই সপ্তাতে একদিন। কেমেষ্ট্রির উপর ১:৩০ মিনিটের একটা লেকচার।

ইংরেজীতে দিতে হয়। ইংরেজীতে কেমিষ্ট্রির উপর দক্ষতা বাড়ানোই আমার লেকচারের উদ্দেশ্য। খুব বেসিক কিছু অধ্যায়ের উপর লেকচার দেই আমি। প্রথম যেদিন আমি লেকচার দিতে গেলাম, ক্লাশরুমের ডেকোরেশান দেখেতো আমার মাথা চক্কর দিতে শুরু করল। কি নেই এদের ক্লাশরুমে।

(ক্লাশরুমের বর্ণনাটা এখানে দিতে চাইছিনা। সম্ভব হলে পরে কখনো আলাদা পোষ্টে লিখব এ সম্পর্কে। ) গত সপ্তাহে ও যথারীতি সেই ক্লাশটা নেয়ার জন্য গেলাম। প্রচন্ড গরমে আমি ভিজে যাচ্ছিলাম আরকি। তাই ক্লাশে ডুকে এসি-র কোলিং সিসটেমটা আরো বাড়িয়ে দিতে গিয়ে দেখি বোর্ডের নীচে জাপানীতে কি যেন লেখা।

যদিও পুরোটা পড়তে পারিনি তবু যেটা বুঝতে পারলাম তা হল "রুম টেম্পারেচার ২৭-২৮ এর মধ্যে রাখতে হবে"। ২৭-২৮ ডিগ্রী আমাদের দেশে কম হলেও শীতপ্রধান দেশে এটা মোটেও কম নয়। ছাত্রদেরকে গরমে একটু বিচলিত বলেই মনে হল। কিন্তু কেউ-ই এসি-র পাওয়ার বাড়াচ্ছেনা। ব্যাপারটা আমার কাছে খটকার মনে হলেও অবাক হইনি।

কারণ, এনারজি সেভিং-এর অংশ হিসাবে আমাদের ফেকাল্টির বেশ কিছু লিফ্ট-ও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ব্যাপারটা আমি আগেই জেনেছিলাম। কিন্তু যে ব্যাপারটা আমাকে ভাবিয়েছে, তা হল জাপানীদের ও এনারর্জি সেভিং-এর জন্য লিফ্ট-এসি বন্ধ রাখতে হয়? এদেরতো ইলেকট্রিসিটির অভাব নেই। কোনদিন লোডসেডিং-এ পরতে হয় না। এর বিপরীতে আমাদের দেশের চিত্রটা একবার কল্পনা করলাম।

আমাদের দেশে সরকারী অফিসগুলোতে ফেন-এসি-বাতি ব্যবহারের যে চিত্র আমরা দেখি, তাতে মনে হয় না সেখানে ইলেকট্রিসিটির উৎপাদনে কোন ঘাটতি আছে। মনে হয় না ওই দেশে ইলেকট্রিসিটির অভাবে প্রতিদিন ১০-১৫ বার লোডসেডিং হয়। মনে হয়না ইলেট্রিসিটির অভাবে কলকারখানায় উৎপাদন কম হয়। কোন জিনিস যথেষ্ট পরিমাণ থাকলেই যে তা যথেচ্ছা ব্যবহার করা উচিৎ নয়, এটা আমাদের কে বুঝাবে। আমাদের অঢেল গ্যাস কে আমরা যে ভাবে অপব্যবহার করছি, তার জন্য খুব নিকট ভবিষ্যতেই আমাদেরকে আফসোস করতে হবে।

তার দায় শোধ করতে হবে কড়ায় গন্ডায়। লিফ্ট-এসি বন্ধ রেখে এনার্জি সেভ করা খুব বড় কোন ব্যাপরা না, কিন্তু এই ছোট্র ঘটনাটা থেকেও অনেক বড় কিছু শিখার আছে আমাদের মত দরিদ্রদের।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।