সারা বিশ্বের বিস্ময়, তুমি আমার অহংকার
থাকি ইয়ুনিভার্সিটির ফরেন স্টুডেন্ট হলে। গতকাল (১২ই মে, সোমবার) বেজিং সময় দুপুর ২.৩০ নাগাদ ভুমিকম্প আঘাত হানে সারা চীনে। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল আমার পাশের প্রদেশের রাজধানী। তাই আমার এখানেও আলোড়নটা বেশ ছিল।
দুপুর বেলা ক্লাসে যাওয়ার জন্য বইপত্র আর ক্লাস শেষে ফুটবল এর জন্য জার্সি/বুট নিয়ে রওনা দিব বলে প্রস্তুতি নিচ্ছি আর সাথে সাথেই বিল্ডিং দোলা শুরু করল।
চট্টগ্রামে থাকতে একবার অভিজ্ঞতা হয়েছিল, তাই সাথে সাথেই বুঝতে পারলাম ভূমিকম্প হচ্ছে; দৌড়ে নেমে লনে চলে আসলাম। ক্লাস বাতিল ঘোষনা করা হলো; অবশেষে গেলাম ফুটবল খেলতে। খেলে ঘেমে-টেমে এসে দেখি ডর্মের দরজা বন্ধ। রুমে ঢুকা যাবেনা-কতৃপক্ষের নির্দেশ। আমি তখন গোসল করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি।
অনেক বুঝিয়েও কাজ হলনা, রুমে ঢুকতে পারলামনা। গোসল টোসল না করেই ঐ অবস্থাতেই ডিনার সারলাম। ডিনারেও এক শোচণীয় অবস্থা। ক্যান্টিন বন্ধ ঘোষণা তাই বাইরে গিয়ে অখাদ্য গিলতে হল। রাত ১২টার দিকে রুমে ঢুকার অনুমুতি পেলাম।
গরম পানিতে গোসল করব বলে হীটার চালু করেই কম্পিউটারের সামনে বসে পড়লাম। ভাব্লাম একটু নেট ঘাটি, দেশে ফোন করে জানাই- ভাল আছি; এর মধ্যেই পানি গরম হয়ে যাবে। ফোন করতে পারলাম্না কারন মোবাইল নেট ওয়ার্ক তখনো বন্ধ। ১ ঘন্টা পর গোসল করতে যাব আর মরার দুলুনি আবার শুরু হল। ঐ একি ড্রেসে আবার বাইর হলাম।
ইয়ুনিভার্সিটি কতৃপক্ষ রাতে রুমে যেতে নিষেধ করে বসল। কতৃপক্ষের নোটিশ যেন ভার্সিটির পিচ্চি গুলার জন্য ঈদের উৎসব বয়ে নিয়ে আসল। মহা উৎসাহে তারা বিশাল লনের উপর শোয়ার ব্যবস্থা করে ফেলল। প্রেমিক প্রেমিকা একসাথে উন্মুক্ত আকাশের নিচে রাত যাপন, ইটিশ পিটিশ করার মহা সুযোগ ছাড়ে কে। আমার গা থেকে তখন রীতিমত ভেড়ার গন্ধ বের হচ্ছিল।
গোসল করতে না পেরে মাথা ব্যথাও করছিল। অনেক বার চেষ্টা করলাম রুমে ৫মিনিটের জন্য ঢুকার- পারলামনা। ঐ অবস্থাতেই সারারাত কাটালাম বাইরে। গল্প গুজব, গান, বাদাম, সিগারেট এ চলল সারা রাত। গায়ের গন্ধে ভয়ে কোন মেয়ের সাথে কথা বলতে যাইনাই ।
সকাল সাড়ে ৪ টার দিকে আরেকবার দুলুনি। আমার চোখে তখন ভাসছিল নানার বাড়ির ওই স্বচ্ছ পুকুর, দুপুরে গাছের উপর থেকে নাক টিপে পানিতে লাফ দেওয়া আর ডুব সাতার। আহা কি যে একটা সময় ছিল! অবশেষে সকাল সাড়ে সাতটায় রুমে ঢুকলাম আর শান্তির গোসল সারলাম।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল সিচুয়ান প্রদেশের রাজধানী 'ছংদু' এর কাছাকাছি 'ওয়েনছুন'। মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭.৮।
এই পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার মানুষের মৃত্যুর বে সরকারি খবর পাওয়া গেছে। অনেক মানুষ এখনো নিখোঁজ।
লেখাটি একইসাথে 'আমার ব্লগ ' এও প্রকাশিত। আলোকচিত্র সৌজন্যে প্রমোদ শাক্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।