আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এহেছান লেলিন,আপনার ভাইটি কেমন আছেন?

.

গত বছরের জুন মাসে এহসান লেলিন তার 'ব্যবধানে ব্যবধান' শিরোনামে একটি লেখা ব্লগে দেন। আজ আমার এক পছন্দের ব্লগারের ফেবরিট পোস্টগুলো পড়ছিলাম। এক পর্যায়ে লেলিনের লেখাটি পড়ি। Click This Link শুরুর কয়েক লাইন এরকম: 'আমার পাগল ভাইয়ের হাত-পায়ে শেকল, আর মা ভাইয়াকে গোসল করানোর প্রাণান্ত চেষ্টায় মগ্ন। এই দৃশ্য ছিল বাসায় প্রায় প্রতিদিনকার।

মায়ের চোখের জল যেন দেখতে না হয় সে জন্য দেরি করে বাসায় ফেরা, দরজা-জানালা বন্ধ করে এক বসে থাকা, ভাইয়ার চেঁচামেচির শব্দ যেন কানে এসে না পৌঁছে, সেই চেষ্টার অন্ত ছিল না। আমরা আর সব ভাইবোন কেমন জানি যান্ত্রিক হয়ে গেলাম হঠাৎ করেই। যেমন হঠাৎ করেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে আমার প্রিয় ভাইটা। বাবা তার অসহায় দু চোখ দিয়ে বড় ছেলের পাগলামি দেখেন। '... পাঠক আপনি যদি এই লেখাটা পড়বেনই ঠিক করে থাকেন আমার লেখাটি পড়বেনই অনুরোধ করছি...লেলিনের লেখাটা পড়ুন আগে!আমার ইচ্ছে করছে ওর পুরো লেখাটাই এখানে আবার দিয়ে দিতে।

লেখাটার গুনাগুন বিচারের জন্য আমার এই দু'লাইন লেখা নয়। কৃতজ্ঞ লেলিনের প্রতি। আশ্চর্য ,নিজের প্রতি ধিক্কার জাগলো,আমার বড় চাচা মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ ছিলেন!তা নিয়ে আমার একটা মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা আছে। তাও গোসলকে কেন্দ্র করেই!আমি দীর্ঘদিন ঘটনাটি ভুলে থাকলাম কিভাবে! লেলিনের ভাই-বোন,বাবা-মা পরিবারের অসুস্থ্য সদস্যটির প্রতি সদয়। আমার চাচার ছেলে মেয়েরা তা ছিলেন না।

(লিখতে যদিও বসেছি,কিন্তু অসহ্য লাগছে সামনে টানতে!)তারা ওই বুড়ো লোকটির পাগলামীতে এক পর্যায়ে অতিষ্ট হয়ে উঠেছিলেন হয়তো!পরিবারের প্রতিটি সদস্য তার মৃত্যু কামনা করতো । প্রতি মুহূর্তের বকা ঝকায় বুড়োটা যাতে নিজে মরে সবাইকে রেহাই দেন সেই অভিষাপ থাকতো!(এনিয়ে আমার অন্য কাকাদের সঙ্গে মজির কাকার ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত হয়ে যায়!আমি তখন খুবই ছোট ছিলাম। স্কুলেও যাইনা। আশ্চর্য-ঘটনাগুলো আজ কত স্পষ্ট মনে পড়ছে!আবারও কৃতজ্ঞতা লেলিন!এই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ছে সেই ছোট বেলায় শেষ শীতের এক বিষন্ন বিকেলে হাতে বাঁশের একটা কঞ্চি নিয়ে আমাদের পুকুর পাড়ের উত্তর পাড়ের হলুদ খেতের আল ধরে হাঁটতে হাঁটতে এই বিষয়টি নিয়ে মন খারাপ করে হাঁটছিলাম! ) আজ প্রত্যাশা করি লেখাটা যাতে আমার পরিবারের কোন সদস্যের চোখে না পড়ে!কাউকে এনিয়ে কখনো কথা বলতে শুনি না!দৈনন্দিন জীবন যাপন থেকে,অভ্যাস থেকে বিদায় নেয়ার পর সবাই খুশি হওয়ার পর হয়তো আর মনে করতে পছন্দ করেন নি!আমিও ভুলে ছিলাম!বড় কাকার জন্য খুব মায়া লাগছে আজ। বড় চাচার জীবন কাহীনি এর পর দু'লাইনেই শেষ করে দেয়া সম্ভব!আমার চাচাতো ভাইদের ধারণা ছিল পানিতে ডুব দেয়ালে তাদের বাবার মাথা ঠান্ডা হবে।

কিন্তু,কিছুতেই গোসল করতে পছন্দ করেতন না তিনি। এদিন সবার অলক্ষে চাচার বড় ছেলে একটা ১৫/২০ হাত লম্ভা একটা বাঁশের মাথায় বেঁধে কাকাকে পুকুরে নামান। এবং বাঁশ চেপে ধরে ডুব দিতে বাধ্য করেন। একবার সময় একটু দীর্ঘ হয়ে যায়। আমার মজির কাকার নিথর দেহ বাঁশের ডগায় আটকে ছিল!এই নিয়ে অনেক কান্ড,লুকিয়ে কবর দেয়া,কত কি...কত কি! আজ সব মনে পড়লো! আমার কারো প্রতি কোন রাগ নেই!চাচাতো ভাইয়ের পক্ষে যেমন কোন যুক্তি নেই,বিপক্ষেও নেই!হঠাৎ হঠাৎ টের পাই ,আমি জীবন বুঝি না!এও মনে হয়,কতো সহজে জীবন পার করে দিচ্ছি!জীবন কোথায় যেন খুব রুক্ষ,নির্মম,ক্ষারে ভরা!খুব অসহায় লাগে তখন!চোখ সেই জীবন অনুসন্ধান করে! লেলিন তার লেখায় যে কষ্ট লিখেছেন,পড়ে খুব আক্রান্ত হয়ে পড়েছি!গুছিয়ে লিখতে পারছি না।

কোন পরিকল্পনাও কাজ করছে না। শেষ কবে এধরনের অবস্থায় পরেছিলাম মনে নেই। লেলিনের ভাই কেমন আছেন খুব জানতে ইচ্ছ করছে। লেলিন এই লেখা আপনার চোখে পড়বে কিনা জানিনা। যদি দেখেন জানাবেন তিনি কেমন আছেন! লেলিন লেখাটা শেষ কয়েকটি লাইন এরকম: 'এখনও আমার সবচেয়ে বড় এবং প্রিয় ভাইটার এই অবস্থার জন্য ঘুমাতে পারি না।

প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরে একটা টং দোকানে বসে থাকি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা মনে করি। সে সময় টং দোকান থেকে দেখতাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলো চলে যাচ্ছে। আমার আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া নিষেধ। তখন নীরবে চোখ ভিজে আসতো।

আমি একা! আমার আগে-পিছে কেউ ছিল না। বন্ধু! তারা সব লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে। আমি অস্পৃশ্য! অনেক পথ পেরিয়ে আমি আবারও সেই শুরুতেই ফিরে যাচ্ছি। শুধু এবারের চরিত্র আর মঞ্চটা ভিন্ন। কাহিনী সেই একই।

শুধু ব্যবধান ছয় বছর। ' লেলিন আপনি কেমন আছেন? আমাকে কোন এক বিবেচনায় আপনার মতো মনে হচ্ছে!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।