সম্মিলিত ইসলামী জোটের গোলটেবিল
কোরআনবিরোধী কোনো ধারা নারী নীতিতে নেই
নিজস্ব প্রতিবেদক
ইসলাম ধর্ম নারী ও পুরুষের মধ্যে কোনো বৈষম্য করেনি। পবিত্র কোরআনেও নারী-পুরুষের সমানাধিকারের কথাই বলা আছে। জাতীয় নারী উন্নয়ননীতি ২০০৮-এ কোরআনবিরোধী কোনো ধারা নেই। কিন্তু একশ্রেণীর ধর্ম ব্যবসায়ী রাজনৈতিক গোষ্ঠী আল্লাহ প্রদত্ত নারীর অধিকারকে কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত করছে। অনেকেই নারীনীতি না পড়ে এর বিরোধিতায় নেমেছে।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় প্রেসকাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সম্মিলিত ইসলামী জোট আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘ইসলামের দৃষ্টিতে জাতীয় নারী উন্নয়ননীতি ২০০৮’ শীর্ষক আলোচনায় প্রথমবারের মতো আলেম-ওলামাদের একাংশের পক্ষ থেকে নারীনীতির পক্ষে অবস্থান ব্যক্ত করা হলো।
সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসান আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি কোরআনের নানা আয়াত উল্লেখ করে বলেন, নারীর উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে ভাইয়ের অর্ধেকের কথা বলা হলেও এর অধিক দেওয়ার ক্ষেত্রে কোরআনের কোনো বিধিনিষেধ নেই। ...একই মা-বাবার ঘরে জন্মগ্রহণ করে বোনটি যখন পরম আত্মীয়দের ছেড়ে সারা জীবনের জন্য স্বামীর ঘরে চলে যায়, তখন একই মায়ের গর্ভের ভাই বোনকে উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে সমান সমান সম্পত্তি দিয়ে দিলে ভাইয়ের মর্যাদা বৃদ্ধি পাওয়া ছাড়া কমে না, বরং বেশি দিলে এর মাধ্যমে ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব-সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পায়।
গোলটেবিলের সভাপতি হাফেজ আল্লামা রুহুল আমিন মাদানী বলেন, ইসলাম ধর্ম নারীর অধিকার নিশ্চিত করেছে। কিন্তু কিছু লেবাসধারী আলেম আল্লাহর দেওয়া সেই সম্মান ছিনিয়ে নিতে চায়। আগে এই গোষ্ঠী বলত, নারী নেতৃত্ব হারাম। যারা এটা মানে তারা কাফের। এখন তারা আর ওই কথা বলে না।
এই ধর্ম ব্যবসায়ীরা ধর্মকে নিজ স্বার্থে ব্যবহার করে।
হাফেজ মাদানী বলেন, ধর্ম ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এখন মা-বোনদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছে। যে মায়ের গর্ভে জন্ম লাভ করে, তার স্তন পান করে সবাই বড় হয়েছি, সেই মায়ের জাতির অধিকার তারা ছিনিয়ে নিতে চায়। তিনি বলেন, আমি নারী উন্নয়ননীতি পুরোটা পড়েছি, কোথাও দেখিনি উত্তরাধিকার নিয়ে কোনো কথা এতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, পর্যালোচনা কমিটি যেসব ধারা বাতিল করতে বলেছে, সেগুলো পড়লে হাসি আসে।
কোত্থেকে এরা ধর্ম শিখল আমি বুঝি না।
শান্তিপুর দরবার শরিফের পীর মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ্ মুজাদ্দেদী বলেন, ইসলাম সাম্যবাদ শিক্ষা দেয়। আল্লাহ কোনো দিন বৈষম্য সৃষ্টি করেননি। তাহলে আমরা নারী-পুরুষের বৈষম্য করার কে?
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক কর্মকর্তা মো. সাদেক বলেন, হজরত আয়েশা (রা.)-এর অধীনে সাহাবিরা যুদ্ধ করেনি? তাহলে এখন নারীর অধিকার মেনে নিতে সমস্যা কোথায়? ইসলামপন্থী কয়েকটি রাজনৈতিক দলের কার্যকলাপ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার ইসলামকে সন্ত্রাসী ইসলামে পরিণত করা হচ্ছে। আমার ধর্মবোধে আঘাত আসছে।
আমি এর বিচার চাই।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভানেত্রী আয়শা খানম বলেন, নারীনীতির বিরোধিতাকারীরা এমন সব কথা বলছে, ইসলাম ধর্মের প্রতি মানুষের অশ্রদ্ধা সৃষ্টি হচ্ছে। এদের কথা শুনে মনে হচ্ছে, নারী হয়ে জন্মানোই অপরাধ। তিনি বলেন, পর্যালোচনা কমিটি যে সুপারিশ দিয়েছে তা বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ ১০০ বছর পিছিয়ে পড়বে।
জাসদের কার্যকরী কমিটির সভাপতি মইনুদ্দীন খান বাদল, নারীনেত্রী রোকেয়া কবীর, ব্যারিস্টার তানিয়া আমির প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।
বিভিন্ন কওমি মাদ্রাসার শিক ও শিক্ষার্থীরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র : প্রথম আলো
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।