আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন: আশা ও আশঙ্কা - মুহম্মদ জাফর ইকবাল

এই পৃথিবীতে শুধুমাত্র দুই রকমের মানুষ আছে। ভালো মানুষ যারা ভালো কাজ করে। আর খারাপ মানুষ যারা খারাপ কাজ করে। এটাই মানুষদের মধ্যে একমাত্র পার্থক্য। আর কোন পার্থক্য নেই... আমি ভাল মানুষ...☺☺☺

লেখাপড়া নিয়ে আমার একজন স্যারের কাছে একটা গল্প শুনেছিলাম।

গল্পটা এ রকম: আমার এই স্যারের সঙ্গে একবার একটা ছোট মেয়ের দেখা হয়েছে−মেয়েটি মাত্র লেখাপড়া শুরু করেছে। স্যার তার সঙ্গে দুই-একটা কথা বলে তাকে বিড়ালের ওপর কিছু একটা লিখে আনতে বললেন। মেয়েটা সঙ্গে সঙ্গে মহা উৎসাহে লিখতে বসে গেল এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই বিড়াল কী করে, কী খায় এসবের ওপর বানিয়ে বানিয়ে অনেক কিছু লিখে নিয়ে এল। স্যার দেখে খুব খুশি হয়ে তার পিঠ চাপড়ে দিলেন। তারপর বহুদিন কেটে গেছে, হঠাৎ একদিন আবার সেই মেয়ের সঙ্গে দেখা।

সে এখন বড় হয়েছে, খুব নামীদামি স্কুলে ওপরের ক্লাসে পড়ে−খুব ভালো ছাত্রী হিসেবে তার অনেক সুনাম। আমার স্যার তাকে বললেন, ‘তুমি যখন ছোট ছিলে তখন কী সুন্দর বিড়ালের ওপর কত কিছু লিখে ফেলেছিলে! যাও দেখি, আবার তুমি বিড়ালের ওপর কিছু একটা লিখে আনো−দেখি, এখন কেমন লেখো!’ মেয়েটা শুকনো মুখে লিখতে গেল। কিন্তু দেখা গেল, সে এক লাইনও লিখতে পারছে না। সার্ক সম্মেলন, যমুনা বহুমুখী সেতু, তথ্যপ্রযুক্তি, বাল্যবিবাহের অভিশাপ−এ রকম কঠিন কঠিন বিষয়ের ওপর সে মুখস্থ পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা নির্ভুলভাবে লিখে ফেলতে পারে। কিন্তু বিড়ালের ওপর বানিয়ে বানিয়ে একটা লাইনও লিখতে পারে না।

শৈশবে তার ভেতর যে সৃজনশীলতা ছিল, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ধীরে ধীরে সেটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন এই মেয়েটির ভেতরে একবিন্দু সৃজনশীলতা অবশিষ্ট নেই। শুধু এই মেয়েটি নয়, আমাদের দেশের লাখ লাখ ছেলেমেয়ের ঠিক এই অবস্থা। তারা প্রাইভেট পড়ে, কোচিং করে, মুখস্থ করে পরীক্ষায় অনেক ভালো নম্বর পায়; কিন্তু পড়ালেখার আসল যে উদ্দেশ্য, তারা তার ধারে-কাছে নেই। তাদের কোনো দোষ নেই, আমরা নিজের হাতে তাদের এত বড় সর্বনাশ করে বসে আছি।

আমরা সবাই স্বপ্ন দেখি, একদিন আবার আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের সত্যিকার লেখাপড়া শেখাব। তারা প্রাইভেট পড়বে না, মুখস্থ করবে না; তারা একটা জিনিস বুঝবে, সেটাকে বিশ্লেষণ করা শিখবে, সেটাকে এক শ ধরনের পরিস্িথতিতে ব্যবহার করা শিখবে। কাজটি সহজ নয়, কারণ আমাদের দেশের লেখাপড়া শুরু হয় প্রাইমারি স্কুল থেকে এবং খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মাত্র দুই ভাগ ছাত্রছাত্রী প্রাইমারি স্কুলে যেটুকু শেখার কথা, সেটা শিখতে পারে। বাকি আটানব্বই জন অসমাপ্ত বিদ্যা নিয়ে হাইস্কুলে যায়। স্কুলের নিরানন্দ পরিবেশে কোনোভাবে টিকে থাকার চেষ্টা করে।

পড়ালেখার মূল উদ্দেশ্য হয়ে যায় পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া−দাঁড়ি, কমাসহ মুখস্থ করে তারা সেটা পাওয়ার চেষ্টা করে। কী দুঃখের একটা অবস্থা! পড়ালেখার অবস্থা ভালো করার তো কোনো শর্টকাট নেই, সেটা শুরু করতে হবে একেবারে গোড়া থেকে। ভালো পাঠ্যবই দরকার, সেগুলো পড়ানোর জন্য ভালো শিক্ষক দরকার। ছাত্রছাত্রীদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনার দরকার, প্রাইভেট পড়ানো থেকে মুক্তি দিয়ে নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনা দরকার এবং সবার শেষে ভালো একটা পরীক্ষা পদ্ধতি দরকার, যে পদ্ধতি মেধাবী আর সৃজনশীল ছেলেমেয়েদের ঠিকভাবে মূল্যায়ন করবে। ছেলেমেয়েদের মুখস্থ করতে নিরুৎসাহিত করবে।

লেখাপড়ার মাঝে খুব সহজে বড় একটা পরিবর্তন আনার উপায় হচ্ছে পরীক্ষার পদ্ধতির সংস্কার করা। এমনভাবে প্রশ্ন করা সম্ভব যে ছেলেমেয়েরা সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য সত্যিকার অর্থে শেখার চেষ্টা করবে, সৃজনশীল হওয়ার চেষ্টা করবে। সংস্কার শব্দটা নিয়ে আমাদের মাঝে ভয় ঢুকে গেছে, আর লেখাপড়ার সংস্কারের কথা বলে আক্ষরিক অর্থে শত শত কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে, কোনো সত্যিকারের কাজ হয়নি। তাই আমরা যখন শুনেছি এসএসসি পরীক্ষা পদ্ধতির প্রশ্নের ধরনের পরিবর্তন করে ‘কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন’ চালু করা হচ্ছে তখন ভয়ে আমরা আঁতকে উঠেছিলাম। ধরেই নিয়েছিলাম, এ দেশের ছেলেমেয়েদের গিনিপিগ বানিয়ে আবার একটি নিষ্ঠুর পরীক্ষা চালানো হবে।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, যখন আমরা এই কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন বলতে কী বোঝানো হচ্ছে সেটা জানতে পেরেছি, তখন বিশাল একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছি। আমরা সারা জীবনে যে ধরনের লেখাপড়ার কথা বলেছি, যে ধরনের পরীক্ষার কথা বলেছি, হুবহু সে ধরনের একটা বিষয় হচ্ছে এই কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন। আমি নিজের চোখে দেখেও বিশ্বাস করতে পারিনি যে সত্যি সত্যি প্রথমবারের মতো আমাদের ছেলেমেয়েদের জন্য এমন একটা পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যেটা আধুনিক। যেটা তাদের মুখস্থ করতে নিরুৎসাহিত করবে, যেটা প্রাইভেট পড়ার প্রয়োজন কমিয়ে দেবে, যেটা তাদের সৃজনশীল করে তুলবে, নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রাখতে উৎসাহ দেবে। কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নের পরিকল্পনা দেখে আমার আনন্দের সীমা ছিল না, কিন্তু সেই আনন্দটা ছিল খুব ক্ষণস্থায়ী।

কারণ প্রায় সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পেরেছি এত চমৎকার একটা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের যে পরিকল্পনা করা হয়েছে সেটা কোনোভাবেই কাজ করবে না। এটা যেভাবে চালু করা হচ্ছে তার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হচ্ছে আজ থেকে কয়েক বছর পর রাজপথে আন্দোলন। তার ফলে এটা বাতিল করে দিয়ে আবার আগের সনাতন পদ্ধতিতে প্রত্যাবর্তন। শুধু তা-ই নয়, আমরা যখন মিন মিন করে বলব, লেখাপড়ার মাঝে কি সৃজনশীলতা ফিরিয়ে আনা যায় না? তখন দেশের মানুষ গর্জন করে বলবে, ‘আবার সৃজনশীলতার কথা বলছেন? কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নের নাম করে আপনারা এ দেশের ছেলেমেয়েদের কী সর্বনাশ করেছিলেন, মনে আছে?’ এ দেশে যাঁরা নীতিনির্ধারণ করেন তাঁদের কাছে করজোড়ে নিবেদন, এই অত্যন্ত চমৎকার আধুনিক সৃজনশীল পদ্ধতিটি আপনারা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করুন, যেন এটা কোনোভাবেই ব্যর্থ না হয়। একেবারে হাতের মুঠোয় পাওয়ার পর এটা যদি হাত ফসকে চলে যায়, তাহলে সেই দুঃখেই বুক ফেটে আমরা মারা যাব! ২. এই অত্যন্ত চমৎকার পদ্ধতিটি বাস্তবায়নের সমস্যাটা কী, সেটা বলার আগে পদ্ধতিটি কী, আমার মনে হয় সেটা বলা দরকার।

আমি নিজে যেহেতু অনেক কষ্ট করে এটা জেনেছি, আমার ধারণা বেশির ভাগ মানুষই সম্ভবত এর খুঁটিনাটি জানে না। ব্যাপারটা এ রকম: ২০১০ সালে যারা এসএসসি পরীক্ষা দেবে তাদের বাংলা প্রথমপত্র, সাধারণ গণিত, ধর্মীয় শিক্ষা, সামাজিক বিজ্ঞান, সাধারণ বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভুগোল, অর্থনীতি, পৌরনীতি, ব্যবসায় পরিচিতি, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবসায় উদ্যোগ ও বাণিজ্যিক ভুগোল বিষয়ে কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন থাকবে ৬০ নম্বরের, বহু নির্বাচনী প্রশ্ন থাকবে ৪০ নম্বরের। যেটা উল্লেখযোগ্য সেটা হচ্ছে, এই প্রথমবার গণিতের জন্য বহু নির্বাচনী প্রশ্ন থাকছে। গণিতের (এবং উচ্চতর গণিতের) বহু নির্বাচনী প্রশ্নের কিছু হবে সহজ (৩০ শতাংশ), বেশির ভাগ হবে মধ্যমান (৫০ শতাংশ) এবং অল্প কিছু থাকবে কঠিন (২০ শতাংশ)। আগে বহু নির্বাচনী প্রশ্ন এমন হতো যে মুখস্থ করেই তার উত্তর দেওয়া যেত, এখন আর সেটা সম্ভব হবে না।

তার বেশির ভাগ (৭০ শতাংশ) মোটামুটি মুখস্থ করে বা বোঝার ক্ষমতা দিয়েই উত্তর করা গেলেও বাকিটুকু (৩০ শতাংশ) উত্তর দেওয়ার জন্য তাদের বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা বা সৃজনশীলতা ব্যবহার করতে হবে। আগে বহু নির্বাচনী প্রশ্ন একই ধরনের হতো, এখন তার মাঝেও বৈচিত্র্য আনা হচ্ছে−তিনটি ভিন্ন ভিন্ন ধরনের প্রশ্ন থাকবে। বাকি ৬০ নম্বর হবে কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন−সেটা বলার আগে অন্য বিষয়গুলোর নম্বর বণ্টনের কথা বলে নেওয়া যাক। পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান এবং উচ্চতর গণিতে কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নে থাকবে ৪০ নম্বর, বহু নির্বাচনী প্রশ্নে ৩৫ নম্বর এবং ব্যবহারিক ২৫ নম্বর। কম্পিউটার শিক্ষায় কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন ৪০ নম্বর, বহু নির্বাচনী প্রশ্ন ৩০ নম্বর এবং ব্যবহারিক ৩০ নম্বর।

গার্হস্থ্য অর্থনীতি ও কৃষি শিক্ষায় কাঠামোবদ্ধ ৪০ নম্বর, বহু নির্বাচনী প্রশ্ন ২৫ ও ব্যবহারিক ৩৫ নম্বর। ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয়পত্র, বাংলা দ্বিতীয়পত্র এবং অন্য বিষয়গুলোর কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। আগে যা ছিল তা-ই থাকবে। এবারে আমরা আসি কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নে। এটা বলতে ঠিক কী বোঝানো হচ্ছে? আগে যেখানে রচনামূলক প্রশ্ন ছিল, তার বদলে এই কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন আনা হয়েছে।

৬০ নম্বরের কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নে নয়টি প্রশ্ন থাকবে, তার মধ্যে ছাত্রছাত্রীরা ১০ নম্বর করে ছয়টি প্রশ্নের উত্তর দেবে। কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন সব সময়ই শুরু হবে কোনো এক ধরনের সুচনা, বিবৃতি বা দৃশ্যকল্প দিয়ে (প্রায় এক প্যারাগ্রাফের মতো কিছু লেখা, ছবি ইত্যাদি)। এগুলো হবে মৌলিক এবং ছাত্রছাত্রীরা হয়তো আগে কখনোই দেখেনি। (তবে বাংলা প্রথমপত্রের বেলায় সেগুলো হবে গদ্য, কবিতা, নাটক অথবা উপন্যাস থেকে তুলে দেওয়া অংশ)। ছাত্রছাত্রীরা এটা পড়বে, পড়ে বুঝবে এবং তারপর চারটি প্রশ্নের উত্তর দেবে (সাধারণ গণিত, উচ্চতর গণিত ও হিসাববিজ্ঞানের বেলায় তিনটি)।

প্রথম প্রশ্নের নম্বর হবে এক, ছাত্র বা ছাত্রী তাদের স্নৃতি থেকেই এর উত্তর দিতে পারবে। দ্বিতীয় প্রশ্নের নম্বর হবে দুই, ছাত্রছাত্রীরা বিষয়টা বুঝেছে কি না, এটা তার ওপর নির্ভর করবে। প্রথম প্রশ্নের মতো এই প্রশ্নের উত্তরও পাঠ্যবইয়ে পাওয়া যাবে কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের সেটা নিজের ভাষায় লিখতে হবে। তৃতীয় প্রশ্নটির নম্বর হবে তিন, এটি পাঠ্যবইয়ে পড়া বিষয়ের মাঝে নেই। এটা দিয়ে পরীক্ষা করা হবে ছাত্র যা জানে এবং যা বোঝে, সেটা নতুন একটা ক্ষেত্রে বা সমস্যায় ব্যবহার করতে পারে কি না।

চতুর্থ প্রশ্নটির নম্বর হবে চার এবং এটাও পাঠ্যবই মুখস্থ করে উত্তর দেওয়া যাবে না। প্রাসঙ্গিক কোনো বিষয় বিশ্লেষণ বা মূল্যায়ন করে একেবারে স্বকীয়ভাবে এর উত্তর দিতে হবে। কাজেই কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নের বেলায় সোজা করে বলা যায়, শতকরা ৩০ ভাগ বই মুখস্থ করে দেওয়া যেতে পারে কিন্তু শতকরা ৭০ ভাগ উত্তর দেওয়ার জন্য ছাত্রছাত্রীদের ভাবনা, চিন্তা, কল্পনা, স্বকীয়তা, সৃজনশীলতা, বিশ্লেষণ, মূল্যায়ন−এক কথায় আমাদের মস্তিষ্ককটা যে কাজের জন্য তৈরি হয়েছে, সেই কাজের জন্য ব্যবহার করা হবে। এর নাম হয়েছে কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন, কারণ পুরোটা একটা কাঠামোর মাঝে আনা হয়েছে (স্নৃতিনির্ভর, অনুধাবন, প্রয়োগ এবং উচ্চতর দক্ষতা যথাক্রমে ১, ২, ৩ ও ৪ নম্বর)। আশা করা হচ্ছে, পরীক্ষার খাতা যখন মূল্যায়ন করা হবে তখনো পরীক্ষকেরা নম্বর দেবেন কাঠামোর ভেতর থেকে।

তাই মূল্যায়ন হবে সঠিক, যদিও আমি নিজে এই ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত নই। খুব কম কথায় এটা হচ্ছে কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন। ৩. এবারে আসা যাক, কেন আমি এই কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন নিয়ে এক ধরনের আতঙ্ক অনুভব করছি। বিষয়টা অনেকটা ক্ষুধার্ত মানুষকে খাবার দেওয়ার মতো। মানুষ যখন ক্ষুধার্ত থাকে তখন তাকে খাবার দিলে সে তৃপ্তি করে খায়, তার শরীরের পুষ্টি হয়।

কিন্তু একজন মানুষ যদি দিনের পর দিন না খেয়ে থাকে, দুর্ভিক্ষ-অনাহারে থেকে থেকে কঙ্কালসার হয়ে যায়, শরীরে শক্তি না থাকে, তখন তাকে কখনোই ঠেসে কাচ্চি বিরিয়ানি খাওয়ানো হয় না। তার শরীর তখন সেই খাবার গ্রহণ করতে পারে না, তার শরীর খাদ্য পরিপাক করার জন্য প্রস্তুত থাকে না−না খেয়ে সে হয়তো ধুঁকে ধুঁকে আরও কয়দিন টিকে থাকত কিন্তু হঠাৎ করে প্রোটিন আর স্েমহসমৃদ্ধ খাবার খেয়ে তখন-তখনই সে বমি করতে করতে মারা যায়। কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নে হুবহু ব্যাপারটা ঘটতে যাচ্ছে। আমাদের দেশে লেখাপড়ার বিষয়টা কীভাবে আছে সেটা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না। গ্রামগঞ্জের কথা ছেড়ে দিলাম, ঢাকা শহরের আধুনিক একটা স্কুলের বিজ্ঞাপনে আমি দেখেছি, তারা লিখেছেন−‘এখানে মুখস্থ করানোর সুবন্দোবস্ত আছে।

’ তাদের দোষ দিই কেমন করে−এই দেশে ছেলেমেয়েরা গাইড বই মুখস্থ করেই তো জিপিএ ফাইভ কিংবা গোল্ডেন ফাইভ পেয়ে যাচ্ছে। যারা আজীবন মুখস্থ করাটাকেই লেখাপড়া বলে মনে করে এসেছে তারা এখন হঠাৎ করে কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নের ‘প্রয়োগ’ আর ‘উচ্চতর দক্ষতায়’ অংশ নেবে? তাদের কি সে জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে? তারা সবাই দুর্ভিক্ষর অনাহারী মানুষ, দিনের পর দিন না খেয়ে থেকে তাদের পরিপাকতন্ত্র শুকিয়ে গেছে। হঠাৎ করে তাদের কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নের কাচ্চি বিরিয়ানি খাওয়ালে তার ফলটা ভয়ানক হতে বাধ্য। শহরে কিছু ভালো স্কুল আছে, শিক্ষকেরাও ভালো, অভিভাবকেরা সচেতন, তাঁরা হয়তো তাঁদের ছেলেমেয়েদের প্রস্তুত করতে পারবেন। ২০১০ সালের পরীক্ষায় সেই ছেলেমেয়েদের কেউ কেউ এই চমৎকার পদ্ধতিটি পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারবে।

কিন্তু গ্রামগঞ্জে প্রায় ২৫ হাজার স্কুল আছে, যার লাখ লাখ ছাত্রছাত্রীর পুরো ব্যাপারটা সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই। তাদের সেটা বলে দেওয়ার পরও তারা সেটা বিশ্বাস করবে না। দাঁড়ি, কমাসহ গাইড বুক মুখস্থ করে পরীক্ষার হলে চলে আসবে−পরীক্ষার প্রশ্ন দেখে তাদের হার্টঅ্যাটাক হয়ে যাবে। অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হলে ব্যাকটেরিয়া যেভাবে মারা যায় তারা সেভাবে মারা পড়বে। কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন নামে যে একটা নতুন পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে, তাদের সেটা জানার কোনো উপায় নেই।

ব্যাপারটি তারা জানতে পারবে হয় তাদের শিক্ষকের কাছ থেকে, না হয় তাদের পাঠ্যপুস্তক থেকে। তার কোনোটাই এখনো হয়নি। আমি যতটুকু খবর পেয়েছি এখনো মাত্র ১০ শতাংশ শিক্ষকের ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে এবং দুই দিনের ট্রেনিংয়ে তাঁরা নতুন এই ব্যাপারটি ভালো করে বুঝতেও পারেননি। যে বিষয়টি শিক্ষকেরাই ভালো করে বোঝেননি, তাঁরা কেমন করে ছাত্রছাত্রীদের সেটা বোঝাবেন? তাঁদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা সব সময়ই মাথা চুলকে বলেন, ট্রেনিং তো নিয়েছি, তার মাথামুন্ডু কিছুই তো বুঝিনি! তাঁদের জন্য যে নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে সেটা দেখে মনে হয় না, এটা শত কোটি টাকা প্রজেক্টের ফসল−অত্যন্ত দায়সারা। কঠিন কঠিন শব্দে কণ্টকিত, ভেতরে ছবিগুলো দেখলে বমি এসে যায়−কেউ সেটা পড়ে পড়ে নিজে বুঝে কাজ চালিয়ে নেবেন, তার সম্ভাবনা খুব কম।

বইয়ের ব্যাপারটা ছেড়েই দিই, অনেক গবেষণা করেও আমি বই প্রকাশের পদ্ধতিটি বুঝতে পারিনি। এটা ২০০৯ থেকে চালু করার কথা ছিল, এক বছর পিছিয়ে ২০১০ করা হয়েছে। কাজেই কর্তাব্যক্তিরা তাঁদের পরিকল্পনার বাইরে এক বছর বাড়তি সময় পেয়েছেন। তাঁদের যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়নি সেই কৈফিয়ত দিতে পারবেন না। যারা ক্লাস নাইনে পড়ে তাদের এ বছরই কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নসহ পাঠ্যবই পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু গত বছর জানুয়ারি মাসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এই বইগুলো ছাপানো হবে না।

কাজেই এই বইয়ের জন্য ছাত্রছাত্রীদের আরও এক বছর অপেক্ষা করতে হবে। বই না ছাপানোর সিদ্ধান্তটি কেন নেওয়া হয়েছে ডেইলি স্টার পত্রিকায় তার একটি ব্যাখ্যা ছাপা হয়েছে, কিছু অসাধু পুস্তক ব্যবসায়ীর কাছে অনেক বাড়তি পুরোনো বই রয়ে গেছে। সেই পুরোনো বইয়ের বিক্রি নিশ্চিত করার জন্য এনসিটিবির সঙ্গে যোগসাজশে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাদা বাংলায় এর অর্থ হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া, তাদের ভবিষ্যৎ গোল্লায় যাক, তাতে কারেও কিছু আসে যায় না। তাদের সর্বস্বান্ত করেও যদি কিছু অর্থ কামাই করা যায় তাহলে সেটাই করা হবে।

আমরা কি এই ব্যাপারটির ব্যাখ্যা দাবি করতে পারি না? দুর্নীতি কমিশন শুধু ‘স্টার ক্রিমিনাল’দের নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে, যারা ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে, ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, সেই মানুষগুলোকে ধরে একটা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে পারে না? কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন সম্পর্কে আমি যেটুকু জেনেছি আমার সেটুকু খুব পছন্দ হয়েছে। আমি আন্তরিকভাবে চাই, সেটা বাস্তবায়িত হোক। আমার ধারণা, যাঁরা এটা দাঁড় করিয়েছেন তাঁদের সে রকম আন্তরিক ইচ্ছে নেই। দাতাগোষ্ঠীর কাছে শত শত কোটি টাকা নিয়ে প্রজেক্ট দাঁড় করানো হয়েছে−কোনোভাবে সেই প্রজেক্টের জন্য সরকারি একটা প্রজ্ঞাপন জারি করাতে পারলেই তাঁরা মনে করেন তাঁদের দায়িত্ব শেষ। এ রকম একটা নতুন পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে দেশের কাছে, দেশের মানুষের কাছে−সেটা কি জানানো উচিত ছিল না? যাদের জন্য করা হচ্ছে তাদের মাঝে সেটা নিয়ে যদি উৎসাহ-উদ্দীপনা না থাকে তাহলে সেটা কী কাজ করবে? কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, সব সময়ই এই কাজগুলো করা হয় সেখানে ষড়যন্ত্রের মতো করে।

আমি একটু উদাহরণ দিই, দাতাগোষ্ঠীর কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে কাজগুলো করতে চেয়েছিল, সেগুলো হচ্ছে: এক. একমুখী শিক্ষা−সেটা ছিল জাতির সঙ্গে একটা ভয়ঙ্কর প্রতারণা, অনেক কষ্ট করে সেটা থামানো হয়েছে। দুই. পাঠ্যপুস্তক বেসরকারিকরণ: আমাদের মতো দেশে এটা যে কী ধরনের নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে, সেটাই যাঁরা জানেন না তাঁরা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার দায়িত্বে আছেন চিন্তা করলেই আমার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। একেবারে শেষ মুহুর্তে খবর পেয়ে একমুখী শিক্ষাকে থামানো সম্ভব হয়েছিল কিন্তু আমরা যখন পাঠ্যপুস্তক বেসরকারিকরণের খবর পেয়েছি, তখন গোপনে তার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেওয়া হয়েছে। তিন. স্কুলভিত্তিক মূল্যায়ন প্রক্রিয়া: এসএসসি পরীক্ষায় এটা থামানো হয়েছে কিন্তু নিচের ক্লাসে এটা চালু রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইউরোপের মতো দেশের জন্য এটি চমৎকার একটা আইডিয়া−আমাদের দেশে যেখানে একজন শিক্ষককে ১০০ জন ছাত্রছাত্রীর মূল্যায়ন করতে হয়, সেখানে এটি উৎকট একটা রসিকতা।

যেসব শিক্ষকের নৈতিকতা বা বিবেকের কোনো সমস্যা নেই, তাঁরা প্রতি বিষয়ের জন্য এই ৩০ নম্বর নিয়ে রীতিমতো ব্যবসা করছেন। চার. পরীক্ষা পদ্ধতির সংস্কার: যেটাকে আমরা বলছি কাঠামোগত প্রশ্ন, আধুনিক এবং ভবিষ্যৎমুখী একটা ধারণা। আমরা সবাই এটা চাই কিন্তু ঠিক করে বাস্তবায়ন করা না হলে অন্য তিনটির মতো এটাও ভয়ঙ্কর একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। ছোট শিশুদের জন্য দুধ খুব পুষ্টিকর খাদ্য। তাকে বোতলে করে আস্তে আস্তে খাওয়াতে হয়।

একটা দুধের ড্রামে ছোট শিশুকে ছুড়ে দিলে সে কিন্তু সেই দুধেই ডুবে মারা যাবে। কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন এ রকম দুধের মতো−আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের এটা খাওয়াতে চাই, তাদের এখানে ডুবিয়ে মারতে চাই না। আমি একজন মানুষকে জানি, যে সব সময় মিথ্যে কথা বলে। মিথ্যে বলতে বলতে তার এমন অবস্থা হয়েছে যে যখন সত্য কথা বললে তার লাভ হয় তখনো সে মিথ্যে কথা বলে বসে থাকে। আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দেখে আমার সেই মানুষটির কথা মনে হয়−তারা সবকিছু করে গোপনে এবং ষড়যন্ত্রের মতো।

যে কাজটি দশজন মানুষকে জানালে লাভ হয় সেটাও তারা দশজনকে জানাতে চায় না। আমরা যারা জানতে চাই, তারা চেষ্টা করেও জানতে পারি না। এই কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নের ব্যাপারে জানার জন্য আমি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ফোন করেছিলাম। আমার একটা বিনীত প্রশ্ন ছিল, শত কোটি টাকার প্রজেক্ট তাই তারা নিশ্চয় হাজার দুয়েক টাকা খরচ করে একটা ওয়েবসাইট তৈরি করেছেন, আমি কাউকে বিরক্ত না করে ওয়েবসাইট থেকে তথ্যটা ডাউনলোড করে পড়তে চাই। মন্ত্রণালয়ের মানুষ প্রথমে মন্ত্রীর মতো কথা বলে আমাকে উড়িয়ে দিতে চাইলেন।

পত্রিকায় লিখব বলার পর একটু ভয় পেয়ে আমাকে আরেকটা ফোন নম্বর দিলেন। সেই নম্বরে ফোন করার পর একজন আরেকটা ফোন নম্বর দিলেন। সেই নম্বরে ফোন করার পর একজন আরেকজনের মোবাইল নম্বর দিলেন। সেই ব্যক্তির মোবাইল নম্বরে ফোন করতে আমার একটু সংকোচ হচ্ছিল, তারপরও লজ্জার মাথা খেয়ে ফোন করে ফেললাম। কী চাই বলে শেষ করার আগেই তিনি জানালেন যে তিনি মিটিংয়ে খুব ব্যস্ত।

আমি যেন পরে ফোন করি! যা-ই হোক, শেষ পর্যন্ত তার কাছ থেকে সংবাদ পাওয়া গেল, শত কোটি টাকা খরচ করে দাঁড় করানো একটা প্রজেক্টের কোনো ওয়েবসাইট নেই, সাধারণ মানুষের সেই তথ্য পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমি তাই অনেক কষ্ট করে পরিচিত মানুষকে ধরাধরি করে শিক্ষকদের কাছ থেকে কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছি! কেউ যেন মনে না করেন ঘ্যান ঘ্যান করা আমার অভ্যাস হয়ে গেছে−আমি মোটেও সেটা করতে চাইছি না। আমি সবাইকে স্নরণ করিয়ে দিচ্ছি, আমাদের দেশের ভবিষ্যতের জন্য অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার ঘটতে যাচ্ছে কিন্তু সেটা করা হচ্ছে গোপনে। সাধারণ মানুষের সেটা সম্পর্কে জানার অধিকার নেই, কথা বলার অধিকার নেই। ৪. কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন নিয়ে কাঠামোর বাইরে একটা প্রশ্ন করা যায়।

আমাদের দেশে তিন ধরনের লেখাপড়া আছে−বড় লোকের ইংরেজি মাধ্যম, মধ্যবিত্তের বাংলা মাধ্যম আর দরিদ্রের মাদ্রাসা। বড় লোকের ছেলেমেয়েরা এতদিন ইংরেজি মাধ্যমে যে আধুনিক পদ্ধতির পরীক্ষা দিয়েছে, বাংলা মাধ্যমের ছেলেমেয়েরা কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নের মাধ্যমে অনেকটা সেই সুযোগ পেয়ে যাবে, কিন্তু মাদ্রাসার ছেলেমেয়েদের কী হবে? তাদের তো এর বাইরে রাখা হয়েছে। স্কুল-কলেজ বা মাদ্রাসা শেষ করে একজন শিক্ষার্থী যখন ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়, তখন তাদের এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল হঠাৎ করে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়। এসএসসি পরীক্ষার একটি পয়েন্ট বেশি বা কম হলে ভর্তির যুদ্ধে শ শ ছেলেময়ে সামনে কিংবা পেছনে পড়ে যায়। তাই কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন এসএসসিতে শুরু করা হলে এবং মাদ্রাসার দাখিলে শুরু করা না হলে উচ্চশিক্ষার বেলায় বিশাল একটি বৈষম্য তৈরি হবে।

আমরা তো চেষ্টা করছি বৈষম্য দুর করতে, নতুন করে আরও একটি বৈষম্যের জন্ন দেওয়ার আগে ব্যাপারটা কি ভালো করে চিন্তা করার প্রয়োজন নেই? ৫. আমরা সবাই আমাদের ছেলেমেয়েদের জন্য কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন চাই। এত তীব্রভাবে চাই যে কোনোভাবেই আমরা এর বাস্তবায়নে ব্যর্থতা দেখতে চাই না। এ মুহুর্তে যেভাবে বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে সেটি বাস্তবায়ন করা যায় বলে বিশ্বাস হয় না। তাই এর বাস্তবায়নের জন্য একটি পরিকল্পনা নিতে হবে। কী করতে হবে সেটি আসলে কমন সেন্সের ব্যাপার।

এক. যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যত বেশি শিক্ষককে এ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিতে হবে−দায়সারা প্রশিক্ষণ নয়, সত্যিকারের প্রশিক্ষণ। দুই. যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নতুন প্রশ্নের নমুনা দিয়ে পাঠ্যবই ছাপিয়ে ছাত্রছাত্রীদের হাতে পৌঁছে দিতে হবে। তিন. ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে এখনই কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নের আওতায় পরীক্ষা নিতে হবে। চার. একবারে হুট করে পুরো পরিবর্তন না করে ধীরে ধীরে পরিবর্তন করতে হবে। আগামী কয়েক বছরে রচনামূলক প্রশ্ন কমিয়ে কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন বাড়িয়ে দিতে হবে।

পাঁচ. দেশের ছেলেমেয়েদের বোঝাতে হবে নতুন পদ্ধতিটি ভালো। তাদের এর জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে হবে, উৎসাহিত এবং অনুপ্রাণিত করতে হবে। যাঁরা দেশের নীতিনির্ধারক তাঁদের কাছে অনুরোধ, তাঁরা যেন বর্তমান অবস্থাটা পর্যালোচনা করে দেখেন। যদি তাঁদের কাছে মনে হয় এই নতুন পদ্ধতির জন্য এই দেশের ছেলেমেয়েরা প্রস্তুত নয়, তাহলে তাঁরা যেন জোর করে তাদের ওপর এটি চাপিয়ে না দেন। প্রজেক্টের লুটপাট করা টাকা হালাল দেখানোর জন্য ছেলেমেয়েদের গিনিপিগ বানানোর সিদ্ধান্তে আমাদের ঘোরতর আপত্তি আছে।

আমরা কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন চাই, এটা যেন ব্যর্থ না হয় সে জন্য এক বছর বা দুই বছর অপেক্ষা করতে রাজি আছি, কিন্তু হুট করে শুরু করে দিয়ে এর মৃত্যু দেখতে চাই না। এত দিন পর একটা সুযোগ এসেছে, সেটা কিছুতেই নষ্ট করতে চাই না। মুহম্মদ জাফর ইকবাল

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।