আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুর্বিপাকের গ্যাঁড়াকলে শিরিনা

শিরিনার দুই পায়েই আঘাতের চিহ্ন। চিকিৎসকদের মতে, এটি রাবার বুলেটের আঘাত। পুলিশ বলছে, সাউন্ড গ্রেনেডের স্প্লিন্টার ঢুকেছে তাঁর পায়ে। যা-ই ঘটুক, শিরিনা পড়ে গেছেন কঠিন গ্যাঁড়াকলে। সুস্থ হয়ে ওঠার চিকিৎসা-খরচ তো আছেই, এর সঙ্গে এক মাস বিছানায় কাটাতে হবে আউটরাইড লিমিটেডের এই পোশাককর্মীকে।

এতে আয়ের পথও থাকবে বন্ধ।
আজ বুধবার সকালে রাজধানীর মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় সড়ক অবরোধের সময় মা সখিনা বেগমের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়ার মুখে পড়েন শিরিনা (২৫)। তারপর এই অবস্থা। এত কিছুর পরও শিরিনাকে থাকতে হতে পারে পুলিশি নজরদারিতে।

যেভাবে ঘটনার শিকার
দুপুরে মিরপুর কাজীপাড়ায় এক্সিম ব্যাংক হাসপাতালে শিরিনাকে যখন নেওয়া হয়, তখন তাঁর বাম পায়ের গোড়ালি থেকে গলগলিয়ে রক্ত পড়ছিল।

তাঁর আরেক পায়েও রয়েছে রক্তাক্ত জখম। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁর পায়ের ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে ওষুধ দিচ্ছেন। যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন এই পোশাককর্মী।
শিরিনার মা সখিনা বেগমেরও ডান পায়ের হাঁটুর নিচে কিছুটা অংশ পুড়ে গেছে। বাড়ি ফেরার সময় তাঁরা পুলিশের পাল্টাহামলার মধ্যে পড়ে যান বলে প্রথম আলো ডটকমকে জানান শিরিনার ছোট বোন শিমু (২০)।


শিমুর ভাষ্য অনুযায়ী, আজ সকাল আটটার পর শেওড়াপাড়ায় বেতন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে পোশাকশ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করেন। তখন কারখানা ছুটি ঘোষণা করায় মা সখিনা ও বোন শিমুকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন শিরিনা। তাঁরা তিনজনই আউটরাইডে অপারেটরের কাজ করেন।
ফেরার সময় একপর্যায়ে পুলিশের ধাওয়ার মুখে পড়ে যান তাঁরা। পরে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়লে এর স্লিন্টার ঢুকে যায় শিরিনার দুই পায়ে।

একই সঙ্গে মা সখিনা বেগমের ডান পায়ের কিছু অংশ পুড়ে যায়। দুজনকেই আহত অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয় রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা না পেরে শিরিনা-সখিনাকে নেওয়া হয় মিরপুরের কাজীপাড়ার এক্সিম ব্যাংক হাসপাতালে।

চিকিৎসার খরচ জোগাতে হিমশিম
এক্সিম ব্যাংক হাসপাতালের চিকিৎসক আলমগীর শিকদার যখন শিরিনার রক্তাক্ত বাম পা থেকে রাবারের টুকরা বের করছিলেন, তখন অনবরত চিত্কার করছিলেন শিরিনা। রাবারের অংশ দেখিয়ে আলমগীর প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘আসলে বুঝতে পারছিলাম না এটি কী? তবে পায়ে যেহেতু ঢুকে গেছে, তাই ভালো হতে সময় লাগবে।


চিকিৎসক আলমগীরের মতে, শিরিনা ও তাঁর মায়ের প্রায় ১০ হাজার টাকার ওষুধ প্রয়োজন হতে পারে। হাসপাতালের আবাসিক পরিচালক ও জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট মইনউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলো ডটকমকে জানান, শিরিনা ও তাঁর মায়ের চিকিৎসার পুরো খরচ তাঁদের প্রতিষ্ঠান বহন করবে। শিরিনার বোন শিমু বলেন, ‘আপা আর মায়ের কত দিন চিকিৎসা চলব জানি না। কামও তো করতে পারব না। এই কয়দিন চলমু কেমনে?’

থাকতে হবে পুলিশি নজরদারিতে!
মিরপুর অঞ্চলে পুলিশের উপকমিশনার ইমতিয়াজ আহমেদ প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘রাবার বুলেট নয়, সাউন্ড গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের আঘাত পেয়ে থাকতে পারে ওই আহত দুজন।


ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে উপকমিশনার বলেন, কেউ যদি হামলা-ভাঙচুর না করত, তাহলে পুলিশও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করত না। আহত শ্রমিকদের চিকিৎসার বিষয়টি দেখবে তাঁদের পোশাক কারখানার মালিকেরা। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে যদি কারও বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলা এবং ভাঙচুরে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তাঁদেরও আটক করা হতে পারে।
শিরিনার প্রাথমিক চিকিৎসার পর সাদা পোশাকধারী পুলিশ সদস্যরা এক্সিম ব্যাংক হাসপাতালে এসেছিলেন। শিরিনা সম্পর্কে তাঁরা খোঁজখবর নিয়েছেন।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।