আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্প লেখার চেষ্টাঃ ইয়াসির ফাজাগার প্রতি কৃতজ্ঞতা

দুঃখটাকে দিলাম ছুটি, আসবে না ফিরে

মিথ্যা মামলায় এক ভদ্রলোকের তিন বছরের জেল হলো। এই তিন বছরে তিনি পরিবার থেকে ছিলেন পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। যখন তাঁকে জেলে যেতে হয় তাঁর স্ত্রী ছিলেন সন্তান সম্ভবা। তিন বছর পর, এখন তাঁর ফুটফুটে একটি মেয়ে আছে। কথা বলতে পারে।

জেল গেট থেকে বেরিয়ে তাঁর সন্তানকে দেখলেন, তাঁর স্ত্রীকে দেখলেন। আনন্দের আতিশয্যে কেঁদে ফেললেন, বাঁধ ভাঙ্গা সুখের কান্না। মেয়েকে চুমু দিলেন। বুকে জড়িয়ে ধরলেন, আদর করলেন। মেয়ে ভাবলেশহীন।

প্রত্যুত্তরে সে কোন অনুভূতিই দেখাল না। বাড়ী ফিরলেন। স্ত্রীর সাথে ভালোবাসা বিনিময় করলেন। বহুদিনের বিচ্ছিন্নতার পর পরিবারের সাথে একত্রিত হওয়া। তিন বছরে চেহারায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।

স্ত্রী অন্যদিকে ব্যস্ত, মেয়ে পিতার কাছে। মেয়ে পিতাকে স্যার সম্বোধন করছে। বাবা ভালোবাসামিশ্রিত আবেগ দেখিয়ে বললেন, - আমি তোমার বাবা, আমি স্যার নই। আমাকে বাবা ডাক। - নো...... বাবা তো সেই লোক যিনি প্রতি রাতে আমার মায়ের সাথে ঘুমিয়ে থাকেন।

ওয়েট এ মিনিট, আমরা ঘুরে আসি অন্য কোথাও থেকে। আচ্ছা, যে লোক সম্পূর্ণ অন্যায় একটা মামলায় তিন বছর শাস্তি ভোগের পর তার নিজের মেয়ের কাছে এরকম জবাব শুনলো, তার অনুভূতি কেমন হওয়ার কথা। যে স্ত্রীকে তিনি প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন, সেই স্ত্রী তিন বছরে তাঁকে ভুলে গেল? পরিবার এখন আর তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত নয়? একেই কি বলে, কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেওয়া? এর থেকে দুঃখের আর কি হতে পারে? মুক্তির যে স্বাদ তিনি পেয়েছিলেন, নিমিষেই তা ভুলে গেলেন। চেহারা মলিন হয়ে গেল। সহসা পরিবর্তন স্ত্রীর নজর এড়াল না।

ভাবলেন যে কোন কারণেই হোক স্বামীর মুড অফ। ভাব জমানোর চেষ্টা করলেন। স্বামীকে বললেন, - তোমার হয়ত মনটা ভাল নেই। আচ্ছা, এক কাজ করলে কেমন হয়- আমরা তিনজনে মিলে এবার হজ্বে যাই। স্বামীর যন্ত্রণা অন্য জায়গায়।

কোন সান্ত্বনাই মন ভাল করার জন্য যথেষ্ট নয়। স্ত্রীর এই প্রস্তাবে ক্রোধ আরও বেড়ে গেল। ক্ষোভ নিয়ে বললেন, - হজ্বে যাওয়ার কথা বল কোন মুখে? তুমি আল্লাহর ঘরে যাওয়ার যোগ্যতায় তো রাখ না, সে পবিত্রতা তোমার নেই। - মানে? তুমি কি বলতে চাইছ? ক্ষোভের মাত্রা বেড়ে গেল। স্ত্রীকে জোরে একটা ধাক্কা দিলেন।

স্ত্রী আচমকা ধাক্কা সইতে না পেরে সিঁড়ি গড়িয়ে একদম নিচে পড়ে গেলেন। ঠিক সেই মুহুর্তেই মেয়ে ফ্রেমে বাঁধানো একটি ছবি দেখিয়ে বলল, - এই যে দেখুন, এটাই আমার বাবা। - মানে? (দেখতে পেল যে এটাই তাঁর ছবি) - আমি প্রতি রাতে মাকে এসে বলতাম মা আমি তোমার কাছে ঘুমাবো। মা বলতেন, না.... আমি তোমার বাবার সাথে ঘুমাবো; তুমি পাশের ঘরে শোও। বলেই মা ছবিটা বুকের কাছে জড়িয়ে ধরতেন।

.... এটাই আমার সেই বাবার ছবি। এদিকে স্ত্রীর স্পাইনাল কডে মারাত্নক আঘাত লাগল। একহাত এক পা প্যারালাইজ্ড হয়ে গেল। শরীরের অর্ধেকটা চেতনা হারাল। এমন কি আছে যা এই লোকের জন্য সান্ত্বনা হতে পারে? নেই.......! আমি এমন কিছুই দেখছি না।

মানসপটে ভেসে উঠছে একটি আয়াত। স্রষ্টা তাঁর বান্দাকে কি শেখাচ্ছেন সেখানে? “ হে ঈমানদার লোকেরা! কোন ফাসেক তোমাদের নিকট যখন কোন খবর নিয়ে আসবে তখন তা যাচাই করে নেবে যাতে তোমরা অজ্ঞাতসারে অন্য মানুষদের ক্ষতি না করো এবং নিজেদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হয়ে না পড়ো”। (সুরা হুজরাতঃ আয়াত ৬) কে কবে জানিয়েছে এমন করে? মানবিক মর্যাদা কে কবে গড়ে দিয়েছে? যিনি স্রষ্টা তিনিই তো।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.