আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রোমান্টিক মৃত্যু



রোমান্টিক মৃত্যু আমি একট মৃত্যু চাই। দারুন রোমান্টিক একটা মৃত্যু। কেউ জানবেনা। কেউ টের পাবেনা। কেউ বুঝতেও পারবেনা।

এমন একটা নিঃশব্দ মৃত্যু চাই। রাতের গোছল শেষে বিছানায় শুয়ে পড়ো। বিছানার চাদর হবে ধবধবে সাদা ঠিক কাফনের কাপড়ের মতো। না কাফন পড়তে চাইনা। জীবিত মানুষ গায়ে কাফন জড়ালে সবাই সন্দেহ করবে।

ভাববে আমি পাগল। সবাই আমার মৃত্যুবোধকে ঠাট্টা করবে। আমাকে তখন নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। আমার মৃত্যু একটা হাসির বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। আমি তা কখনই চাইনা।

আমি নীরবে নিভৃতে সবার অজান্তে মরতে চাই। শান্তিপূর্ণ একটা মৃত্যু চাই। যেমন দূরে কোথাও বেড়াতে চলে গেলাম। একটা ঘর ভাড়া নিলাম। সেই ঘরেই আমার সেই কাঙ্ক্ষিত সেই রোমান্টিক মৃত্যুর প্রস্তুতি নিলাম।

সাদা চাদর, আতরে ভেজানো তুলো, গোলাপ জল, আগরবাতি সবই থাকবে। যা ছিটানোর ছিটাবো। যা জ্বালানোর জ্বালাবো। তারপর গোছল শেষ করে করে একটা নতুন সাদা পাঞ্জাবী আর সাদা পায়জামা পড়ে শুয়ে পড়বো সাদা চাদর বিছানো বিছানায়। রাতে শোবার আগে ঘরের ছিটকিনিটা ভাল করে লাগিয়ে দেবো যেন মৃত্যুর সময় আচমকা কেউ ঘরে ঢুকে না পড়ে।

যারা জানবে, মানে- বাঙ্গলোর দারোয়ান/কেয়ারটেকার ভাববে আমি ঘুমিয়ে আছি। সেই ঘুমের মাঝেই আমার রোমান্টিক মৃত্যু হবে। কেউ জানবে না। এভাবেই রাত ভোর হবে। আমাকে কেউ ডাকবে না।

সকাল গড়াবে, দুপুর গড়াবে আর একটি সন্ধ্যার অবসান ঘটবে। অবশেষে আরও একটি রাত। তখনও কেউ জানবেনা। তিনদিন পর দারোয়ান/কেয়ারটেকার টের পাবে বাঙ্গলোর আশেপাশের বাতাসটা কেমন জানি ভারি। কিসের যেন গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে।

ওরা এদিক ওদিক খুঁজবে। ভাববে ইঁদুর কিংবা বিড়াল মরেছে কোথাও আশে পাশে। কিছুই খুঁজে পাবেনা। তারপর টের পাবে গন্ধটা যেন ঘরের ভেতর থেকেই ভেসে আসছে। গত রাতের দমকা বাতাসের ঝাপটায় ঘরের একটা জানালা সামান্য খোলা।

সেই জানালা দিয়েই কেমন একটা বোঁদকা পচা দুর্গন্ধ ভেসে আসছে। দারোয়ান জানালার কাছে এসে দাঁড়ালো। ভেতরে সেই বাবুটি শুয়ে আছেন। কোন নড়া চড়া নেই। সাদা বিছানার চাদর কেমন লালচে ভাব।

কিছু পোকা কিলবিল করছে। দারোয়ানের আর বুঝতে কিছু বাকি রইলো না। একটা আর্ত চীৎকার। দৌড়ে চলে এলো দরজার সামনে। দরজায় সজোড়ে ধাক্কা মারলো।

কিছুতেই দরজা খুলছেনা। ভেতর থেকে লাগানো। হঠাৎ দারোয়ানের মনে হলো কারো অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে সেটা পুলিশ কেস হয়। বাঙ্গলোর কাছেই পুলিশ ফাঁড়ি। পুলিশ এলো।

দরজা ভাঙ্গা হলো। ভেতরে একজন মানুষের গলিত লাশ। পুলিশ দারোয়ানের জবানবন্দী নিল। ঘরের সবকিছু জব্দ করা হলো। সামনে একটা গ্লাসে সামান্য পানি।

নীচে বেশ কিছু বড়ির খালি দুমরানো খালি পাতা। ঘুমের বড়ি। মোট চারটে খালি পাতা। গ্লাসের নীচে একটা ভাঁজ করা সাদা কাগজ। তাতে লেখা- “একটা রোমান্টিক মৃত্যু চেয়েছিলাম।

পেলাম কিনা বুঝতে পারলাম না। কারণ কেউ কোনদিন জানতে পারবে না আমার এই মৃত্যুটা কতটা রোমান্টিক ছিল। আপনারা বলবেন অস্বাভিক মৃত্যু, আত্মহত্যা আরো কত কী। খুঁজবেন মৃত্যুর পেছনে রহস্য কী। বিশ্বাস করুন কোন রহস্য নয়।

আমি কোনদিন রোমান্টিক হতে পারিনি। আমার জন্মটাও রোমান্টিক কিছু নয়। সংসার, চাকরি কোন কিছুতেই রোমান্টিকতা খুঁজে পাইনি। আমি নিতান্তই নিরস একজন মানুষ। রোমান্টিক হবার খুব শখ ছিল।

সেটাই পূরণের জন্য আমার এই কাঙ্ক্ষিত মৃত্যু। আপনারা কী এখনো বলবেন আমি রোমান্টিক নই"? দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ------রোমান্টিক ঘুমটা ভেঙ্গে গেল হঠাৎ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।