আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিবনারায়ণ দাশ - বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকার প্রথম নকশা-প্রণেতা

জাদুনগরের কড়চা

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার প্রথম নকশা-প্রণেতা হিসাবে পটুয়া কামরুল হাসানের নাম প্রচলিত থাকলেও সম্প্রতি প্রকাশিত পত্রিকার রিপোর্ট ও অন্যত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, বাংলাদেশের পতাকার প্রথম নকশা প্রণেতা ছিলেন শিবনারায়ণ দাশ। পত্রিকায় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বাংলা উইকিপিডিয়ার কর্মী মুনতাসির আলম এবং মাকসুদ লিখেছেন শিবনারায়ণ দাশের জীবনী। ---- শিবনারায়ণ দাশ বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার প্রথম ডিজাইনার। তিনি একজন স্বভাব আঁকিয়ে ছাত্রনেতা ছিলেন। ১৯৭০ সালের ৬ জুন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের ৪০১ নং (উত্তর) কক্ষে রাত এগারটার পর পুরো পতাকার ডিজাইন সম্পন্ন করেন।

এ পতাকাই পরবর্তীতে ১৯৭১ এর ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় উত্তোলিত হয় (১)। ১ পরিবার শিবনারায়ণ দাশের পিতা সতীশচন্দ্র দাশ। তিনি কুমিল্লাতে আয়ূর্বেদ চিকিৎসা করতেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাক হানাদাররা তাকে ধরে নিয়ে হত্যা করে। শিবনারায়ণ দাশের স্ত্রীর নাম গীতশ্রী চৌধুরী এবং এক সন্তান অর্ণব আদিত্য দাশ।

(১) ২ ছাত্র রাজনীতি শিবনারায়ন দাশ প্রথম ভাষা সৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের হাত ধরে রাজনীতিতে আসেন। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন অংশগ্রহণ করে কারাবরণ করেন (১)। ৩ পতাকা ডিজাইনের প্রেক্ষাপট ১৯৭০ সালের ৭ জুন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকার পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত ছাত্রদের এক সামরিক কুচকাওয়াজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অংশ গ্রহনের কথা ছিল। এই লক্ষ্যে ছাত্রদের নিয়ে একটি জয়বাংলা বাহিনী গঠন করা হয়। ছাত্র নেতারা এই বাহিনীর একটি পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় (১)।

এই লক্ষ্যে ১৯৭০ সালের ৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের (তৎকালীন ইকবাল হল) ১১৬ নং কক্ষে ছাত্রলীগ নেতা আ স ম আবদুর রব, শাহজাহান সিরাজ, কাজী আরেফ আহমদ, মার্শাল মনিরুল ইসলাম পতাকার পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠকে বসেন। এ বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা স্বপন কুমার চৌধুরী, জগন্নাথ কলেজের ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা শিবনারায়ন দাশ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সাধারণ সাধারণ সম্পাদক হাসানুল হক ইনু ও ছাত্রনেতা ইউসুফ সালাউদ্দিন। সভায় কাজী আরেফের প্রাথমিক প্রস্তাবনার উপর ভিত্তি করে সবার আলোচনার শেষে সবুজ জমিনের উপর লাল সূর্যের মাঝে হলুদ রঙের বাংলার মানচিত্র খচিত পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। এরপর প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের ১১৬ নং কক্ষে রাত এগারটার পর শিবনারায়ণ দাশ পুরো পতাকা ডিজাইন সম্পন্ন করেন (১)। সেই রাতেই নিউমার্কেট এলাকার বলাকা বিল্ডিংয়ের ৩ তলার ছাত্রলীগ অফিসের পাশে নিউ পাক ফ্যাশন টেইলার্সের টেইলার্স মাস্টার খালেক মোহাম্মদী পতাকার নকশা বুঝে কাজ শুরু করেন।

তারা ভোরের মধ্যেই কয়েকটি পতাকা তৈরি করে দেন (১)। ৪ পতাকা উত্তোলন ৪.১ জুন ৭, ১৯৭০ ৭ জুন ১৯৭০ এ অনুষ্ঠিত কুচকাওয়াজের নেতৃত্ব প্রদান করেন আ স ম আবদুর রব। অল্প পেছনে পতাকা হাতে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন হাসানুল হক ইনু। রব সেই পতাকা বঙ্গবন্ধুর হাতে তুলে দেন এবং শেখ মুজিবুর রহমান সেই পতাকা ছাত্র-জনতার সামনে তুলে ধরেন। এরপর ইনু পতাকাটি তার কক্ষে নিয়ে যান এবং সহপাঠি শরীফ নুরুল আম্বিয়া শেরে বাংলা হলের ৪০৪ কক্ষের খবিরুজ্জামানকে পতাকাটি বাক্সে লুকিয়ে রাখতে বলেন।

এরপর একাত্তরের শুরুতে নগর ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক শেখ জাহিদ হোসেন পতাকাটি নিয়ে যান তার মালিবাগের বাসায (১)। ৪.২ মার্চ ২, ১৯৭১ ১৯৭১ এর ১ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত হবার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় এক বিশাল সমাবেশ হয়। এ সমাবেশে আ স ম আবদুর রব যখন বক্তৃতা করছিলেন, তখন নগর ছাত্রলীগ নেতা শেখ জাহিদ হোসেন একটি বাঁশের মাথায় পতাকা বেঁধে রোকেয়া হলের দিক থেকে মঞ্চস্থলে মিছিল নিয়ে এগিয়ে আসেন। রব তখন সেই পতাকা তুলে ধরেন (১)। ৪.৩ মার্চ ২৩, ১৯৭১ ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসে সারা বাংলায় পাকিস্তানের পতকার পরিবর্তে শিবনারায়ন দাশের ডিজান করা পতাকা উত্তেলিত হয়।

৫ পতাকায় পরিবর্তন ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার শিবনারায়ন দাশের ডিজাইন কৃত পতাকার মাঝে মানচিত্রটি বাদ দিয়ে পতাকার মাপ, রঙ, ও তার ব্যাখ্যা সম্বলিত একটি প্রতিবেদন দিতে বলে পটূয়া কামরুল হাসানকে। কামরুল হাসান দ্বারা পরিমার্জিত রূপটিই বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা(১,২)। ---- ৬ বর্তমান অবস্থান শিবনারায়ন দাশ বর্তমানে ঢাকার মনিপুরে বসবাস করছেন। ৮ তথ্যসূত্র ১. দৈনিক আমাদের সময়, ডিসেম্বর ১৮, ২০০৭ ২. কামরুল হাসান-বাংলাপিডিয়া ফেব্রুয়ারি ২০০৭ আরো তথ্য ও তথ্যসূত্র পাবেন সাংবাদিক ও ব্লগার বিপ্লব রহমানের এই পোস্টে । কপিরাইট নোটিশ এই পোস্টের তথ্যাবলী ও লেখা বাংলা উইকিপিডিয়া হতে জিএনইউ ফ্রি ডকুমেন্টেশন লাইসেন্সের অধীনে নেয়া হয়েছে।

এই লেখা বিনা বাঁধায় সর্বত্র ব্যবহার করা যাবে, যদি লেখার মূল উৎসের (বাংলা উইকিপিডিয়া) কথা সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়। বিস্তারিত জানতে দেখুন, GNU Free Documentation License।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।