আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবি এবং প্রাসঙ্গিক কিছু কথা

বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক কোনকিছু এই ব্লগে লেখা যাবে না।

গত বৃহস্পতিবার ' এমভি সৌরভ - ১ ' নামে যে লঞ্চটি ডুবে গেল বুড়িগঙ্গায়, সেটা আসলেই খুবই হৃদয়বিদারক। আসলে এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা বাংলাদেশে নতুন কিছু না, প্রতিবছরই এমন ঘটনা নদীপথে ঘটছে। প্রতিবছর যে এভাবে অসংখ্য মানুষ নদীপথে দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে, এটি প্রতিরোধ করার ব্যাপারে কখনও কর্তৃপক্ষের কোন কার্যকর পদক্ষেপ কখনও লক্ষ্য করা যায়নি। নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয় এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সীমাহীন অবহেলা, দূর্নীতি, কর্মকর্তাদের অদক্ষতা, দায়িত্ব পালনে উদাসীনতা এবং আরো অনেক কারণে প্রতি বছর এই অগনিত মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।

এ পর্যন্ত যতগুলো লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটেছে, তার একটিরও সুষ্ঠু তদন্ত হয়েছে বা তদন্ত কমিটির সুপারিশকৃত পন্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে কখনও শুনিনি। গত বৃহস্পতিবারের দুর্ঘটনার কথাই বলি। টিভিতে খবর দেখে এবং পত্রিকা পড়ে যা জানলাম তাতে বুঝলাম যে লঞ্চটি ডুবে গিয়েছিল, সেটির কোন ফিটনেস ছিলনা। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে লঞটি যাত্রা শুরু করেছিল(যেটি প্রতিবারই হয়)। ঢাকা নদীবন্দর পরিদপ্তরের দুইজন পরিদর্শক বৃহস্পতিবার দুর্ঘটনা ঘটার আগে সদরঘাট টারমিনালে দায়িত্বে ছিলেন।

তাদের উপস্থিতিতে সেই ফিটনেসবিহীন লঞ্চ কিভাবে যাত্রা করল এবং ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী কিভাবে বহন করছিল, সেটা একটি আশ্চর্যের ব্যাপার। আবার অন্য দিক দিয়ে ভাবলে এতে আশ্চর্য্য হবারও কিছু নেই। কারণ দেশে যে দুর্নীতি এখনও আছে, এটা তার জ্বলন্ত প্রমান। গতকাল(শুক্রবার) সদরঘাটে দায়িত্বপালনরত পরিদর্শক বলেছেন, তাদের নাকি পর্যাপ্ত লোকবল নেই এবং অনেক লঞ্চমালিক নাকি বেপরোয়া, তাদের কথা শোনেন। তারা নিষেধ করলেও নাকি লঞ্চমালিকেরা অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে !!! প্রিয় ব্লগার বন্ধুরা, একবার ভেবে দেখুন কি অথর্ব লোকজন বসে আছে এই গুরুত্বপূর্ণ একটি সেকটরের কর্তৃত্বে।

তারা যেন দুধের শিশু আর লঞ্চমালিকেরা এক একটা বাঘ-ভাল্লুক যে তাদেরকে মানেনা। বাংলাদেশের নদীপথে চলাচলকারী যানগুলোর ৪০-৫০ ভাগেরই ফিটনেস নেই, এই তথ্য জেনে আমি আজ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলাম। এটা কোন দেশে বসবাস করছি আমরা, যেখানে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ নদীপথে মৃত্যুবরণ করছে আর কর্তৃপক্ষের সেদিকে সামান্যতম ভ্রুক্ষেপও নেই? অনেকে হয়ত হতভাগ্য যাত্রীদেরকে দায়ী করবেন, হয়ত বলবেন তাদের অসচেতনতাই তাদের মৃত্যুর জন্য দায়ী; আমি এই বক্তব্যের সাথে একমত না। কারণ, বাংলাদেশের অধিকাংশ যাত্রী এখনও নদীপথের উপর নির্ভরশীল। পর্যাপ্ত পরিমান জলযান না থাকার কারণে তাদেরকে বাধ্য হয়েই ফিটনেসবিহীন এসব লঞ্চে উঠতে হয়।

আর আমাদের লোভী লঞ্চমালিকেরাও অতিরিক্ত লাভের আশায় তাদের লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করছে। ফিটনেসের কোন সমস্যা হলে তারা দুর্নীতির মাধ্যমে ফিটনেস আদায় করছে। এতে করে যে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ মরছে, সেদিকে তাদের বা নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের কোন ভ্রুক্ষেপই নেই, সবাই যার যার পকেট ভারী করতে ব্যস্ত। এই অব্যবস্থাপনার কি কোন বিচার বা শাস্তি কি আমরা কোনদিন দেখতে পাব না ? প্রতিবছর এভাবেই কি আমরা এসব হতভাগ্য মানুষের মৃত্যুর খবর শুনতে থাকব?


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।