আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডেনিশ কার্টুন, ক্রুসেড এবং আমরা



আবারো ডেনিশ পত্রিকায় ''মুহাম্মদ'' কার্টুন, আবারো মিছিল, আগুন । ব্লগেও আলোচনা দেখছি । আমি ডেনমার্কে আছি ২০০৫ থেকে । একটু কাছে থেকে ডেনিশদের দেখছি বলে আপনাদের সংগে শেয়ার করছি কিছু বিষয় । শুরুতে আমিও ডেনিশ বন্ধুদের সংগে, বিশেষত গত বছর, এ নিয়ে ঝগড়া করেছিলাম ।

বলতাম, তোমাদের যীশুর তো জন্মেরই ঠিক নেই, বাপ নেই, ইত্যাদি, ইত্যাদি । ওরা যখন বলতো যে দেখো সব দেশেই ভাল-মন্দ মানুষ আছে, আছে মৌলবাদী, তখন এ নিয়ে সবার দোষ দিচ্ছ কেন ? সাধারন ডেনিশরা কেমন তা বিচার করো । দেখলাম এখানকার মানুষের আসলে এসবে সম্পৃক্ততা নেই । এসব নিয়ে তাদের মাথাব্যাথাও নাই, কার্টুন কেবল মিডিয়াতেই সীমাবদ্ধ । কারনটা রাগীব ভাই দেখিয়েছে একটি পোষ্টে যে যীশু বা মুসা নিয়ে কার্টুন করা এখানে ডাল-ভাত ।

ওনার দেয়া লিংকটা দেখেন: http://thatvideosite.com/view/856.html এরমক অনেক লিংকই দেয়া যায় যেখানে তাদের নবী-রসুলদের নিয়ে তারা ব্যাংগ করে । তথ্যের, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এখানে এত বেশী স্বীকৃত যে সরকার হস্তক্ষেপ করতে এলে হিতে বিপরীত হবার সম্ভাবনা । কার্টুন ছাপানো ঐ পত্রিকার বিরুদ্ধে ডেনিশ সরকারের তাই আসলে কিছু করার নেই । দু একটা উদাহরন, সাম্প্রতিক: ইউল্যান্ড-পোষ্টেন (জীল্যান্ড উচ্চারন নয়) গ্রুপ গত বছর প্রাইম মিনিষ্টারকে নিয়ে সিনেমা করেছিল, A.F.R (for Anders Fogh Rasmussen). এটা একটা ডকুমেন্টারী, যাতে Fogh-এর, মন্ত্রীদের, বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীর সাক্ষাতকার দিয়েই তৈরী । কিন্তু এমনভাবে কাট-পিস করে বানানো যাতে দেখানো হয় Fogh একটা মিথ্যুক, গ্যে ।

সরকার কিছুই করতে পারেনি আর সিনেমা পরিচালক শুধু বলে গেলেন যে আমি দেখাতে চেয়েছি কাট-পিস কতটা ভয়ংকর ভাবে মিথ্যাকে সত্য বানাতে পারে, উইদ ডকুমেন্ট্স । একই পত্রিকা গত বছর একটা কার্টুন ছাপালো যাতে দেখা যায় জার্মান চ্যান্সেলর এ্যান্জেলা মার্কেল খোলা বুকে অষ্ট্রিয়া আর পর্তুগালের প্রাইম মিনিষ্টারদেরকে ব্রেষ্ট ফিডিং করাচ্ছে (এই অর্থে যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পলিটিক্সে এরা মার্কেলের চামচামী করে)। একদম খোলা বুক, থ্রি এক্স । জার্মান সরকার টু-শব্দ করে শুধু বলতে পেরেছে যে মার্কেলের প্রাইভেসী নষ্ট করলেন আপনারা !! ইউরোপীয় ইউনিয়নের গত নভেম্বরের অধিবেশনে রক্ষনশীল মার্কেল, সারকোজীর মত মত বড় বড় পাওয়ার হাউজ থেকে প্রস্তাব এলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টে, অধিবেশনে চার্চগুলোর প্রতিনিধিত্ব রাখার । উল্লেখ্য যে ডেনিশ সরকার তার বিরোধীতা করে ব্যাপক কুটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে তা রুখে দিয়েছে ।

এমনকি, মার্কেল-সারকোজীর পরিবর্তিত-সংশোধীত প্রস্তাবে, যেখানে চার্চগুলোকে কেবল মাত্র পর্যবেক্ষক রাখার কথা বলা হয়েছিল, সেটাও রুখে দিয়েছে । ডেনিশদের অবস্থানটা স্পষ্ট: চার্চ আর রাষ্ট্র পৃথক, কোনও অবস্থাতেই তার হেরফের হবে না । গত মাসে ডেনমার্কে সাধারন নির্বাচন হয়ে গেল । এখানে ফিলিস্তিন এক নেতা, নাসের কাদেরকে পাবলিক ব্যাপক সাপোর্ট করে । লাখ লাখ ডলার দিয়ে ডেনিশরা তাকে নির্বাচনে সাহায্য করে ।

পার্লামেন্টে সে একটা বরাবরই ভাইব্রান্ট ফেইস । ইয়াং জেনারেশানের মধ্যে তার ব্যাপক প্রভাব । ডেনিশ ফরেন পলিসি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন পলিসি, ট্যাক্স পলিসিতে তার প্রভাব বিশাল। বর্তমানে ক্ষমতার একেবারে কেন্দ্রে তার অবস্থান । মুসলিমদের গায়ে দু:খজনকভাবে টেররিস্ট তকমাটা না লাগানো থাকলে সে এখানকার ওবামা হয়ে যেতো এটা ডেনিশদের গভীর বিশ্বাস ।

আসল বিষয়টা হল, পশ্চিমা বিশ্বে মুসলিম ওয়ার্ল্ড একটা ইমেজ ক্রাইসিসে ভুগছে । এজন্য আল-কায়েদারা দায়ী । এরা সারা বিশ্বে ধর্মের নামে যেভাবে বোমাবাজি করেছে এতে আমাদের ইমেজ বলতে কিছু বাকী নেই । আমাদের তাই অন্যের ভুল-ত্রুটি ধরার আগে নিজেদের পরিশুদ্ধ করা দরকার ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।