নিজেরে হারায়ে খুজি..... bohurupi.mohajon@gmail.com
কলেজে মোক্তার স্যারের খুবই সুনাম। ছেলে থেকে বুড়ো সবাই তার খ্যাতি সম্বন্ধে জ্ঞাত। সেদিন অনেকদিন পর আমার ছোট ভাইয়ের কাজে কলেজে গিয়েছিলাম। টয়লেটে দেখি কেউ একজন শ্লোগান লিখে রেখেছে: " মোক্তারের এক বিচি".....!!!
যারা মোক্তার স্যারের ক্লাস করেনি তারা খুবই দুর্ভাগ্যবান বলতে হবে। তাদের মোক্তার স্যারের কীর্তিকলাপ লোক-মুখেই শুনতে হয়।
আমি কিন্তু খুবই ভাগ্যবান। কেননা কলেজে ভর্তির কিছুদিন পরই মোক্তার স্যার প্রথম আমাদের ক্লাশ নিতে আসেন। স্যারের খ্যাতির কথা জানার আগেই বাস্তবিক স্যারের সাক্ষাত পেয়েছিলাম।
সেদিন আমাদের কোন একটা ক্লাশে টিচার আসেনি। সবাই আমরা এদিক ওদিন ছুটাছুটি করছি, একটা দলে একজন আর একজনের ঘাড়ে ওঠার চেষ্টা করছিল।
আমি বই রাখার উচু বেঞ্চিতে একটু গা এলিয়ে দিয়েছি। এমন সময় হঠাৎ বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত বিশাল দর্শন মোক্তার স্যার ক্লাসে এসে উঠলেন। কিছুক্ষণ আগে আমাদের যে সহপাঠি আরেকজনের ঘাড়ে উঠতে সক্ষম হয়েছিল সে তখনও সেখানেই আছে।
স্যার হুংকার দিয়ে ওকে ডাকলেন: " এ্যাই বাদর, তুই ওখানে কি করছিসসসসস....। আমার কাছে আয়।
"
ততক্ষণে আমার সে বন্ধুর জান শেষ হয়ে গেছে। স্যারের বজ্র নাদে সে মুর্দা লাশের মত ভেসে ভেসে স্যারের কাছে গেল। কোন বোধ নাই মনে হল।
আমি কিন্তু স্যারের উপস্হিতি টের পাওয়া মাত্র এক গড়ান দিয়ে নিচের বেঞ্চে চলে এসেছি এবং ততক্ষণে ভদ্র মানুষটির মত বসে আছি।
বন্ধুটি স্যারের কাছে যাওয়া মাত্র স্যার ডান হাতটা উচু করলেন....আমার বন্ধুটির চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা পানি বের হল, জানটাও যাই যাই করছে।
আমরা পরছি ইন্নালিল্লাহে....ওয়া ইন্নাইলাইহে রাজেউন......
কিন্তু স্যার সবাইকে অবাক করে দিয়ে বন্ধুটির কাধে হাত রেখে ভর দিয়ে ডায়াসে উঠলেন। তারপর সেই চিরাচরিত স্টাইলে মেরুদন্ড সোজা করে টেবিলের ওপর দুই হাত রেখে বসলেন।
আমরা ততক্ষণে মেরুদন্ড সোজা করে ফেলেছি।
এরপর স্যার সবাইকে বললেন জানালাগুলো বন্ধ করে দিতে। আমরা আদেশ পালন করে সটান বসে আছি এরপর কি হয়।
এর পর কি হল......?.......খানিকক্ষণ পর বাইরে থেকে দেখা গেলো স্যার কথা বলছেন আর ক্লাসের সব ছাত্র হাসতে হাসতে একে অপরের গায়ে গড়িয়ে পড়ছে।
স্যার সেদিন আমাদের রাধা-কৃষ্নের গল্প বলেছিলেন। কৃষ্ন রাধার সাথে কি কি করেছিল, কিছু শ্লোক যেমন: "হিয়ার পরশ লাগি হিয়া মোর কাদে, প্রতি অঙ্গ লাগি কাদে প্রতি অঙ্গ মোর" এবং এসবের মানে কি ইত্যাদি।
আরও বলেছিলেন শরৎ চন্দ্রের কথা। তার নাকি বাল্য কালে এক মেয়ে সঙ্গী ছিল এবং তাকে নিয়ে ত্যান্দর শরৎ চন্দ্র নাকি বিলে চলে যেত নৌকা করে।
কিন্তু স্যার আমাদের সেদিন এটুকুই বলেছিলেন। শরৎ চন্দ্র ওই মেয়েকে বিলে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে কি হতো সেটা স্যার আমাদের বলেননি।
শুধু এটুকু বলেছিলেন: "ওখানে গিয়ে ওরা কি করতো সেটা তোদের জানার দরকার নেই...."
এরপর স্যার প্রায় একবছর আমাদের ক্লাস নিয়ে ছিলেন। আমরা ছিলাম অন্যদের হিংসার পাত্র।
মোক্তার নামা তাই চলবে আশা করি।
বি: দ্র: বেশ কয়েক বছর পর আমার ছোট ভাই যখন কলেজে ভর্তি হয়েছে তখন ও আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল আমি স্যারের ক্লাস পেয়েছিলাম কিনা।
আমি হেসে জিজ্ঞেস করেছিলাম স্যার ওদের কিছু বলে কিনা। ও হেসে বলল ওদের ক্লাস নেয়না কিন্তু অন্য গ্রুপে নেয়। ও ওর বন্ধুদের কাছে কি নাকি শুনেছে আমাকে বলল না।
আমি মনে মনে হাসি, মোক্তার স্যার বদলাবেন না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।