কষ্ট হলেও সত্য বলা বা স্বীকার করার সাহসই সবচেয়ে বড় সততা।
মহামতি আলীর (রা) নাম শুনে নাই এমন কেউ নেই।
ইসলামের চতুর্থ খলিফা তিনি।
বীর-বিক্রম, সত্যবাদিতা ন্যায়নিষ্ঠা ও বলিষ্ঠতায় তিনি মুসলিম ইতিহাসে বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছেন। একজন ন্যায়বান শাসক হিসেবেও হযরত আলীর (রা) আসন অনেক শীর্ষে।
তিনি জীবনের নানান চড়াই-উতরাই অতিক্রম করেন। দুঃখ কষ্ট ও অভাব অনটন ছিল মানুষটির নিত্যসঙ্গী। হযরত আলী খলিফা হলে কি হবে?
অভাব ও টানাপোড়েন কিন্তু তাঁর সংগ ছাড়েনি।
একদিনের ঘটনা।
কাজ করতে করতে খলিফার খুব ক্ষিদে পেল।
ক্ষিদের জ্বালায় তাঁর জান বেরিয়ে পড়ার উপক্রম হল।
অথচ হাতে তখন অনেকগুলো কাজ। এদিকে পেটের যা অবস্থা তাতে তিনি কাজে মন বসাতে পারছিলেন না।
পেটে কিছু দানা পানি না দিলেই নয়। তাই তড়িঘড়ি করে খলিফা বাড়ী ফিরলেন।
এসেই স্ত্রী ফাতেমাকে ডাকলেন। বললেন,
ফাতেমা ঘরে খাবার আছে তো? পেটে যে ভীষণ ক্ষিদে। আর সহ্য করতে পারছি না।
খলিফার কথা শুনে ফাতেমার বুক কেঁপে উঠল। কি খেতে দেবেন স্বামীকে।
ঘরে যে কোন খাবার নেই। হাঁড়ি-পাতিল সবই শূন্য। ক্ষিদের জ্বালায় ঘরের অন্য সবাই রীতিমত অস্থির।
হযরত আলী (রা) আর কি করবেন চিন্তায় তিনি ব্যাকুল হয়ে পড়লেন। খাবার যোগাড় করতে হবে।
তাই কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়লেন।
কাজের সন্ধানে ছুটলেন খলিফা। কোথাও কাজ পেলেন না।
ধীরে ধীরে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসল।
খলিফা তাই হতাশ হয়ে পড়লেন।
অগত্যা তিনি বাড়ীতে ফিরে যাবার মনস্থ করলেন। নিজেকে বুঝালেন এভাবে যে,
‘আল্লাহর উপর ভরসা করা ছাড়া কোন পথ নেই। তিনিই তো রিযিকদাতা। তিনি যদি খাওয়ান তো আলহামদুলিল্লাহ। না খাওয়ালেও তারই শোকর।
’
অবশেষে বাড়ীর দিকে ফিরে যাচ্ছেন আলী (রা)। এমন সময় ঘটল এক ঘটনা।
এক সওদাগরের পণ্য বোঝাই কাফেলা এসে হাজির হল মদীনায়। উটের পিঠে বহু মালামাল। উটের বহর হযরত আলী (রা) নজরে পড়ল।
তিনি মনে মনে ভাবলেন এবার হয়তো একটা কাজ মিলে যাবে। আলী (রা) সামনে এগিয়ে গেলেন। লোকদের নিকট কাজ চাইলেন। সওদাগররা হযরত আলীকে চিনত না।
কাজের লোক দরকার।
তাই আলীকে (রা) তারা কাজ দিল।
সওদাগরের পণ্যের বোঝা ছিল অনেক। তাই এগুলো নামাতে বেশ রাত হয়ে গেল। পেটে ক্ষুধা চেপে রেখে কাজ করছেন আলী।
পণ্য নামানো শেষ হলে আলী এক দিরহাম পারিশ্রমিক পেলেন।
সারা দিনের উপার্জন।
দিরহামটি হাতে নিয়ে আলী (রা) মহান আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করলেন। অর্থ হাতে পেলেন অথচ তাঁর অস্থিরতা কমলো না। ঘরে যে সবাই উপোস। এত রাতে খাবার কোথায় পাবেন?
দ্রুত তিনি ছুটে গেলেন বাজারের দিকে।
গভীর রাত। তাই দোকানপাট সবই ছিল বন্ধ।
এমতাবস্থায় খলিফা বড়ই হতাশ হলেন। বাজারের এপাশ ওপাশ অস্থিরভাবে ছুটাছুটি করছেন তিনি। এমন সময় একটি ক্ষীণ আলোর রেশ দেখা গেল।
হঠাৎ আলী (রা) এগিয়ে গেলেন সেখানে। দেখলেন একটি দোকান তখনও খোলা রয়েছে। দোকানী বসে আছে। সেখান থেকেই সামান্য খাবার কিনে বাড়ী ফিরলেন হযরত আলী (রা)।
ঘরে গিয়ে দেখলেন সবাই ক্ষুধার জ্বালায় ছটফট করছে।
হযরত ফাতেমা তড়িঘড়ি খাবার তৈরী করলেন। সবাই মিলে খাবার খেয়ে তৃপ্ত হলেন। আর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন। আলহামদুলিল্লাহ। ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।