সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com
অপরাজেয় সংঘাত
সামহয়ারের আর কারো হয়তো জানতে বাকী নেই। এমন একজনও হয়তো মিলবে না যিনি হঠাৎ করে লগ ইন করে একদম অবাক হয়ে যাবেন। নিজের মনেই বলে উঠবেন, হায় এ কী! আমার ধারণা, যাদের বলার সবাই বলে ফেলেছেন। যাদের পক্ষ নেবার সবাই পক্ষ নিয়ে ফেলেছেন।
কেউ নিজে থেকে পোস্ট দিয়েছেন। কেউ অন্যের পোস্টে গিয়ে মন্তব্য করে নিজের ঐক্যমত বা দ্বিমত জানিয়ে এসেছেন। সব মিলিয়ে, সবার মত গ্রন্থিত করে একজোট করলে হয়তো একটা মহাকাব্য হয়ে যাবে। কিন্তু যা হয়েছে, সমস্যা যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে তা যেন সমাধানহীন। যেন এক পরিত্রাণহীন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছি আমরা।
আমরা আপাতত ব্লগার, কিন্তু আগামী দিনের তরুণ চিন্তক, নাগরিক, অ্যাক্টিভিস্ট, সাধারণ মানুষ। এই তরুণদের নানা অংশের মধ্যে চলছে বিরামহীন ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া। জয় ও পরাজয়ের মহড়া। আন্দোলন সংগ্রাম। এবং অবশ্যই সংঘর্ষ।
আমাদের এই বাংলাদেশে ফেরেশতা অথবা শয়তান যেই ক্ষমতা নিক, মাইনাস টু থেকে শুরু করে মাইনাস মিলিয়ন যাই করুক এই সংঘর্ষ যেন অপরাজেয়। ব্লগের যুদ্ধক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষিত তরুণদের সংঘর্ষ, সংঘাত তথা মতাদর্শিক লড়াই দেখে আপাতত তাই মনে হলো।
আদার কালার্স
বাংলাদেশে যেমন সারা পৃথিবীতে তেমনি কেবলই দুইটা রঙ চোখে পড়ে। শাদা আর কালো। ব্লগেও তেমনি দুইটা রঙই চোখে পড়ে শাদা আর কালো।
আমি প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত বলে আসছি। মাঝে আরও সাতটি রঙ আছে। শুধু শাদা আর কালো ছাড়া পৃথিবীতে আর কোনো রঙ নাই একথা মিথ্যা। কিন্তু কোনো দলই এটা মেনে নিতে প্রস্তুত নন। এই দুই দল সমস্ত রঙকে পরাজিত করে পৃথিবী শাসন করার এই বিধ্বংসী খেলায় মেতেছে।
হয় জর্জ বুশের দল, নয়তো লাদেনের দল। হয় আক্রমণকারী নয়তো আক্রন্ত। কোন দলে আপনি? তাড়াতাড়ি জবাব দিন, নইলে এখনি আপনার ওপর হামলা করবে ইসলামপন্থীরা অথবা ওয়ার অন টেররের সৈনিকরা।
ব্লগেও এমন পরিস্থিতির চাপ। শাদা আর কালো দুইটা পক্ষ।
কোন দিকে আপনি? তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিন। নইলে আপনার ভাগ্যে তকমা জুটবে এখনি। হয় আপনি রাজাকার নইলে মুরতাদ। আপনার বিরুদ্ধে মিছিল নামবে হয় বায়তুল মোকাররম থেকে নয়তো সুধাসদন থেকে।
অনেক লেখালেখির পর অনেক কথা খরচের পর এখন সবাই মানতে রাজি হয়েছেন শাদা ও কালোর বাইরে অন্য রঙ আছে।
ভার্চুয়াল মুক্তিযোদ্ধারা নিন্দা করে তাদের নাম দিয়েছেন সুশীল। সুশীল তো এখন প্রবলভাবে সমালোচিত একটা গোষ্ঠী। যারা আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জামাতের বাইরে এদেশে তৃতীয় কণ্ঠস্বরের দাবিদার। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর জানা গেল তারা হলেন বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক/সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থের উকিল। ফলে সুশীল এখন বড় সমালোচিত শব্দ।
তকমা দেয়া যাদের কাজ তারা চান্স পেলে তকমা দিয়ে যাবেন, সে তকমা দিয়ে কিছু বোঝা যাক বা না যাক। কিন্তু, এই তকমা নেগেটিভলি দিলেও একটা ব্যাপার কিন্তু তারা মেনে নিয়েছেন যে, ব্লগে তৃতীয়, চতুর্থ ইত্যাদি মত আছে বা থাকতে পারে। যে মতগুলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে কিন্তু অনৈতিক উপায়ে গালিবাজী করে কোনো ফায়দা লোটার উদ্দেশে তাকে প্রতিষ্ঠিত না করে যুক্তি, বুদ্ধি ও সহনশীল পদ্ধতি অবলম্বনের পক্ষপাতি। ইসলামকে স্রেফ জঙ্গিবাদের সঙ্গে, ইসলামী মতাদর্শকে স্রেফ পাকিস্তানপন্থী, এন্টি সেভেনটিওয়ান হিসেবে দেখার যেমন একচোখা নীতি আছে। তেমনি ইসলামের মধ্যেও অন্য মত আছে।
যে মত, যে কাউকে যে কোনো প্রকারে মুরতাদ ঘোষণা করে না, মাথার দাম ঘোষণা করে না, দেশ ছাড়া করে না। সমালোচনাকারীকে বেঈমান বলে তার বিরুদ্ধে গজারির লাঠি হাতে রাস্তায় নেমে পড়ে না। রাজনৈতিক ফায়দা লুটে ইসলামকে কলুষিত করে না।
১৯৭১ বাংলাদেশের মানুষের জন্য অপূর্ব এক সুযোগ এনে দিয়েছিল। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠী নিজেদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির লক্ষে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।
তাদের সঙ্গে অন্য সব মতবাদ ধর্ম বর্ণের মানুষ ছিল। কিন্তু নেতৃত্বে ছিল এই মুসলমানরাই। উপমহাদেশে এই একমাত্র জাতিরাষ্ট্র যারা মালিক মূলত বাঙালি মুসলমান। কিন্তু ১৯৭১-এর সুযোগ আমরা নেইনি। একাত্তরের পরাজিত শক্তি তাই ইসলামকে ব্যবহার করে নিয়মিত আমাদের ওপর আঘাত হেনেছে।
আমাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তিকে সুদূর পরাহত করে রেখেছে।
আমাদের সমাজ আজ নানামুখি সংঘর্ষে এক যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত। এ যুদ্ধ কখনো মুখোমুখি কখনো আড়ালে আবডালে চলছে।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামাতের।
শিক্ষার্থীর সঙ্গে সেনাবাহিনী। নাগরিকদের সঙ্গে শাসকের। নাস্তিকের সঙ্গে আস্তিকের। যুক্তির সঙ্গে বিশ্বাসের। ধর্মের সঙ্গে বাস্তবতার।
জ্ঞানীর সঙ্গে মূর্খের সংঘাত লেগে আছে। এদেশে পাকিস্তানপন্থী আছে। ভারতপন্থী, চীন পন্থী, রুশপন্থী, আমেরিকা পন্থী এমনকি মালয়েশিয়া পন্থীও পাওয়া যাবে কিন্তু বাংলাদেশ পন্থী মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। একাত্তরের পর বাংলাদেশকে টিকিয়ে রাখার জন্য বড় কোনো সংগ্রাম হয়নি। বড় কোনো উদ্যোগ আসেনি।
ফলে, নাগরিকের দেশপ্রেমবিহীন এক ভবিতব্য নিয়ে দেশটি থমকে আছে। এখানে প্রগতিশীলরা নৈরাজ্যবাদী। ধর্মপন্থীরা জঙ্গি। কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। একদল চায় আরেক দল দেশ ছেড়ে চলে যাক।
বহিষ্কার হোক। কোনো আপোষরফা নেই। দুটো দলই এমন এমন সব পদ্ধতি অবলম্বন করে যার অধিকাংশই ফ্যাসিস্টরা অবলম্বন করেছিল। কিন্তু আমরা বলতে চাই, দেশ ছেড়ে বা ব্লগ ছেড়ে চলে যাওয়া বা বহিষ্কার করার বাইরেও পথ আছে। গণতান্ত্রিক উপায়ে, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পরস্পরের কঠোর সমালোচনা করেও এদেশে থাকা সম্ভব।
এমনকি ব্লগেও থাকা সম্ভব।
আমাদের দায়
সামহয়ারের বর্তমান সংকটে আমাদের দায় কতটুকু? যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কায়েম করার কথা বলে যাকে তাকে রাজাকার বলে এক ধরনের নৈরাজ্য তৈরি করে নিজেদের ব্লগীয় ফায়দা লুটতে চেয়েছেন এবং তা করতে গিয়ে অন্যায় পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ করেছি। আমরা বলেছি, এ পদ্ধতিতে ব্লগটিকেই শুধু ধ্বংস করে দেবার চেষ্টা হচ্ছে না, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা স্বপক্ষের বলে মনে করে ভুল বলিনি। কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা চালিয়ে এবং অব্যাহতভাবে পিকেটিং চালিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী সবাইকে ব্লগ থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে।
লক্ষ্য, কতিপয় মুক্তিযুদ্ধপন্থী গুণ্ডার অন্যায় কাজকে বৈধতা দান করা। কিছু ব্যান এক্ষেত্রে আগুনে ঘি ঢেলেছে। এই সুযোগে সামহয়ারে সংখ্যাগত আধিপত্য কায়েম করেছে তথাকথিত ইসলামপন্থীরা। এদের অনেকে ব্লগে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির সমালোচনা করেছেন। কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধকেও সমালোচনা করেছেন।
কেউ কেউ প্রকাশ্যে একাত্তরের রাজাকার আল-বদরের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। কেউ বায়তুল মোকারম থেকে মিছিল নামানোর হুমকি দিয়েছেন। কেউ সহব্লগারকে মুরতাদ ঘোষণা করেছেন। এখন আপাত অর্থে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী ব্লগারেদের অনুপস্থিতিতে এরা আমাদের ছালাম দিয়ে যাচ্ছেন। আরেক রাজনেতিক ফায়দা লোটার উৎসবে নেমেছেন।
আমার কথা পরিষ্কার। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপক্ষ শক্তির ছালাম চাই না। আবার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির গালিও শুনতে চাই না। আমরা আওয়ামী টীমের পিকেটিং চাই না। আবার ছাত্র শিবিরের দাওয়াতও চাই না।
আমরা একটা সুস্থ, সুন্দর, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আছে, প্রাইভেসি ও নিরাপত্তা আছে এরকম একটা ব্লগ চাই। সেখানে ক্রিয়েটিভ চিন্তা ও সৃষ্টি প্রকাশ করতে চাই। ব্যস। যারা মতাদর্শ কায়েমের স্বপ্নে বিভোর তারাও থাকবেন। কিন্তু তারা যেন অন্যায় কোনো পদ্ধতি বেছে না নেন।
আমরা চাই না, এ ব্লগে যুক্তি দিতে গিয়ে কেউ ধর্মের অবমাননা করুক। আবার কেউ ধর্মের অবমাননা করার আগেই তাকে মুরতাদ ঘোষণা করুক কেউ। কেউ মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করার জন্য বিতর্কিত কিছু বলুক। আবার কেউ মুক্তিযুদ্ধের গঠনমূলক সমালোচনা করলেও তাকে রাজাকার খেতাব দেয়া হোক।
মতাদর্শ কায়েমের ফ্যাসিস্ট পদ্ধতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতেই হবে।
এজন্য শাদা ও কালোর বাইরের অন্য রঙগুলোতে আলো ফেলতে হবে। এ জন্য সুস্থ-সুন্দর চর্চা যারা চান তাদের সক্রিয় হতেই হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।