মানুষ এবং মানুষ সম্পর্কে যাবতীয় বিষয়ে আমার দারুন আগ্রহ ……
প্রথম পর্বঃ আমি এখানে কেন...
--রিলাক্স... রিলাক্স — লুজেন আপ ইয়োর মাসল্, প্রতিবার ব্লাডপ্রেশার মাপার আগে নার্স গুন গুন করে এ কথা গুলো আওড়ায়... শরীরটা ছেড়ে দাও, নো টেনশন। কাম ডাউন...
চওড়া কাঁধের মাসলে ছোট ছোট হাতের আলতো চাপড় পড়ে — রিলাক্স ব্রেভ ম্যান, রিলাক্স।
হাসপাতালের সাদা বিছানায় শুয়ে থাকা তার ত্রিশ বছরের পেশিবহুল শরীরে, শিরা উপশিরা গুলো কিলবিল করে। সক্রিয় মস্তিস্কের নিউরন অবিরাম সংবেদ পাঠায় শরীরের বিভিন্ন অংশে, অপেক্ষায় থাকে প্রতিবর্ত প্রতিক্রিয়ার আশায়। কিন্তু নিশ্চল নিথর হয়ে থাকা তার মাংশপেশি সমুহ সাড়া দেয় না, উদ্দীপিত হয়ে উঠে না।
সারা শরীর জুড়ে তার তীব্র বিতৃষ্ণা আর বিরক্তি, প্রায় সপ্তাহ কেটে গেছে, এই বিছানায় শুয়ে শুয়ে সে করছেটা কি? কোন এক নির্বোধ তার জ্ঞানহীন দেহটা এখানে ফেলে গেছে! সে ছিল ফ্রন্টে, লড়ছিল অস্ত্র হাতে শত্রুর মুখোমুখি। ট্রিগারে আঙ্গুল রেখে জানবাজি মরীয়া লড়াইয়ে মৃত্যু তো পায়ে পায়ে ঘুরছিলই। মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া ঝাঁক ঝাঁক ট্রেসার বুলেট, অবিশ্রান্ত বৃষ্টিতে পিছল হয়ে যাওয়া বাঙ্কারে শুয়ে তার যোগ্য জবাব দিয়ে যাওয়া... সমুহ চিৎকার আর রণ হুংকারে চারদিক কাঁপিয়ে পালটা হামলায় এগিয়ে যাওয়া... চারপাশে ছিল সহযোদ্ধাদের আর্তনাদ আর অন্তিম চিৎকার... মৃত্যুও হয়ে উঠেছিল ভীষন পরিচিত।
শরীরের শিরা-উপশিরা দিয়ে বয়ে যাওয়া ছুটন্ত রক্ত কণা, এমনিতেই বাড়তি চাপ তৈরি করে ধমনীতে। তার উপর তার শরীর মন জুড়ে জারী রাখা সদা সতর্কতা, মাংসপেশীকে কিছুতেই শিথিল হতে দেয় না।
যে কোন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য সদা প্রস্তুত, কমান্ডার মতিন। এমনকি চোখের দৃষ্টির মাঝে সেই ক্ষিপ্রতা...
ধনুকের ছিলা টান অবস্থা যেমন থাকে চিতা বাঘের — শিকারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে।
এই অবস্থায় ব্লাডপ্রেসারের সঠিক রিডিং নিতে প্রতিবার হিমশিম খেয়ে যায় ডিউটি নার্স। সিস্টোলিক–ডায়া সিস্টোলিক রিডিং হয়ে যায় লাগাম ছাড়া। যেন রোগী হয়ে আছে অসম্ভব ধরনের হাইপার।
এ অবস্থায় ওষুধের ডোজ কি ভাবে ঠিক করা যাবে, প্রেসার যদি সঠিক ভাবে মাপা না যায়? এত কষ্ট করে ব্লিডিং বন্ধ করা গেছে, ইনফেকশন মোটামুটি নিয়ন্ত্রনে, হয়তো গ্যাংগ্রিন এড়ানো যাবে — শরীর খুব ভাল ভাবে সাড়া দিচ্ছে... এ সব অর্জন তাহলে মিথ্যা হয়ে যাবে?
ডিউটি নার্স তার পেশেন্ট নিয়ে কথা বলে ডিউটি ডাক্তারের সাথে।
আগরতলার কাছাকাছি রেডক্রিসেন্টের এই হাসপাতালটার স্থায়ী একটা ভবন আছে — এল শেপের একটা দোতলা কমপ্লেক্স। নীচ তলায় আউটডোর, ডিস্পেন্সারী এবং প্যাথলজি আর দোতলায় দশবেডের একটা ওয়ার্ড, তার সাথে অপারেশন থিয়েটার। এখান থেকে সীমান্ত খুবই নিকটবর্তী। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হবার পর এবং জুলাই আগষ্টের পর থেকে যুদ্ধের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে যুদ্ধে আহত লোক জনের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
হাসপাতাল কমপ্লেক্সে আর স্থান সংকুলান হয় না। ফলে পাশের একটা বড় গোডাউনকে অস্থায়ী হাসপাতাল হিসাবে চালু করা হয়েছে। এলা ক্লাকটন এখানে ডাক্তার হিসাবে যোগ দেবার ঠিক এক বছর পরের ঘটনা সেটা।
এ কমপ্লেক্সএর ২১ বছরের জীবনে কোন ডাক্তার বা কোন নার্স — কেউ কখনো দেখেনি বিস্ফোরনের আঘাতে কিভাবে মানুষের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কিভাবে শরীরে বুলেট বিদ্ধ হয়ে একটা শরীর ঝাঝড়া হয়ে যায়। বারুদের করডাইটে কি ভাবে একেকটা দেহ ঝলশে যায়।
গোলার শার্পনেল কতটা বিস্তৃত এলাকা জুড়ে তার ধ্বংশলীলা চালায়, কতটা নির্মম তা হতে পারে। প্রতিদিনই হাসপাতালে আগত হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালের প্রচলিত দৈনন্দিনকার চিকিৎসা দেবার দক্ষতা আর অভিজ্ঞতা দিয়ে তা সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। নতুন অস্থায়ী হাসপাতালে আরও কিছু বিশেষজ্ঞ এসে যোগ দিবেন, শোনা যাচ্ছে। যুদ্ধের কারনে বাধ্য হয়েই হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার পরিধি বাড়ানোর প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
পর্ব দুইঃ আমার ফেরার কোন পথ নাই।
ডাক্তার হিসাবে এলার বয়স খুব বেশি না, বছর দশেক। ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান বার্নারডিনোতে তার শৈশব জীবন কেটেছে, লেখাপড়ার শুরুটা হয়েছিল ইউনিভারসিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, স্যান ফ্রান্সিসকোর স্কুল অব মেডিসিন থেকে, সেই ১৯৬৩ সালের শুরুর দিকে। ইচ্ছা ছিল এখান থেকেই এম ডি ডিগ্রিটা নেওয়ার। কিন্ত শেষ করতে পারেনি বিচিত্র এক কারনে।
আর পাঁচজন সাধারন শিক্ষার্থীর সাথে মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান এলার জীবনের কোন তফাত ছিল না। বরাবর যথেষ্ঠ ভাল রেজাল্ট, ফ্যাকাল্টির শিক্ষকদের মাঝে বুদ্ধিদীপ্ত এলা ক্লাকটনের একটা পছন্দের স্থান তো ছিলই। কিন্ত এলার সাদামাটা জীবনটা দারুন ভাবে নাড়া খেল ১৯৬৪ মে মাসের একটা হৃদয় বিদারক ঘটনায়।
স্যান বার্নারডিনোতেই সামার স্কুলে এলার সাথে পরিচয় হয় মার্থা বার্কার এর আর তা থেকে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব। বছর ঘুরতেই এক সময় তা রুপ নেয় পারিবারিক বন্ধুত্বে।
যে কোন ছুটিতে দুই বান্ধবীর একত্রে প্রচুর সময় কাটানো ছিল বেশ স্বাভাবিক ঘটনা। অসম্ভব হাসি খুশি মার্থার ছোট ভাই উইলিয়াম বার্কারকে এলা দেখেছে দুই একবার, তাদের পারিবারিক অনুষ্ঠানে। বিল ছিল মার্থার ২ বছরের ছোট, বাদামী রঙের গাঢ় এক জোড়া চোখ, মাথা ভর্তি একরাশ এলোমেলো চুল। একদিন বিকালে জাতীয় পতাকায় মোড়া এক সামরিক কফিনে সেই বিলের লাশ এল স্থানীয় গীর্জায়। বিল সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিল মাত্র কয়েক মাস আগে, এটা নিয়ে মার্থাকে প্রায়ই বিমর্ষ দেখতো এলা।
দিন গুনতো বিলের একটা চিঠির অপেক্ষায়। রেডিও টেলিভিষনের খবর কিংবা পত্র পত্রিকায় খুটিয়ে পড়তো ভিয়েতনাম যুদ্ধের খবর। পরিচিতদের মাঝে অনেকেই বাধ্যতামুলক দ্বায়ীত্ব হিসাবে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলো, কিন্ত বিলের এই মর্মান্তিক পরিনতির কথা কেউ ভাবতেই পারে নাই। বিলের স্মরনে স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা ছোটখাট জমায়েত হয় গীর্জার হলে।
সেই প্রথম মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখেছিল এলা।
ষাটের দশকের সময়টাই ছিল তুমুল ভাবে উলটা পালটা — যেন দুনিয়া জুড়ে তরুন প্রজন্মের বিদ্রোহ আর সব ধরনের প্রাতিষ্ঠানিকতার বিরুদ্ধে রুখে দাড়িয়ে স্রেফ বেয়াদবী দেখানোর দশক। আমেরিকান সমাজের দিক থেকে দেখলে সময়টা ছিল ২য় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী মার্কিন সমাজে সিভিল রাইটস আন্দোলনের তুঙ্গে ওঠার কাল হিসাবে। নাগরিক অধিকার নিয়ে আমেরিকার সিভিল রাইটস আন্দোলনের ইতিহাস অনেক পুরানো। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য সমান অধিকার, সবার জন্য ভোটাধিকার, বৈষ্যম্যমুলক আইন ও প্রথা সমুহের রদ, এ সবই ছিল জনপ্রিয় দাবী সমুহ। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুন শিক্ষার্থীরা, সংবেদনশীল তরুন বুদ্ধিজীবি হিসাবে এ আন্দোলনকে এগিয়ে নেবার শপথ নেয়।
অবাক হবার মতো বিষয় ছিল এটা নিঃসন্দেহে, সাধারন ভাবে আমেরিকার ছাত্র সমাজের এমন ধরনের বিদ্রোহের কোন ঐতিহ্য কখনই ছিল না। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে- বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র রাজনীতি ছিল নিষিদ্ধ বিষয়, কোন দাবী দাওয়া আদায়ে সমাবেশ অথবা প্রচারনা- কিংবা বিক্ষোভ, সবই বেআইনী।
অথচ আন্দোলনের প্রবল স্ফুলিংগকে চাপিয়ে রাখা গেল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের হাতেই সূচিত হলো সেই দ্রোহের কাল।
পরিস্থিতি আরো উতপ্ত হয়ে উঠলো — ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকান সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামুলক যোগদানের বিষয়কে কেন্দ্র করে।
ষাটের দশকের সে সময় আমেরিকান তরুনদের সেনাবাহিনীতে যোগদানের বিষয়টা এখনকার মতো স্বেচ্ছামুলক সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করতো না। একটা নির্দিষ্ট বয়সে সবাইকে বাধ্যতামুলক একটা সময় প্রশিক্ষন এবং সামরিক জীবন কাটাতে হতো।
ভিয়েতনাম যুদ্ধ তখন মার্কিন তরুনদের কাছে এক অনৈতিক যুদ্ধের প্রতীক। দিকে দিকে দানা বাধছে যুদ্ধ বিরোধী তুমুল মনোভাব। শ্লোগান উঠছে- হেই হেই এল বি জে (প্রেসিডেন্ট Lyndon B. Johnson)হাউ মেনি কিডস হ্যাভ ইউ কিল্ড টুডে? জাতীয় সেনাবাহিনী তখন আর বীরত্বের প্রতিক নয় — বরং তাদের বিরুদ্ধে ধিক্কার উঠছে শিশু হন্তা, সাধারন নিরীহ জনগনের হত্যাকারী হিসাবে।
ওয়ান টু থ্রী ফোর! উই ডোন্ট ওয়ান্ট ইয়্যুর ফাকিং ওয়ার! মার্কিন মধ্যবিত্ত তরুন, প্রথম প্রজন্মের ইমিগ্রান্ট — সাধারন নাগরিক অধিকারের দিক থেকে যারা নানা রকম বঞ্চনার শিকার- তাদের সংবেদনশীল সচেতন অংশ এককাট্টা হয়ে দাড়াল যুদ্ধের বিরুদ্ধে।
মনে আছে স্যান বার্নারডিনোর গীর্জায় মার্থার ভাই বিলের কফিন কে সামনে রেখে তার স্মরন সভায় মার্থা এক অদ্ভুত কান্ড করেছিলো। মঞ্চে তখন ছিলেন গীর্জার ফাদার, মার্থার পরিবার, বিলের মেয়ে বন্ধু আর সেই সাথে ছিল সামরিক বাহিনীর এক কর্পোরাল। উপস্থিত জনতাকে তিনিই তখন বর্ণনা করছিলেন ফ্রন্টে বিলের বিভিন্ন সাহসিকতার নমুনা। এ সময় হঠাৎ করেই পাশের এক দরজা খুলে মার্থা এসে হাজির হয়, সরাসরি মঞ্চে... হতভম্ব জনতা সভয়ে লক্ষ্য করে মার্থার পরনে ন্যুন্যতম কোন পোষাকও নাই!!! সম্পুর্ন নগ্ন মার্থা মঞ্চে উঠেই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় সামরিক অফিসারটিকে, হাত থেকে ছিনিয়ে নেয় তার মাইক্রোফোন।
... আপনারা এখানে দয়া করে তামাশা করবেন না, যথেষ্ঠ বুজরুকি আপনারা ইতিমধ্যেই দেখিয়েছেন। আমার ভাই কোন শহীদ নয়, তাকে নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্য দিয়ে খুন করা হয়েছে। আমি আমার বন্ধুদের মতো বিলও যুদ্ধকে ঘৃনা করতো, সে কখনও যুদ্ধে যেতে চায় নাই... এ যুদ্ধ অবশ্যই একটা অনৈতিক যুদ্ধ। আমি এখানে আমার ভাইএর কোন খুনিকে দেখতে চাই না। আপনারা দয়া করে চলে যান...
যেন যন্ত্রনাদগ্ধ আহত কোন বন্য পশু... শেষের দিকে মার্থার গলার আওয়াজ এক ধরনের গোঙানীতে পরিনত হয়...,
সামরিক বাহিনীতে রিক্রটের প্রধান সরবরাহ সব সময়ই আসে সাধারনতঃ মধ্যবিত্ত শ্রেনী থেকে, এটাই ছিল এতদিনকার রেওয়াজ।
আজ আমেরিকান মধ্যবিত্ত সমাজ যেন সেই অলিখিত নিয়মটাই নতুন ভাবে আবিস্কার করে। ধনীর সন্তানদের অর্থের বিনিময়ে বাধ্যতামুলক সেনাবাহিনীতে যোগদান থেকে রেহাই মিলতে পারে, কিন্ত মধ্যবিত্তের সে সুযোগ কোথায়? ফলে প্রতিবাদ, প্রতিরোধের মুখে পড়ল যুদ্ধে যাওয়ার বাধ্যতামুলক নীতি। ক্যালিফোর্নিয়ায় বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলনের অন্যতম ঘাঁটি, ছাত্ররা সেখানে গড়েছে ভিয়েতনাম ডে কমিটি, ফ্রি স্পীচ মুভমেন্ট এর অ্যাক্টিভিষ্টরা এসে যোগ দেয় যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলনে। সেখানে পোড়ানো হলো সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য চিঠি, ড্রাফট কার্ড, পোড়ানো হলো প্রেসিডেন্ট জনসনের কুশপুত্তলিকা।
সরকারে দমননীতি ছিল কঠোর, শুরু হলো ব্যাপক ধড়পাকড়।
জেল জরিমানা এড়াতে দলে দলে তরুনরা দেশ ছাড়তে শুরু করলো — কেউ ইউরোপের ফ্রান্স, সুইডেন বা হলান্ড। তবে একটা বিশাল অংশ পাড়ি জমালো কানাডায়। কাছের দেশ এবং সহজ যোগাযোগের জন্য কানাডা হয়ে উঠলো এই ড্রাফট ফাঁকি দেওয়াদের প্রথম পছন্দের জায়গা। একজন দুইজন নয়, শত শত তরুন যাদের অধিকাংশই গ্রাজুয়েট প্রোগ্রামের ছাত্র, মেধাবী, বুদ্ধিদীপ্ত — এসে উপস্থিত হলো কানাডায়। মন্ট্রিয়ল, টরন্টো এবং ভ্যাঙ্কুভার শহর ড্রাফট থেকে পালানো তরুনদের প্রধান আশ্রয় স্থল হয়ে উঠলো।
কানাডার সহজ ইমিগ্রেশন পলিশির কারনে অধিকাংশ তরুন চাইলো স্থায়ী ভাবে এদেশেই থেকে যেতে, তাদের জন্য খুব সহজ ছিল— কানাডার বৈধ নাগরিক হিসাবে সব সুযোগ সুবিধা নিয়ে জীবন কাটিয়ে দেয়া।
১৯৬৪ সালের আগষ্ট মাস, মার্থা এবং এলা দুজনেই এসে হাজির হয়, কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে। এলার ইচ্ছা ছিল মার্থার একটা ব্যাবস্থা করে আবার স্যান বার্নারডিনোতে ফিরে যাওয়া। তার মেডিক্যাল ডিগ্রি সমাপ্ত করা, কিন্তু সব কিছু বদলে দিল ভ্যাঙ্কুভারের মেডিসিন স্কুলের সিনিয়ার ছাত্র মাইকেলএর সাথে পরিচয় আর তার সাথে মাত্র কয়েক দিনের ঘনিষ্ঠতা।
মাইকেল ল্যাঙ তখন বৃটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন স্কুলের ২য় বর্ষের ছাত্র।
পাখির মতো তীক্ষ্ণ চোখে সে খুঁটিয়ে দেখে ভিয়েতনাম যুদ্ধের গতি প্রকৃতি। মন কাঁদে তার স্বদেশের জন্য। ইতিমধ্যেই বৃটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস কেন্দ্রিক সংগঠন — স্টুডেন্ট ইউনিয়ন ফর পীস এ্যাকশন এর একজন এ্যাক্টিভিস্ট হয়ে উঠেছে সে। কানাডায় পালিয়ে আসা এই সব মার্কিন তরুনদের সাহায্য সহযোগিতা দেবার জন্য স্থানীয় ভাবে কিছু এন্টি ড্রাফট গ্রুপের সৃষ্টি হয়েছিল। অপরিচিত নতুন দেশে মার্কিন তরুনদের আশ্রয় দেয়া, আইনী সাহায্য সহযোগীতা সহ তাদের ভ্যাঙ্কুভার জীবনের প্রাথমিক দিন গুলোকে সহজ করে তোলা, এ গুলোই ছিল তাদের কার্য্যক্রম।
স্থানীয় এ সব গ্রুপ গুলোকে সমন্বয় করতো স্টুডেন্ট ইউনিয়ন ফর পীস এ্যাকশন। কয়েকদিন ধরে মার্থা আর এলা মাইকেলের সাথে ভলান্টিয়ার হিসাবে কাজ করে। ক্রমশঃ এলা বুঝতে পারে, আমেরিকায় তার নিজ শহরে তার কোনদিনই ফিরে যাওয়া হবে না। একদিন মার্থার সাথে গিয়ে বৃটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন স্কুলে ভর্তিও হয়ে আসে।
সরকারীভাবে ভিয়েতনাম যুদ্ধে না জড়ালেও কানাডার তরুন সমাজ এভাবেই জড়িয়ে গিয়েছিল যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের সাথে—আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রনেতাদের প্রভাবে ভিতরে ভিতরে বদলে যাচ্ছিল কানাডিয়ান তরুনদের চিন্তা ভাবনা।
ভিয়েতনাম যুদ্ধকে কিছুতেই নৈতিক কোন লড়াই আর মনে হতো না এলা ক্লাকটনের কাছে।
ভ্যাঙ্কুভারের শহরতলির একপ্রান্তে বসবাসকারী মাইকেল এর পরিবারটি প্রথম ইন্দোচীন যুদ্ধের পটভুমিতে কম্বোডিয়া থেকে শরনার্থী হিসাবে আসা। এ ধরনের সব মিলিয়ে সাত আটটি পরিবার। কানাডার অভিভাসনের ইতিহাসের লক্ষ লক্ষ ইমিগ্রান্টদের ভীড়ে খুবই স্বাভাবিক ঘটনা — এ ভাবেই প্রজন্ম পরিক্রমায় শিকড় উপড়ে উঠে আসা মানুষ, এক সময় তার নিজের শিকড় খুঁজে নেয় ভিনদেশি মাটিতে। কিন্তু কম্বোডিয়ার কানদাল প্রভিন্স থেকে আসা এই পরিবারগুলো যেন একটু ভিন্ন... বৃটিশ কলাম্বিয়ার মুল স্রোতের জীবন সবসময়ই তাদের কাছে বিজন-বিভুঁই, নর্থ আমেরিকার এই দেশ কানাডা, তাদের কাছে সব সময়ই পরদেশ।
ফলে কয়েক দশক পার হয়ে যাওয়ার পরও, ভ্যাঙ্কুভারের বহুজাতিক বহুভাষিক সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন, স্বতন্ত্র একটা গোষ্ঠী হিসাবেই যেন রয়ে গেছে তারা। মাইকেল নিজেও কখনো নিজকে এ দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর একজন হিসাবে ভাবে নাই। এদেশে আশৈশব বেড়ে ওঠা- শিক্ষাজীবন শেষ করার পরেও মাইকেল জানে, তার আগামী দিনের জীবনে এই দেশ নিয়ে তার স্থায়ী কোন ভাবনা নাই। জীবনের সব কিছু স্বপ্ন তার ফেলে আসা ভুখন্ডকে ঘিরে, সেখানকার মানুষ আর ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ রাখা তার পরিবারের ছেড়ে আসা অংশদের নিয়ে।
মাইকেল ল্যাঙ এর আর একটা বিশেষ উদ্যোগ ছিল — এলা ক্লাকটনকে সযত্নে তার এই অধরা স্বপ্নের মাঝে না আসতে দেয়া, তার জীবনের একটা অংশ হতে না দেয়া।
আ ভেরি ফিউ পিপল গেটস দিস চান্স, টু গেট ইমান্সিপেটেড, মে বি ওয়ান্স ইন ইয়োর লাইফ টাইম। মে বি ওয়ান্স ইন আ জেনারেশন। ওয়ান্স ইন আ সেঞ্চুরী। ..... এ্যাভেল দ্যাট চান্স, শুড বি ইয়োর টপ প্রায়োরিটি। নি্জকে প্রস্তুত করে রাখো- এ সুযোগ তুমি কোন কিছুর বিনিময়েও নষ্ট করতে পারো না।
আমি আমার নিজের দেশ চাই এবং চাই একটা রাষ্ট্র — যে আমার কথা বোঝে, আমার কথা বলে—যে আমাকে প্রতিনিধিত্ব করে। যে জোর করে আমাকে যুদ্ধে পাঠায় না, কোন অনৈতিকতার দায় আমার কাঁধে চাপায় না। আমি জানি- এটা শুধু একটা বিভৎস লড়াই এর মধ্য দিয়েই পাওয়া যায়। রক্তাক্ত একটা পথের ভেতর দিয়ে যেতে হয়... আমি সব কিছুর জন্য প্রস্তুত, এলা। কারন মনে রেখো — ইউ উইল গেট দিস চান্স, টু গেট ইমান্সিপেটেড, মে বি ওয়ান্স ইন ইয়োর লাইফ টাইম।
মে বি ওয়ান্স ইন আ জেনারেশন...
আমার ফেরার কোন পথ নাই।
১৯৬৭ সালে লাওস এর উদ্দেশ্যে একদিন উধাও হয়ে যাওয়ার আগে মাইকেল এভাবেই বিদায় নিয়েছিল এলার কাছ থেকে। শুরু হয় দুজনের মাঝে দীর্ঘ এক বিচ্ছেদের পালা। মাইকেলের দিক থেকে কি এটা ছিল চিরবিদায়? এলা ভাবে... দিনের পর দিন চলে যায়, মাইকেলের দিক থেকে না কোন চিঠি, না টেলিফোন। দুশ্চিন্তার প্রহরগুলো কাটিয়ে ঠিক দু’মাস পরের কথা, কানাডিয়ান রেডক্রশের একটা স্বেচ্ছাসেবক দলে নাম লেখায় এলা, তাদের সাথে উড়াল দেয় যুদ্ধ উপদ্রুত এক ফিল্ড হাসপাতালের দ্বায়ীত্ব নিয়ে।
জায়গাটা লাওস সীমান্তের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে- ভিয়েতকংদের মুক্তাঞ্চলের ভিতরে, তাদের ফিল্ড হাসপাতালে।
মাইকেলের খোঁজে ভিয়েতকং গেরিলাদের দিকে সে তার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।
পর্ব তিনঃ পঙ্গু জীবন নিয়ে আমার কোন পরিকল্পনা নাই... !!!
মর্টারের গোলায় সাংঘাতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কমান্ডার মতিনের ডান পায়ে হাঁটূর নিচের অংশটা এ্যম্পুট করে বাদ দেয়া হয়েছে। ডাঃ এলা জানেন- এম্পুটেশনের রোগীর এটা একটা স্বাভাবিক সমস্যা। যখন কোন প্রত্যাঙ্গকে কেটে বাদ দেয়া হয়, তারপরও রোগী বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে তার বাদ দেওয়া অংশটি অনুভব করতে থাকে — যেন সেটি এখনো শরীরের একটা অচ্ছেদ্য অংশ।
এম্পুট করার সময় নার্ভের শেষ প্রান্ত গুলোকে নিস্ক্রিয় ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়, কিন্ত মাঝে মাঝে সে গুলো আগের মতনই মস্তিস্কে ব্যাথার সংকেত পাঠাতে থাকে। আর প্রতিবর্ত ক্রিয়া হিসাবে সারা শরীর হয়ে উঠতে চায় সতর্ক, তৈরি করে তীব্র শারিরীক কষ্ট আর যন্ত্রনা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগী এই যন্ত্রনা অনুভব করতে থাকে — বিশেষ করে প্রাথমিক কয়েক মাস। ডাক্তারী ভাষায় এই সমস্যাকে বলে ফ্যান্টম লিম্ব সিনড্রোম। কমান্ডার মতিনের বেলায় যা ঘটেছে — এই সিনড্রোম তার শরীর কে শিথিল করে, আরামদায়ক অবস্থায় যেতে দিচ্ছে না।
প্রতিকার হিসাবে রোগীকে এন্টি ডিপ্রেসেন্ট দেওয়া হয়েছে- রাতে তার ঘুমও ভাল হচ্ছে, মানে ওষুধ কাজ করছে... ফলে এই সিনড্রোম বেশি সময় থাকার কথা নয়।
হেই মাটিন, মাই হিরো —রিলাক্স ব্রেভ ম্যান, রিলাক্স। ডাঃ এলা একটা চেয়ার টেনে বসে তার বেডের পাশে। কাম ডাউন মাই বয় — লুজেন আপ ইয়োর মাসল্...
মাথার মধ্যে কথাগুলো প্রথমদিকে এক ধরনের কৌতুকের উদ্রেক করতো মতিনের, আমি হচ্ছি ফ্রন্টের সামনের সারির যোদ্ধা, আমার পলকহীন চোখের দৃষ্টি সদা সামনে, খোলা চোখে আমি অনুসরন করি আমার শক্রুর যাবতীয় কার্য্যকলাপ, হাত আমার রাইফেলের ট্রিগারে...
আমি কিভাবে আমার শরীরকে শিথিল করতে পারি? মুহুর্তের জন্য অমনো্যোগী হতে পারি? ফ্রন্টলাইনে আমার সহযোদ্ধা কমরেডদের জীবনকে কিভাবে বিপন্ন করে তুলতে পারি? আঃ কেন আমাকে এখানে নিয়ে আসা হলো? উঁচু জমির আইলে কলমিলতার ঝাড়ে আমি ওঁত পেতে বসে আছি শত্রুর জন্য, ফ্রন্টের বাঙ্কার ছেড়ে কি কাজ আমার এখানে? কত কত কাজ এখনও বাকী রয়ে গেছে... শক্রুর শেষ শক্তিটুকু নিঃশেষ করে দেবার আগে ফ্রন্টিয়ার ছাড়তে পারে কেউ? যদি আহত হই, চলনে অক্ষম হই, তবুও এই লড়াইকে দেবার মতো অনেক কিছু আছে। প্লান করা যেতে পারে, করনীয় আছে অনেকই... আমার শরীরে গ্রেনেড কিংবা বিস্ফোরক বেঁধে দাও, বুকে হেটে পৌছে যাই শত্রু শিবিরে অথবা শত্রুর ট্যাঙ্কের নিচে, লড়াই শেষ না করে যোদ্ধারা ঘরে ফিরে না।
বুঝতে চেষ্টা করো-আহত পঙ্গু জীবন নিয়ে আমার কোন পরিকল্পনা নাই... !!!
পর্ব চারঃ বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ
মাইকেল ল্যাঙএর মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল, সায়গন থেকে ১০০ মাইল দূরে শহরতলীর এক পরিত্যাক্ত স্কুলে। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে ভিয়েতনাম যুদ্ধে, স্থল বাহিনীর ভূমিকা কমিয়ে এনে বেড়ে যায় বিমান হামলার তীব্রতা। ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউসে তখন প্রেসিডেন্ট জনসনের যুগ শেষ হয়ে শুরু হয়েছে প্রেসিডেন্ট নিক্সনের আমল। আগের রাতে মার্কিন বিমানবাহিনীর এক হামলায় বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়া এই স্কুলে রেডক্রসের টিমের সদস্য হিসাবে বুঝে পাওয়া মৃতদেহর মাঝ থেকে মাইকেল কে এলা সহজেই সনাক্ত করে। হেলিকপ্টারে উড়িয়ে নিয়ে আসা তার লাশ বুঝিয়ে দেয় তার পরিবারকে।
আর মাইকেলকে শেষ বিদায় জানানোর পরদিন থেকেই এলা সুযোগ খুঁজতে থাকে অজুহাতের... দূর অচেনা কোন দেশে, ভিন কোন মুলুকের হাসপাতালে চলে যাওয়ার।
আগরতলার এই হাসপাতালে কাজ করার প্রস্তাবটা হঠাত করেই আসে। ভারতের কোন শহরে এলার এই প্রথম আসা। প্রথম বছর দূটো নিস্তরঙ্গ কেটে যাওয়ার পর শুরু হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা লোক জনের ভীড় বাড়তে থাকে, বদলে যেতে থাকে তাদের মুখ চেনা পরিচিত চেহারাগুলো, সেই সাথে বদলে যেতে থাকে অসুস্থতার গতি প্রকৃতি... এক সময় এই হাসপাতাল পরিনত হয় যুদ্ধের ফিল্ড হাসপাতালে।
আহতদের ক্ষতের চিকিৎসার পাশাপাশি এই যুদ্ধের প্রকৃতি, তার ইতিহাস, যুদ্ধের পক্ষ বিপক্ষ নিয়ে এলা পড়াশোনা শুরু করে...
বাংলাদেশকে নিয়ে এলার আগ্রহ আর জানাশোনা বাড়তে থাকে।
শেষ পর্বঃ মে বি ওয়ান্স ইন ইয়োর লাইফ টাইম
পুব থেকে পশ্চিম উত্তর থেকে দক্ষিণ সমস্ত রণাঙ্গন জুড়ে লড়াই চলছে দেশ কে মুক্ত করতে... বাংলাদেশের মানুষ লড়ছে পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে... দুঃসাহসী অপেশাদার এই যোদ্ধারা লড়ছে এক পেশাদার নিয়মিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে...। তাদের প্রচলিত কোন যুদ্ধাস্ত্র নাই, নাই কোন প্রশিক্ষন, অথচ কোন কিছু নিয়ে তারা ভীত নয় — তারা মরণপন হামলা চালাচ্ছে শক্রুর বিরুদ্ধে, -রক্তে ভেসে যাচ্ছে তাদের শরীর, এ দেশের পবিত্র মাটি। তারা স্বাধীন একটা দেশ চায়, নিজস্ব একটা রাষ্ট্র চায় — যে দেশ তার নিজের ভাষা বুঝবে, যে রাষ্ট্র তার নিজের কথা বলবে, তাকে প্রতিনিধিত্ব করবে। নিজস্ব একটা পতাকা চায় সে — যার মাঝে নিজের আকাঙ্খার ছবি সে দেখতে পাবে।
লড়াই শুরু হয়েছে এবং জিততে পারলে এ সব পাওনা বুঝে নেওয়া সম্ভব। নিজের মুক্তির হিসাব বুঝে নেওয়ার এমন সুযোগ কেউ পায় সারা জীবনে একবার, হয়তো কোন প্রজন্মে একবার অথবা কোন শতাব্দীতে একবার, এ সু্যোগ তুমি কোন কিছুর বিনিময়েই হারাতে পারো না।
জ্ঞান ফেরার পর থেকে এলা ক্লাকটনের সাথে মতিনের এভাবেই কথা হয়।
লুক মাটিন... ইয়োর ফ্রন্ট ইজ নট দ্য অনলি ব্যাটল ফিল্ড..., মে বি, ইউ হ্যাভ টু ফাইট রেষ্ট অফ ইয়োর লাইফ!!! তোমার যুদ্ধ এখনো শেষ হয় নাই কমান্ডার মতিন, মুলতঃ যুদ্ধ কখনো শেষ হয় না!!!
তোমরা ৭ই মার্চ দেখনি? গোটা জাতির আকাঙ্খা সেদিন এসে কেন্দ্রীভুত হয়েছিল আকাশে উচিয়ে রাখা একটা আঙ্গুলের ডগায় — আমাদের তোমরা দাবায়ে রাখতে পারবা না, সমস্ত জাতির আওয়াজ প্রতিধ্বনিত হয়েছিল সেদিন একটাই বজ্রনির্ঘোষ কন্ঠস্বরে — এদেশ কে মুক্ত করে ছাড়ব, ইনশাল্লাহ...
তোমার নেতা তোমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তোমার স্বাধীনতা ছিনিয়ে সে আনবেই। এ দেশ শত্রু মুক্ত হবেই।
কিন্ত তোমার নিজের মুক্তির হিসাব বুঝে না পাওয়ার আগে তোমার যুদ্ধ কি শেষ হবে, কমান্ডার মতিন? তোমার নিজ রাষ্ট্র, নিজস্ব প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হওয়ার যাবতীয় হিসাব তুমি কি বুঝে নেবে না? এই সুযোগ বুঝে নেওয়ার জন্য হলেও তোমার বেঁচে থাকা উচিত।
আ ভেরি ফিউ পিপল গেটস দিস চান্স, টু গেট ইমান্সিপেটেড, মে বি ওয়ান্স ইন ইয়োর লাইফ টাইম। মে বি ওয়ান্স ইন আ জেনারেশন। ওয়ান্স ইন আ সেঞ্চুরী। ..... এ্যাভেল দ্যাট চান্স, শুড বি ইয়োর টপ প্রায়োরিটি।
নি্জকে প্রস্তুত করে রাখো- এ সুযোগ তুমি কোন কিছুর বিনিময়েও নষ্ট করতে পারো না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।