কষ্ট হলেও সত্য বলা বা স্বীকার করার সাহসই সবচেয়ে বড় সততা।
ইসলামের সৌন্দর্য বেলালকে আকৃষ্ট করল। তিনি ইসলাম কবুল করে মুসলমান হলেন। এ খবর জানাজানি হয়ে গেল সর্বত্র। এ খবর তার মনিব উমাইয়ারও কানে গেল।
এ সংবাদ শুনে বেলালের মনিব উমাইয়া ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল।
ক্রোধে, ক্ষোভে ফেটে পড়ল উমাইয়া।
অত বড় স্পর্ধা ক্রীতদাসের!
উমাইয়া মক্কার সেরা ধনী ব্যক্তি।
ধন-সম্পদ, মান-মর্যাদা কোনটাতেই তার তুলনা নেই। সে মক্কার সমাজে একজন শীর্ষস্থানীয় লোক।
তবে ইসলাম বিদ্বেষেও তার জুড়ি ছিল না। ইসলামের নামও সে শুনতে পারত না। তাই ক্রীতদাস বেলালের ইসলাম কবুলের খবরে উমাইয়ার মাথা বিগড়ে গেল।
বেলালকে কাছে পেয়ে তার উপর অমানবিক নির্যাতন শুরু করল। অত্যাচারের চোটে বেলাল জ্ঞান হারালেন।
সামান্য জ্ঞান ফিরে এলে তাকে ইসলাম ত্যাগের নির্দেশ দিল উমাইয়া। বলা হল, ‘এখনও বলি মুহাম্মদের ধর্ম ত্যাগ কর। নতুবা জানে মেরে ফেলব। ’
ক্রীতদাস বেলাল তো অন্ন-অবিচল।
তিনি উমাইয়ার কোন কথাতেই কর্ণপাত করলেন না।
তার বিশ্বাসে ফাটল ধরাতে ব্যর্থ হয়ে উমাইয়ার ক্রোধ আরো বেড়ে গেল। এভাবে বেলালের উপর ক্রমাগত নির্যাতন চালাতে লাগল উমাইয়া।
একদিন দুপুর বেলা।
আরবের মরুভূমির ভয়ংকর খরায় বালুকণাতে তখন আগুন জ্বলছে।
দাবানল নেমে আসছে আকাশ থেকে।
রৌদ্রের তাপ বাতাসে আগুনের ফুলকা ছড়াচ্ছে।
এমনি অবস্থায় উমাইয়া বেলালকে প্রচণ্ডভাবে মারধর করল।
তারপর তাকে উত্তপ্ত বালুর উপর সূর্যমুখী করে শুইয়ে দেয়া হল। ভারী পাথর এনে বুকের উপর চাপিয়ে দেয়া হল বেলালের। তার দম বেরিয়ে যাবার উপক্রম হল।
বেলাল নীরবে সহ্য করে গেলেন সব নিপীড়ন।
কোন অনুনয়-বিনয়ের শব্দ নেই তার মুখে। ব্যথা-বেদনার জন্য কোন আর্তনাদও তিনি করছেন না। তার চোখে কোন অশ্রুও লক্ষ্য করা গেল না।
সে এক অবাক কাণ্ড!
বেলালের মুখে শুধু একটিই শব্দ ‘আহাদ’ ‘আহাদ’, আল্লাহ এক-আল্লাহ এক।
বেলালের এ দৃঢ়তা ও অসীম ধৈর্য উমাইয়াকে অবাক করে দিল।
তারপরও উমাইয়ার মন কিছুতেই নরম হল না।
ঘটনাক্রমে সেদিন ঐ পথ ধরেই হেঁটে যাচ্ছিলেন হযরত আবু বকর (রা)।
‘আহাদ’ ‘আহাদ’ শব্দ শুনে তিনি থমকে দাঁড়ালেন।
চারিদিকে তাকালেন তিনি।
এক সময় তাঁর চোখ পড়ল মরুভূমির দিকে।
সেখানে শুয়ে রয়েছে একজন ক্রীতদাস। পাশেই ব্যঘ্র মূর্তিতে দাঁড়িয়ে আছে উমাইয়া।
আবু বকর (রা) ব্যাপারটা সহজেই বুঝে ফেললেন।
তিনি উমাইয়ার কাছে এগিয়ে এলেন।
হযরত আবু বকর (রা) বললেন,
উমাইয়া! আপনাকে আমি ধনী ও একজন বিবেচক লোক বলে জানতাম। কিন্তু আজ আমার পুরো ধারণাই পাল্টে গেল। দাসটিকে যদি আপনার পছন্দ না হয়, তাহলে তাকে তো বিক্রি করে দিলেই পারেন। অমন বর্বরোচিত আচরণ করা তো মানুষের কাজ নয়।
আবু বকরের কথাগুলো উমাইয়া মনে খুব লাগল।
উমাইয়া চটে গিয়ে আবু বকরকে বলল,
এত বাহাদুরী দেখাবেন না। বেলাল আমার দাস। তার সাথে ভাল কি খারাপ ব্যবহার করব সেটা তো আমার একার অধিকার। আপনার যদি অত দয়া হয় তাহলে তাকে কিনে নিলেই তো পারেন।
হযরত আবু বকর উমাইয়ার কথা শুনে মনে মনে খুবই খুশি হলেন।
কেননা, তিনি বেলালকে কিনতেই চাচ্ছিলেন। তিনি যা চাচ্ছিলেন উমাইয়া তা বলে ফেলেছে। উমাইয়া দাসকে বিক্রির প্রস্তাব দেয়ায় আবু বকর (রা) এ সুযোগকে সাথে সাথেই কাজে লাগালেন। তিনি চট জলদি করে ক্রীতদাসটিকে কেনার প্রস্তাব দিলেন।
উমাইয়া প্রস্তাবে রাজী হল।
ক্রীতদাস বেলালকে বালুকণার উপর হতে উঠিয়ে বুকে তুলে নিলেন আবু বকর (রা)। উমাইয়া বিষয়টি ভাল চোখে দেখল না। সে বিদ্রূপের হাসি হেসে বলল,
তুমি একটা বোকা আবু বকর। অনেক মূল্য দিয়ে এ অকর্মণ্য ভৃত্যকে তুমি কিনে নিলে। তোমার ক্ষতি দেখে আমি না হেসে পারলাম না।
আবু বকরও হেসে বললেন,
উমাইয়া! আমি ঠকেছি তুমি ভাবছো! অথচ প্রয়োজনে আমার সমস্ত সম্পত্তির বিনিময়ে হলেও আমি এ ক্রীতদাসকে কিনে নিতে কুণ্ঠিত হতাম না। অথচ তুমি খুব সস্তায় ভৃত্যটিকে বিক্রি করে দিলে।
হযরত আবু বকর (রা) যে ক্রীতদাসকে কিনে নিয়ে মুক্ত করে দিলেন তিনি হচ্ছেন সেই মর্যাদাবান বেলাল।
ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন হযরত বেলাল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।