জন্মোপার থেকে পৃথিবী হয়ে অনন্তে >>> ©www.fazleelahi.com
আগের পর্ব পড়ুন। মূলতঃ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগের মুশরিকরাও একজন স্রষ্টায় বিশ্বাস করত, যা এ যুগের মূর্তিপূজক হিন্দুরা এবং অন্যান্য মুশরিক সম্প্রদায় যেমন- ইয়াহূদী-খৃষ্টানরাও করে থাকে। ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে দেখুন: খৃষ্টান শাসক আবরাহা যখন মক্কাভিমুখে অভিযান পরিচালনা করলো আল্লাহর ঘর কা'বাকে সমূলে ধ্বংস করে তৎপরিবর্তে তার নির্মিত গীর্জা-যা সানা'আয় অবস্থিত-সেদিকে মানুষের প্রবাহকে ফিরিয়ে দেয়ার দূরভিসন্ধি নিয়ে, তখন মক্কার নেতা প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাদা আব্দুল মুত্তালিব কা'বার দরজার কড়া ধরে কেবল সেই মহান আল্লাহ্ তা'আলার নিকটই সাহায্য চেয়েছিলেন; কা'বার ভেতরকার তিন শত ষাটটি মূর্তির একটির কাছেও হাত পাতেননি।
অপরদিকে ইসলামের যখন চরম কঠিন সময়, যখন মুষ্ঠিমেয় মুসলমান-যারা মদীনায় হিজরত করেছিলেন কাফেরদের নির্যাতন-অত্যাচারে অসহ্য হয়ে-তাদেরকে সমূলে নিঃশেষ করে দিতে কাফের সর্দার আবু জাহেল, উৎবা, শাইবার নেতৃত্বে বিশাল বাহিনী বদরের দিকে রওয়ানা হচ্ছিল, তখন যাত্রার প্রাক্কালে আবু জাহেল কা'বার দরজার কড়া ধরে দো'আ করেছিল যে, 'হে আল্লাহ্! যে দল সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত তুমি সে দলকে আজ বিজয় দান কর'!
এ থেকে প্রমাণিত যে, তৎকালীন মুশরিকরাও এক আল্লাহকে স্বীকার করত, তাঁর নিকট প্রার্থনা করত এবং আজকের মুশরিকরাও করে থাকে। যেমন- হিন্দুরা সেই একজনকে বিশ্বাস করে, ইয়াহূদীরা সেই একজনের ইবাদাত করে, খৃষ্টানরা সেই সুমহানের নিকট প্রার্থনা করে।
কিন্তু তারা তাদের সবকিছু নষ্ট করে দেয় যখন তারা সেই দয়াময় প্রতিপালক আল্লাহর সাথে আরো অসংখ্য দেবদেবীর অংশ স্থাপন করে, যখন ইয়াহূদীরা ওজাইরকে আল্লাহর পুত্র বলে বিশ্বাস করে এবং নিজেদেরকে আল্লাহর নাতি-পুতি মনে করে, যখন খৃষ্টানরা ঈসা ইবনে মারইয়ামকে আল্লাহর পুত্র বলে জ্ঞান করে কিংবা ত্রিত্ববাদে সাজায় নিজেদের আকীদা-বিশ্বাসকে।
এ প্রশংসে আল্লাহ্ সোবহানাহু ওয়াতা'আলা তাঁর বাণীতে বিভিন্নভাবে বলেন:
وَجَاوَزْنَا بِبَنِي إِسْرَائِيلَ الْبَحْرَ فَأَتَوْا عَلَى قَوْمٍ يَعْكُفُونَ عَلَى أَصْنَامٍ لَهُمْ قَالُوا يَا مُوسَى اجْعَلْ لَنَا إِلَهًا كَمَا لَهُمْ آَلِهَةٌ قَالَ إِنَّكُمْ قَوْمٌ تَجْهَلُونَ .
((আর আমি বনী ইস্রাঈলকে সাগর পার করিয়ে দেই; তারপর তারা মূর্তিপূজায় রত এক জাতির কাছে উপস্থিত হয়। তারা বলল, ‘হে মূসা! তাদের দেবতার মত আমাদের জন্যও এক দেবতা গড়ে দাও। তিনি বললেন, ‘তোমরা তো এক জাহিল সম্প্রদায়'। )) [সূরা আল-আ'রাফ: 138]
আল্লাহ্ তা'আলা অন্যত্র বলেন:
وَقَالَتِ الْيَهُودُ عُزَيْرٌ ابْنُ اللَّهِ وَقَالَتِ النَّصَارَى الْمَسِيحُ ابْنُ اللَّهِ ذَلِكَ قَوْلُهُمْ بِأَفْوَاهِهِمْ يُضَاهِئُونَ قَوْلَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ قَبْلُ...
((ইয়াহূদীরা বলে, ‘উযায়র আল্লাহ্র পুত্র’, এবং খৃস্টানরা বলে, ‘মসীহ্ আল্লাহ্র পুত্র।
’ ওটা তাদের মুখের কথা। আগে যারা কুফরী করেছিল ওরা তাদের মত কথা বলে। )) [সূরা আত্-তাওবা: 30]
অথচ পূর্বে চয়িত আয়াতগুলোতে পরিস্কার হলো যে, তখনকার এবং এখনকার মুশরিকরা কেউই একজন স্রষ্টা, রিযিকদাতা, জীবনদাতা, মৃত্যুদাতাকে অস্বীকার করে না; কেবলমাত্র অস্বীকার করে তাঁর একত্বকে, অমুখাপেক্ষিতাকে, তাঁর অদ্বিতীয় হওয়াকে। তারা তাঁর নৈকট্য হাসিলের জন্য যা তাঁর এককভাবে পাওনা সেসব ইবাদাতগুলোকে মূর্তির জন্য নির্ধারণ করে, মৃত নবীদের জন্য নির্ধারণ করে, মৃত পীর-আওলিয়াদের জন্য নির্ধারণ করে, জগতের বিবিধ শক্তিসম্পন্ন সৃষ্টির জন্য নির্ধারণ করে; আর এভাবেই তারা তাদের স্রষ্টা ও প্রতিপালককে চিনতে গিয়ে ভুল করে ফেলে, যার ফলাফল দাঁড়ায়- 'ভুল করে চেনা' অথবা 'অচেনাই থেকে যান'। তাহলে চিন্তা করুন, যে তার স্রষ্টা, প্রতিপালক ও মা'বূদকেই চিনতে পারল না সঠিকভাবে; সে কি করে তাঁর উপর পূর্ণ ঈমানদার হবে? আর তার স্রষ্টাই বা কি করে তাকে তাঁর বান্দা হিসেবে গ্রহণ করবেন?
সুতরাং প্রতিটি মানুষের জন্য একান্তভাবে কর্তব্য যে, সে তার স্রষ্টা, তার প্রতিপালক, তার মা'বূদ; যাঁর মূল নাম "আল্লাহ্", তাঁকে তাঁর "প্রভূত্বে", তাঁর "ইবাদাতে" ও তাঁর "নাম এবং গুণাবলীতে" পরিপূর্ণ রূপে চিনতে ও জানতে হবে।
অন্যথা, কেবলমাত্র 'আল্লাহ্ একজন আছেন যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন'-এটুকু বিশ্বাস আপনাকে কখনোই না সত্যিকারের মুসলমান বানাবে আর না অনন্ত আখেরাতে আযাব থেকে মুক্তির কারণ হবে!
07.01.2008, মদীনা মুনাওয়ারা, সৌদি আরব।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।