এক ম্যাচে দুটি সেঞ্চুরি। এক ইনিংসে তিন শর ওপরে রান। আরেক ম্যাচে এক বোলারের ৬ উইকেট। বৃষ্টিতে পণ্ড আরেকটি ম্যাচ—বিলম্বিত ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগ যেন প্রথম দিনেই দেখে ফেলল সবকিছু!
বৃষ্টিতে বিকেএসপিতে হতে পারেনি বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে কলাবাগান ক্রিকেট একাডেমির ম্যাচ। মাঠ ভালো থাকলে আজ অতিরিক্ত দিনে হবে এটি।
তবে বগুড়া-রাজশাহীতে বৃষ্টি কোনো ঝামেলা করতে পারেনি। রাজশাহীর শহীদ কামরুজ্জামান স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যান বান্দারা রাজাপাকশের ১০৭ রানের সৌজন্যে প্রাইম ব্যাংক ৩৩৪ রানের বড় স্কোর করলেও নাফিস ইকবালের ১৫০ অস্বস্তিতে ফেলতে পেরেছে তাদের। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ব্রাদার্সকে ৭৯ রানে হারিয়েই মাঠ ছেড়েছে প্রাইম ব্যাংক। বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে আগুন ঝরেছে পেসার রুবেল হোসেনের বলে। ৭.৪-৩-১৮-৬—রুবেলের বিধ্বংসী এই বোলিংয়ের সামনে ১৩৩ রানে গুঁড়িয়ে যাওয়া খেলাঘরের বিপক্ষে গাজী ট্যাংক ম্যাচ জিতেছে ৮ উইকেটে।
লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে আগের সর্বোচ্চ অপরাজিত ১৩৭ রানকে প্রিমিয়ার লিগের প্রথম ম্যাচেই ছাড়িয়ে গেলেন নাফিস। প্রাইম ব্যাংকের রানের পাহাড় টপকাতে গিয়ে ৩৯ রানের মধ্যে ব্রাদার্সের দুই ওপেনার তামিম-ইমতিয়াজ ড্রেসিংরুমে। নাফিসের লড়াইটা অবশ্য ইমতিয়াজ ফিরে যাওয়ার পর থেকেই, অনুজ তামিমের সঙ্গে ২৭ রানের জুটিতে। তবে ছোট ভাই তামিমের মতো দলের অন্যরাও ব্যর্থ তাঁর যোগ্য সঙ্গী হতে। একের পর এক উইকেট পড়তে থাকায় নাফিসের শুরুটা ছিল একটু ধীর, প্রথম ৫০ রান করতে খেলেছেন ৭১ বল।
কিন্তু পরে ব্যাট এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠল যে, দ্বিতীয় ৫০ এল মাত্র ৩০ বলে, ৩৭ বলে তৃতীয় ৫০! পায়ের মাংসপেশিতে টান পড়ায় ইনিংসের ৪৬তম ওভারে নাফিসের অবসর নেওয়ার মাধ্যমে শেষ হয় ব্রাদার্সের ইনিংস। ততক্ষণে ২১টি চার ও বাঁহাতি স্পিনার রেজাউলকে মারা একটি ছক্কায় তাঁর নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ১৪০ বলে ১৫০ রান।
এর আগে ইনিংসের চতুর্থ বলে ওপেনার সৈকতকে হারানো প্রাইম ব্যাংক মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল আরেক ওপেনার জিয়া ও বান্দারার ১৬৫ রানের জুটিতে। সম্প্রতি ‘এ’ দলের হয়ে ইংল্যান্ড সফরে নটিংহামশায়ারের বিপক্ষে মাত্র ৬৯ বলে ১০৪ রানের ইনিংস খেলে এসেছেন। কাল সেঞ্চুরি না পেলেও সাত ছক্কা আর ছয় বাউন্ডারিতে ৬৯ বলে ৮৯ রান করেছেন।
দলকে ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যাওয়ার বাকি কাজটা ১০৭ রানের ইনিংস দিয়ে করেছেন রাজাপাকশে। সঙ্গে কখনো পেয়েছেন মাহমুদুল হাসানকে (৫৪), কখনো বা স্বদেশি জয়সা (২৯) ও তাইবুরকে (২৫)।
রাজশাহীর আলোটা নাফিস, জিয়া, রাজাপাকশেদের ওপর ভাগ হয়ে পড়লেও বগুড়ায় সব আলোই কেড়ে নিলেন গাজী ট্যাংকের রুবেল। ইনিংসের প্রথম বলে খেলাঘরের ওপেনার রাকিব গোমস্তাকে এলবিডব্লু করে শুরু। ৫ ওভারের প্রথম স্পেলে মাত্র ৮ রানে ৪ উইকেট! ইনিংসের ৩৬তম ওভারে আবার বল হাতে নিয়ে খেলাঘরের ইনিংস শেষও করলেন তিনি।
নিজের অষ্টম ওভারে নিলেন ২ উইকেট। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ২২ রানে ৪ উইকেট নেওয়ার আগের সেরা সাফল্যটা টপকে গিয়ে দারুণ খুশি রুবেল, ‘প্রিমিয়ার লিগের শুরুটা ভালো হওয়ায় আমি এখন আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী। পরের ম্যাচগুলোতেও এভাবেই বল করে যেতে চাই। ’
সকালের দিকে উইকেটেরও কিছু সাহায্য পেয়েছেন রুবেল। খেলাঘরের স্কোরবোর্ডে ১৭ রান উঠতেই তাই চার উইকেট হাওয়া।
শুভাগত হোমকে (৫৩) সঙ্গে নিয়ে পঞ্চম উইকেটে অধিনায়ক ফয়সাল হোসেনের (৩১) ৭৬ রানের জুটিতেও কাটিয়ে ওঠা যায়নি সেই ধাক্কা। জবাবে মাত্র ২৪.২ ওভারেই ম্যাচ জিতে গেছে গতবারের রানার্সআপ গাজী ট্যাংক। জাতীয় দলের ওপেনার ইমরুল কায়েস ৩০ রানের ইনিংস দিয়ে শুরু করেছেন লিগ। তবে আশার ঝলক দেখা গেল আফতাব আহমেদের ব্যাটে। শরীরে বাড়তি মেদ জমেছে।
তাতে ফিল্ডিংয়ে আগের চটপটে ভাবটা কমে গেলেও তিন ছক্কা আর সাত বাউন্ডারিতে ৬৪ বলে ৫৯ রানের ইনিংসটা যেন আগের আফতাবেরই এক টুকরা ছবি দেখাল সবাইকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
খেলাঘর: ৩৯.৪ ওভারে ১৩৩ (রাকিব ০, নিয়াজ ৯, ফজলে রাব্বী ১, নান্টু ৪, শুভাগত ৫৩, ফয়সাল ৩১, নিজামউদ্দিন ০, আরিফুল ২, আরাফাত সালাউদ্দিন ১০*, মনোয়ার ১৪, রাজীবুল ০; রুবেল ৬/১৮, আরাফাত সানি ১/১০, নাঈম জুনিয়র ১/৩৪, মাহমুদউল্লাহ ০/২৮, স্টাইরিস ০/১৬, নূর হোসেন ২/৪২)। গাজী ট্যাংক: ২৪.২ ওভারে ১৩৭ (ইমরুল ৩০, রকিবুল ৭, আফতাব ৫৯*, স্টাইরিস ৩২*; শুভাগত ০/১৯, আরিফুল ১/২২, মনোয়ার ০/১৩, আরাফাত সালাউদ্দিন ১/৪৩, রাজীবুল ০/১৩, নিজামউদ্দিন ০/৬, ফয়সাল ০/১৮)। ফল: গাজী ট্যাংক ৮ উইকেটে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: রুবেল হোসেন।
প্রাইম ব্যাংক: ৫০ ওভারে ৩৩৪/৯ (সৈকত ০, জিয়া ৮৯, বান্দারা ১০৭, মাহমুদুল ৫৪, জয়সা ২৯, তাইবুর ২৫*, রেজাউল ১১, ফরিদউদ্দিন ২, তাপস ২, আরিফুল ২, এনামুল জুনিয়র ০*; তারেক ১/৬০, ইফতেখার ২/৫৩, জায়েদ ০/২৩, অলক ০/৫২, সোহরাওয়ার্দী ২/৫৩, সানজামুল ৩/৫২, ইমতিয়াজ ০/৩৭)। ব্রাদার্স: ৪৫.২ ওভারে ২৫৫/৯ (তামিম ৩১, ইমতিয়াজ ০, নাফিস ১৫০ আহত অবসর, মেহরাব জুনিয়র ২৩, অলক ১৩, সোহরাওয়ার্দী ২, জসিম ৬, সানজামুল ১০, ইফতেখার ২, তারেক ২, জায়েদ ৪*; ফরিদউদ্দিন ২/৫৬, তাপস ২/৩৮, এনামুল জুনিয়র ৩/৩৬, আরিফুল ১/১৮, জিয়া ০/২৫, মাহমুদুল ০/২২, তাইবুর ১/৪৩, রেজাউল ০/১৬)। ফল: প্রাইম ব্যাংক ৭৯ রানে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: নাফিস ইকবাল। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।