আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চাইলের রাজনীতি আর কনসালট্যান্ট সরকারের ইতিকথা...

কখনো চাই নাই দূরে থাকি...তবু দূরগুলো বারে বারে আসে...

এরশাদ সরকারের শেষ সময়টায় আইসা আমরা যারা আন্দোলনের সক্রিয় শরীক ছিলাম তাগো কাছে পরিচিত হইলো একটা উদ্ভট রাজনৈতিক তত্ত্ব...রাইস পলিটিক্স বইলা ক্ষমতাকেন্দ্রীক এক উদ্ভট মতাদর্শের অবতারনা ঘটলো মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আর সামর্থ্যের বিবেচনায়। এরশাদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারের সাম্য অবস্থান নস্যাৎ কইরা দিছিলেন কেরম কইরা সেইটা আন্দাজ করা গেছিলো তার ঐ শেষ সময়টাতে...অর্থনীতি টলোমলো ছিলো...কিন্তু তবুও রাজনীতি যে তখনো মানুষের উপরে উঠে নাই সেই বিবেচনার ঐতিহাসিক তথ্য জাইনা এখনো ভালো লাগে...ক্ষমতায় থাইকা তার অপব্যবহারজনিত চর্চা...সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রটারে আধাবিকল কইরা দেওনের পরিকল্পনা...সামাজিক মানসিকতায় মননের ব্যবহার সীমিত কইরা দেওনের নীলনকশা, সব কিছু কেরম খানিকটা হালকা হইয়া আসে চাইলের দাম নিয়ন্ত্রনের ঐ চেষ্টার কাছে। এরশাদ আমার কাছে বা আমাগো কাছে ঘৃণিত মানুষ হইলেও তার রাজনীতিও ছিলো মানুষের মানবিকতারে উপলক্ষ্য কইরাই...আর তাই নিরাজনীতিকিকরণ প্রক্রিয়ার সম্ভাবনা দেখলে, তার বিরোধীতায় আজো নাইমা পরি। রাজনৈতিক দলগুলির বিরুদ্ধে যখন প্রচারনায় নামছিলো ঢাকা শহরের একদল মধ্যবিত্ত, তখনও বিষয়টারে নিয়া খানিকটা আলো ফেলনের চেষ্টা করছিলাম। রাজনীতির থেইকা দূরে থাকা মানুষেরা কেমনে কি কইরা ফেলবো...দেশের তাবৎ সমস্যা দূরীকরণের দিকে যাইবো তা নিয়া কেবল সন্দিহান ছিলাম বলা হইলে ভুল হয়, নিশ্চিত ছিলাম।

কিন্তু কিছু মানুষের কাছে অন্ততঃ আস্থার ক্ষেত্র তৈরী করতে সক্ষম হইছিলো বিদ্যমান ক্ষমতাকেন্দ্রীক চর্চার লেইগা...দুর্নীতিপ্রবণ রাজনৈতিক নেতাগো জেলখানায় ঢুকাইয়া বাহবা কুড়ানের লগে লগে নিজেগো জায়েজ করণের ভিত্তিও প্রায় তৈরী কইরা ফেলতেছিলেন...কিন্তু এইরম পরিকল্পিত পন্থায় উইড়া আইসা জুইড়া বইসা যাওয়া সরকার আসলে যে জনগণ মানে মানুষের মৌলিক উপলব্ধির নাগালে থাকে না সেইটা দিনে দিনে স্পষ্ট হইতে থাকে তাগো সিদ্ধান্তমালায়। আর তাই চাইলের দাম বাড়তে থাকে.... ওএমএস'এর চাইলের বিতরন ব্যবস্থা জনপ্রিয় করছিলো এরশাদ সরকার, তারপর থেইকা সকল সরকারই এই সিস্টেমটারে মেইনটেইন কইরা গেছে...১৯৯৬ থেইকা ২০০০ পর্যন্ত ওএমএস'এ এককেজি চাইলের দাম ছিলো ৮টাকা। বাজারকেন্দ্রীক নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা বিন্দুমাত্র না থাকলেও সরকার এই ক্ষেত্রে যেমনে হোক তেমনে দরের সাথে মানুষের আয়রে সঙ্গতিপূর্ণ করনের চেষ্টা করছে। বাজারের দামের গরমে টিকতে না পারা ক্রেতারা তাই লাইন লাগাইছে ওএমএস'এর গাড়ির সামনে। সেই চাইলও মহার্ঘ্য হইতে শুরু করলো ৪ দলীয় জোট সরকারের টাইমে প্রথম বছরে ১২ তারপর শেষ বছরে ১৫ টাকায় আইসা ঠেকলো যখন...তখনও মানুষ প্রতিবাদী হইছে, যার ফলশ্রুতিতেই ৪দলীয় জোটের সরকার যখন গ্যাড়াকলে পরলো আওয়ামি বা ১৪ দলীয় প্রতিরোধের মুখে, তখন তারা যার যার অবস্থান থেইকা সমর্থন দিয়া গেছে।

কানসাটে-ফুলবাড়িতে অধিকার আদায়ের আন্দোলনও সরকার বিরোধী আন্দোলনে রূপান্তরিত হইছে গতো সরকারের সময়ে... কিন্তু নিরাজনৈতিক শহুইরা মধ্যবিত্ত আর হতাশাগ্রস্থ সাধারন মানুষ দুর্নীতিগ্রস্থ রাজনৈতিক সরকারগুলির ভূমিকা নিয়া সন্দেহ প্রকাশ কইরা এই নীল নকশার বিরাজনৈতিক(!?) সরকাররে সমর্থন দিতেও কার্পণ্য করে নাই। বাধ সাধলো আবারো সেই চাইলের দাম...ওএমএস'এর চাইলের দাম গত সেপ্টেম্বরে ছিলো ২৬ টাকা। বাজার থেইকা চাইল কিনা খাইতে গেলে গরীব দিনমজুরের চাইল সিদ্ধ করনের লাকড়ি কিননের সামর্থ্যটাও থাকবো না...এইরম অবস্থায় আমাগো মাননীয়(?) খাদ্য উপদেষ্টা কইলেন তার সত্যবচন...চাইলের দাম নাকি কমার কোনরম সম্ভাবনা নাই। আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য আর বিভিন্ন অজুহাতে তারা নিজেগো জায়েজ করনের খেলা খেলতেছেন শুরু থেইকাই...হয়তো এইটা খেলা না, বাস্তবিকই এই সমস্যা প্রকট হয় একটা আমলাতান্ত্রিক-কনসালট্যান্ট সরকারের কাছে। রাজনৈতিক মূল্যবোধের সরকার এই সিদ্ধান্ত নিতে আন্তর্জাতিক বাজারমূল্যের কথা ভাবনের আগে মানুষের কথা ভাবতো।

এই মানুষের প্রয়োজনেই যে একটা রাষ্ট্র তার কাঠামো টিকাইয়া রাখে, রাজনৈতিক নেতারা যে মানুষের সেবা করতে তাগো ম্যান্ডেটে ক্ষমতা অধিগ্রহণ করে সেইটা পরিকল্পণার প্রধান এজেন্ডা হইতো। কিন্তু কনসালট্যান্টগো কাছে প্রধান বিবেচনা অন্য...আন্তর্জাতিক প্রেসক্রিপশন তাগো নীতিমালার বা পলিসি মেকিং'এর একমাত্র উপজীব্য...আর যেই কারনে বিকল্প ভাবনার কোন অবকাশ নাই। রাজনৈতিক সরকাররা হয়তো ভূয়া কৃচ্ছ্রতা সাধনের ধুয়া তুলে...কিন্তু কনসালট্যান্টরা তাগো পেশাদারিত্বে আরাম আয়েশটারে বড় করবো এইটাই স্বাভাবিক...স্বাভাবিক, মানুষ মরবো কিন্তু প্রশাসন অটল থাকবো বিদেশী আলোকে আর আমার দেশের পাটাতন সভ্যতার মানদন্ড ধারণ করবো পশ্চিমা সংজ্ঞার্থে...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।