তেলাপোকা
সুমনা ইয়াসমিন
এই গহণ শীতল ঝিম সন্ধ্যা ক্রমাগত নেশার্ত আমার গলা চেপে ধরছে। আমরা পরস্পরের গলা চেপে ধরছি আরো বিষ উঠে আসার অপেক্ষায়। কোনও এক অজানা পশমী ওমের আশায় নিয়তির মতো দুর্বার ছুটে এসেছিলাম আমরা এবং শেষমেষ দু-টুকরো বরফের ওম...কানায় কানায় বিষের নেশায় একাকার। এখন ও শুধু একজোড়া কোচকানো ভুরুময় ঝরে পড়া বিষের নেশা। আরো আরো বিষের অপেক্ষা করে করে সরাদিন সূর্যের মুখ দেখি না।
সন্ধ্যায় হিমের ঢাকনা অল্প খুলে যায়। টেনে হিঁচড়ে বেরোয় ল্যাংড়া সময়। অল্প দূরের অতীত তার ভাঙ্গা পায়ে বাঁধা। সেগুলো নতুন সময়ে স্বপ্ন নাম ছিলো। এখন পুরাতন-মলিন, অব্যবহারে।
সময় পাগুলোকে বেধে রাখার কাজ করিয়ে নিতে গেলেই তারা যুদ্ধের ভঙ্গিমা পায়। পায়ে পায়ে মৃত্যু ঘোরে, শীতল মাদল মৃত্যু।
একসময় জীবন নাম ছিল সেইসব ছ্যাচড়ানো কল্পনাগুলোর। এখন মৃত্যুরা শীতের বেদীতে মহান থেকে মহানতর হয়ে ওঠে। আরো আরো ঘনিষ্ট ওম দিয়ে জড়িয়ে রাখে দু'দুটো সন্ধ্যা।
নিঃশব্দ রাতগুলো পিপড়ের সারি হয়ে গড়িয়ে যায়। যেতে যেতে সকালকে জাগিয়ে দিয়ে যায়। আর সকালগুলো রাতের ক্লান্তির বিরক্তিতে ভুরুর ভাজ আরো দিঘল করে কুঁচকিয়ে এক পলক বা আধা পলক তাকায় পালিয়ে যাওয়া ভোরের দিকে। ভোরগুলো সেই অবহেলার সুগন্ধি গায় মেখে পথে নামে।
পথে যেতেই পথটা নদী।
বরফের নীচে শুরু হয় চোরা স্রোতের খেলা। দিবসের প্রহরে প্রহরে বাড়ে সূর্যের দুরত্ব; তাকে ছায়ার দৈর্ঘ্যে মাপি। দুরত্বের এইসব টুকরো টুকরো দৈর্ঘ্যের ফলাফল জোড়া দিয়ে দিয়ে দুপুর বিকেল সব একাকার। খুলির ভেতর মাতাল ওমের আদিখ্যেতা পলকে পলকে থমকে থাকে বাঁকে। দমে দমে নিশ্বাস থেকে প্রশ্বাসের ফাকে ফাকে ভরে থাকে কী ভিষণ আকুল নেশা-সন্ধ্যার নেশা, বন্ধ্যার নেশা,মৃত্যুর নেশা,যুদ্ধের নেশা।
প্রতি সন্ধ্যা, সন্ধ্যা থেকে রাত, আরো রাত, রাত থেকে ভোর আবার সেই বিশুদ্ধ বিরক্তি মাখা চাউনি শরীরে মেখে বেড়িয়ে যাওয়া ভোর।
প্রতিটি মুহূর্তে জেগে থাকা, প্রতিটি মুহূর্তে ঘুমে আমি এমন যে' একজন গা ঘিনঘিনে বিরক্তিকর মানুষ তা জেনে যাওয়া প্রতি নিশ্বাসে। যেনো বা আমার উপস্থিতিই বিষ বিষ বিষ ক্রমাগত আরো বিষময়। তবু সন্ধ্যায় নিয়তির মতো ফিরে আসা এই বিষের নেশায়; ঘেন্নায় ক্ষোভে। আর যদি ছুঁয়ে দেই কখনো ভুলো মন হয়ে, লাভার জোয়ারে ভেসে যায় পশমী ওম আমার।
তেলাপোকা পাশে নিয়ে ঘুমানোর মতো তেলতেলে একটা ঘেন্না লেগে থাকে তার মুখে। আর আমি অসহায় বিপন্ন হয়ে খুঁজতে থাকি আমার তেলাপোকা হয়ে ওঠার ইতিহাস। প্রতিবিম্বে চেয়ে থাকি সন্দিহান। এত কুৎসিত কুরুপা মৃত্যু আমি! সাদা শন চুলে আমার এত উৎকট ন্যাংটো রিয়ালিটি!!
(সুমনা ইয়াসমিন ১৯৮১ সালে রাজবাড়ী জেলায় জন্মগ্রহন করেন। পেশায় ফার্মাসিস্ট।
তিনি কালনেত্র, মাঞ্জাসুতা, আরো সহ কিছু ছোট কাগজে লেখালেখি করেছেন। এর পাশাপাশি ধামরাই কাসা পিতল শিল্প নিয়ে একটি গবেষনা কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। আজ তার জন্মদিন। )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।