জন্মোপার থেকে পৃথিবী হয়ে অনন্তে >>> ©www.fazleelahi.com
আগের পর্ব পড়ুন।
অতএব, আল্লাহ্ সোবহানাহু ওয়াতা'আলার প্রভুত্বের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী মুশরিকরা প্রায় সর্বযুগেই একই প্রকার জবাব দিয়েছে তাঁর প্রভুত্বের প্রশ্নে। কেবলমাত্র ব্যতিক্রম করেছে তথা নিজেদের সর্বস্ব বিনাশ করেছে তাঁর ইবাদাতের একত্ববাদে এসে। যেমনটি আল্লাহ্ তা'আলা কুরআনে বলেন:
وَلَئِن سَأَلْتَهُم مَّنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ لَيَقُولُنَّ اللَّهُ فَأَنَّى يُؤْفَكُونَ .
((যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, ‘কে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং চন্দ্র-সূর্যকে নিয়ন্ত্রিত করেছেন?’ তারা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ্’। তাহলে তারা কোথায় ফিরে যাচ্ছে!)) [সূরা আল-আনকাবূত: ৬১]
وَلَئِن سَأَلْتَهُم مَّنْ خَلَقَهُمْ لَيَقُولُنَّ اللَّهُ فَأَنَّى يُؤْفَكُونَ.
((যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, কে তাদেরকে সৃষ্টি করেছে, তারা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ্।
’ তবুও তারা কোথায় ফিরে যাচ্ছে?)) [সূরা যুখরুফ: ৮৭]
অর্থাৎ, ইবাদাতের ক্ষেত্রে তাহলে তারা কার কাছে ছুটে যাচ্ছে? কোন্ মূর্তির পায়ে মাথা ঠুকছে? কোন্ পীরের পায়ে সিজদা করছে? কোন্ জীবিত-মৃত নেতার পূজো করছে?
মূলতঃ স্রষ্টার বিশাল ক্ষমতা ও তাঁর সুমহান দয়াকে অনুধাবন করতে হয়, কেননা, এই অনুধাবন শক্তি যার মধ্যে যত বেশী প্রবল, সে তত বেশী দেখতে পায় আল্লাহর সৃষ্টিরাজিতে তাঁর অপার কুদরত, তাঁর সুমহান মহিমা, তাঁর বিশালত্ব-বড়ত্ব; আর স্বাভাবিক ভাবেই নুয়ে আসে তার উন্নত শির সেই দয়াময় মা'বূদের প্রতি। এভাবেই অনুভূতিসম্পন্নরা তাদের প্রতিপালক তথা রবকে চেনার পাশাপাশি অর্থাৎ, আল্লাহর রুবুবিয়্যাতের স্বীকৃতির পাশাপাশি তাঁর উলুহিয়্যাতের ক্ষেত্রেও একমাত্র তাঁকেই নিরংকুশ মেনে নেয়া ও একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করে ইহ ও পরজীবন ধন্য করে তোলো। সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেই মহান আল্লাহ্ তা'আলা বলেন:
وَلَئِن سَأَلْتَهُم مَّن نَّزَّلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَحْيَا بِهِ الْأَرْضَ مِن بَعْدِ مَوْتِهَا لَيَقُولُنَّ اللَّهُ قُلِ الْحَمْدُ لِلَّهِ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ.
৬৩। যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আকাশ হতে বারি বর্ষণ করে কে ভূমিকে সজ্ঞীবিত করেন তার মৃত্যুর পর?’ তারা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ্’। বলুন, ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্রই’।
কিন্তু তাদের অধিকাংশই এটা অনুধাবন করে না। [সূরা আল-আনকাবূত: ৬৩]
শুধুমাত্র রুবুবিয়্যাতে স্বীকৃতি দিয়ে উলুহিয়্যাতের অস্বীকৃতি কিংবা তাতে আল্লাহর শরীক স্থাপনকারীদের এহেন মোহগ্রস্থতা সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন:
قُل لِّمَنِ الْأَرْضُ وَمَن فِيهَا إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ * سَيَقُولُونَ لِلَّهِ قُلْ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ * قُلْ مَن رَّبُّ السَّمَاوَاتِ السَّبْعِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ * سَيَقُولُونَ لِلَّهِ قُلْ أَفَلَا تَتَّقُونَ * قُلْ مَن بِيَدِهِ مَلَكُوتُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ يُجِيرُ وَلَا يُجَارُ عَلَيْهِ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ * سَيَقُولُونَ لِلَّهِ قُلْ فَأَنَّى تُسْحَرُونَ .
((জিজ্ঞেস করুন, ‘এ পৃথিবী এবং এতে যারা আছে তারা কার, যদি তোমরা জান?’ * তারা বলবে, ‘আল্লাহ্র। ’ বলুন, ‘তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না?’ * জিজ্ঞেস করুন, ‘কে সাত আকাশ এবং মহা-‘আরশের অধিপতি?’ * তারা বলবে, ‘আল্লাহ্। ’ বলুন , ‘তবুও কি তোমরা সাবধান হবে না?’ * জিজ্ঞেস করুন, ‘সকল কিছুর কর্তৃত্ব কার হাতে, যিনি আশ্রয় দান করেন এবং যাঁর উপর আশ্রয়দাতা নেই, যদি তোমরা জান?’ * তারা বলবে, ‘আল্লাহ্র। ’ বলুন, ‘তবুও তোমরা কেমন করে মোহগ্রস্ত হচ্ছ?’ [সূরা আল-মু'মিনূন: ৮৪-৮৯]
দূর্ভাগ্যের বিষয় যে, বর্তমান মুসলিম সমাজের অন্তর্ভুক্ত এমন বহু নাম স্বর্বস্ব মুসলমান রয়েছে, যাদের কার্যক্রম এ পর্যায়ের মুশরিকদের মতই।
যারা আল্লাহকে প্রতিপালক হিসেবে মেনে নিয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাঁকে পেতে ইসলামপূর্ব আরবের মুশরিকদের মতই অসংখ্য মাধ্যম সন্ধান করে এবং এমন সব প্রতারকের প্রতারণার শিকার হয়, যারা তাদেরকে বলে যে, 'আল্লাহর সাথে তাদের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে', 'আখেরাতে তাদেরকে বিনা হিসাবে জান্নাত পাইয়ে দেবে' ইত্যাদি মহামিথ্যাসর্বস্ব বুলি। আর এসব কথায় কুরআনের ভাষায় সেই "অনুধাবন শক্তিহীন" অথবা "মোহগ্রস্ত" ইসলামের সত্যিকার জ্ঞানে অজ্ঞ-মূর্খ মানুষগুলো (দুনিয়ার শিক্ষায় তারা যত বড় বিজ্ঞই হন না কেন) ভয়াবহ শির্কে নিমজ্জিত হয়ে যাচ্ছে যার ব্যাপারে আল্লাহ্ তা'আলা কোনরূপ আপোষ না করার ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন।
আল্লাহ্ তা'আলা শির্কের ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করে কুরআনে উল্লেখ করেন:
إِنَّهُ ُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ.
((কেউ আল্লাহ্র সাথে শরীক করলে আল্লাহ্ তার জন্য জান্নাত অবশ্যই হারাম করে দেবেন এবং তার আবাস হবে জাহান্নাম। আর যালেমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। )) [সূরা আল-মায়েদা: ৭২]
আল্লাহও এসব মুশরিকদের জন্য চিরস্থায়ী জাহান্নামের ঘোষণা দিয়েছেন আর রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাদের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।
অতএব, এ কথা পরিচ্ছন্ন হলো যে, প্রভুত্বে একত্ববাদের অপরিহার্য পরিপূরক হলো ইবাদাতে একত্ববাদ।
অথচ, তারপরও সেসব হতভাগারা বুঝতে সক্ষম হয় না এবং বলে যে, 'আমরা তো এদের পূজো করি, এদেরকে নযর-মান্নত দেই, এদেরকে সিজদা করি(!), এদের হাতে (ইসলামের নামে শির্কী ব্যাপারাদিতে) মুরীদ হই কেবল এজন্য যে, এরা আমাদেরকে আল্লাহর সান্নিধ্য এনে দেবে'। যেমনটি আল্লাহ কুরআনে বলেছেন:
أَلَا لِلَّهِ الدِّينُ الْخَالِصُ وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَى إِنَّ اللَّهَ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ فِي مَا هُمْ فِيهِ يَخْتَلِفُونَ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي مَنْ هُوَ كَاذِبٌ كَفَّارٌ.
((জেনে রাখুন, অবিমিশ্র আনুগত্য আল্লাহ্রই প্রাপ্য। যারা আল্লাহ্র পরিবর্তে অন্যকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে তারা বলে, ‘আমরা তো এদের পূজা এ জন্যে করি যে, এরা আমাদেরকে আল্লাহ্র সান্নিধ্যে এনে দেবে। ’ তারা যে বিষয়ে নিজেদের মধ্যে মতভেদ করছে আল্লাহ্ তার ফয়সালা করে দেবেন।
যে মিথ্যাবাদী ও কাফির, আল্লাহ্ তাকে সৎপথে পরিচালিত করেন না। )) [সূরা আয্-যুমার: ৩]
সুতরাং, একথায় আর কোন সন্দেহ পোষণের অবকাশ নেই যে, পার্থিব জীবনে আমাদের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর যে ভয়ংকর বিষয়টি, তা হলো- "শির্ক" তথা "আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করা"। এর পরিধি অবশ্যই অনেক বিস্তৃত, এই ধারাবাহিক লেখায় সেসবতুলে ধরার প্রয়াস পাবো ইনশাআল্লাহ্।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।