শাহ মোহাম্মদ হান্নান নিজস্ব বক্তব্যের যুক্তি সপ্রমাণের অপচেষ্টায় কাটিয়েছেন অনেকটা সময়। তিনি নিজেকে পলিটিক্যাল সায়েন্সের ছাত্র এবং ইতিহাসবিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। এই দাবি জানিয়ে নিজের বিজ্ঞতার সস্তা প্রচারণা করে এবং নিজস্ব বিজ্ঞাপনেই প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন তার বক্তব্যে সার আছে। তবে অসারের তর্জন-গর্জন সার।
কিছু মেধাবিহীন নির্বোধ যারা বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক দলের সদস্য এবং বিশেষত যারা জামায়াতে ইসলামী এবং এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের সাথে জড়িত এবং একই অসুস্থ রাজনীতির ধারাবাহিকতায় নেতৃত্বে গিয়েছে তাদের কাছে গ্রহনযোগ্যতা পেলেও এটা যে যথেষ্ট স্পর্শকাতর একটা অনুভবের জায়গা তাদের কাছে যারা স্বাধীনতা সংগ্রামী ।
এই ভিত্তিহীন দাবি প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা যে প্রতিটা পরিবার যারা মুক্তিযুদ্ধে স্বজন হারিয়েছে, তাদের আহত করে এই সম্ভ্রমবোধও তাদের নেই।
জামাতের এই অবস্থান যে নিতান্তই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং এটা যে একটা সরাসরি বিরোধিতার অবস্থান এটা স্পষ্ট হয়েছে জামাতের সাম্প্রতিক বক্তব্যে যেখানে তারা আবারও এ দাবি উত্থাপিত করেছে যে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধী ব্যতীত দেশে আর কোনো যুদ্ধাপরাধী ছিলো না এবং নেই।
নির্বোধ মানুষ এবং ক্ষমতাউন্মত্ত বর্বরেরা রাজনৈতিক ক্ষমতার লোভে এবং অন্য সব বিবেচনায় সত্যকে অস্বীকার করে এবং কেউ কেউ কোনো রকম যাচাই না করেই বিশ্বাস করে এবং তারা এ বিশ্বাস বমি করে নিজস্ব সভা সেমিনার এবং ঘনিষ্ঠ আড্ডা নামের আবর্জনালয়ে।
এর আগের বক্তব্যে একজন এসে সহৃদয় মন্তব্য করেছে, হান্নান সাহেব যুদ্ধাপরাধী প্রসঙ্গে কিছু বলে নি। ভালো লাগলো এই সত্য ভাষনে, অবশ্য একজন মানুষ যে বিশ্বাসই করে না মুক্তিযুদ্ধ বলে কিছু হয়েছিলো বাংলাদেশে সে যুদ্ধাপরাধী বিষয়ে কোন অবস্থান নেবে? সে ২৫শে মার্চ রাত থেকে শুরু হওয়া নিধনযজ্ঞকে গণহত্যা ভাবে না, সে কোথায় যুদ্ধাপরাধী পাবে? যে এই যুদ্ধকে গৃহযুদ্ধে রুপান্তরিত করতে চায় সে এই হত্যকান্ডকে কি হিসেবে বিবেচনা করবে? কিংবা যারা এই নৃশংসতার হোতা এবং এই দুস্কৃতি—কারীদের সাথে তার মিত্রতা তাকে কতটুকু গ্রহনযোগ্য বক্তব্য প্রকাশে সাহায্য করে? হয়তো কোনো না কোনো ভাবে সেও এই চক্রান্তে লিপ্ত ছিলো।
যুদ্ধাপরাধের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে যারা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে নিরপরাধ এবং নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করে এবং বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়। লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ করে বেসামরিক স্থাপনায়। নারী ও শিশু নির্যাতনের মতো বর্বরতায় লিপ্ত হয়। কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ কি ছিলো? শেরপুরের এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে অত্যাচার করে হত্য করবার অভিযোগ। যে অভিযোগটা করেছিলো সে নিহতের ভাই এবং অভিযোগটা উত্থাপিত হয়েছিলো ১৯৭২এ কিংবা ১৯৭৩এ।
এর আগের কোনো এত লেখায় এর কেস নাম্বার দেওয়া আছে। আওয়ামী লীগ কর্মীকে হত্যার কোনো যুক্তিসিদ্ধ কারণ অবশ্য জানা যায় নি। ময়মনসিংহের থেকে কেনোই বা শেরপুরে এসে ব্যপক নির্যাতন শুরু করলো সে এ বিষয়েও তার কোনো বক্তব্য নেই। অবশ্য আমরা একটা বক্তব্য এবং সপক্ষ প্রমাণের আশা করতে পারি। এখনও সে জীবিত, এবং যদি তার আত্মপক্ষ সমর্থনের পরও তার অপরাধের কোনো কার্যকরণ খুঁজে পাওয়া না যায় তবে তাকে ফাঁসী দেওয়া যেতে পারে।
হান্নানের সর্বশেষ খড়কুটো ধর্মীয় রাজনীতি গণতান্ত্রিক অধিকার। উন্নত বিশ্বের বরাত টেনে তার বক্তব্য ইংল্যান্ড আমেরিকা কোথাও ধর্মীয় রাজনীতি এবং ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল গঠন নিষিদ্ধ নয়। এই গণতাস্ত্রিক অধিকার দেওয়া না হলে বাংলাদেশ তার গণতান্ত্রিকতা হারাবে। তবে একটা সত্য হলো যুক্তরাষ্ট্র হারকাতুল জিহাদের কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করেছে বিশ্বব্যপী এবং যুক্তরাজ্য গভীরভাবে বিবেচনা করছে ধর্মভিত্তিক কিছু রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ এবং কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দলের প্রধান যাদের সাথে সংশ্লিষ্ঠ ছিলো লন্ডনে বোমা হামলা চালানোর সাথে যুক্ত যুবকেরা এবং তারা যেসব সম্পর্ক রাখতো তাদের বহিস্কার করার। যুক্তরাষ্ট্র ইসলামী জঙ্গী নিধন এবং সন্ত্রাসবদিকে দমনের চেষ্টা করছে।
এই কাজের যৌক্তিকতা বিচার করবার তুলনায় এ আলোচনা অধিকতর উপযোগী হবে যদি ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকতো তবে এই দানবীয় শক্তির উত্থান কি হতো?
গণতন্ত্রের সুবিধাভোগী হয়ে, মতপ্রকাশের এবং ব্যক্তিসাতন্ত্রের সুবিধা পেয়েও তারা এই স্বাধীনতার অপব্যবহার করে যে ভয়ংকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে এবং যেভাবে কিছু ধর্মোন্মাদ একত্রিত হয়েছে সেটা কি আদৌ সম্ভব হতো যদি ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার আইনত নিষিদ্ধ হতো?
বাংলাদেশ কি তবে ১৯৭১ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত সময় কালে অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ছিলো? শেখ মুজিব নিজে ইসলামিক ফাউন্ডেশন স্থাপন করেছেন, নিষিদ্ধ মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা পুনরায় শুরু করেছেন, তবে ৪র্থ সংশোধনী পর্যন্ত সংবিধানে ধমৃীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিলো এবং এই নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে শেখ মুজিবের অবস্থান মৃত্যুর আগে পর্যন্ত পরিবর্তিত হয় নি।
তবে একটা প্রচেষ্টা চলছে, প্রচারণা কিংবা অবস্থার গ্রহনের জন্যই বলছে কেউ কেউ১৯৭২এর সংবিধান আদতে সভ্য এবং সার্বভৌম দেশের সংবিধান হয় নি বরং এটা ঔপনেবিশিকতার উত্তরাধিকার। এখানের বিভিন্ন বিধিতে ঔপনেবিশিকতার উপস্থিতি। এর পক্ষে কথা বলতে গিয়ে জানলাম সংবিধানে ধমৃীয় স্বাধীনতা দেওয়া আছে- এবং প্রতিটা নাগরিকের নিজস্ব মত প্রকাশের স্বাধীনতাও আছে, আছে রাজনৈতিক দল গঠনের অধিকার- তবে সংবিধানের এই বিধি কার্যকর হয় না ঠিক ভাবে- যেহেতু একজন যদি ধর্মীয় রজনীতি করতে চায় তখন সে তার নাগরিক অধিকার পাচ্ছে না। সুতরাং ধর্মীয় রাজনৈতিক দল গঠনে নিষেধাজ্ঞা এবং সকল ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করবার বিধি স্ববিরোধী।
ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা এবং সবার জন্য রাজনৈতিক দল গঠনের সমান অধিকার দাবিটাও নাগরিক অধিকার হরণ।
ধর্মনিরপেক্ষতা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয় নিয়েও বিভ্রান্ত অনেকেই।
ধর্মীয় স্বাধীনতা - নিজস্ব ধর্ম বিশ্বাস এবং ধর্মীয় আচার পালনের স্বাধীনতা। সেখানে ধর্মভিত্তিক রাজনীতিতে নিষেধাজ্ঞা কোনো বাধা নয়। বরং সবাই যেনো নিজ নিজ ধর্ম বিশ্বাসের পালন করতে পারে এবং কোনো ধর্মমত যেনো তাদের উপরে প্রাধান্য বিস্তার না করতে পারে এটা তারই এক রক্ষা কবচ ছিলো সংবিধানে।
ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানিয়ে ১৯৭১এ যেমন নৃশংসতার চর্চা হয়েছে বাংলাদেশে এবং যেভাবে ধর্মবোধের প্রচারণা চালিয়ে পাকিস্তানের অখন্ডতা বিরোধি মানুষদের হত্যা করা ঐসলামিকতার চর্চা বলা হয়েছে এমন অমানবিতকার পুনারাবৃত্তি রোধে এই ধর্মীয় স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রেখে ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করবার এই সাংবিধানিক প্রচেষ্টায় আমি কোনো বিরোধ খুঁজে পাই না । ১৯৭২এ গৃহীত সংবিধানের দুরদর্শীতায় বরং মুগ্ধ হই।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজামন্ডপে হামলা চালানো কিংবা শাহজালালের দরগায় হামলা চালানো জঙ্গী দলগুলোর পরিচয় উদঘাটিত হওয়ার পরে এবং এর পেছরে ক্রিয়ারত ধর্মীয় রাজনৈতিক বিশ্বাস দেখে মনে হয় এইসব অমঙ্গল আশংকা আগেই করেছিলেন সংবিধান প্রণেতারা। ১৯৯৯ থেকে ২০০৬ বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় রাজনীতির ক্ষতিকারক দিক আমরা দেখেছি এবং এ সময়ে অনেকগুলো বোমা হামলা হয়েছে যেখানে সরাসরি যুক্ত ছিলো ধর্মীয় রাজনৈতিক সংগঠন। এবং ধর্মীয় রাজনৈতিক মতবাদধারীতে রাজনীদিদের উপস্থিতির কুফল বিষয়ে আসলে বেশী কথা বলার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই।
এসব দানবের জন্মের সম্ভবনা এবং এসব মানবতা বিরোধী কর্মকান্ডে রোধের উপায় ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা। ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার রদের সদুপদেশ দেওয়ার দায়িত্ব বোধ থেকে বলছি এ দেশের মানুষের ইসলাম চর্চা একটু ভিন্ন ধাঁচের এবং এতে লৌকিকতার ছোঁয়া আছে। এখানে উগ্রবাদিতা গ্রহনকারী মানুষেরাও এটা যে অসামাজিক আচরণ এটা বোধ করে তবে তারা নিরীহ শিকার। এর পেছনে কলকাঠি নাড়া মানুষেরা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকে এবং এরাই পেছন থেকে উস্কানি দিয়ে বিভিন্ন অরাজকতা সৃষ্টি করে।
শেখ হান্নানের জীয়ন কাঠি আদতে তার সর্বশেষ বক্তব্য।
ইসলাম শুধু একটা ধর্ম নয় এটা একটা পরিপূর্ণ জীবন বিধান।
তো নির্বোধ রামছাগলের দলকে আমার প্রশ্ন পৃথিবীর কোন ধর্মটা জীবন বিধান না। কোন ধর্মটা অনুশাসন এবং উপাচারে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এবং নিশ্চিত ভাবে মৃত্যু পরবর্তী জীবনকে নিয়ন্ত্রন করে না। কোন ধর্মাচারী মানুষ যে নিজস্ব ধর্ম বিশ্বাসে পরিপূর্ণ ন্যস্ত নয় সে কোনো বিবেচনায় ভালো মানুষ বিবেচিত হবে না। এ বিষয়ে ইসলাম ঠিক কি বিশিষ্ঠতা এনেছে?
চরম পৌত্তলিক ফেরাউনের ধর্মও তার এবং তার দেশের জনগনের জীবনবিধান ছিলো।
নমরুদ কিংবা সা’দের বিষয়ে ইহুদি রাব্বিদের লোকগাঁথা যার একটা অংশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুবাদের কল্যানে বাংলাদেশের মানুষ পড়ছে- তাদের ধর্মবিশ্বাসে পরিপুর্ণ আস্থা রেখেই তারা জীবনযাপন করেছে এবং নিজস্ব ধর্মীয় সংস্কৃতির উপরে আঘাত হিসেবে উদ্ভুত ধর্মের বিরোধিতা করেছে তারা। একই কারণে তালেবান সরকার হত্যা করেছে এক ধর্মান্তরিত খ্রীষ্টানকে, তার অপরাধ ছিলো সে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে খ্রীষ্টান হয়েছে। ইব্রাহিমের পিতা তার নিজস্ব ধর্ম বিশ্বাসেই তার জীবন অতিবাহিত করেছে। এখন যদি ধর্মের শ্রেষ্ঠতœ বিবেচনায় আনা হয় তবে এই বিতর্ক অনেককাল চালালেও সেটার গ্রহনযোগ্য সমাধান আসবে না। প্রতিটা ধর্মাবলম্বী স্বীয় ধর্মকে শ্রেষ্ট ভাববে এটাই স্বাভাবিক।
জেনে শুনে কেনোই বা একজন খারাপ একটা ধর্ম মেনে ইহকাল পরকাল নষ্ট করবে।
হিন্দু ধর্ম একটা পরিপূর্ণ জীবনবিধান। নানাবিধ উপকথার আদলে দারা বিভিন্ন নীতি ও নৈতিকতা যা বিভিন্ন সময়ে কিছু অগ্রসর মানুষ সমাজের জন্য শুভ বিবেচনা করেছেন তাই প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। তাদের সংকলিত নানাবিধ জ্ঞান আসলেই উন্নত ছিলো এবং উপকারি ছিলো কারণ এখনও এটার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে এবং তাদের বিভিন্ন উপাচার যে আদতে স্বাস্থ্যকর এটার প্রমাণ আয়ুর্বেদের পুণজন্ম।
যদিও সাহীহ হাদিস মতে মোহাম্মদের বিধান কুকুর এবং সাপ মেরে ফেলো- এটার বাধ্যবাধকতা আদতে প্রচলিত ইকো সিস্টেমকে বিপর্যস্ত করা ভিন্ন এর কোন বৈজ্ঞানিক নীতিকে সমর্থন করবে আমার জানা নেই।
এটা যে অবৈজ্ঞানিক একটা বিধান এবং এমন অনেক উদ্ভট ধর্ম বিধান দিয়েছে মোহাম্মদ। তাকে সম্মান করে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মানুষ এবং সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষ বলবার কোনো কারণ আমি পাই না। বরং অন্য সবার চেয়ে বেশী কৌশলী হলেও তার সাধারন জ্ঞান অনেক নিম্ন মানের এবং সাহীহ হাদিস অনুসারে অনেক সময়ই সেটা নির্বোধ ভাবনা।
মুজিবর রহমান ইসলামিক ফাউন্ডেশন করেছিলেন কিসের অনুপ্রেরণায় আমি জানি না তবে ধর্ম সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানা এবং গবেষনায় সহায়তা করা অপরাধ নয় বরং শাসক হিসেবে তার অবদানকে বিশিষ্ট করে। তবে ধর্মীয় রাজনীতি মানুষের রাজনৈতিক অধিকার এমন বিশ্বাস ধারণ করাটা অগ্রসর সমাজের জন্য একটা অভিশাপ।
অবৈজ্ঞানিকতাকে সমর্থন করে জনগনের দাবি মেনে উদ্ভট এক শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্র -
জনমত সব সময়ই সঠিক এবং মানুষের আবেগ সবসময় সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহনে সহায়ক এমনটা আমি বিশ্বাস করি না। মাঝে মাঝে দুরদর্শীতা প্রচলিত জনমতের বিরোধি হতে পারে, কখনও কখনও সেটা প্রচলিত বিশ্বাসের বিরোধিও হতে পারে।
আমার নিজস্ব বিবেচনায় হান্নানকে বিভ্রান্তি ছড়ানোর দায়ে এবং সংবিধান বিরোধী বক্তব্য প্রদানের জন্য আটকাদেশ দেওয়া এবং তার লেখা এবং বক্তব্য প্রকাশে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা জারি করা প্রয়োজন।
১৯৭৫এ নৃশংসতা হত্যাকান্ডের শিতার হওয়ার আগে শেখ মুজিবর রহমান মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার উপরে অর্পিত সাংবিধানিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন- এ বিষয়ক নীতিমালা এবং মাদ্রাসা শিক্ষা আইনানুগ হয়েছে ১৯৭৫এর মাঝামাঝি সময়ে। তবে প্রথম সংবিধানের এই বিশেষ সাবধানতা কত বড় দুরদর্শিতার পরিচায়ক এটাও ভাবতে হবে কারণ সাম্প্রতিক ইসলামি জঙ্গীর অধিকাংশই এসেছে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা থেকেই।
১৬ই আগষ্ট থেকে ৩রা নভেম্বর পর্যন্ত ২১টা ক্যু হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে তার সর্বশেষেরটা ছিলো খালেদ মোশাররফের সমর্থনে মেজর হাফিজের ক্যু- সে ক্যুকে নস্যাত করে জিয়া আসেন দৃশ্যপটে এবং তিনি জরুরি অবস্থা জারির পরে ন্যুজ্ব মেরুদন্ডের বিচারপতি সায়েম চিফ মার্শাল ল এডমিনিস্ট্রেটর হলেন। সংবিধান থেকে এক একে সব উল্লেখযোগ্য এবং সুবিধান ছেঁটে ফেলা হলো এবং যেভাবে বিশেষ বিশেষ আইন তৈরির কার্যক্রম শুরু হলো এবং বিশেষ ইনডেমিনিটি ঘোষিত হলো এবং বিশেষ আইনের কার্যকারিতা রোধ করে সকল আটক যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি দেওয়া হলো তা বর্তমান প্রজন্মের অনেক জামাত শিবির কর্মীর কাছে তার গ্রহনযোগ্যতা বাড়ালেও সেটা কতবড় ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো তা আস্তে আস্তে পরিস্কার হচ্ছে ইদানিং এবং এই একই কারণে আজ এ লেখার বাস্তবতা তৈরি হয়েছে।
সাথী ভাইদের প্রিয জেনারেল জিয়া আংকেল, তার কল্যানেই তাদের বাবারা যুদ্ধাপরাধের নির্দিষ্ট শাস্তি ভোগ না করে , কোনো রাষ্ট্রীয় শোধন ব্যবস্থার ভেতর দিয়ে না গিয়েই ফিরে এসেছেন বিজয়ীর বেশে।
এর পরে জিয়াউর রহমানবিশেষ ক্ষমতাবলে প্রজ্ঞাপন জারি করে ধর্মীয় রাজনীতির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেন। এবং জামাতে ইসলামি বাংলাদেশ নামক দলটির জন্ম হলো।
এই ব্যানারে কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীরা সংগঠিত হওয়ার সুযোগ পেলো।
১৯৭১এর ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তান নেসাবাহিনীর আত্মসমর্পনের পরপরই বাংলাদেশের বিরোধিতা সমাপ্ত হয় নি। এর পরে গোলাম আজম পুর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি করে চাঁদা তুলেছেন। এবং সেই মানুষটিকে মানবিক বিবেচনায় বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়ার সিদ্ধান্তটা আসলে কতটা অমানবিক ছিলো এটা বলতে পারবে ভুক্তভোগীরা। বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে জিয়াউর রহমানের ভুমিকা কতটুকু? তবে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধি পুনর্বাসনে তার অবদান সবচেয়ে বেশী।
এমন কি রাজাকারদের ক্ষমতার অংশীদার বানানোর নষ্ট প্রথাটাও শুরু হয়েছে তার হাতে। স্বাধীনতার ঘোষত হিসেবে তার একটা অবস্থান হয়তো ছিলো তবে যদি কোনো দিন ঐতিহাসিক পর্যালোচনা হয় তবে বাংলাদেশের ইতিহাসে তার অবস্থান হবে নীচের সারিতে এমন কি স্বাধীনতা বিরোধিদের কাতারেও নিয়ে যেতে পারে তাকে তার এই সব ভুল ক্ষমতালিপ্সু সিদ্ধান্ত। তার বড় অবদান এ দেশে স্বাধীনতা বিরোধিদের পুনর্বাসনে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।