আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অস্কার না পেয়েও সেরা যারা

তবে এমন অনেক অভিনেতা আছেন; বিশ্বজুড়ে যাদের জনপ্রিয়তার কোনো কমতি না থাকলেও কপালে জোটেনি কোনো অস্কার। অভিনয়গুণ দিয়ে দর্শকের মন জয় করেছেন বহু আগেই, কিন্তু খুশি করতে পারেননি অস্কারের বিচারকদের।

৮৬ তম অস্কারের এক দিন আগে এমনই দশজন অভিনেতাকে নিয়ে এই বিশেষ  আয়োজন।

ব্র্যাড পিট

অভিনেতা হিসেবে ব্র্যাড পিট কতখানি প্রতিভাবান, তা নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে; তবে অস্কারপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে তিনি যে সবচেয়ে দুর্ভাগাদের একজন—সে বিষয়ে সন্দেহ নেই কারও। ‘সেরা অভিনেতা’ বিভাগে এপর্যন্ত মনোনয়ন পেয়েছেন তিনবার; তবে শিকে ছেঁড়েনি একবারও।

১৯৯৬ সালে ক্যারিয়ারের প্রথম অস্কার মনোনয়ন পান পিট। সাইফাই সিনেমা ‘টুয়েলভ মাঙ্কিজ’-এর জন্য পার্শ্ব চরিত্রে সেরা অভিনেতা বিভাগে মনোনীত হন পিট। কিন্তু সেবছর ‘দ্য ইউজুয়াল সাসপেক্ট’-এর জন্য ট্রফিটি নিয়ে যান কেভিন স্পেসি।

১৩ বছর পর, ২০০৮ সালে সেরা অভিনেতা হিসেবে অস্কারের জন্য মনোনীত হন পিট। ‘কিউরিয়াস কেইস অফ বেঞ্জামিন বাটন’ সিনেমায় অভিনয় করে সেরা অভিনেতার মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি।

তবে ‘গোল্ডেন ম্যান’ জেতা হল না এবারও, বায়োপিক ‘মিল্ক’এর জন্য অস্কারটি পেয়ে যান শন পেন।

২০১২ সালে বায়োগ্রাফিকাল স্পোর্টস ড্রামা ‘মানিবল’এর জন্য আরও একবার সেরা অভিনেতার মনোনয়ন পেয়েছিলেন পিট। কিন্তু সেবার তাকে হারিয়েছেন ‘দ্য আর্টিস্ট’ খ্যাত জ্যঁ দ্যুজারদিন।

টম ক্রুজ

ব্র্যাড পিটের মতো তিনবার অস্কারের মনোনয়ন পেয়েছেন অভিনেতা টম ক্রুজও। ১৯৯০ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘বর্ন অন দ্য ফোর্থ অফ জুলাই’তে যুদ্ধাহত সেনা রন কভিকের চরিত্রে ক্রুজের দুর্দান্ত অভিনয় চোখ এড়ায়নি কারও।

কিন্তু সেবছর তাকে টেক্কা দিয়েছেন ড্যানিয়েল ডে লুইস। ‘মাই লেফট ফুট’ সিনেমায় শারীরিক প্রতিবন্ধী এক শিল্পীর চরিত্রে লুইসের অসাধারণ অভিনয় সেবছর অন্য কোনো অভিনেতাকে অস্কার পাওয়ার সুযোগ দেয়নি।

১৯৯৭ সালে ক্রুজ পেয়েছিলেন তার দ্বিতীয় অস্কারের মনোনয়ন। ‘জেরি ম্যাগওয়্যার’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন ক্রুজ। তবে শেষমেশ অস্কারটি চলে যায় ‘শাইন’ খ্যাত অভিনেতা জিওফ্রি রাশের হাতে।

ড্রামা মুভি ‘ম্যাগনোলিয়া’ ক্রুজকে এনে দিয়েছিল ক্যারিয়ারের তৃতীয় অস্কারের মনোনয়ন। এবার তিনি মনোনীত হয়েছিলেন পার্শ্ব চরিত্রে সেরা অভিনেতা হিসেবে। কিন্তু ঐ ক্যাটাগরিতে অস্কার জেতেন মাইকেল কেইন, ‘দ্য সিডার হাউজ রুলস’-এর জন্য।

জনি ডেপ

একাধিকবার মনোনয়ন পাওয়া কিন্তু একবারও অস্কার না জেতা অভিনেতাদের মধ্যে মিডিয়াতে সবচেয়ে আলোচিত সম্ভবত জনি ডেপ। ‘পাইরেটস অফ দ্য ক্যারিবিয়ান’-খ্যাত এই অভিনেতাকে পরিচালক টিম বার্টন আখ্যা দিয়েছিলেন তার দেখা ‘নিরীক্ষাধর্মী চরিত্রের জন্য সেরা’ হিসেবে।

সেই তিনিই তিনবার মনোনীত হয়েও জিততে পারেননি একবারও।

ডেপ তার ক্যারিয়ারে প্রথম অস্কারের মনোনয়ন পান একটু দেরি করেই। ২০০৪ সালে ‘পাইরেটস অফ দ্য ক্যারিবিয়ান: কার্স অফ দ্য ব্ল্যাক পার্ল’ সিনেমায় ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারোর চরিত্রে অভিনয় করে সেরা অভিনেতা হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ‘মিস্টিক রিভার’ সিনেমার জন্য সেই ট্রফিটি পেয়ে যান শন পেন।

পরের বছর ‘ফাইন্ডিং নেভারল্যান্ড’ সিনেমায় একজন লেখকের চরিত্রে অভিনয় করেন ডেপ, পেয়ে যান দ্বিতীয় অস্কারের মনোনয়ন।

কিন্তু সেবছর তাকে হারান অভিনেতা জেইমি ফক্স, বায়োপিক ‘রে’তে অভিনয় করে।

২০০৮ সালে মুক্তি পায় ডেপ অভিনীত সিনেমা ‘সুইনি টড: দ্য ডেমন বারবার অফ ফ্লিট স্ট্রিট’। এই সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা হিসেবে মনোনীত হলেও পুরস্কারটি জেতেন ড্যানিয়েল ডে লুইস, ‘দেয়ার উইল বি ব্লাড’ সিনেমার জন্য।

লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও

জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা আরও অভিনেতা, যিনি এখনও পাননি একটি অস্কার। লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও তার ক্যারিয়ারের প্রথম অস্কার মনোনয়ন পেয়েছিলেন মাত্র ১৯ বছর বয়সে।

১৯৯৪ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘হোয়াটস ইটিং গিলবার্ট গ্রেপ’-এর জন্য পার্শ্ব চরিত্রে সেরা অভিনেতা হিসেবে মনোনীত হন তিনি। ‘দ্য ফিউজিটিভ’ সিনেমায় অভিনয় করে সেবার ডিক্যাপ্রিওকে হারান টমি লি জোন্স।

২০০৫ সালে ‘দ্য এভিয়েটর’ সিনেমায় অভিনয় করে প্রথম অস্কারের মনোনয়ন পেয়েছিলেন ডিক্যাপ্রিও। কিন্তু ‘রে’ খ্যাত জেমি ফক্সের জন্য জেতা হয়নি ট্রফি।

এরপর ২০০৭ সালে ‘ব্লাড ডায়মন্ড’এর জন্য আরেকবার সেরা অভিনেতার মনোনয়ন পান।

এবারও পুরস্কার চলে যায় ‘দ্য লাস্ট কিং অফ স্কটল্যান্ড’খ্যাত অভিনেতা ফরেস্ট হুইটেকারের হাতে।

‘উলফ অফ ওয়াল স্ট্রিট’ সিনেমায় মাদকাসক্ত একজন স্টক ব্রোকারের চরিত্রে অভিনয় করে এবছর চতুর্থবারের মত সেরা অভিনেতা হিসেবে মনোনীত হয়েছেন ডিক্যাপ্রিও। যদি ভাগ্য প্রসন্ন হয়, তাহলে এবছর এই হতভাগা অভিনেতাদের তালিকা থেকে বাদ পড়বে ডিক্যাপ্রিওর নাম।

রবার্ট ডাউনি জুনিয়র

নব্বইয়ের দশকে তাকে ধরা হত আগামী দিনের প্রতিভাবান তারকাদের একজন হিসেবে। হ্যাঁ, খ্যাতি এবং জনপ্রিয়তার দিক থেকে তিনি এগিয়ে আছেন ঠিকই।

তবে এখনও খুশি করতে পারেননি অস্কারের জুরিদের।

১৯৯৩ সালে সেরা অভিনেতা হিসেবে প্রথম অস্কার মনোনয়ন পেয়েছিলেন ডাউনি জুনিয়র, তার সিনেমা ‘চ্যাপলিন’-এর জন্য। কিন্তু একই বছর ‘সেন্ট অফ এ ওম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করে অস্কারটি লুফে নেন অ্যাল পাচিনো।

নব্বইয়ের দশকের পরের সময় জুড়ে মাদকের কবলে পড়ে হলিউড থেকে দূরে ছিলেন ডাউনি জুনিয়র। অবশেষে ২০০৯ সালে ‘ট্রপিক থান্ডার’ সিনেমায় অভিনয় তাকে এনে দেয় পার্শ্ব চরিত্রে সেরা অভিনেতা হিসেবে অস্কারের মনোনয়ন।

কিন্তু এবার বিজয়ী হন ‘দ্য ডার্ক নাইট’খ্যাত অভিনেতা হিথ লেজার।

উইল স্মিথ

২০০২ সালে জীবনীমূলক সিনেমা ‘আলি’তে অভিনয় করে সেরা অভিনেতার অস্কারটি প্রায় নিয়েই যাচ্ছিলেন উইল স্মিথ, কিন্তু বাদ সাধলেন ডেনজেল ওয়াশিংটন। ‘ট্রেইনিং ডে’ সিনেমার জন্য শেষমেশ অস্কার নিয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি।

২০০৭ সালে মুক্তি পাওয়া স্মিথের সিনেমা ‘পারসুইট অফ হ্যাপিনেস’-এর কথা কোন হলিউডপ্রেমীর অজানা নেই। এতে স্মিথের অসাধারণ অভিনয় তাকে সেরা অভিনেতা হিসেবে অস্কারের জন্য একজন শক্তিশালী প্রতিযোগী করে তুলেছিল।

কিন্তু তাকে হারতে হয়েছে ‘দ্য লাস্ট কিং অফ স্কটল্যান্ড’-এর অভিনেতা ফরেস্ট হুইটেকারের কাছে।

 

 

হ্যারিসন ফোর্ড

‘ইন্ডিয়ানা জোন্স’ তাকে জগতজোড়া খ্যাতি এনে দিলেও অস্কারের খাতায় হ্যারিসন ফোর্ডের নাম উঠেছে মাত্র একবার। হ্যারিসন ফোর্ড তার ক্যারিয়ারের একমাত্র অস্কারের মনোনয়ন পান ১৯৮৬ সালের থ্রিলার মুভি ‘উইটনেস’এর জন্য। সেবছর ফোর্ডকে হারান ‘কিস অফ দ্য স্পাইডারওম্যান’-এর অভিনেতা উইল হার্ট।

রিচার্ড গিয়ার

‘প্রেটি ওম্যান’, ‘শিকাগো’ এবং ‘প্রাইমাল ফিয়ার’-এর মতো হলিউডের সেরা সব সিনেমায় অভিনয় করেও অস্কার পাননি রিচার্ড গিয়ার।

একটিবারের জন্য মনোনীতও হননি তিনি।

মনের চেপে রাখা দুঃখ সম্প্রতি প্রকাশ করেছিলেন গিয়ার। ২০০৩ সালের অস্কারে মোট ১২টি বিভাগে মনোনীত হয়েছিল তার অভিনীত সিনেমা ‘শিকাগো’। এর মধ্যে সেরা সিনেমা এবং পার্শ্ব চরিত্রে সেরা অভিনেত্রীসহ মোট ছয়টি বিভাগে পুরস্কারও জেতে সিনেমাটি। কিন্তু অভিনেতা হিসেবে মনোনয়নও জোটেনি গিয়ারের ভাগ্যে।

 

ক্যারি গ্র্যান্ট

চল্লিশ দশকের অভিনেতা ক্যারি গ্র্যান্টকে ধরা হয় হলিউডি সিনেমার সর্বকালের সেরা অভিনেতাদের একজন হিসেবে। কিন্তু একসময়ের জনপ্রিয় এই অভিনেতা তার ক্যারিয়ারে কোনো অস্কার পাননি।

১৯৪২ সালে মুক্তি পাওয়া তার সিনেমা ‘পেনি সেরেনেড’-এর জন্য প্রথম অস্কার মনোনয়ন পান গ্র্যান্ট, সেরা অভিনেতা হিসেবে। হেরে যান অভিনেতা গ্যারি কুপারের কাছে।

১৯৪৫ সালে ‘নান বাট দ্য লোনলি হার্ট’ সিনেমার জন্য আরও এবার মনোনীত হন গ্র্যান্ট।

এবার তাকে হারান বিং ক্রসবি।

অভিনেতা হিসেবে কোনো অস্কার না পেলেও ১৯৭০ সালে গ্র্যান্টকে দেওয়া হয় সম্মাননামূলক বিশেষ অস্কার।

রক হাডসন

পঞ্চাশ এবং ষাটের দশকে হলিউড দাপিয়ে বেড়ানো অভিনেতা ছিলেন ‘কাম সেপ্টেম্বর’-খ্যাত রক হাডসন। জনপ্রিয়তার দিক থেকে তিনি যতটা শীর্ষে ছিলেন, অস্কারের বিচারকদের কাছে ছিলেন ততটাই অবহেলার পাত্র।

প্রায় চল্লিশ বছরের ক্যারিয়ারে মাত্র একবার অস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন হাডসন।

১৯৫৬ সালে মুক্তি পাওয়া ড্রামা ধাঁচের সিনেমা ‘জায়ান্ট’ তাকে এনে দেয় সেরা অভিনেতা হিসেবে অস্কারের মনোনয়ন। এতে হাডসনের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন এলিজাবেথ টেইলর। কিন্তু ‘দ্য কিং অ্যান্ড আই’ সিনেমায় অভিনয় করে হাডসনকে হারিয়ে দেন ইয়ুল ব্রাইনার।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com     বুকমার্ক হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।