রাজধানীর উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার কাজ একটি প্রতিষ্ঠানকে দিতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) চাপ দিচ্ছেন সরকারি দলের সাংসদেরা। ফলে নয় মাস ধরে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউক। মন্ত্রণালয় ও রাজউক সূত্র জানায়, দরপত্রে অংশ নেওয়া যৌথ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠান ডোঙ্গা-এসকর্ন-শিকদারকে দরপত্র মূল্যায়নের জন্য গঠিত কারিগরি কমিটি অযোগ্য বলে প্রতিবেদন দেয়। তবে মন্ত্রণালয় ও রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ নিয়েছে পূর্ত মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। মূলত কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাংসদ নূর-ই-আলম চৌধুরী ওরফে লিটন চৌধুরী এবং সাংসদ ও রিহ্যাবের সভাপতি নসরুল হামিদ এ কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
এর মধ্যে প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের একটি অংশের কাজ পেয়েছে নসরুল হামিদের প্রতিষ্ঠান। তবে উল্লিখিত দুই সাংসদই বলেছেন, কোনো প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার জন্য তাঁরা চাপ দিচ্ছেন না, বরং সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই যেন দ্রুত এ বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, সে বিষয়েই তাগিদ দিচ্ছেন তাঁরা। উত্তরার ১৮ নম্বর সেক্টরে তিন শ্রেণীতে মোট ২০ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ জন্য খরচ হবে নয় হাজার ৩০ কোটি ৭১ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। প্রকল্পের বি ও সি ব্লকে ৭২টি করে মোট ১৪৪টি বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য ৪৫টি দরপত্র বিক্রি হলেও কেবল দক্ষিণ কোরিয়ার নির্মাণপ্রতিষ্ঠান ডোঙ্গা এ এইচ, দুবাইয়ের এসকর্ন ও বাংলাদেশের শিকদার রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ডোঙ্গা-এসকর্ন-শিকদার নামে যৌথভাবে দরপত্র জমা দেয়।
এর আগে এই প্রকল্পের প্রথম দফার আড়াই হাজার কোটি টাকার কাজও পেয়েছিল সরকারি দলের দুই সাংসদ নসরুল হামিদ ও এনামুল হকের প্রতিষ্ঠান। ৩০ মাসে এই কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি ১৮ মাসে মাত্র ৫ শতাংশ কাজ করেছে। এতে প্রকল্পটি যথাসময়ে শেষ করা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। প্রথম পর্যায়ের এই কাজেও এনার সঙ্গে যৌথভাবে ছিল ডোঙ্গা। বি ও সি শ্রেণীর কাজের দরপত্র মূল্যায়নের জন্য গঠিত কারিগরি কমিটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, এই কাজের জন্য যে নকশা চাওয়া হয়েছিল, তার মাত্র ৩০ শতাংশ জমা দিতে পেরেছে ডোঙ্গা-এসকর্ন-শিকদার।
ফলে স্বাভাবিকভাবেই তারা কাজ পেতে পারে না। এ ছাড়া দরপত্রে যোগ্যতা হিসেবে বার্ষিক ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য চাওয়া হয়েছিল। শিকদার গ্রুপের ওই লেনদেনের তথ্য থাকলেও শিকদার রিয়েল এস্টেটের তা ছিল না। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, কারিগরি কমিটির এই প্রতিবেদনে ক্ষুব্ধ হন সরকারি দলের এই সাংসদেরা। বিষয়টি নিয়ে পূর্ত প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান খান ও রাজউকের চেয়ারম্যানের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।
এর জের ধরে এ বছরের জানুয়ারিতে রাজউক চেয়ারম্যান মো. নূরুল হুদা একবার পদত্যাগপত্রও জমা দেন। তবে সরকারের উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপে তিনি কাজে যোগ দেন। রাজউক সূত্রে জানা গেছে, এরপর বি ও সি ব্লকের দরপত্র পর্যালোচনায় তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। ওই কমিটিও ডোঙ্গা-এসকর্ন-শিকদারকে কার্যাদেশ না দেওয়ার পক্ষে মত দেয়। এরপর পূর্ত মন্ত্রণালয় আবার তিন সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করে।
এই কমিটি দরপত্রের বার্ষিক লেনদেনের শর্ত কমিয়ে ও প্রকল্পের নকশায় পরিবর্তন এনে ডোঙ্গা-এসকর্ন-শিকদারকে কাজ দেওয়ার সুপারিশ করে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।