আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কি বর্নিব মনোকষ্ট চাকরীর হাল, ভাঙ্গিছে চিড়িয়াখানা বলদের পাল।



মাইয়ার বাপেরা বিয়া দিতে সরকারি চাকুইড়্যা খোঁজে। আর আমি কই পানের দোকান দেও মাগার সরকারি চাকরী কইরো না। দেখতে লাগে মিঠা মাগার খাইতে লাগে তিতা কপাল দোষে ফাইসা গেছি খাঁচার মধ্যে চিতা। কাউরেই তোয়াক্কা করতাম না। দুনিয়ার যত গাইল আছে সেইডা আমার কাছে খায় নাই এমুন মানুষ পাওন যাইব না।

মাগার এমুন জায়গায় ফাইসা গেছি কইবারও উপায় নাই "তোর খাই না পড়ি"। বেশী কথা বাড়াইয়া লাভ নাই। যা কইয়া জ্বালা মিটাইতে আইছি কইয়া পালাই। নানা টেবিলে জল খাইয়া এমুন জায়গায় আইছি যেইখানে সবশালারে জল খাওয়াইতে খাওয়াইতে মেজাজ বিলা হইয়া গেল। হইলেও উপায় নাই।

না খাওয়াইয়া কই যাই। বড়সাহেবের বাথরুমে জল নাই, কমোডের ফ্ল্যাশ খারাপ। ছোট সাহেবের বাত্তি জ্বলেনা, রান্নাঘরে গ্যাস শ্যাষ। সবেধন নীলমনি একলা আমি। পুষ্টিং টাই এইরূপ।

না পারি কইতে, না পারি সইতে। মেমসাহেব কইছেন বাথরুমের সাবান কই, সোফার কভার আসেনা ক্যান? মাইয়ার টেবিল টেনিসের টেবিল পালিশ হইবো কবে! মনে মনে কই, ভগবান শ্বশুর বাড়ি যাইয়া মাইয়াখান যেন পালিশ হয়। আর বাথরুমের সাবানে যেন মেমসাহেবের এলার্জি ধরে। তাতেও বিপদ। মাইয়া যাইবো শ্বশুরবাড়ি আর আমি বিয়ার কার্ড খুঁইজা মরি।

মেমসাহেবের এলার্জী আর আমার কাপড় দিয়া ঘর মুছে দর্জী। সময়ই নাই। অন্যের চাহিদা পূরণ করতে গিয়া নিজের চাহিদা সকল ভুলিতে হইয়াছে। কি করিব চাকরী বইল্যা কথা। ছোটসাহেব পুনা যাইবো।

সারাদিন সারারাত খাইট্যা বানাইলাম প্রেজেন্টেশন। সারাদিন ভইড়্যা ছোট সাহেব করলো কারেকশন। একবার লিখে পাস্ট টেন্সে পরের বার ফিরা আসে বর্তমানে। আমি খাইতে লাগলাম খাবি, ছোট সাহেব কইলো এখনও হয়নাই! আমি খাইতে গেলাম। এইডা প্রিন্ট কইড়্যা পাঠাইও, ফুন করুম, বাংলোয় গিয়া নিয়া আইসো।

আমার কিন্তু ৬। । ৩১ শে ট্রেন। সাড়ে তিনটায় ষষ্ঠদশতম কারেকশন প্রিন্ট কইরা বাংলোয় পাঠাইছি। বইসা আছি ফুনের আশায়।

খাইবারও সাহস পাইনাই। যদি ফুন আইস্যা পড়ে!। ফুন আসলোনা আসলো ড্রাইভার। কইলো এখনি আপনারে সাহেব বাংলোয় যাইতে কইলো। গিয়া দেখি অর্ধেক দাগানো শ্যাষ, বাকি অর্ধেকে ইচ্ছামতন কলম ঘইসা যাইতাছে।

কইলাম স্যার ৫। ৩০ বাজে, ফাইনাল করুম কখন আর আপনে যাইবেন কখন। শুইন্যা স্যার ৫। । ৪৫শে আমারে ছাড়লো।

অম্লান বদনে কইল, কখন পামু??? আমি মনে মনে কই ভগবান প্রিন্টারের ভিতরে এইব্যাডারে ঢুকান যায়না!! মুখে কইলাম স্যার এইখানে না পাইলেও আমারে ইস্টিশনে পাইবেন। ইস্টিশনের রাস্তায় বাস। হাজার হর্নেও তাহার হেলদোল নাই। সরকারি বাস বইল্যা কথা। ফাইল নড়েনা এক মাসে আর বাস নড়বো এত তাড়াতাড়ি!! ঢোকার মাথায় ফুন বাজলো আমারে আশ্চর্য না কইড়্যা।

কইলাম স্যার আইসা গেছি। স্যার কয় আরে ট্রেনতো ছাইড়্যা দিল। গাড়ির ড্রাইভার কইলো গাড়ি রাখমু কই? আমি কইলাম জাহান্নম এত দিনেও চিনস নাই। থামার আগেই নাইমা দৌড়। প্ল্যাটফর্মে ইস্টপ দিতেই বামদিকে তাকাই দেখি স্যারের বডিগার্ড।

১০০ মিটার দৌড়ে কম্পিটিশন করতাছে। আমি পূরস্কার। এইপাশে মাল নাই বুইঝা অন্যদিকে তাকাইতেই দেখি ছোটসাহেব আমারদিকে দৌড়াইতেছে। সঙ্গে সঙ্গে বাজলো রেফারীর হূইসল। ছোটসাহেব আবার উল্টাপাশে দৌড়।

দৌড়াইতে দৌড়াইতে স্যারের হাতে পদার্থখানি হ্যান্ডওভার কইড়্যা কইলাম গুড নাইট। স্যার কইল, ভাল থাইকেন। ছোটসাহেবের বডিগার্ড কয় কি, এত দেরী করলেন ক্যান! আমি খালি এইমাথা থেইকা ঐ মাথা দৌড়াইতেছি। আমি হের মুখের দিকে খাড়াইয়া কইলাম, একটা কথা কবি তো তোরে বাংলোর সুইপার বানায়া পাঠামু। ব্যাটা রিভলবারটা হাতাইয়া দেইখ্যা চক্ষের পলকে দুর হইয়া গেল।

ছোটসাহেব কইয়া গেছিল "ভাল থাইকেন" এখনও বুঝিনাই অভিশাপ দিয়া গেছিল কিনা। দুইদিন পরের ঘটনা। বড়সাহেবের বন্ধু ইস্পেশাল সেক্রেটারী হইয়া ইস্পেশাল ভিজিটে আইছে। খাতির যত্নই আলাদা। সারাদিনের কাজকর্মের নানাত্রুটি ধইরা রাজার হালে সার্কিট হাউসে নিছে অবস্থান।

অর্ডার হইল দেইখা আসেন কোন অসুবিধা হইতাছে কিনা। গিয়া দেখি সেক্রেটারি সাহেব বাতানুকুল যন্ত্র চালাইয়া (বাইরে তখন ভালই ঠান্ডা) দুই ঠ্যাং টেবিলে তুইলা মহানন্দে মেমসাহেবের পাঠানো আতাফল চামচ দিয়া চাইটা খাইতাছে। টেবিলে তিন খান মিনারেল ওয়াটারের বোতল আর দুইটা বাঁশের ফুলদানি। কূটীর শিল্পের নিদর্শণ হিসাবে বড়সাহেব ভেট পাঠাইছে। দেইখা আমার মনের উত্তাপ একলাফে ৪০ ডিগ্রী ক্রস কইরা গেল।

বদন শীতল রাইখা কইলাম, স্যার কোনো অসুবিধা হইতাছে নাতো? আরে আপনাদের সার্কিট হাউসে তো কিছুই নাই। বাথরুমে গন্ধ, রাতে পড়ার বাতি জ্বলেনা। এসিতে ঘর ঠান্ডা হয়না। মনে মনে কইলাম, সরকার তুমার বাবা আর আমাগো ভায়রা। বাপের পয়সায় ফুর্তি কইরা লও।

তো পরেরদিন সেক্রেটারি সাহেব সার্কিট হাউসের আরও নানান ত্রুটি ধইড়্যা বিকালে বিদায় নিল। সার্কিট হাউসে গিয়া শুনলাম গত দুইদিনে ২৬খান মিনারেল ওয়াটারের বোতল তাগো সেবায় লাগছে। এখন সেইগুলান খাইছে না তা দিয়া পিছন ধুইছে কেয়ারটেকার কইতে পারল না। পূজার বাজারে ট্রেনের টিকিট পদাদিকার বলে আদায় কইরা নাম কিনবো বইল্যা তার সেক্রেটারি সেই দায়ীত্ব থেইকা দিছে আমাগো দিছে নিস্কৃতি। আমরাও হাঁপ ছাইরা কেবলি চা সহযোগে সিগারেটে টান দিছি।

শয়তানের জারজ বাচ্চা টেলিফুন বাইজা উঠলো। হ্যা শুনেন, স্পেশাল সেক্রেটারি টিকিট কাউন্টারে দাড়ায় আছেন। উনার কাছে টাকাপয়সা নাই। এখনি টাকা নিয়া ১০ মিনিটের মধ্যে ইস্টিশনে যান। ফুন কাইটা গেল।

কুন জায়গা থেইকা টাকা নিমু আর ১০ মিনিটে কত নাম্বার হেলিকাপ্টার নিয়া ইস্টিশনে পৌঁছামু কিছুই জানতে পারলাম না। ক্যাশ থেইকা হিসাব ছাড়া টাকা নিয়া রওনা দিলাম। বাইর হওয়ার মুখে "মনের কথা" আইসা জুটলো, কইলো কাকু কই যাও। কইলাম একটা আজব জন্তু চিড়িয়াখানা থেইকা বাইর হইয়া ইস্টিশনে দাড়ায় আছে। ঐডারে উদ্ধার করতে যাইতেছি।

মনের কথা আর আমার এক কলিগ আজব জন্তু দেখার লেইগা আমার সঙ্গ নিল। স্টেশনে ঢোকার মুখে বাম দিকে নিতে লাগে টার্নিং। গাড়ির ড্রাইভার ইন্ডিকেটর জ্বালাইছে কিন্তু তার আওয়াজ হয়না। এই নিয়া লাগলো কলিগের সাথে ক্যাচাল। এইদিকে আমার খালি ফুন বাজতাছে।

আমি কইলাম ইন্ডিকেটরের চোদ্দ গুষ্টির দোহাই আমারে ইস্টিশনে ঢুকা। টাকা পয়সা দিয়া আজব জন্তুরে উদ্ধার কইরা ফিরতাছি। মনের কথা কইলো, সত্য অনুমান, কি বিচিত্র এই দেশ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।