ইচ্ছেমতো লেখার স্বাধীন খাতা....
হঠাত করে ভিসাটা পেয়ে যাওয়ায় দেরী করার কোনো উপায় ছিল না। তাই সময়টা কাটতে লাগলো ঝড়ের বেগে। এর মধ্যে যাত্রার ঠিক আগেই চোখ উঠে গেল (একেবারে টকটকে লাল)। এখন এ রোগ নিয়ে প্লেনে উঠতে দিবে কিনা, উঠতে দিলেও বিলেতে এয়ারপোর্ট থেকে ফেরত দিবে কিনা,এসব নিয়ে খুবই চিন্তায় পড়লাম। সানগ্লাসের বদলে মোটা ফ্রেমের সাধারণ চশমা পড়ে চোখ ঢাকার সিদ্ধান্ত নিলাম।
চোখে লাগিয়ে দেখলাম এটা চোখ ঢাকা যাচ্ছে। অবশ্য ভালোভাবে লক্ষ্য করলেই চোখ লালের ব্যাপারটা দেখা যায়। আর এ ধরনের মোটা ফ্রেমের চশমা সাধারণত স্মাগলাররা চেহারা আড়াল করার জন্য ব্যবহার করে।
ঢাকা এয়ারপোর্টের এমিরেটস কাউন্টার থেকে কোনো ঝামেলা ছাড়াই প্লেনে যাবার ছাড়পত্র পেলাম। প্লেনটি ছিল বিশাল, বোয়িং ৭৭৭।
আমি সিট খুজে নিয়ে মোটা ফ্রেমের চশমাটা পড়ে সাবধানে বসে আছি। কেউ যদি লাল চোখ দেখে প্লেন থেকে নামিয়ে দেয়। কিংবা কোনো যাত্রী যদি রিপোর্ট করে। যাই হোক কোনো ঝামেলা ছাড়াই প্লেন স্টার্ট দিলো। ডানে বামে কয়েকবার মোড় ঘুরে রানওয়ের এক প্রান্তে গিয়ে দাড়ালো।
হঠাত এক দৌড় দিয়ে আকাশে উড়াল দিল।
আমার সিটটা ছিল জানালার পাশে। আমি জানালা দিয়ে নিচে তাকিয়ে ছিলাম। কতো স্মৃতি আর অনুভব এ শহরটাকে ঘিরে রয়েছে। ঢাকা শহরের কোনো কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না।
তবু শহরটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম, যতোখানি দেখা যায়। প্লেন যতোই দূরে যাচ্ছে ততোই অসমাপ্ত কাজগুলো মনে পড়ে যাচ্ছে।
ধীরে ধীরে ঢাকার বাড়িঘরগুলো ঝাপসা হয়ে উঠলো। সাপের মতো আকাবাকা নদী আর সবুজ ক্ষেত ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না।
প্লেনের প্রত্যেক সিটের সঙ্গেই একটি করে ছোট এলসিডি মনিটর আছে।
তাতে ৫০০ চ্যানেল। এছাড়াও প্লেনের রুট, সময় এসবের বর্ণনা ও প্লেনের সামনে ও নিচে লাগানো সিসিটিভির দেখার ব্যবস্থা ছিল।
আস্তে আস্তে প্লেনের উচ্চতা বাড়ছিল। প্রায় ১০ হাজার মিটার বা ১০ কিলোমিটার উপরে উঠে গেল। ধীরে ধীরে বাংলাদেশের ধূসর নদীগুলোও চোখের আড়ালে চলে গেল।
ইনডিয়ার পশ্চিমবঙ্গ পার হওয়ার পর নদীগুলোর পানির রং হলদে-লাল হয়ে গেল। কিছু পাহাড় পর্বতও দেখা গেল। হায়দারাবাদ ও মুম্বাই পার হওয়ার পর প্লেনটি আরব সাগরে আসলো। আরব সাগরের পানি ছিল ঘন সবুজ। কোথাও আবার হালকা সবুজ।
এ সময় বিশাল একটা জাহাজ দেখতে পেলাম।
আমাদের প্লেনের গন্তব্য ছিল দুবাই। সেখান থেকে আমাদের অন্য একটা প্লেনে উঠতে হবে। আরব সাগর পার হয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই প্লেনটি আরবের মরুভূমিতে গিয়ে পৌছালো। এ সময় প্লেনটি ধীরে ধীরে নিচে নেমে আসছিল।
দেখলাম মরুভূমির উচু নিচু বালির ঢেউগুলি কখনো বিশাল বড় আবার কখনো ছোট। এগুলোর মাঝে কতোগুলো ঘন সবুজ বিন্দু দেখে বুঝলাম এগুলো কাটা ঝোপ বা খেজুর গাছ।
প্লেনটি দুবাইয়ের যতো কাছে যাচ্ছিলো ততোই রাস্তাঘাট, ঘর-বাড়ি বাগান এগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। দুবাই শহরটিযে বেশ বড় এক নির্মাণাধীন শহর তা বেশ বোঝা যাচ্ছিলো।
চোখে চশমাটা ভালোভাবে লাগিয়ে দুবাইয়ে নামলাম।
এয়ারপোর্টের ঝকঝকে করিডোরগুলো পার হবার সময় চারদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলাম। এ সময় কালো চশমায় আমাকে একজন স্মাগলারের মতোই লাগছিল বলেই মনে হয়। তবে আমাকে দেখতে অস্বাভাবিক যেন মনে না হয় এজন্য জোর করে মুখে হাসি ফুটিয়ে রেখেছিলাম। আমাদের যেতে হবে ১৮ নাম্বার গেটে। ইওর টিকেট প্লিজ, গেটের সামনে দাড়ানো বিমানবালা বলে উঠলো।
হাসিমুখে টিকিটটি এগিয়ে দিলাম। আমার ইকোনমি ক্লাসের টিকেটটি নিয়ে তিনি নতুন একটা সিট নাম্বার লাগিয়ে দিলেন। ব্যাপারটা ভালো হলো কি খারাপ হলো বুঝতে পারলাম না। তবে একটু বিরক্ত হলাম যে, আমার জানালার পাশের সিটে আর বসা হলো না। প্লেনে উঠে দেখি এটি বিজনেস ক্লাসের সিট।
ঢাকা থেকে বার্মিংহাম যাওয়ার জন্য এ টিকেটের ভাড়া ২০ হাজার টাকা বেশি। এখানকার যাত্রীদের প্রতি স্পেশাল কেয়ার নেয়া হয়। এবার সেই বিমানবালার চেহারাটা মনে করার চেষ্টা করছিলাম।
সিটে বসার সঙ্গে সঙ্গে শ্যাম্পেন, অরেঞ্জ আর অ্যাপল জুস আসলো। আমি অরেঞ্জ জুস নিলাম।
আমার পাশে বসেছে প্রায় ৪০ বছর বয়স্ক এক শেতাঙ্গ। সে নিজেই জিজ্ঞাসা করলো, কোথা থেকে এসেছি? আমি বাংলাদেশের নাম বললাম কিন্ত সে বাংলাদেশকে চিনতে পারলো না। তাদের মতো করে ব্যাংলাদেশ উচ্চারণ করেও চিনাতে পারলাম না। বলতেই হলো ইনডিয়ার পাশের দেশ। অবশ্য ব্যাপারটাকে সে হালকা করার চেষ্টা করলো।
সে জানালো যে সে টর্কি থেকে এসেছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, টার্কি? বললো না, টর্কি। আমিও তার দেশ চিনতে পারলাম না। চোখের সমস্যায় চিন্তিত ছিলাম বলে তারসঙ্গে বেশি আলাপ জমালাম না।
বিমানবালা এসে জিজ্ঞাসা করলো, এনিথিং ইউ ওয়ান্ট? বললাম, নো থ্যাংকস।
আমার পাশের লোকটি অবশ্য বললো - ইয়েস এভরিথিং।
পুরো পথটাই সে ইনজয় করতে করতে এসেছে। শ্যাম্পেন দিয়ে শুরু করে আমার সামনেই সে কমপক্ষে ১০টা আলাদা ব্র্যান্ডের মদ চেখে দেখেছে। কোনোটাই এক পেগের কম নয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।