আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

২০১৩ সালের মধ্যপ্রাচ্য ভাবনা ও এ অঞ্চলে মার্কিন মতিগতি

I want to make me as a blog writter. বংশগত শাসন শোষনে জর্জড়িত মধ্যপ্রাচ্যে ২০০৯ সালের শেষের দিক থেকে নানা ঘটনা-অঘটনা, জল্পনা-কল্পনার মাধ্যমে আলোচিত ও প্রকম্পিত হয়ে আসছে। ওসমানীয় খেলাফাত ধ্বংসের পর থেকে এবং ¯œায়ু যুদ্ধ পরবর্তী এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে যে শত্রুতা-মিত্রতার সম্পর্ক তৈরী হয়েছে তাতে বর্তমান সময়ে অনেকটাই পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যা ভবিষ্যৎে মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীল রাজনৈতিক কাঠামো প্রবর্তনে সহায়তা করবে ও তা মার্কিন স্বার্থের পরিপন্থী হবে বলেই মনে হচ্ছে। সমসাময়িক ঘটনাগুলোর মধ্যে কায়রো- তেহরান সম্পর্কের উন্নতি, ফিলিস্তিনের জাতিসংঘের অসদস্য পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মর্যাদা প্রাপ্তি, মুরসির মধ্যস্থতায় হামাস-ফাতাহ একত্রীকরণ ও অখন্ড ফিলিস্তিন গড়ার প্রত্যয়,তিউনিসিয়ায় ইসলামী দল আন নাহুদা পার্টির ক্ষমতা গ্রহন, এরদোগানের নেতৃত্বে তুরস্কের স্থিতিশীল রাজনীতির প্রবর্তন, মরোক্কতে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলের ক্ষমতা গ্রহন, লিবিয়ার স্বৈরাচারী সরকারের পতন ও গণতান্ত্রিক সরকারের যাত্রা, ইরাক থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা, ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমানবিক কর্মসূচী ও পশ্চিমা বিরোধিতা এবং সর্বশেষ আরব বসন্তের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ইসলামপন্থী দলগুলো ক্ষমাতায় আসার সম্ভাবনা যদিও বিষয়টি সময় সাপেক্ষ। সিরিয়া, লেবানন, জর্ডান, ইরাক রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে আলোচনার দাবি রাখবে।

এছাড়াও এ বছর এ অঞ্চলের চারটি প্রভাবশালী রাষ্ট্রের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং এর ফলে সৃষ্ট ঘটনাবলী ঐ সব দেশের অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতিতে প্রভাব ফেলবে। আরব বসন্তের পূর্ব পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বংশগত শাসনের একটি অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল প্রায় তিন প্রজন্ম আগে। প্রকৃতপক্ষে আরব লিগের সদস্য ভুক্ত ২২ টি দেশের মধ্যে অধিকাংশ দেশেরই শাসক গোষ্ঠী প্রায় তিন দশক আগে এসব দেশের শাসন ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিল। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো সমসাময়িক সময়ে ধারাবাহিক বংশগত শাসনের কোপানল থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। এর প্রেক্ষিতে মুসলিম চিন্তাবিদ ও দার্শনিক ইবনে খালদুনের একটি উক্তি প্রযোজ্য।

তিনি বলেছিলেন ‘ইতিহাস চক্রাকারে ঘোরে। একটি বংশধারার শাসন তিন প্রজন্ম স্থায়ী হয়। এরপর তাদের সমৃদ্ধশালী যুগের অবসান ঘটে। যতদিন বংশধারার অনুসারীদের মধ্যে অভিন্ন উদ্দেশ্য উজ্জিবিত থাকে এবং যতদিন ন্যায়বিচার মাধ্যমে দুর্নীতিমুক্ত থাকেন এবং তাদের মধ্যে সংহতি থাকে ততদিন তাদের অবস্থা ভাল থাকে। কিন্তু যখন তাদের মাঝে বর্হিশক্তির প্রভাব বেড়ে যায় এবং এক সময় একটি পক্ষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয় তখন নতুন বংশধারার উন্মেষ এর আলামত ঘটতে দেখা যায়।

’ তাই দেখা যাচ্ছে আরব বসন্তের মধ্য দিয়ে ইবনে খালদুনের চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ মিশর, তিউনেসিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেন এ বংগত শাসনের অবসান ঘটেছে। এছাড়া অনেক পূর্বেই ইরানে ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে ও তুরস্কে বংশগত শাসনের অবসান হয়েছে। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ২০০৯ সাল থেকেই পরিবর্তনের ধারা আসতে শুরু করেছে এবং এই অঞ্চলে পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার পোষা ইসরাইলেরও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলো হয়তোবা ম্লান হওয়া শুরু হয়েছে। আর এর ফলে তারা এ অঞ্চলে কে নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য কৌশলগত নীতি ও যুদ্ধের দিকে অগ্রসর না হয়ে অপেক্ষাকৃত নমনীয় নীতি গ্রহনের পরিকল্পনা করছে।

তাই দেখা যাচ্ছে যে ২০১৩ সালে মধ্যপ্রাচ্যে আরও রাজনৈতিক সংস্কার হবে এবং সিরিয়ায় বংশগত শাসনের অবসান ঘটারও সম্ভাবনা রয়েছে। মিশরে গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময়ে ক্ষমতা গ্রহন করেন দীর্ঘকাল নিষিদ্ধ থাকা সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুহের নেতা মুরসি। ২০১১ সালের শুরুতে রাষ্ট্রক্ষমতা পরিবর্তনের জন্য দেশটিতে যে বিপ্লব শুরু হয়েছিল, হোসনি মোবারকের বিদায়ের মধ্যে দিয়ে ব্রাদারহুড ক্ষমতায় আসলেও মিশরের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে এ বছর উত্তেজনা অভ্যাহত থাকবে। মিশরের পররাষ্ট্রনীতির সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ অংশ হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক। যুক্তরাষ্ট্র মিশরের দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত মিত্র ছিল।

কিন্তু বসন্তের দাবানলে ওয়াশিংটনের টনক নড়ে। তারপর সুচতুর যুক্তরাষ্ট্র মিশর যাতে হাতছাড়া না হয় সে জন্য কৌশলে ব্রাদারহুডকে সমর্থন দিলেন। তাহরির স্কয়ারে গণবিক্ষোভ কে সমর্থন দিলেন। এরপর মুরসির ডিক্রি, সংবিধান প্রণয়ন, সংবিধানের জন্য গণভোট ইত্যাদি ক্ষেত্রে পাশ্চাত্যপন্থী সেকুলার মহল মুরসির বিরুদ্ধে আন্দোলন করলেও যুক্তরাষ্ট্র মুরসির প্রতি সমর্থন দিয়ে গেলেন। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ব্রাদাহুডের জনপ্রিয়তা বিষয়ে অবগত।

তাই যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে মিশর কে হাতছাড়া না করে ভাল সম্পর্ক রাখার মাধ্যমে ইসরাইলের জন্য যতটুকু সুবিধা আদায় করা যায় সেটাই অনেক ভাল। কিন্তু আদর্শিক গণতন্ত্রের প্রতিক মুরসি ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইসরাইলকে ছাড় দেবে না এটাও যুক্তরাষ্ট্র ভাল করেই জানে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র চাচ্ছে এই নবীন ইসলামীক রাষ্ট্রটিকে চাপের মধ্যে রেখে তার সুবিধা গুলো আদায় করতে। ফলে সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র মুরসির একটি পূর্বের উক্তিকে কেন্দ্র করে তাকে চাপে রাখতে চায় এবং মিশরে তার যে সামরিক সহায়তা তার মুলোটা ঝুলিয়ে রাখতে চাচ্ছে। কেননা মিশর কে এখন অর্থনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতা দেয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে এই পরোক্ষ হুমকি।

যাতে শর্তের জালে মিশরকে বন্দী করে ইরানের সাথে মিশরের সম্পর্ককে ও সিরিয়ার ইসলামী জাগরণে মুরসির সমর্থন কে দমিয়ে রাখা যায়। লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে দীর্ঘ তিন দশক পর মিশরের প্রেসিডেন্ট মুরসি গত ২০১২ সালের আগস্ট মাসে ন্যাম সম্মেলনে যোগ দিতে তেহরান সফর করেন। এছাড়াও গত ১০ জানুয়ারী ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী আকবর সালেহী কায়রো সফর করেন। এটি ছিল মুরসির নেতৃত্বাধীন মিশরে তার দ্বিতীয় সফর এবং এই সময় তিনি প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদের পক্ষ থেকে মুরসিকে দ্বিতীয়বার তেহরান সফরের আমন্ত্রণ জানান। সালেহী বলেন, ‘২০১১ সালের জানুয়ারীতে মিশরের গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে কায়রোর সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটেছে।

উল্লেখ্য, ১৯৭৯ সালে ইসরাইলের সঙ্গে মিশরের শান্তিচুক্তি হওয়ার পর তেহরানের সঙ্গে কায়রোর সম্পর্ক বন্ধ হয়ে যায়। কেননা মোবারকের সময়ে মিশরের সব রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ফলে কায়রো-তেহারান সম্পর্কের ভাটা পড়ে যায়। কেননা ইরান পশ্চিমাদের বিরোধী একটি রাষ্ট্র। মিশরে ইরানি রাষ্ট্রদূত মোজতোবা আমানি বলেন, ‘মিশরে গেীরবময় বিপ্লবের পর ইরান-মিশর সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠায় জোরাল পদক্ষেপ তৈরী হয়।

কেননা মিশর ও ইরান মধ্যপ্রাচ্যের দুটি বৃহৎ দেশ এবং উভয়ের সম্পর্ক এ অঞ্চলে খুবই গুরত্বপূূর্ণ। ’ কারণ এ অঞ্চলে দুই দেশের ব্যাপক গুরত্ব রয়েছে। আর এসব কারণে মিশর কে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন পরিকল্পনা ছেদ হতে পারে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ব্রাদারহুডকে সর্বদাই ইসরাইল বিরোধী মনে করে। মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ আঞ্চলিক শক্তি ইরানে এবছর দুটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

জুনের মাঝামাঝি হবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এ নির্বাচন কে ঘিরে এমন কিছু প্রক্রিয়া সৃষ্টি হবে যা ভবিষ্যৎে দেশটির অভ্যন্তরীন স্থিতিশীলতার দিকটি নির্ধারণ হবে। নির্বাচনকে ঘিরে অভ্যন্তরীণ গোলযোগ দেখা দিতে পারে এবং সংস্কারপন্থী ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের আশির্বাদপুষ্ট রক্ষণশীলদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হতে পারে। তবে দেশটির নির্বাচনে বহির্শক্তির প্রভাব বিস্তারের কোন সুযোগ থাকবে না। সিরিয়ার ঘটনাবলী ইরানকে সবচেয়ে বেশি প্রবাবিত করবে এ বছর।

কারণ ইতোমধ্যে ইরান প্রকাশ্যে আসাদ সরকারের পক্ষ নিয়েছে এবং আসাদ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ইরান তার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। আর যদি আসাদ সরকারের পতন হয় তবে ইরাক ইরানের কাছে গুরত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে শিয়া প্রভাব বৃদ্ধির জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। ২০১৩ সালে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচী নিয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাবে এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে চলমান আলোচনা ও অর্থনেতিক অবরোধ ইরানকে পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জনের চেষ্টা থেকে বিরত রাখতে পারবে বলে মনে হয় না। অন্যদিকে ইরানের প্রতি ইসরাইলের হুমকি-ধামকি ও এক গুয়েমি সত্তেও যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সাথে যুদ্ধে জড়াবে না বলে বিশ্লেষকগণ মনে করেন।

কারণ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ভঙ্গুর অর্থনীতি যুদ্ধের জন্য উপযোগী নয়। তবে এটাও সত্যি যে যুক্তরাষ্ট্র কখন চাইবে না যে কোন মুসলিম রাষ্ট্র পারমাণবিক ক্ষমতার অধিকারী হোক। ফলে যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের নিয়ে ইরানের প্রতি অবরোধ ও হুমকি অব্যাহত রাখবে এবং এর মধ্যে দিয়ে যদি ইরান পারমাণবিক অস্ত্রের সক্ষমতা অর্জনের ঘোষণা দেয় তবে তা মধ্যপ্রাচ্যের শক্তির ভারসাম্যে ব্যাপক ঝাকুনি দেবে এবং মার্কিন-ইসরাইলের জুটির জন্য তা বুমেরাং হবে এবং এই অঞ্চলে ইসরাইলের ভিত্তি কিছুটা নড়বড়ে হয়ে যাবে। ২০১৩ সালে সিরিয়া মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে থাকবে। কেননা সিরিয়ায় যেভাবে গৃহযুদ্ধের তীব্রতা বাড়ছে এবং মানুষ গণহত্যা শিকার হচ্ছে তাতে ‘দামেস্ক পতনের দ্বারপ্রান্ত’ বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

কিন্তু আসাদরে পতন হলেই যে সিরিয়ায় স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে তা বলা যায় না। বরং আসাদের পতন হলে এটা সিরিয়া পুনর্গঠনের প্রথম স্তর অতিক্রম করবে এবং আসাদের পতনের পর যদি সেখানে কোন সরকার ক্ষমতায় আসে তবে যুক্তরাষ্ট্র সে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবে। কিন্তু এক্ষেত্রে মিশর ও তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীত অবস্থান নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দীর্ঘ ৬৫ বছর লাঞ্চিত ও নির্যাতিত হওয়ার পর ২০১২ সালের ২৯ নভেম্বর ফিলিস্তিন জাতিসংঘের সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন পেয়ে জাতিসংঘে অসদস্য পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মর্যাদা পেয়েছে। তাই ২০১৩ সালে ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানের আশা একটু বেশি হয়ে যাবে।

যদিও হামাস ও ফাতাহর মধ্যে সংঘাত দেখা দিবে। তবে নির্বাচনের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে। এরপর অভ্যন্তরীণ সমঝোতা হবে ফিলিস্তিনের শান্তির পথে বড় অগ্রগতি। আর ইসরাইলের নির্বাচনের পর যদি নেতানিয়াহুর স্টাইলে কোন সরকার ক্ষমতায় আসে তাহলে আবারও বসতি নির্মানের অনুমোদন দেয়া হবে। ফলে ফিলিস্তিনের সঙ্গে ইসরাইলে যুদ্ধ বিরতি ভঙ্গ হতে পারে এবং তখন হামাস-ফাতাহ এক হয়ে লড়বে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ফিলিস্তিনকে সমর্থন দিয়ে যাবে এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।

আর এক্ষেত্রে মিশরের সাথে ইসরাইলের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে যাবে এবং ইসরাইল তুরস্কের মত ভালো বন্ধু কে হারাবে। কেননা ফিলিস্তিন প্রশ্নে এরদোগান সরকার অনড় থাকবে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরাকে এ বছর ২০ এপ্রিলে কিরকুক ও আরো তিনটি প্রদেশ ছাড়া বাকিগুলোতে প্রাদেশিক নির্বাচন অনুষ্টিত হবে। ২০১৩ সালে কিরকুকের মর্যাদা, তেল আইন,ফেডারালিজম ও সেন্ট্রালাইজেশনের মতো ইস্যুগুলো ইরাকের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করবে। ২০১৪ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটো সৈন্যদের প্রত্যাহার করে নিলে ইরাকে আবারও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

এছাড়াও প্রেসিডেন্ট জালাল তালাবানি অসুস্থতার কারণে বিদায় নিলে মালিকি সুন্নি দেশগুলোর সমর্থনের আশায় প্রেসিডেন্ট পদে কোন সুন্নি প্রার্থীকে দেখতে চাইবেন। ফলে কুর্দিদের নিয়ে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, শিয়াদের নিয়ে তেমন একটি সংকটে পড়বে দেশটি। মধ্যপ্রাচ্যে নেতৃত্বদানের আকাঙ্খা সৌদিআরব কে এক সময় ওসমানীয় খেলাফাত থেকে সরে আসতে উদ্বুদ্ধ করেছিল এবং সে সময় সৌদি আরব নিজ স্বার্থ বিবেচনা করে ব্রিটেন জোট কে সহযোগিতা করেছিল। সৌদি আরব বিশ্বের সর্ববৃহৎ তেল মজুদের অধিকারী একটি দেশ। কয়েক বছর ধরে দেশটি তার তেল শক্তিকে রাজনৈতিক শক্তিতে রুপান্তরের সর্বাতœক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু বংগত ধারার শাসনের গ্যারাকলে পড়ে সৌদি আরব তার আকাঙ্খিত চাওয়া পূর্ণ করতে পারে নি। এ বছর সিরিয়া এবং লেবাননের নাটকীয় কোন ঘটনা কে কেন্দ্র করে বিশ্বমঞ্চে আর্বিভূত হতে পারে এ দেশটি। আর এই ঘটনা দেশটির রাজপরিবারের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বিরোধী শক্তিগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও বাদশাহ আবদুল্লাহর বয়স ও সব যুবরাজ বিদায় নিলে দেশটির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব সংকটা পূর্ণ হয়ে উঠবে। দেশটির বিরোধীরা বসন্তের অপেক্ষায় সংগ্রাম চালিয়ে যাবে এবং মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া সুন্নি সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে সৌদি আরবের শিয়া আন্দোলনকে যথেষ্ট প্রভাবিত করবে বলে অনেকেই মনে করছেন।

২০১৩ সালের ২২ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত হবে ইসরাইলের সাধারণ নির্বাচন। এই নির্বাচন ইসরাইলের আচরণ বদলাতে তেমন প্রভাব ফেলবে না। তিনটি বড় দলের মধ্যে ক্ষমতার স্বাদ ভাগাভাগি হতে পারে। নেতানিয়াহু স্টাইলের সরকার ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনাই বেশি। নির্বাচন ও নতুন সরকার গঠনের মধ্যে দিয়ে ইসরাইল নতুন বছর শুরু করলেও কোন নতুন ঘটনার জন্ম হবে না বরং পুরাতন ঘটনা গুলোকে কেন্দ্র করে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে পানি ঘোলা করার মত অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে ইসরাইল।

ফিলিস্তিন জাতিসংঘে অসদস্য পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মর্যাদা পাওয়ার পর ইসরাইলের গালে যেন চপেট আঘাত পড়েছে এবং এজন্য ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ক্ষেপে আছে। এর উপর ওবামা কর্তৃক চ্যাক হ্যাগেল কে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়ায় ইসরাইলের উপর যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে। তাই এ বছর উত্তেজনা ছাড়া ইসরাইলের নিকট থেকে কোন শান্তি প্রক্রিয়া আশা করা যায় না। নির্বাচনের পর ইসরাইল যদি ফিলিস্তিন প্রশ্নে নতুন ঘটনার উত্থান ঘটায় তবে ২০০৬ সালের মত হিজবুল্লাহ- ইসরাইল যুদ্ধের সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দেয়া যায় না। এ বছর ইরানের সাথে ইসরাইলের সম্ভাব্য য্দ্ধু ব্যাপক ভাবে আলোচিত হবে।

তবে ইসরাইল যদি যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়াই ইরানকে আক্রমণ করে তবে এর জন্য ভয়াবহ পরিণতি গুনতে হতে পারে ইসরাইলকে। এছাড়াও ইসরাইল সিরিয়ার ব্যাপারে এ বছর দশর্কের ভুমিকায় থাকবে তবে মাঝে মাঝে কিছু ভুয়া হুমকি উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। তবে সিরিয়ায় যদি ক্ষমতার পালাবদল হয় ইসরাইল কে তা শঙ্কিত করে তুলবে। এ বছর ইসরাইলের জন্য সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ দিকটি হবে মিশরের সাথে সম্পর্কের অবনতির আশঙ্কা। যদিও মোবারকের পতনের পর এখন পর্যন্ত সম্পর্কের তেমন কোন পরিবর্তন ঘটেনি।

তবে দু দেশের নির্বাচনের পর ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের সাথে ১৯৭৮ সালের মিশরের শান্তিচুক্তি কে কেন্দ্র করে সম্পর্ক চরম বৈরী হতে পারে। উপরিউক্ত দেশগুলো ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষনের দাবি রাখবে এ বছর। লেবাননকে সিরিয়া সংকট ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। লেবাননেও শিয়া-সুন্নী দ্বন্দ্ব আরো প্রকট হয়ে উঠতে পারে। চলতি বছর লেবাননের নির্বাচনকে ঘিরে সেখানে অভ্যন্তরীণ বিভক্তি দেখা দিতে পারে।

পাকিস্তানের নির্বাচনকে কে কেন্দ্র করে সামরিক ক্যু না হলেও সামরিক সরকারের সহযোগিতায় সেখানে ক্ষমতার পালাবদল হতে পারে। সিরিয়ার সংকট কে কেন্দ্র করে সেখানে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের লড়াই শুরু হতে পারে। ‘আরব বসন্তের’ হাওয়া জর্ডানে না লাগলেও এ বছর সেখানে রাজতন্ত্র ও বিরোধীদের মধ্যকার টানাপড়েনে যে কোন সময় বসন্তের ডাক আসার সম্ভাবনা রয়েছে। লিবিয়ায় গণতান্ত্রিক সরকারের অগ্রযাত্রা শুরু হলেও এ বছর লিবিয়ায় মার্কিন কূট কৌশল অনেকটাই বাধার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং দেশটিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসতে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মন্থর পথ পারি দিতে হবে। আলজেরিয়ার শীত হয়ত সহসাই কাটবে না।

বাহরাইনে ‘আরব বসন্ত’ কে চরম ভাবে দমন করা হলেও বিরোধীরা এখন তাদের দাবিতে অনড়। কেননা তাদের মধ্যে দেড় বছর ধরে আলোচনা শুরুর প্রচেষ্টাও সফল হয়নি। ফলে দেশটি আবারও উত্তাল হতে পারে। তাই সামগ্রীক বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে ২০১৩ সালে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা আসার কোন সুযোগ নেই। এ অঞ্চলের দেশগুলোকে এ বছর জুড়েই অনেকটা কর্দমাখা পথ পারি দিতে হবে।

তবে খুব নিকট ভবিষ্যৎে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আরব বসন্তের আর্শিবাদে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও এসব দেশে বংশত ধারার শাসনের অবসানের চমক দেখতে পারে বিশ্ববাসী। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.