একজন আমি, একজন হারিয়ে যাওয়া এবং একজন দূর প্রবাসী
কথায় বলে ফলই বল। ফল খুবই উপকারী। ফল খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। শুধু তাই নয়, ফল চাষে খরচ কম লাভ বেশি। ফল চাষ করে বাড়তি আয় করা যায়।
ফলমূল ও খাদ্যের গুণাগুণ সম্পর্কে আমরা খুব একটা সচেতন নই। আম, জাম, কলা, কাঁঠাল , লিচু এসব ফলের সাথে আমরা অধিক পরিচিত। স্বাদ, পছন্দ কিংবা পুষ্টির দিক বিবেচনা করে আমরা এসব ফল খাদ্য তালিকায় রাখার চেষ্টা করি। এ জাতীয় ফলের প্রতি আমাদের আগ্রহও বেশি। এমনকি অসুস্থ রোগীকে দেখতে গেলে আপেল, কমলা, আঙুর, নাশপাতি নিয়ে যাই।
কিন্তু এমন অনেক ফল আছে যেগুলোকে আমরা ফল হিসেবে তেমন গুরুত্ব দেই না অথচ এসব ফলের পুষ্টিমান দামি অন্যান্য যেকোনো ফল থেকে বেশি। আমলকি এ ধরনের ফল । ভেষজ গুণ রয়েছে অনেক ।
আমলকিঃ
ফল ও পাতা দুটিই ওষুধরূপে ব্যবহার করা হয়। বীজ দিয়ে আমলকির বংশবিস্তার হয়।
বর্ষাকালে চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। আমলকিতে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ থাকায় একে ভিটামিন ‘সি’র রাজা বলা হয়। লেবু জাতীয় অন্য কোনো ফলে এত ভিটামিন ‘সি’ নেই। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, আমলকিতে পেয়ারা ও কাগজি লেবুর চেয়ে ৩ গুণ ও ১০ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। আমলকিতে কমলার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি, আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ বেশি, আমের চেয়ে ২৪ গুণ এবং কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে।
একজন বয়স্ক লোকের প্রতিদিন ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ দরকার। দিনে দুটো আমলকি খেলে এ পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ পাওয়া যায়। অতিরিক্ত ভিটামিন ‘সি’ খেলে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না। আমলকির গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। খাবার খেতে ভালো না লাগলে অরুচি হলে আমলকি খেলে মুখে রুচি বাড়ে ।
স্কার্ভি বা দন্তরোগ সারাতে টাটকা আমলকি ফলের জুড়ি নেই। এছাড়া পেটের পীড়া, সর্দি, কাশি ও রক্তহীনতার জন্যও খুবই উপকারী। লিভার ও জন্ডিস রোগে উপকারী বলে ছোট্ট এ আমলকি ফলটি বিবেচিত। আমলকি, হরিতকী ও বহেড়াকে একত্রে ত্রিফলা বলা হয়। এ তিনটি শুকনো ফল একত্রে রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালবেলা ছেঁকে খালি পেটে শরবত হিসেবে খেলে পেটের অসুখ ভালো হয়।
বিভিন্ন ধরনের তেল তৈরিতে আমলকি ব্যবহার হয়। কাঁচা বা শুকনো আমলকি বেটে একটু মাখন মিশিয়ে মাথায় লাগালে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম আসে । কাঁচা আমলকি বেটে রস প্রতিদিন চুলে লাগিয়ে দুতিন ঘন্টা রেখে দিতে হবে। এভাবে একমাস মাখলে চুলের গোড়া শক্ত, চুল উঠা এবং তাড়াতড়ি চুল পাকা বন্ধ হবে।
আমড়াঃ
আমড়া সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ফল।
বাংলাদেশে দু’জাতের আমড়ার চাষ হয়। দেশী আমড়া টকস্বাদযুক্ত ও বিলাতি আমড়া কিছুটা মিষ্টিস্বাদযুক্ত। বরিশাল এলাকায় সর্বাধিক পরিমাণ আমড়া উৎপন্ন হয়। আমাড়াতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের রোগে ওষুধরূপে আমড়ার ব্যবহার রয়েছে।
আমড়া গাছের ছাল থেঁতো করে এক চামচ রস কিছুদিন খেলে শরীরে খসখসে ভাব থাকেনা এবং শক্তি পাওয়া যায়। ৩-৪ গ্রাম আমড়া আঠা, আধকাপ পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হবে। আমড়ার এক চামচ রস-এর সাথে চিনি দিয়ে মিশিয়ে খেলে দু-চার দিনের মধ্যে রক্ত আমাশয় ভালো হয়ে যাবে। আমড়া টুকরা করে কেটে অল্প লবণ মিশিয়ে খেলে মুখের স্বাদ ফিরে আসে।
গাবঃ
সাধারণত অন্যান্য ফলের মতো গাব বাগান দেখতে পাওয়া যায় না ।
দেশি গাব গ্রামাঞ্চলে বনে জঙ্গলে আপনা আপনি জন্মে থাকে। যথেষ্ট ওষুধগুণ সমৃদ্ধ এ ফল। সুকনো গাব ফলের গুড়া ১ গ্রাম পরিমাণ সামান্য মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে বাচ্চাদের হিক্কারোগ বন্ধ হয়ে যায়। ঠোঁটের দুই পাশে এবং মুখের ভিতরে ঘা হলে গাব ফলের রস সামান্য পানির সাথে মিশিয়ে কয়েকদিন কুলকুচা করলে মুখের ঘা সেরে যাবে।
অনেক সময় দেখা যায় ফোঁড়া সেরে গেলেও দাগ থেকে যায়।
এ ফলের রস কয়েকদিন লাগালে দাগ ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাবে।
জামঃ
জাম বেশ মুখরোচক ফল। খাদ্যমানও রয়েছে প্রচুর । জাম থেকে স্কোয়াশ তৈরি হয়। জামের বীজ ডায়াবেটিস রোগের জন্য খুবই উপকারী।
বীজ গুঁড়া করে খেলে উপকার পাওয়া যায়। দেহের কোন স্থান কেটে গেলে বা ছিলে গেলে জাম পাতার রস সেখানে লাগালে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়। কচি জাম পাতার রস ২/৩ চামচ কুসুম গরম করে ছেঁকে খেলে কয়েকদিনেই রক্ত আমাশয় ভাল হবে।
কামরাঙাঃ
কামরাঙা টক জাতীয় ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ ফল। প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে এ ফলে।
বাংলাদেশের যে কোন স্থানে এফল চাষ হয়। কামরাঙা পুড়িয়ে ভর্তা করে খেলে সর্দিকাশি সহজেই ভাল হয়ে যায়। মুখে অরুচি হলে কামরাঙা ভর্তা রুচি ও হজম শক্তি বাড়ায়।
পেটের ব্যথায় কামরাঙা খেলে উপকার পাওয়া যায়। কামরাঙা টুকরো করে কেটে রোদে ভাল করে শুকিয়ে বেটে নিতে হবে।
২ গ্রাম পরিমাণ নিয়ে পানির সাথে রোজ একবার করে খেলে অর্শ রোগে উপকার পাওয়া যায়।
পেয়ারাঃ
পেয়ারাতে আছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিনা ‘সি’। এছাড়া পেয়ারায় ঔষধি গুণ রয়েছে অনেক। যাদের দাঁতের ঘনঘন মাড়ি ফুলে যায়, দাঁত দিয়ে রক্ত ঝরে, তাদের বেশি করে পেয়ারা খেলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়। পেয়ারা গাছের পাতা ও কলি একসঙ্গে সিদ্ধ করে খেলে পুরাতন পেটের অসুখ ভাল হয়ে যায়।
পেয়ারার কচি পাতা পানিতে সিদ্ধ করে কুলি করলে দাঁতের ব্যথা, পুঁজ ও রক্ত পড়া রোগের উপশম হয়। অরুচি হলে পেয়ারা সিদ্ধ করে বীজ ফেলে দিয়ে লবণ ও চিনি মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
আনারসঃ
আনারস একটি রসালো ফল আনারসের পাতা ও ফল ওষুধিরূপে ব্যবহৃত হয়। আনারস শরীরের ক্লান্তি দূর করার সাথে পেটের অসুখেও খুবই উপকারী। প্রস্রাবের রোগে আনারস বেশ কার্যকর।
আনারসের রসের সাথে চিনি মিশিয়ে খেলে হিক্কা উঠা ও কাশি কমে যায়। আনারসের পাতার কচি সাদা অংশ এক/দুই চামচ রস কয়েকদিন খেলে ক্রিমির উপদ্রব কমে যাবে। আনারসের রস লবণ ও গোলমরিচের সাথে মিশিয়ে খেলে পেট ফাঁপা কমে যাবে।
আমাদের আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু খাওয়ার সাথে এ জাতীয় ফল খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত। মূলত বর্ষাকালেই এসব ফল পাওয়া যায়।
এফল দামে সস্তা ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। বাচ্চা থেকে শুরু করে সবারই ফল খাওয়ার আগ্রহ বাড়ানো উচিত। এতে পুষ্টি চাহিদা পূরণের সাথে বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময়ে সাহায্য করবে।
[link|http://banglawritings.wordpress.com/2007/08/30/
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।