কত প্রতীক্ষা গেল হলো না সূর্যোদয়
জীন ভূতে বিশ্বাস আমার একেবারেই ছিল না। আমার জীবনে ঘটে যাওয়া যে ঘটনাটি এখন বর্ণনা করছি তাই আমাকে জীন ভূত বিশ্বাস না করলেও বাধ্য করেছে অপার্থিবতায় বিশ্বাস করতে।
১৯৯২ সালের কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। ছুটিতে গ্রামের বাড়ী এসেছি।
সেটা সম্ভবত ভাদ্র মাসের দিকে। তালপাকা গরম শুরু হয়েছে গত দুদিন। মধ্যরাত পেরিয়ে যাচ্ছে। গরমের চোটে ঘুমুতে পারছি না। আমার সাথে শুত আমার সমবয়সী এক চাচা আর পাশের বেডে সসমবয়সী এক মামা।
তিনজন মিলে পরিকল্পনা করলাম বাড়ী থেকে খানিকটা দুরে বড় রাস্তার পাশের ডাইভারশনের ওপর তৈরী করা বাশের সাকোর ওপর বসে গা’টা ঠান্ডা করে আসি।
দুর্দান্ত পূর্ণিমার আলোয় জলে ভরা ক্ষেত রুপোর মত চিক্ চিক্ করছে। মাঝে মধ্যে মাছেরা টুপ টাপ জলের মধ্যে খাবি খাচ্ছে। শব্দ বলতে ঐ টুকুই। সৌম্য বাতাসে আস্তে আস্তে শরীর জুড়িয়ে আসছে।
আর আমরা একনাগাড়ে কথা বলে যাচ্ছি যে যার মত। কথা বলতে বলতে কখন যে আমাদের পাশের বাড়ীর দাদু যাকে আমরা ‘ন্যাংড়া দা’ বলে ডাকতাম তিনি বড় রাস্তায় হাওয়া খেতে এসেছেন টেরই পাই নি। বড় রাস্তায় তখন একটা পাকা সেতু নির্মানের কাজ চলছিল। রাস্তা ছিল অসম্পূর্ণ আর আমাদের ন্যাংড়া দা ডাইভারশনের মাথা থেকে ব্রীজের পার পর্যন্ত গিয়ে ফিরে আসছিলেন। রাত গভীর হচ্ছে।
আমাদের গল্পের রেশ ক্রমেই কমে আসছে কিন্তু আমদের ন্যাংড়া দা একনাগাড়ে ব্রীজের কাছে যাচ্ছেন আর ফিরে আসছেন। একসময় আমরা উঠে পড়লাম বাড়ী ফিরবো বলে। বাড়ীর দিকে রওনা দিতেই মনে হল এই বয়স্ক লোকটাকে একা রেখে যাওয়া ঠিক হবে না। তাই আমি ডাক দিলাম-“দাদা, বাড়ী যাবেন না?’’ আমাদের ন্যাংড়া দা সোজা হেটে রাস্তার মাথায় যেখানে গর্ত করে ব্রীজের পিলার পোতা হচ্ছিল সেখানে নেমে গেলেন। ব্যাপার কী দেখার জন্য এগিয়ে গিয়ে বিস্মিত হয়ে গেলাম।
ন্যাংড়া দা যেদিকে নেমেছিলেন সেখানে শুধুই জল। আশেপাশে আর কিচ্ছু নেই।
ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই কেমন যেন থতমত খেয়ে গেলাম। মনের সন্দেহ দুর করার জন্য সোজা চলে গেলাম ন্যাংড়া দা’র বাড়ী। ন্যাংড়া দা’কে ঘুম থেকে উঠে আসতে দেখে আমাদেরতো চোখ ছানাবড়া।
তাহলে একটু আগে যে ন্যাংড়া দা অদৃশ্য হয়ে গেলেন তিনি আসলে কে?
আমি যে বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ নই তা নয়। আমি অবিশ্বাস করিনা দৃষ্টিভ্রমকেও। তবে এ ঘটনাটি দৃষ্টিভ্রমজনিত যে নয় তা একশ ভাগ নিশ্চিত করে বলা যায়। কেননা তিনজন মানুষের একইসাথে দৃষ্টিভ্রম ঘটা অস্বাভাবিক একটা ব্যাপার আর ঘটনাটি ঘটেছিল আমাদের দৃষ্টিসীমার এক্কেবারে কাছে। আমাদের মনে ঐ মুহুর্তে ভয়ের কোনই আবহ ছিলনা কেননা জায়গাটি ছিল খোলা, আশেপাশে কোথাও জঙ্গল ছিলনা আর আলোও ছিল দিনের মত।
তবে আমাদের দেখা এই ন্যাংড়া দা কী অপার্থিব কিছু ছিল?
আমি জানিনা।
বিজ্ঞান কী সকল অপার্থিবতার ব্যাখ্যা দিতে পারে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।