আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অপমৃত্যুর পথে উত্তরের আতিথেয়তা

কত প্রতীক্ষা গেল হলো না সূর্যোদয়

“কদ্দিন পর আইসলেন(এলেন) বাহে, এক ফাক(টুকরো) গুয়া(সুপারী) খেয়া(খেয়ে) না গেইলে বাড়ীর অমঙ্গল হইবে। ‍‍‍”-এই বছর পাচেক আগেও উত্তরাঞ্চলের যে কোন বাড়ীতে গেলেই কিছু মুখে না দিয়ে ফিরতে চাইলে গৃহকর্তা আগত অতিথিকে এভাবেই ঐ বাড়ী থেকে কিছু খেয়ে যাবার ব্যকুল অনুরোধ করতেন। কোনভাবেই কোন গৃহকর্তা আগত অতিথিকে বাড়ী থেকে খালিমুখে ফিরতে দিতেন না। বলা যায় এই নির্মল আতিথেয়তা উত্তরাঞ্চলের সংস্কৃতির একটি অংশই হয়ে ছিল এতদিন। যা আজ অতীতের গল্প।

আমার জন্ম, শৈশব আর কৈশোর কেটেছে উত্তরাঞ্চলের এক প্রত্যন্ত গ্রামে। তখন এখানে বিজলী বাতি ছিল না, পাকা রাস্তা ছিলনা, ছিলনা প্রযুক্তির এই বানিজ্যিক ছোয়া। তবে মানুষের হৃদয়গুলো ভালবাসায় ভরা ছিল আর ছিল মমত্ববোধ। জ্ঞান হবার পরই দেখেছি সেই কাকডাকা ভোরে মা সব কিছু বাদ দিয়ে একটা ব-ড় কেটলিতে চা বানাচ্ছেন। গ্রামে ভোর হয় অনেক সকালে।

আর ভোর মানেই বি বি সির সংবাদ। গোটা গ্রামে ঐ আমাদের একটাই মাত্র রেডিও। বলা চলে গ্রামের সকল মানুষই চলে আসতেন বি বি সি শোনার নেশায়। এতে এক তীরে দুই পাখি মারার মত সকালের হাটাও হত আর উপরি পাওনা হিসেবে থাকতো আমার মায়ের হাতে বানানো ‘বিশ্ববিখ্যাত’ গরম চা। এক লাইনে বসে ১০/১৫জন মানুষ গরম চায়ে চুমুক দিচ্ছেন আর মনোযোগ দিয়ে বিবিসি শুনছেন এই দৃশ্যটি ছিল আমার শৈশবে ঘুম ভেংগে দেখা নিয়মিত একটি দৃশ্য।

শুধু আমাদের বাড়ীতেই নয় গোটা উত্তরাঞ্চলের যে কোন বাড়ীতেই দুপুরে বা রাতে নির্দিষ্ট পরিমান ভাত রান্না করা হত না। বাড়ীর জনসংখ্যার চেয়ে কম করে হলেও অতিরিক্ত পাচ ছ’জনের রান্না হত। দুপুরে বা রাতে খবার সময় যেই আসুক না কেন অবশ্যম্ভাবীরুপে তাকে খেয়ে যেতে হত। আর ভোর থেকে রাত দশটা অব্দি চায়ের কেটলি চুলোতেই থাকতো কখন কে আসবে এই অপেক্ষায়। এখন সময় পাল্টে গেছে।

এখন আর এখানকার কোন বাড়ীতেই চায়ের কেটলি চুলোয় থাকে না, কোন অতিথি এলে তাকে খুব আন্তরিকভাবে এক টুকরো সুপারী মুখে দিয়ে যাবার অনুরোধ করা হয় না। সম্ভবত এ অবস্থা শুরু হয়েছে যখন আমাদের এখানকার সবচাইতে বড় কাচা সড়কটি পাকা হয়েছে। পশ্চাদপদ উত্তরাঞ্চলের সাথে অপেক্ষাকৃত তথাকথিত উন্নত এলাকাগুলোর সাথে বেড়েছে যোগাযোগ। তাদের আর আমাদের সংস্কৃতি মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। আমরা পেয়েছি অনেক।

আমাদের কাজের পরিধি বেড়েছে অনেক। এখন আর আমাদের মংগাপিড়ীত মানুষরা না খেয়ে মরে না। আমরা এখন ঘরে বসে স্যাটেলাইট চ্যানেলে ঝাকানাকা গান দেখি। এত কিছুর সাথে আর এটা বড় জিনিষ আমরা পেয়েছি। হৃদয়ভরা ভালোবাসাকে দুরে সরিয়ে আমরা পেয়েছি একটি ‘বানিজ্যিক’ হৃদয়।

যে হৃদয় সব সময় লাভ খোজে, ভালবাসা খোজে না, খোজে না আন্তরিকতা, মমত্ত্ববোধ। “কদ্দিন পর আইসলেন(এলেন) বাহে এক ফাক(টুকরো) গুয়া(সুপারী) খেয়া(খেয়ে) না গেইলে বাড়ীর অমঙ্গল হইবে। ‍‍‍”-এই বছর পাচেক আগেও উত্তরাঞ্চলের যে কোন বাড়ীতে গেলেই কিছু মুখে না দিয়ে ফিরতে চাইলে গৃহকর্তা আগত অতিথিকে এভাবেই ঐ বাড়ী থেকে কিছু খেয়ে যাবার ব্যকুল অনুরোধ করতেন। কোনভাবেই কোন গৃহকর্তা আগত অতিথিকে বাড়ী থেকে খালিমুখে ফিরতে দিতেন না। বলা যায় এই নির্মল আতিথেয়তা উত্তরাঞ্চলের সংস্কৃতির একটি অংশই হয়ে ছিল এতদিন।

যা আজ অতীতের গল্প। আমার জন্ম, শৈশব আর কৈশোর কেটেছে উত্তরাঞ্চলের এক প্রত্যন্ত গ্রামে। তখন এখানে বিজলী বাতি ছিল না, পাকা রাস্তা ছিলনা, ছিলনা প্রযুক্তির এই বানিজ্যিক ছোয়া। তবে মানুষের হৃদয়গুলো ভালবাসায় ভরা ছিল আর ছিল মমত্ববোধ। জ্ঞান হবার পরই দেখেছি সেই কাকডাকা ভোরে মা সব কিছু বাদ দিয়ে একটা ব-ড় কেটলিতে চা বানাচ্ছেন।

গ্রামে ভোর হয় অনেক সকালে। আর ভোর মানেই বি বি সির সংবাদ। গোটা গ্রামে ঐ আমাদের একটাই মাত্র রেডিও। বলা চলে গ্রামের সকল মানুষই চলে আসতেন বি বি সি শোনার নেশায়। এতে এক তীরে দুই পাখি মারার মত সকালের হাটাও হত আর উপরি পাওনা হিসেবে থাকতো আমার মায়ের হাতে বানানো ‘বিশ্ববিখ্যাত’ গরম চা।

এক লাইনে বসে ১০/১৫জন মানুষ গরম চায়ে চুমুক দিচ্ছেন আর মনোযোগ দিয়ে বিবিসি শুনছেন এই দৃশ্যটি ছিল আমার শৈশবে ঘুম ভেংগে দেখা নিয়মিত একটি দৃশ্য। শুধু আমাদের বাড়ীতেই নয় গোটা উত্তরাঞ্চলের যে কোন বাড়ীতেই দুপুরে বা রাতে নির্দিষ্ট পরিমান ভাত রান্না করা হত না। বাড়ীর জনসংখ্যার চেয়ে কম করে হলেও অতিরিক্ত পাচ ছ’জনের রান্না হত। দুপুরে বা রাতে খবার সময় যেই আসুক না কেন অবশ্যম্ভাবীরুপে তাকে খেয়ে যেতে হত। আর ভোর থেকে রাত দশটা অব্দি চায়ের কেটলি চুলোতেই থাকতো কখন কে আসবে এই অপেক্ষায়।

এখন সময় পাল্টে গেছে। এখন আর এখানকার কোন বাড়ীতেই চায়ের কেটলি চুলোয় থাকে না, কোন অতিথি এলে তাকে খুব আন্তরিকভাবে এক টুকরো সুপারী মুখে দিয়ে যাবার অনুরোধ করা হয় না। সম্ভবত এ অবস্থা শুরু হয়েছে যখন আমাদের এখানকার সবচাইতে বড় কাচা সড়কটি পাকা হয়েছে। পশ্চাদপদ উত্তরাঞ্চলের সাথে অপেক্ষাকৃত তথাকথিত উন্নত এলাকাগুলোর সাথে বেড়েছে যোগাযোগ। তাদের আর আমাদের সংস্কৃতি মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে।

আমরা পেয়েছি অনেক। আমাদের কাজের পরিধি বেড়েছে অনেক। এখন আর আমাদের মংগাপিড়ীত মানুষরা না খেয়ে মরে না। আমরা এখন ঘরে বসে স্যাটেলাইট চ্যানেলে ঝাকানাকা গান দেখি। এত কিছুর সাথে আর এটা বড় জিনিষ আমরা পেয়েছি।

হৃদয়ভরা ভালোবাসাকে দুরে সরিয়ে আমরা পেয়েছি একটি ‘বানিজ্যিক’ হৃদয়। যে হৃদয় সব সময় লাভ খোজে, ভালবাসা খোজে না, খোজে না আন্তরিকতা, মমত্ত্ববোধ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।