আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্প: কুয়াশার ও সু-আশার রাত (শেষ কিস্তি)

হয়তো আমি কোন কিছু সম্পর্কে নিশ্চিত নই

বাস্তবে ফিরে আসে বুড়ি। দুচোখ তার জলে টলমল করছে। ঝাপসা চোখে রাস্তায় কিছু রক্তের ছোপ দেখতে পায়। বুড়ির মাথা ঠিক থাকে না। শ্রাব্য-অশ্রাব্য গালাগাল শুরু করে।

কিছু লোক বিরক্ত হয়, ভাগিয়ে দেয় তাকে। কিন্তু বুড়ির সেই গালাগাল আর থামে না। শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে এক অদৃশ্যের বিরুদ্ধে গালি বর্ষণ করতে থাকে। রাতের আঁধার নামে। নিয়ন আলোর কৃত্রিমতা যারা সহ্য করতে পারে না, তারা, পাখিরা নিজ আশ্রয়ে অন্ধকার অভিমুখে ছুটে চলে।

দ্রুত পা চালায় বুড়িও। অন্ধকারের সঙ্গে অসম এক প্রতিযোগিতার চেষ্টা করতে থাকে। নিচে দলাপাকানো খড়ের ওপর পুরনো কাঁথার ওপর বসে পুঁটলিটা খোলে বুড়ি। পরম মমতায় একটি একটি জিনিস বের করে আর দেখে। একটা ছেঁড়া গামছা, কাঁকই, গুড়ের ডিব্বা, দুটি পলিথিনের ব্যাগ, একটি ব্লাউজ, তেলের শিশি আর একটা ভাঙ্গা সুই।

বুড়ির চট করে মনে পড়ে যায় কাঁথার কথা। অনেকটাই ছিঁড়ে গেছে। অনেক জায়গায় ফেঁসে গেছে। সেলাই করতে হবে। ‘একখান হুই কিননের কাম আছিলো।

হুতাও তো নাই। মাথাডা আউলাইয়া গেছে গা। কিস্যু মনে থাহে না। ’ থাকবে কীভাবে? বুড়ি ভাবে। মাথায় টোকা মেরে বলে, ‘কাইল য্যান মনে থাহে।

’ অর্ধেকটা খাবার শেষ করে বাকি অর্ধেকটা পরদিন সকালের জন্য তুলে রেখে ছেঁড়া কাঁথাটাকেই পরম যতনে জড়িয়ে শুয়ে পড়ে বুড়ি। ঘুম আসে না। শুধু লোকটার কথা মনে পড়ে। কাঁথাটার কথা মনে পড়ে। বুড়ির চোখে ভাসে, তাদের বিয়ের সময় বাপজান কাঁথাটা দিয়েছিলো।

স্বামী তো দারুণ খুশি। এতো সুন্দর কাঁথা! বলে, ‘বিবি খেতাডারে তুইলা থোও। নইলে ময়লা অইয়া যাইবো। ’ স্বামীর খুশি দেখে সেদিন সে কী কম খুশি হয়েছিলো! এসব দৃশ্য একের পর এক চোখে ভাসতে থাকে। চোখের পানি আর সামলাতে পারে না।

বাঁধভাঙা জলের মতো সবেগে ঝরতে থাকে। কুয়াশাভরা রাত। একটু আগে চাঁদ ডুবে গেছে। উত্তুরে হাওয়া বইছে। গাছের ঘুমন্ত পাতাগুলো নড়ছে।

সঙ্গে নড়ছে কুটিরের মাচা, মাচার ওপর পাতাগুলো, খুঁটিগুলো। যেনো পড়ে যাবে এক্ষুণি। হঠাৎ একটা বিদ্রোহ হয়ে গেলো। গোপন বিদ্রোহ। কুটিরের মাচা, পাতা, খুঁটি সবাই মিলে বাতাসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ গড়ে তুললো।

পড়বে না ওরা, ভাঙবে না ওরা। ওরা ভেঙে পড়লে বুড়ির কী হবে? বুড়িকে কে দেখবে? বুড়িকে আশ্রয় দেবে কে? মৃদু হাওয়া বয়। মাচার পাতাগুলো নড়তে থাকে, কাঁপতে থাকে। শিশির বিন্দু পাতার চোখের পানি হয়ে ঝরে। বুড়ির জন্য পাতাগুলো এক অদ্ভুত রকমের মায়া অনুভব করে।

ভাবে, আর কটা দিন মাত্র। মরলে বুড়িকে নিয়ে একসঙ্গেই মরবো। কিছুদিন পরেই আসছে কালবৈশাখী ঝড়। পাতাগুলো বুঝতে পারে বুড়ির ঝরে পড়ার সময়ও সেটাই হবে। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করলে ক্ষতি কী? বুড়ি ঘুমায়।

জেগে থাকে পাতাগুলো, মাচা ও খুঁটিগুলো। বুড়ির শেষ ঘুমের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.