হয়তো আমি কোন কিছু সম্পর্কে নিশ্চিত নই
একটু পরেই হাঁপিয়ে যায় বুড়ি। পথের ধারেই বসে পড়ে। পুঁটলিটাকে দুই বাহুর ওপর ফেলে খোলার চেষ্টা করে। পুঁটলির রং অদ্ভুত রকমের। একটু সাদা, একটু কালো আবার একটু... কেমন যেনো বোঝা যায় না।
শুধু বোঝা যায় রংটা কী রকম। প্রকৃতি নিজেই কয়েক মাসে কয়েক হাজারের বেশি শেড দিয়ে দিয়েছে পুঁটলির কাপড়টাতে। একটু পরেই পুঁটলির ভেতর থেকে সাদা রঙের একটি পলিথিন উঁকি মারে। তার ভেতর থেকে বেরোয় হয়তো দিন তিনেক আগের একটি বাসি পাউরুটি এবং একটি কৌটা। কৌটায় পাওয়া যায় একটুকরো গুড়।
বুড়ি সামনে তাকায়। জলের খোঁজে এদিক-ওদিক তাকায়। রাস্তার ওই পাড়ে ওয়াসার কল দেখা যায়। বুড়ি নিশ্চিন্ত মনে পাউরুটি-গুড় চিবাতে শুরু করে।
পানি নেই।
বার কয়েক মোচড় দেয়ার পরও কল থেকে একটুও পানি বেরোয় না। বুড়ি উঠে দাঁড়ায়। পুঁটলিটা ভালো করে বেঁধে আবার হাঁটতে থাকে। অনুসন্ধানী চোখ দুটি এদিক-ওদিক জলের অনুসন্ধান করতে থাকে।
বুড়ি হাঁটতে থাকে।
একপা, দুপা করে এগিয়ে যায়। বুড়ির পাশ দিয়ে গাড়ি যায়, মানুষ যায়। মাঝে মাঝে দুএকটি খোলা ছোট মাঠও যায়। উপরে পাখি যায়, মেঘেরা ভেসে বেড়ায়। সময় যায়।
সূর্যও খানিকটা যায়। বুড়ি হাঁটে, হাঁটতে থাকে।
মাঝে মাঝে বুড়িকে দেখা যায় কোনো দোকানের সামনে হাত পাততে। মাঝে মাঝে কোনো বাসায় কিংবা চলমান কারো কাছে। পায় না, কিছুই পায় না বুড়ি।
অবশ্য মাঝে মাঝে অর্ধচন্দ্র পায়, দূর দূর পায়, বকাবকি শুনতে পায়, তিরস্কার পায়। অনেক কষ্টের পর এক দোকান থেকে এক ঠোঙা মুড়ি পায় বুড়ি। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে বসে পড়ে ফোকলা দাঁতে কড়মড় শব্দ করে সেগুলো চিবোতে থাকে।
বুড়ি পড়তে জানে না। জানলে কি করতো? দেখতো ঠোঙার গায়ে লেখা, ঘুণে ধরা সমাজের প্রতিনিধি সংবাদপত্রের প্রথম পৃষ্ঠা দিয়ে বানানো ঠোঙার গায়ে লেখা আছে, সরকার সবার জন্য ভাত-কাপড়ের অধিকার নিশ্চিত করেছে।
পেশাদার ফটোগ্রাফারের তোলা সরকারের চাররঙা ছবিটি, যেটি ভাত-কাপড়ের অধিকার নিশ্চিত করা সবার দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে আছে, তাদের একজনের নরম হাতের অশক্ত তালুর ভেতরে আটকে হাঁসফাঁস করছে। বাসি খবরের কাগজ দ্বারা তৈরি ঠোঙায় বুড়ি খাওয়া শেষ করে। কিন্তু আঁশ মেটে না। ঠোঙার তলা থেকে একটা একটা করে শেষ দানাটি পর্যন্ত খায়। কিছুক্ষণ শূন্য ঠোঙাটির দিকে চেয়ে থাকে বুড়ি।
তারপর প্রবল আক্রোশে দলামচা পাকিয়ে ঠোঙাটি ছুঁড়ে মারে। গড়াতে গড়াতে কাকের বিষ্ঠার ওপর গিয়ে ঠোঙাটি থামে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।