হয়তো আমি কোন কিছু সম্পর্কে নিশ্চিত নই
আকাশ লাল হতে থাকে। পাখির কলরব, মেট্রোপলিটনের ময়লার ট্রাকের যান্ত্রিক আওয়াজ, গাছের পাতার খসখস শব্দ- সব একসঙ্গে মিলে পরিবেশটাকে কেমন যেনো মোহনীয় করে তোলে। কুটিরের ভেতর থেকেও কিছু শব্দ ভেসে আসে।
শব্দ তুলে পলিথিনের বেড়া ফাঁক হয়। খুব সরু একটি বাঁশের লাঠি বাইরের পৃথিবীতে তার অস্তিত্বকে সগৌরবে প্রকাশ করে।
পেছনে দেখা যায় এক অতি বুড়ি, মাথায় যার সাদা ফেনার মতো চুল, আবশ্যিকভাবে গাল তোবড়ানো এবং কুঁজো। অতি চিকন বাঁশের লাঠিটা বুড়ির অন্ধের যষ্ঠী। এটি তার একমাত্র আশ্রয়-আত্মীয় সব।
‘আ মর জ্বালা, পুটলিডা গেলো কই। ’ বুড়ি এদিক-ওদিক খোঁজে।
ঘাড় নেড়ে এদিক-ওদিক তাকায়। চুলার পাশে ইট দিয়ে চাপা রাখা পুটলিটা চোখে পড়ামাত্র বুড়ির তোবড়ানো গাল সহজাত নির্মিলিত হাসিতে ভরে ওঠে।
পুঁটলিটা কাঁধে ফেলে বুড়ি হাঁটতে থাকে। হাঁটার কোনো শব্দ হয় না। কেবল আত্মীয় ‘অতি চিকন বাঁশের লাঠি’ টুকটুক করে বুড়ির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে।
কিন্তু বুড়ির মুখও নিশ্চুপ।
অনেকক্ষণ পর বুড়ির মনে পড়ে। লাঠিটাকে উঁচু করে তুলে নিয়ে বলে, ‘আইজকা একখান হুইস আর একখান গুইট্ট্যা হুতা কিনন লাগবো। ’ তারপর হঠাৎ লাঠিটাকে নামিয়ে সামনে পড়ে থাকা কলার খোসাটাকে সরিয়ে দেয়। বুড়ি আবার বলে, ‘রাইতে কী শীত করেরে বাবা! খেতাডাও তো শেষ।
’...
এবারো বুড়ি কথা শেষ করতে পারে না। হঠাৎ করেই যেনো তার সামনে চেনা একটি দৃশ্য ভেসে ওঠে। একটি না... বেশ কতোগুলো... এক এক করে ভেসে উঠতে থাকে। বুড়ি দেখতে চায় না। কিছুক্ষণ চোখ বুঁজে দাঁড়িয়ে প্রাণপণে দৃশ্যটা সরাতে চেষ্টা করে।
কিছুটা পারে, কিছুটা পারে না। চোখ জলে ভিজে যায়। দৃশ্যটা আস্তে আস্তে ঝাপসা হয়ে আসে। বুড়ি হাঁটতে থাকে। মাঝে মাঝে যখন বিরাট শব্দে বাস-ট্রাক পাশ দিয়ে যায়, বুড়ি আঁতকে ওঠে।
মন-মেজাজ খারাপ থাকলে কিছু গালাগালও করে। তখন বুড়ি বড় সুখ পায়। বাস-ট্রাক বুড়িকে ফেলে চলে যায় দূরে, কিন্তু বুড়ির গালাগাল থেকে রেহাই পায় না। যতোক্ষণ শক্তি থাকে, বুড়ির গালাগালও সমানতালে চলে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।