আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অন্ধকারাচ্ছন্ন পাকিস্থানের খন্ডচিত্র -১

যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি

সাম্প্রতিক কালে যে খবরটা বেশ উদ্বেগজনক মনে হয়েছে - তা হলো পাকিস্থানে বালুচ মুক্তিকামী জনগনে নেতা আকবর আলী বুগতির সেনাবাহিনী কর্তৃক নিহত হওয়া। বয়োবৃদ্ধ এই রাজনৈতিক নেতা বেলুচিস্থানকে পাঞ্জাবী এবং সামরিক আধিপত্য থেকে বের করে ন্যায় এবং সমতার ভিত্তিতে কনফেডারেশনে প্রবক্তা ছিলেন। অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের দখলদারীরে বিরুদ্ধে আফগানদের যুদ্ধে তার দল ছিল সাম্রাজ্যবাদীদের একটা সহায়ক শক্তি। তালেবান পতনের পর বুকতী এবং তার দলকে নিষ্ক্রিয় করার জন্যে আমেরিকা এবং ক্যানাডা পাকিস্থানের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করে। এদিকে পাকিস্থানী সেনাবাহিনীর আকাশচুম্বী দূর্নীতি আর নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে বুকতি হয়ে উঠেন জনগনের নেতা।

সর্বশেষ যে ঘটনা বুকতিকে জেনারেল মোশাররফের ব্যক্তিগত আক্রোশে ফেলে তা হলো - একজন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা কর্তৃক একজন মহিলা ডাক্তারকে ধর্ষন। এই ঘটনা পরবর্তীতে একটা আর্ন্তজাতিক খবরে পরিনত হয় এবং মোশাররফকে একজন মিথ্যাবাদী হিসাবে পশ্চিমা প্রচার মাধ্যমের কাছে পরিচিতি লাভে সাহায্য করে। পাকিস্থান পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন - যা একটা রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান - তাতে কাজ করতেন ৩২ বছর বয়ষ্ক ডা. সাজিয়া খালিদ। তার স্বামীও একজন ইঞ্জিনিয়ার - যিনি মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত ছিলেন। ওয়ার অন টেররের টপ লেভেল সিকিউরিটি বিবেচনায় ডা. সাজিয়ার কর্মক্ষেত্র বেলুচিস্থানের একটা প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্যাস ক্ষেত্রটিতে সামরিক বাহিনী নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকতো।

সাজিয়ার সেখানে কাজ করার এটাও একটা কারন। কিন্তু ২০০৫ সালের জানুয়ারী মাসে এক রাত্রে সেখানকার নিরাপত্তায় নিয়োজিত এক ক্যাপ্টেন কর্তৃত সাজিয়া নিজ শয়ন কক্ষে আক্রান্ত হন। ক্যাপটেন হামান নামক সেই সামরিক কর্মকর্তা তাকে রাতভর লাঞ্ছিত করার পর টেলিফোনের তার পেঁচিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। এই ঘটনা শুনার পর সাজিয়া স্বামী দেশে চলে আসে এবং কর্পোরেশনের কর্তাদের কাছে বিষয়টা উপস্থাপন করে। সেখানেও একজন সামরিক কর্মকর্তা বসে আছেন।

উনি তাকে ছুটি দিয়ে বিশ্রামের পরামর্শ দেন। সাজিয়া আর তার স্বামী পুলিশের কাছে গেলে - সেখান থেকে শুরু হয় তাদের জীবনের উপর হুমকী। পুলিশ কেস নিলেও তাদের সাবধানে থাকার পরামর্শ দেন। এদিকে পাকিস্থানের মানবাধিকার এবং নারী বিষয় এনজিওগুলো এগিয়ে আসে। ফলে মিডিয়াতে হৈচৈ পড়ে যায়।

এটা সাজিয়ার জন্য আরো বিপদ ঢেকে আনে। তারা কার্যত গৃহবন্ধী হয়ে যায়। প্রতিনিয়ত বাসার সামনে মানুষ আসে - তাদের হুমকী দেয়। এক পর্যায়ে সামরিক গোয়েন্দার মাঠে নামে এবং সাজিয়া আর স্বামীকে হুমকী দিতে থাকে সকল অভিযোগ প্রত্যাহারে জন্যে - অন্যদিকে পত্রিকাগুলোতে সাজিয়াকে একজন ‘চরিত্রহীনা এবং পতিতা’ হিসাবে খবর এবং প্রতিবেদন ছাপাতে থাকে। সেই সময় বুকতী এবং তার দল সাজিয়ার পক্ষে অবস্থান নেয় ।

তারা আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে ধর্ষক ক্যাপ্টেনের বিচারের দাবীকে জোরালো করতে থাকে। কিন্তু সেই ক্যাপ্টেন স্বপদে বহাল থেকে বুক ফুলিয়ে চলা ফেরা করতে থাকে। এক পর্যায়ে সরকার নারী সংগঠন এবং বুকতীর চাপে একটা তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করার আগেই জেনারেল মোশাররফ হঠাৎ করে টিভিতে জাতির উদ্দেশ্য ভাষন দেন এবং ধর্ষক ক্যাপ্টেনকে নির্দোষ হিসাবে ঘোষনা করেন। সমস্ত বিষয়টাকে একটা রাজনৈতিক ঘটনা হিসাবে উপস্থাপন করা হয়।

এতে বুগতী এবং তার দলবল ক্যাপ্টেনের কর্মস্থল আক্রমন করে এবং সমস্ত এলাকটাকে বুলেটের আঘাতে ঝাঝরা করে দেয়। কিন্তু তারা কোন মানুষকে আহত করেনি - কারন তারা তাদের ভাষায় সরকারের বিরুদ্ধে একটা প্রতিবাদ জানিয়ে যায়। এই বিষয়ের পর আমেরিকান বাহিনী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং সরকারকে একটা মিমাংসা করার জন্যে চাপ দেয়। যখন সাজিয়া তার বাসভবনে বন্দি অবস্থায় স্বজনদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আত্নহত্যার চেষ্টা করে - তখন তাদের পালকপুত্রের কারনে সেই কারনে সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। সাজিয়া আর স্বামী সামাজিক এবং অর্থনৈতিক চাপে যখন মানসিক ভারসাম্য হারানোর পথে - তখন গোপনে সরকার থেকে এক প্রস্তাব আসে।

তাদের বলা হয় তারা যদি ক্যানাডা ইমিগ্রেশান চায় তাহলে সরকার তাদের সহায়তা করবে। অনেক ভেবে চিন্তে তারা রাজী হয়। পাকিস্থানের সরকারী কর্মকর্তারা তাদের লন্ডন পর্যন্ত নিয়ে আসে এবং হোটেলে উঠায়। পরদিন তারা কাউকে না দেখে তাদের দূতাবাসে ফোন করলে দূতাবাস কর্তারা সব কিছুই অস্বীকার করে। সাজিয়া আর খালিদ তখন ক্যানাডা দূতাবাসে যায় এবং তারা নিয়মানুসারে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বলে।

বিষয়টা মিডিয়াতে জানাজানি হলে পাকিস্থান সরকার সম্পূর্ন বিষয়টা অস্বীকার করে। সেই সময় জেনারেল মোশাররফ আমেরিকা সফর করতে আসলে - ওয়াশিংটন পোষ্টের সাথে এক সাক্ষাৎকারে এই প্রসংগে প্রশ্নের উত্তরে বলে যে - "This has become a money making concern. A lot of people say if you want to go abroad and get a visa for Canada or citizenship and be a millionaire, get yourself raped." এই বিষয়টি ক্যানাডাতে বেশ হৈ চৈ ফেলে দেয়। অবশেষে ডা. সাজিয়া আর খালিদ ক্যানাডাতে মাইগ্রেট করে। (একজন পাকিস্থানী ক্যানাডিয়ানের ভাষ্যের অনুলিখন - মূল লেখাটি সদালাপ ডট কম এ সেপ্টেম্বর ১৭, ২০০৬ প্রকাশিত)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।