আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সচলায়তনঃ একটা দিঘীর নাম

যদি নির্বাসন দাও.................................................................. আমি ওষ্ঠে অঙ্গুরী ছোঁয়াবো আমি বিষ পান করে মরে যাবো! বিষণ্ন আলোয় এই বাংলাদেশ নদীর শিয়রে ঝুঁকে পড়া মেঘ, প্রান্তরে দিগন্ত নির্নিমেষ- এ আমারই সাড়ে তিন হাত তুমি।

প্রথমে একটা গল্প বলে নেই. একটা ছোট্ট ছেলে. বর্ণমালার অক্ষরগুলো শেখা হয়ে গেলে সে বাবার কাছে আব্দার করে শ্লেটের জন্য. বাবা প্রতিদিন আনবে বলে কথা দেয় কিন্তু ভুলে যায়. এরপর একদিন ছেলেটা খুব অভিমান করে, তার চোখে জল এসে যায়. ছেলের চোখের জল বাবার চোখ এড়াই না. পরদিনই বাবা শ্লেট নিয়ে আসেন. সেদিন ছেলেটার সে কি আনন্দ! কেউ পুরো পৃথিবীটা তার হাতের মুঠোয় তুলে দিলেও বোধহয় সেরকম সুখ সে পেত না. তার যতটা না আগ্রহ বর্ণমালার অক্ষর লেখায় তার চেয়ে বেশি আগ্রহ আঁকিবুকি করাতে. কখনো নদী, কখনো ফুল, কখনো মেঘ-ঘাস-নৌকা-মাছ-পাখি-গাছ আরো কতো কি হাবিজাবি. খড়িমাটি যাকে চক বলা হতো, সেই খড়িমাটি দিয়ে বিচিত্র সব চিত্রকর্ম আঁকতো সে আর ছুটে গিয়ে মাকে দেখাতো. মা খুশি হওয়ার অভিনয় করতেন আর উৎসাহ দিতেন- খুব সুন্দর হয়েছে বলে. ছেলেটি তখনো চক ধরতে শেখেনি ঠিকমতো. তাই প্রথম প্রথম সেগুলো ভেঙে তিনটুকরো হয়ে যেত. সেটা দেখে প্রথম প্রথম তার খুব কান্না পেতো. অসহায় চোখে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকতো সে. একসময় ছেলেটি লিখতে শিখলো. আঁকতে শিখলো. এরমাঝে সে দেখলো তার প্রিয় শ্লেটটি কেমন জানি মলিন হয়ে গেছে. পড়শী ছেলেটা একদিন কলম দিয়ে খুঁচিয়ে দিয়েছে তার প্রিয় আঙিনাটিকে. সেদিন সে সারারাত কেঁদে বুক ভাসিয়েছে সঙ্গোপনে. কেমন জানি বয়েসের ছাপ পড়ে গেছে শ্লেটটাতে. শিমুলের খোঁচাগুলি কলংকরেখার মতো ফুটে ওঠেছে ওটার বুকে. এভাবেই দিন চলে যাচ্ছিলো.হঠাৎ একদিন সে আবিষ্কার করে তার সমবয়েসীরা অনেকেই ইতিমধ্যে খড়িমাটি আর শ্লেট ফেলে কলম দিয়ে রোলটানা খাতায় লিখতে শুরু করেছে. রোলটানা খাতায় নাকি লেখার মজাই আলাদা. সে প্রতীক্ষায় থাকে কখন সে দিন আসবে. অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই সে সুযোগটা পেয়ে যায়. এখন সেও রোলটানা খাতায় ইচ্ছেমতো আঁকিবুকি করতে পারে. মনের কথাগুলিকে প্রকাশ করতে পারে স্বচ্ছন্দে. ছেলেটা মশগুল হয়ে পড়ে নতুন লেখার পরিবেশে. এক অন্যরকম মুক্তির স্বাদে সে খুঁজে পায় নিজেকে. তবুও মাঝে মাঝে কেমন একটা মায়া অনুভব করে সে পুরনো অতি প্রিয় শ্লেটটির জন্য. এখনো সে মাঝে মাঝে হাতে নিয়ে দেখে তাকে, গভীর মমতায় হাত বুলায়, আদর করে, একটা দুটো দাগ কাটে সন্তর্পণে. সে বুঝতে পারে, জীবনের প্রথম ভালোবাসা মনের দর্পণে যে সূক্ষ আঁচড় কেটে গেছে তাকে অস্বীকার করার ক্ষমতা তার নেই. সে করেও না. তাই সে বার বার ফিরে আসে তার ভালোবাসার কাছে. গল্পটা শেষ. এবার মূল কথা বলি. আমি মূলত পাঠক. পাঠক হিসেবেই দু'চারটা লেখা প্রকাশ হয়েছে ভোরের কাগজ, প্রথম আলো, উন্মাদ, বাংলালাইভ আই পত্রিকা আর হাজারদুয়ারীতে (হাজারদুয়ারী সম্ভবত সবার লেখাই ছাপায়). আমার লেখার ফল্গুধারা শুরু হয় সামহয়্যারকে কেন্দ্র করেই. আমার প্রায় দুশো পোস্টগুলি কখনো লেখা হতো না যদি এই ব্লগের ঠিকানা না পেতাম. মূলত পাঠকদের সাথে ইন্টার-অ্যাকশনই মূল আকর্ষণ এই ব্লগের. সেখানে এসেই পেলাম একঝাঁক প্রতিভাবানদের. দারুন সব লেখা, ভাবনা, বিতর্ক নিয়ে কখন যে বছর কেটে গেছে বুঝতেই পারিনি. তারপর এলো এক কালো মেঘ. সব লন্ডভন্ড হয়ে গেলো. ব্লগে ব্লগে ঘুরে বেড়াই, কিন্তু পড়ার মতো কিছু পাই না. খুব কষ্ট পেয়েছিলাম তখন. সেসময়ই হাসান মোরশেদের আমন্ত্রণ আসে সচলায়তন থেকে. এটা আমার জন্য বাড়তি উচ্ছ্বাসের ব্যাপার. কারণ হাসান মোরশেদ আমার কাছে অসাধারণ একজন লেখক. অতি ছোট্ট ঘটনাকে এমন নিপুণতার সাথে উপস্থাপন খুব কম লোককেই করতে দেখেছি. আরেকজন সে কাজটা পারেন তিনি বিগ. সি. সচলায়তনে গেলাম. গিয়ে দেখি আমার সেই রোলটানা খাতা. দারুন সব পোস্ট. অনেক অসাধারণ ব্লগারের লেখা সামহয়্যারইনে চোখ এড়িয়ে গেছে ভীড়ের কারণে তাদের আবিষ্কার করি সচলায়তনে. তার মধ্যে মুহম্মদ জুবায়ের, যূথচারী, সুমন রহমান অন্যতম. আর পুরনোদের লেখায় আগের চেয়ে আরো বেশি যত্নের ছাপ. আমি মুগ্ধ হই, আমি আপ্লুত হই. আমি ডুবে যাই সচলায়তনের ভালোবাসায়, ঘ্রাণ নেই নতুন সম্ভাবনার. কিন্তু সামহয়্যারইনকে কখনোই ভুলিনি. তাই এখনো নিয়মিত পোস্ট করি সামহয়্যারইনে. এ যেন আমার কাছে দুটো পিঠাপিঠি ভাই. সামহয়্যার অগ্রজ, পথ-প্রদর্শক আর অনুজ সচলায়তন, নতুন নতুন লেখক আবিষ্কারের কারখানা. এই দুই ভাইকে নিয়েই আবর্তিত হবে আমার ভার্চুয়াল পথচলা. সবশেষে একটা লাইনেই নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে চাই. শেষের কবিতার মতো করেই বলি- "সামহয়্যারইন আমার কাছে হচ্ছে ঘড়ায় তোলা জল, যা ইচ্ছে হবে লিখবো, আর সচলায়তন হচ্ছে দীঘি যেখানে স্বাধীনভাবে সাঁতার কাটবো." যেখানে সাঁতার কাটতে গেলে প্রস্ততির প্রয়োজন। --- লেখাটি একইসাথে সচলায়তনে প্রকাশিত।।।।।।।.

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।